গাঢ় এবং কালো ঠোঁটের সমস্যা বিরল নয়… বিশেষ করে তখন যখন আমরা সবাই নরম মসৃণ এবং গোলাপী ঠোঁট পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করি।
কিন্তু কেন এই ঠোঁট কালো হয়ে যায়? কেনই বা ঠোঁটের এই তথাকথিত বিবর্ণতা ঘটে?
এর কয়েকটি কারণ হতে পারে, তার মধ্যে একটি হলো সঠিক যত্নের অভাব, পাশাপাশি রয়েছে অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা। বলা হয় যে, ঠোঁটের প্রাকৃতিক রঙ নষ্ট হওয়ার কয়েকটি কারণ রয়েছে যা ঠোঁটকে কালো করে ফেলে।
কালো ঠোঁটের সমস্যা দূর করার টিপসঃ
১. ধূমপানকে “না” বলুন

ঠোঁটের জন্য প্রতিটি টিপস এটাই বলে যে নিকোটিন ঠোঁট কালো এবং বিবর্ণ করার জন্য দায়ী। এছাড়া ধূমপান ক্যান্সার এবং অন্যান্য রোগের জন্যও দায়ী।
২. কফি কম পান করুন
অতিরিক্ত চা এবং কফি পান করলে আপনার ঠোঁট কালচে হয়ে যাবে তাছাড়াও আপনার দাঁতে দাগ পরে যাবে। তাই, ক্যাফেইন গ্রহণ সীমাবদ্ধ করুন এবং আপনার ঠোঁট কালো হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করুন।
৩. সূর্যের তাপ থেকে দূরে থাকুন
সূর্যে প্রচুর মেলানিন রঙ্গক রয়েছে, তাই রোদে বের হলে আপনার ঠোঁট কালো হয়ে যাবে। তাই যদি আপনি বাহিরে সময় কাটান তাহলে অবশ্যই ঠোঁটে SPF/UV protector আছে এমন কসমেটিক ব্যবহার করুন।
৪. লিপস্টিক ব্যবহারে সতর্ক থাকুন
দীর্ঘ সময় ধরে এবং মাত্রাতিরিক্ত লিপস্টিক এবং ঠোঁটের কসমেটিক্স এর ব্যবহার, বিশেষ করে নিম্নমানের পণ্য ব্যবহার ঠোঁটকে কালো করে তুলে।
তাই লিপস্টিক কম ব্যবহার করুন (তখনই ব্যবহার করুন যখন আপনার তা খুব দরকার) এবং সবসময় ভালো বা বিখ্যাত ব্র্যান্ডের পণ্য কিনুন।
মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ দেখে কিনুন এবং মেয়াদ শেষ হওয়া লিপস্টিক ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
লিপস্টিক কিনার সময় আপনার লিপস্টিকে এই উপকরণগুলো অথবা এগুলোর যে কোনো একটি আছে কিনা দেখে কিনুনঃ শিয়া বাটার, ঘি, ভিটামিন ই এবং জজবা তেল। এগুলো আপনার ঠোঁটকে নমনীয় রাখে এবং শুকিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে।
আপনার ঠোঁটের মেইকাপ একটি ভালো লিপ মেইকাপ রিমুভার দিয়ে তুলে ফেলুন অথবা জলপাই/ বাদাম/ নারিকেল তেল দিয়ে তুলে ফেলুন।
৫. ঠোঁটের জন্য প্রাকৃতিক লিপ স্ক্রাব ব্যবহার করুন
ঠোঁটের শুষ্ক এবং মরা চামড়া দূর করার জন্য এবং রক্ত চলাচল প্রবাহ ঠিক রাখতে অন্তত সপ্তাহে একবার ঠোঁটের স্ক্রাব করা উচিত। স্ক্রাবের জন্য আপনি ৫-৬ ফোঁটা অলিভ অয়েলের সাথে ১ চা চামচ চিনি মিশিয়ে নিতে পারেন। স্ক্রাব করে ধুয়ে ফেলার পর, লিপ বাটার বা আপনার পছন্দের লিপ ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন।
৬. ঠোঁটের মৃত কোষ তুলুন
বেবি টুথব্রাশে অল্প ভেসলিন লাগিয়ে নিন এবং আপনার ঠোঁটে আলতো করে ঘষুন। এটা আপনি প্রতিদিন করেত পারেন।
৭. সবসময় ঠোঁট হাইড্রেটেড রাখুন
আপনার ঠোঁট সবসময় ময়েশ্চারাইজড এবং হাইড্রেট রাখুন। ঠোঁটের প্রাকৃতিক রঙ ধরে রাখার জন্য, আপনার ঠোঁটের হাইড্রেশন স্তর বজায় রাখতে সারাদিন ধরে পরিমিত পরিমান পানি পান করুন। শীতকালে যখন আমরা খুব কম পানি পান করি, তখনই ডিহাইড্রেশন দেখা দেয়। তাই শীতকালে পরিমিত পরিমান পানি পান করতে ভুলবেন না।
এছাড়াও আপনার খাবারে পানির পরিমান বেশি এমন ফল যেমন শসা, তরমুজ, কমলা, আঙুর ইত্যাদি রাখুন।
আমাদের দেহের অন্যান্য অংশের ত্বকের তুলনায় ঠোঁটের ত্বক অনেক বেশি কোমল। তাই, ঠোঁটের শুষ্কতা এবং ফেটে যাওয়া দূরে রাখতে সবসময় একে ময়েশ্চারাইজড রাখতে হবে, বিশেষ করে তখনই বেশি যত্ন নিতে হবে যখন ঠোঁট কালো হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে।
আপনার ঠোঁট ময়েশ্চারাইজড রাখতে যে সকল লিপ বামে মোম এবং কোকো বাটার রয়েছে সেগুলো ব্যবহার করুন।
৮. আপনার ঠোঁটে জিহ্বা লাগাবেন না
ডারমাটলোজিস্ট ঠোঁট ভিজা রাখতে জিহ্বা দিয়ে চাটতে নিষেধ করেছেন। যদি এটি না মানা হয় তাহলে আস্তে আস্তে ঠোঁট শুষ্ক হয়ে যাবে, যা ঠোঁটকে কালো করে ফেলবে। এমনকি ঠোঁটে কামড় দেওয়ার অভ্যাস পরিহার করতে হবে কারণ এতে ঠোঁটের ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
৯. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা
ভিটামিনের অভাবে ঠোঁট বিবর্ণ হতে পারে। তাই, একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলতে হবে এবং প্রচুর পরিমাণে ফল এবং সবুজ শাকসবজি খেতে হবে। ঠোঁটের কালচেভাব দূর করতে ভিটামিন সি খুব ভালো কাজ করে, তাই প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি সম্পন্ন খাবার খেতে হবে।
১০. ক্লোরিনযুক্ত পানি বর্জন করতে হবে
কালো ঠোঁটের জন্য ক্লোরিনযুক্ত পানিও দায়ী। তাই এই পানি পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
১১. বংশগত
বংশগত কারণেও ঠোঁট কালো হতে পারে। তাই, যদি জন্ম থেকে আপনার ঠোঁট কালো হয়, তাহলে কসমেটিক সার্জারি করা ছাড়া এই ঠোঁট ঠিক করার আর কোন পদ্ধতি নেই।
কিছু প্রাকৃতিক টিপস যা আপনার ঠোঁটের কালচে ভাব দূর করবেঃ
১. ঘুমাতে যাওয়ার আগে আপনার ঠোঁটে বাদাম তেল লাগান কারণ এটি আপনার ঠোঁটকে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে এবং বিবর্ণতা দূর করে।
২. এছাড়াও আপনি লেবুর রসের সাথে বাদাম তেল মিশিয়ে একই উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারেন।
৩. প্রতিদিন ঠোঁটে শসার রসের ব্যবহার আপনার কালো ঠোঁট উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।
৪. আরেকটি পরীক্ষিত এবং বহুল ব্যবহৃত প্রতিকার হলো লেবুর রস, গ্লিসারিন এবং মধুর মিস্রন প্রতিদিন ঘুমানোর আগে লাগিয়ে সারারাত রেখে দিতে হবে।