অনেকের জন্মগত ভাবে আবার অনেকে যারা সারাদিন বাইরে থাকে তাদের চুল রুক্ষ এবং শুষ্ক থাকে। রুক্ষ এবং শুষ্ক চুলের যত্ন নেওয়ার জন্য প্রাকৃতিক কন্ডিশনার অনেক উপকারী হতে পারে। বাজারের কেমিক্যালযুক্ত কন্ডিশনারের পরিবর্তে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করলে চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এবং চুল কোমল ও ঝলমলে হয়ে ওঠবে।

নিচে ১০টি প্রাকৃতিক কন্ডিশনারের তালিকা দেওয়া হলো যা রুক্ষ চুলের জন্য বিশেষভাবে কার্যকর।
১. নারকেল তেল
নারকেল তেল চুলের জন্য একটি প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার। ১ টেবিল চামচ করে নারিকেলের তেল, গোলাপজল শ্যাম্পু শেষে ভেজা চুলে মিশ্রণটি লাগিয়ে রাখুন। ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি চুলের শুষ্কতা দূর করতে সহায়তা করে এবং চুলের গোড়ায় পুষ্টি জোগায়। সপ্তাহে ২-৩ বার নারকেল তেল চুলে ব্যবহার করলে চুল নরম ও মসৃণ হয়।
২. মধু
মধু চুলের জন্য একটি প্রাকৃতিক হিউমেকট্যান্ট যা চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। মধুর সাথে দুধ মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করলে চুলের শুষ্কতা দূর হয় এবং চুল হয়ে ওঠে নরম ও সিল্কি।
৩. দই
দই চুলের জন্য একটি প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে। এতে প্রচুর পরিমাণে ল্যাকটিক অ্যাসিড থাকে যা চুলকে কোমল করে এবং শুষ্কতা দূর করে। সপ্তাহে একবার দই চুলে ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
৪. জবা ফুল
জবা ফুলের রস চুলে ব্যবহারে চুলের রুক্ষতা কমে এবং চুল মসৃণ হয়। এছাড়াও, এটি চুলের বৃদ্ধিতেও সহায়ক।
৫. অ্যালোভেরা জেল
অ্যালোভেরা চুলের জন্য একটি অসাধারণ প্রাকৃতিক কন্ডিশনার। এটি চুলে আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং চুল মসৃণ ও ঝলমলে রাখে। শ্যাম্পু করার পর চুলে অ্যালোভেরা জেল লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। শ্যাম্পুর পর ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়, যা সপ্তাহে ২-৩ বার করা যেতে পারে।
৬. কলা
কলা চুলের শুষ্কতা কমাতে কার্যকর। একটি পাকা কলা ম্যাশ করে চুলে লাগান এবং ২০-৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি চুলকে মসৃণ করে এবং শুষ্কতা দূর করে।
৭. মেথি বীজ
মেথি বীজের পেস্ট চুলে ব্যবহার করলে চুল কোমল ও রেশমি হয়। মেথি বীজ পানিতে ভিজিয়ে রেখে তা পেস্ট করে চুলে লাগান এবং ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
৮. ডিম
ডিম চুলের প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করে এবং চুলকে নরম করে তোলে। একটি ডিম ভালোভাবে ফেটিয়ে চুলে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। ডিম মাসে ২ বার ব্যবহার যথেষ্ট।
৯. আমলকী
আমলকী চুলের রুক্ষতা কমাতে সাহায্য করে এবং চুলকে ঘন ও মজবুত করে। আমলকীর রস চুলে ব্যবহার করলে চুলের শুষ্কতা দূর হয়।
১০. দুধ
দুধের মধ্যে থাকা প্রোটিন এবং চর্বি চুলকে মসৃণ ও কোমল করে তোলে। চুলে দুধ লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।
কতদিন পর পর প্রাকৃতিক কন্ডিশনার ব্যবহার করা যাবে?
প্রাকৃতিক কন্ডিশনারগুলো সাধারণত সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এটি নির্ভর করে চুলের অবস্থা এবং প্রয়োজনের উপর।
যদি চুল খুব বেশি শুষ্ক ও রুক্ষ হয়, তাহলে প্রথমদিকে একটু বেশি ঘন ঘন ব্যবহার করা যেতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে সপ্তাহে একবার ব্যবহার করলেও ভালো ফল পাওয়া যায়।
প্রাকৃতিক কন্ডিশনার ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে সকল বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন
প্রাকৃতিক কন্ডিশনার ব্যবহার করার সময় কয়েকটি বিষয় মনে রাখা জরুরি, যাতে সঠিকভাবে উপকারিতা পাওয়া যায় এবং চুলের কোনো ক্ষতি না হয়।
১. চুলের ধরন বুঝে কন্ডিশনার নির্বাচন করুন
প্রত্যেকের চুলের ধরন আলাদা, তাই চুলের ধরন অনুযায়ী কন্ডিশনার নির্বাচন করা উচিত। উদাহরণস্বরূপ, তেলতেলে চুলের জন্য খুব বেশি ভারী কন্ডিশনার না ব্যবহার করে হালকা কিছু ব্যবহার করা উচিত, যেমন অ্যালোভেরা।
২. পরিমাণে সঠিক ব্যবহার
প্রাকৃতিক কন্ডিশনার ব্যবহার করার সময় পরিমাণে অতিরিক্ত না ব্যবহার করা ভালো। চুলের দৈর্ঘ্য ও ঘনত্ব অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরিমাণ ব্যবহার করা উচিত।
৩. কন্ডিশনারের সময় ঠিক রাখা
প্রাকৃতিক কন্ডিশনার সাধারণত চুলে ২০-৩০ মিনিট রেখে দিতে হয়। তবে কিছু উপাদান যেমন মধু বা নারকেল তেল সারারাত রেখে দিতে পারেন, যা আরও কার্যকর হতে পারে।
৪. খুব বেশি ঘন ঘন ব্যবহার নয়
যদিও প্রাকৃতিক উপাদান চুলের জন্য ক্ষতিকর নয়, তবে খুব বেশি ঘন ঘন ব্যবহার করলে চুল ভারী ও তেলতেলে হয়ে যেতে পারে। সঠিক ব্যবহারের জন্য সপ্তাহে ২-৩ বার যথেষ্ট।
৫. শ্যাম্পু পরিহার করতে পারেন
কিছু প্রাকৃতিক কন্ডিশনার যেমন নারকেল তেল বা অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করার পর খুব বেশি শ্যাম্পু করা প্রয়োজন হয় না। শ্যাম্পু করার পরিবর্তে হালকা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা যেতে পারে।
৬. এলার্জির পরীক্ষা করুন
যেকোনো প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহারের আগে স্কিন প্যাচ টেস্ট করা উচিত, যাতে কোনো ধরনের এলার্জি প্রতিক্রিয়া হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করা যায়। যদি কোনো অস্বস্তি বা চুলকানি দেখা দেয়, তবে সেই উপাদান ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
৭. হালকা ম্যাসাজ করুন
কন্ডিশনার ব্যবহার করার সময় চুলের গোড়ায় হালকা ম্যাসাজ করুন। এতে রক্ত সঞ্চালন বাড়বে এবং কন্ডিশনারের কার্যকারিতা ভালোভাবে প্রকাশ পাবে।
৮. তাজা উপাদান ব্যবহার করুন
প্রাকৃতিক উপাদান সবসময় তাজা ব্যবহার করা উচিত। পুরোনো বা নষ্ট হয়ে যাওয়া উপাদান ব্যবহার করলে চুলের উপকারের বদলে ক্ষতি হতে পারে।
কি কি কারণে চুল শুষ্ক ও রুক্ষ হয়
চুল শুষ্ক ও রুক্ষ হওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। সঠিক যত্ন না নিলে এবং কিছু অভ্যাস বজায় রাখলে চুলের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা হারিয়ে যায়, যার ফলে চুল রুক্ষ ও নিষ্প্রাণ হয়ে ওঠে। নিচে কিছু প্রধান কারণ উল্লেখ করা হলো:
১. অতিরিক্ত হিট স্টাইলিং: চুলে বারবার হেয়ার ড্রায়ার, স্ট্রেইটনার বা কার্লার ব্যবহার করলে চুলের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা হারিয়ে যায়। ফলে চুল শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যায়।
২. সঠিক পুষ্টির অভাব: সঠিক খাবার না খাওয়া বা শরীরে পর্যাপ্ত পুষ্টি উপাদান না পাওয়া চুলের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। বিশেষ করে ভিটামিন এ, সি, ডি, এবং ই, জিঙ্ক, এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের অভাবে চুল শুষ্ক হতে পারে।
৩. অতিরিক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার
অতিরিক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার বা খুব ঘন ঘন শ্যাম্পু করলে চুলের প্রাকৃতিক তেল ধুয়ে যায়, ফলে চুল রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে পড়ে।
৪. পানি কম পান করা
পর্যাপ্ত পানি পান না করলে শরীরের সাথে সাথে চুলও আর্দ্রতা হারায়। এতে চুল শুষ্ক ও নিষ্প্রাণ হয়ে যায়।
৫. সূর্যের অতিরিক্ত সংস্পর্শ
সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি চুলের প্রাকৃতিক তেল এবং আর্দ্রতা শুষে নেয়, যার ফলে চুল শুকিয়ে রুক্ষ ও ভঙ্গুর হয়ে ওঠে।
৬. রাসায়নিকযুক্ত পণ্য ব্যবহার
চুলে অতিরিক্ত রাসায়নিকযুক্ত প্রসাধনী, যেমন রঙ, ব্লিচ, বা কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট ব্যবহার করলে চুলের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা হারিয়ে যায় এবং চুল রুক্ষ হয়ে যায়।
৭. দূষণ
ধুলাবালি এবং বায়ুদূষণের কারণে চুলের ত্বকে এবং শুষে নেয়া তেলে খারাপ প্রভাব পড়ে। এর ফলে চুলে শুষ্কতা ও রুক্ষতা বাড়ে।
৮. হরমোনের পরিবর্তন
হরমোনের পরিবর্তন যেমন গর্ভাবস্থা, মেনোপজ বা থাইরয়েডের সমস্যা চুলের আর্দ্রতার অভাবের কারণ হতে পারে।
৯. সঠিক যত্নের অভাব
যথাযথ চুলের যত্ন না নিলে, যেমন চুল নিয়মিত তেল না লাগানো বা মাস্ক না করা হলে চুল শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যায়।
১০. কঠোর পানি (হার্ড ওয়াটার)
হার্ড ওয়াটার বা কঠোর পানিতে মিনারেল জমা থাকে যা চুলকে শুষ্ক এবং ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
চুল শুষ্ক এবং রুক্ষ হওয়ার এ ধরনের কারণগুলো থেকে রক্ষা পেতে হলে নিয়মিত চুলের যত্ন নিতে হবে এবং সঠিক পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।




















