সোজা (Straight) চুলের স্টাইল কখনো পুরানো হয় না ! ঝলমলে আর সোজা চুল কে না পছন্দ করে?
বেশিরভাগ মেয়েই চায় তাদের চুল যেন সুন্দর, ঝলমলে, উজ্জ্বল, মসৃণ এবং সোজা হয়। বিশেষ করে তখনই যখন আপনার চুল বেশিরভাগ দিনেই অতিমাত্রায় কোঁকড়ানো এবং বাজে অবস্থায় থাকে।
যাইহোক, আপনার চুলের স্টাইল বার বার পরিবর্তন করা অথবা স্থায়ীভাবে চুল সোজা করা আপনার চুলের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। যদি আপনি চুল সোজা করার জন্য প্রাকৃতিক পদ্ধতি ব্যবহার করেন তাহলে এর ফলাফল পেতে হয়তো অনেক সময় লাগতে পারে, কিন্তু এটি অবশ্যই আপনার চুলের সৌন্দর্য্য অনেক গুণ বাড়িয়ে দিবে এবং চুলের কোন প্রকার ক্ষতি হওয়া থেকে রক্ষা করবে।
কিভাবে ১০ টি প্রাকৃতিক উপায়ে ঘরে বসেই আপনি আপনার চুল সোজা করতে পারবেন তা আজ আমি আপনাদের জানাবো।
কিভাবে ঘরে বসেই প্রাকৃতিক উপায়ে আপনার চুল সোজা করবেন ?
১. নারকেল দুধ এবং লেবু রস (Coconut Milk and Lemon Juice for Hair Straightening)
২. গরম তেলের ট্রিটমেন্ট (Hot Oil Treatment for Hair Straightening)
৩. দুধ স্প্রে (Milk Spray for Hair Straightening)
৪. ডিম এবং জলপাইয়ের তেল (Eggs and Olive Oil for Hair Straightening)
৫. দুধ এবং মধু (Milk And Honey For Hair Straightening)
৬. গুরো চালের ময়দা এবং ডিমের মাস্ক (Rice Flour and Egg Mask for Hair Straightening)
৭. কলা এবং পেপের মাস্ক (Banana and Papaya Mask for Hair Straightening)
৮. অ্যালোভেরা (Aloe Vera for Hair Straightening)
৯. কলা, দই এবং জল্পাইয়ের তেল (Banana, Curd and Olive Oil for Hair Straightening)
১০. আপেল সিডার ভিনেগার (Apple Cider Vinegar for Hair Straightening)
দ্রষ্টব্য: এই পদ্ধতিগুলো আপনাকে একদম পরিপূর্ণ সোজা চুল দেবে না। তবে, এই পদ্ধতি আপনার কোঁকড়ানো চুলকে অনেকটাই সোজা করবে এবং আপনার চুলকে মসৃণ এবং স্বাস্থ্যজ্জল করবে, এটি আপনার চুলকে সোজা বানাবে।
সহজে ঘরে চুল সোজা করার ১০টি প্রাকৃতিক উপায় নিচে দেওয়া হলঃ
১. নারকেলের দুধ এবং লেবু রস (Coconut Milk and Lemon Juice for Hair Straightening)
আপনার যা যা দরকার হবে ঃ
- ¼ কাপ নারকেলের দুধ
- ১ টেবিল চামচ লেবুর রস
প্রস্তুতির সময় ঃ সারারাত
প্রক্রিয়াকরণের সময় ঃ ৩০ মিনিট
প্রক্রিয়া ঃ
- নারকেল দুধ এবং লেবু রস ভালভাবে মিশিয়ে নিন।
- রাতে মিশ্রণটি ফ্রিজে রেখে দিন।
- সকালে, আপনার মিশ্রণটি চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত ভালোভাবে লাগান।
- প্রায় ৩০ মিনিটের জন্য মাথায় রাখুন।
- ঠান্ডা পানি এবং একটি কোমল সালফেট-মুক্ত শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
কত দিন পর পর ব্যবহার করবেন ঃ সপ্তাহে একবার।
কিভাবে এটি কাজ করবেঃ
লেবুর রস আপনার চুল সোজা করতে সাহায্য করে। আর নারকেল দুধের সংমিশ্রণের ফলে এই দুধ আপনার চুল কন্ডিশনিং করবে এবং আপনার চুলের গোড়ায় প্রচুর ভিটামিন সি পৌঁছাবে। এই মাস্ক আপনার চুলকে সিল্কি এবং মসৃণ করতে সাহায্য করবে এবং আপনি লক্ষ্য করবেন, প্রথমবার ব্যবহারেই আপনার চুল আগের চেয়ে অনেক স্নিগ্ধ ও কোমল হয়েছে।
২. গরম তেলের ট্রিটমেন্ট (Hot Oil Treatment for Hair Straightening)
আপনার যা যা দরকার হবে ঃ
- ১ টেবিল চামচ ক্যাস্টোর তেল
- ১ টেবিল চামচ নারকেল তেল
প্রস্তুতির সময় ঃ ২ মিনিট
প্রক্রিয়াকরণের সময় ঃ ৪৫ মিনিট
প্রক্রিয়া ঃ
- তেল মিশিয়ে নিন এবং কয়েক সেকেন্ড চুলায় দিয়ে হালকা গরম করে নিন।
- আপনার মাথার তালু থেকে চুলের আগা পর্যন্ত তেল প্রয়োগ করুন।
- আপনার চুলে তেল দেওয়া সম্পূর্ণ হয়ে গেলে ১৫ মিনিটের জন্য আপনার মাথার তালু ম্যাসাজ করুন।
- ৩০ মিনিটের জন্য রেখে দিন।
- ঠান্ডা পানি এবং কোমল সালফেট-মুক্ত শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
কত দিন পর পর ব্যবহার করবেন ঃ সপ্তাহে দুই বার।
কিভাবে এটি কাজ করবেঃ
ক্যাস্টোর অয়েল যেভাবে আপনার চুল ঠিক করে মজবুত এবং কন্ডিশনিং করে সেভাবে অন্য কোন কিছুই চুল ঠিক করতে পারে না । এটি আপনার চুলকে মসৃণ ও পুষ্টি প্রদান করে আপনার চুলের কোঁকড়ানো ভাব নিয়ন্ত্রন করে । এই উপকরণ গুলো ব্যবহারের মাধ্যমে আপনার চুল আরো মসৃণ এবং ঝলমলে উজ্জ্বল হয়ে উঠে।
৩. দুধ স্প্রে (Milk Spray for Hair Straightening)
আপনার যা দরকার হবে ঃ
- ¼ কাপ দুধ
- স্প্রে বোতল
প্রস্তুতির সময় ঃ ২ মিনিট
প্রক্রিয়াকরণের সময় ঃ ৩০ মিনিট
প্রক্রিয়া ঃ
- স্প্রে বোতলের মধ্যে দুধ ভর্তি করুন।
- আপনার চুল দুধে পরিপূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত স্প্রে করুন।
- ৩০ মিনিটের জন্য রেখে দিন।
- ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
কত দিন পর পর ব্যবহার করবেন ঃ সাপ্তাহে ১-২ বার।
কেন করবেন ঃ
দুধের প্রোটিন আপনার চুলকে শক্ত/মজবুত করতে সাহায্য করে। কোকঁড়ানো নিয়ন্ত্রণ করে এবং চুলে সিল্কি ভাব নিয়ে আসে।
৪. ডিম এবং অলিভ তেল (Eggs and Olive Oil for Hair Straightening)
আপনার যা দরকার হবে ঃ
- ২ টি ডিম
- ৩ টেবিল চামচ অলিভ তেল
প্রস্তুতির সময় ঃ ২ মিনিট
প্রক্রিয়াকরণের সময় ঃ ১ ঘন্টা
প্রক্রিয়া ঃ
- উপাদানগুলো একটি পাত্রে নিয়ে একসাথে মিশ্রণ করুন।
- আপনার চুলে ভাল ভাবে লাগান।
- ৩০ মিনিটের জন্য রেখে দিন।
- ঠান্ডা পানি এবং একটি সলফেট-মুক্ত (sulfate-free) শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
কত দিন পর পর ব্যবহার করবেন ঃ সপ্তাহে একবার।
কেন করবেন ঃ
ডিম গুলো প্রোটিন দ্বারা পরিপূর্ণ যা আপনার চুলকে পুষ্টি দিবে এবং অলিভ তেল মিশ্রণে চুলে চমৎকার সিল্কি ভাব চলে আসে। এই উপাদান গুলো মিশ্রণে আপনি আপনার চুলের মসৃণতা ফিরে পাবেন এবং কোঁকড়ানো ভাব থাকবে না।
৫. দুধ এবং মধু (Milk and Honey for Hair Straightening)
আপনার যা দরকার হবে ঃ
- ¼ কাপ দুধ
- ২ টেবিল চামচ মধু
প্রস্তুতির সময় ঃ ২ মিনিট
প্রক্রিয়াকরণের সময় ঃ ২ ঘন্ট
প্রক্রিয়া ঃ
- দুধ আর মধু ভালভাবে মিশ্রণ করুন।
- এবার আপনার পুরো মাথায় মিশ্রণটি লাগান।
- ২ ঘন্টার জন্য এটি মাথায় রেখে দিন।
- ঠান্ডা পানি এবং একটি সলফেট-মুক্ত (sulfate-free) শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
কত দিন পর পর ব্যবহার করবেন ঃ সাপ্তাহে ১ দিন।
কেন করবেন ঃ
দুধের প্রোটিন আপনার চুলকে পুষ্টি দিয়ে সাহায্য করে। মধু আপনার চুলকে কোমল/নরম করে চুলের ফাটল নিয়ন্ত্রণ করবে। এই মিশ্রণ প্রয়োগের ফলে আপনার চুল মসৃণ এবং চকচকে করবে।
আরো পড়তে পারেন চুল পড়া রোধে ১৫ টি কার্যকরী হেয়ার মাস্ক
৬. ময়দা এবং ডিম মাস্ক (Rice Flour and Egg Mask for Hair Straightening)
আপনার যা দরকার হবে
- ১টি সাদা ডিম
- ৫ টেবিল চামচ ময়দা
- ১ কাপ মুলতানি মাটি
- ¼ কাপ দুধ
প্রস্তুতির সময় ঃ ৫ মিনিট
প্রক্রিয়াকরণের সময় ঃ ১ ঘন্টা
প্রক্রিয়া ঃ
- একটি মসৃণ প্যাক না পাওয়া পর্যন্ত সকল উপাদান মিশ্রণ করুন। ( প্রয়োজনবোধে আরো দুধ ব্যবহার করতে পারেন যদি প্যাকটি বেশি ঘন এবং মুলতানি মাটির পরিমান বেড়ে যায়।)
- পুরো মাথায় মেখে নিন।
- ১ ঘন্টার জন্য এটি মাথায় রেখে দিন।
- ঠান্ডা পানি এবং একটি সলফেট-মুক্ত (sulfate-free) শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
কত দিন পর পর ব্যবহার করবেন ঃ সাপ্তাহে ১ দিন
কেন করবেন ঃ
এই প্যাকের সকল উপাদান গুলো আপনার চুলকে মসৃণ এবং পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করবে। এই প্যাক আপনার চুলকে মজবুত, ময়লা নির্মূল ও চুল ফাটা থেকে রক্ষা করবে এবং আপনাকে দিবে শক্ত এবং মজবুত চুল।
৭. কলা এবং পেঁপে মাস্ক (Banana and Papaya Mask for Hair Straightening)
আপনার যা দরকার হবে ঃ
- ১ টি কলা
- ১ টি পেপের বড় পিস
প্রস্তুতির সময় ঃ ৫ মিনিট
প্রক্রিয়াকরণের সময় ঃ ৪৫ মিনিট
প্রক্রিয়া ঃ
- কলা এবং পেঁপে সমান সমান হয়েছে কিনা সিউর হয়ে নিন।
- সকল উপাদান গুলি একসাথে ভাল ভাবে মিশ্রণ করুন। (প্রয়োজনবোধে ব্লান্ডার ব্যবহার করতে পারেন।)
- এবার প্যাকটি মাথায় লাগান।
- ৪৫ মিনিট শুকানোর জন্য রেখে দিন।
- ঠান্ডা পানি এবং একটি সলফেট-মুক্ত (sulfate-free) শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
কত দিন পর পর ব্যবহার করবেন ঃ সাপ্তাহে ১ বার
কেন করবেন ঃ
কলা এবং পেঁপে আপনার চুল লম্বা করবে এবং এটি চুলের পুষ্টি হিসাবে কাজ সরতে সাহায্য করে থাকে। এই প্যাক আপনার চুলকে নরম এবং ঝকঝকে করে তুলবে। এবং চুল হবে সুস্থ এবং মজবুত।
৮. অ্যালোভেরা (Aloe Vera for Hair Straightening)
আপনার যা দরকার হবে ঃ
- ¼ কাপ নারকেল তেল / অলিভ তেল
- ¼ কাপ অ্যালোভেরা জেল
প্রস্তুতির সময় ঃ ২ মিনিট
প্রক্রিয়াকরণের সময় ঃ ৪০ মিনিট
প্রক্রিয়া ঃ
- নারকেল তেল/ অলিভয়েল উষ্ণ গরম করুন।
- অ্যালোভেরা জেলার সাথে তেল ভাল ভাবে মিশ্রণ করুন।
- এবার প্যাকটি মাথায় লাগান।
- ৪০ মিনিট শুকানোর জন্য রেখে দিন।
- ঠান্ডা পানি এবং একটি সলফেট-মুক্ত (sulfate-free) শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
কত দিন পর পর ব্যবহার করবেন ঃ সাপ্তাহে ১ দিন
কেন করবেন ঃ
অ্যালোভেরার জেল দিয়ে তৈরি প্যাক আপনার চুল বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে এবং আপনার চুলকে মসৃণ ও নরম রাখতে সাহায্য করবে। এই প্যাকটি আপনার চুলে হাইড্রোজেন ডুকাতে সাহায্য করে এবং কোকঁড়ানো ভাব কমায়।
৯. কলা, দই এবং অলিভ তেল (Banana, Curd and Olive Oil for Hair Straightening)
আপনার যা দরকার হবে ঃ
- ২ টা পাকা কলা
- ২ টেবিল চামচ মধু
- ২ টেবিল চামচ অলিভওয়েল
- ২ টেবিল চামচ দই
প্রস্তুতির সময় ঃ ৫ মিনিট
প্রক্রিয়াকরণের সময় ঃ ৩০ মিনিট
প্রক্রিয়া ঃ
- ভালভাবে কলা মিশ্রণ করুন।
- এবার সব উপাদান গুলো একসাথে ভাল করে মিশ্রণ করুন।
- এবার আপনার চুলে প্যাকটি ভালভাবে লাগান।
- ৩০ মিনিট শুকানোর জন্য রেখে দিন।
- ঠান্ডা পানি এবং একটি সলফেট-মুক্ত (sulfate-free) শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
কত দিন পর পর ব্যবহার করবেন ঃ সাপ্তাহে ১ দিন
কেন করবেন ঃ
এই প্যাকটি আপনার চুলের গুণগতমান এবং গঠন উন্নত করতে দ্বিগুণ পরিমাণে কাজ করে। এটি আপনার চুল শক্ত এবং কোকঁড়ানো ভাকে পরিত্রাণ করতে সাহায্য করে।
১০. আপেল সিডার ভিনেগার (Apple Cider Vinegar for Hair Straightening)
আপনার যা দরকার হবে ঃ
- ২ টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার
- ১ কাপ পানি
প্রস্তুতির সময় ঃ ২ মিনিট
প্রক্রিয়াকরণের সময় ঃ ২ মিনিট
প্রক্রিয়া ঃ
- একটি পাত্রে পানির মধ্যে আপেল সিডার ভিনেগার পাতলা করে মিশান।
- একটি সলফেট-মুক্ত (sulfate-free) শ্যাম্পু দিয়ে আপনার মাথা ধুয়ে ফেলুন।
- এবার পরিষ্কার মাথায় পানিতে মিশানো আপলে সিডার ভিনেগার দিয়ে আপনার মাথা ধুয়ে ফেলুন।
- এরপর আপনার চুল আর পানি দ্বারা ধুবেন না।
কত দিন পর পর ব্যবহার করবেন ঃ সাপ্তাহে ১ বার।
কেন করবেন ঃ
আপেল সিডার ভিনেগার আপনার মাথার অতিরিক্ত তৈলাক্ত, ময়লা দূর করতে সাহায্য করে। এটি আপনার মাথার চামড়া উঠা থেকে বিরত রাখে এবং চামড়াটাকে মসৃণ রাখে।
আপেল সিডার ভিনেগার আপনার কোকাঁড়ানো চুলকে সোজা করে এবং আপনার চুলকে স্বাস্থ্যকর করে তুলে, চুলকে দেয় এক চকচকে আভাস।
শেষ কথা
এখন আপনি জানেন কিভাবে স্বাভাবিকভাবে আপনার চুল ঘরে বসে সোজা করতে হবে, আপনি কি জন্য অপেক্ষা করছেন?
এই উপাদান গুলো ঘরে বসে ব্যবহার করে আপনি আপনার কোকঁড়ানো চুলকে বিদায় দিতে পারেন এবং সিলকি চুলকে স্বাগতম জানাতে পারেন। সেই সাথে আপনার চুল হবে নরম এবং স্বাস্থ্যকর।
আপনি কি এই প্রাকৃতিক উপাদানের কোন একটি ব্যবহার করেছেন? তারা কিভাবে কতটা সাহায্য করেছে আপনার চুলকে? নীচের মন্তব্য বক্সে আপনার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আমাকে জানান।