খুশকির সাথে মোকাবিলা করা খুবই বিরক্তিকর একটি ব্যাপার। এটা বিব্রতকর এবং অবাঞ্ছিত। কিন্তু আপনি কি কখনও খুশকির জন্য চুলের তেল ব্যবহার করার কথা ভেবেছেন? তেল খুশকির জন্য একটি নিরাপদ, প্রাকৃতিক এবং কার্যকরী চিকিৎসা, যার ঝুঁকি বেশির ভাগ বাণিজ্যিক অ্যান্টি-ড্যানড্রাফ পণ্যের তুলনায় কম, এইসব পণ্যে অনেক রাসায়নিক পদার্থ থাকে। তবে অপরপক্ষে তেল ব্যবহারে আপনার চুলের ক্ষতি করবে না এবং মাথার ত্বক শুকিয়ে যাবে না।
খুশকির চিকিৎসা, নিয়ন্ত্রণে ও প্রতিরোধে আপনি কোন তেল ব্যবহার করতে পারেন তা পরীক্ষা করতে নিচের লিখাটি খুবই কার্যকর হবে।
খুশকির কারণ কী?

শীতকালে বাতাস শুষ্ক হয়ে গেলে খুশকি বেশি হয়। সঠিকভাবে চিকিৎসা বা খুশকি নির্মূলের জন্য, খুশকি হওয়ার কারণগুলি সনাক্ত করা অপরিহার্য।
- মাথার ত্বকে জ্বালাপোড়া এবং মাথার ত্বক থেকে তেলের অতিরিক্ত নিঃসরণ (অবস্থাকে সেবোরিক ডার্মাটাইটিসও বলা হয়) খুশকির কারণ হতে পারে।
- অনিয়মিত মাথার ত্বক পরিষ্কার করার ফলে ত্বকে মৃত কোষ জমে যায়, যার ফলে ফ্লেক্স এবং চুলকানি হয়।
- ত্বকের কোষের অত্যধিক বৃদ্ধি ম্যালাসেজিয়া গঠন করতে পারে,এটি এক ধরনের ফাংগাস যা মাথার ত্বকের জ্বালা বাড়ায়।
- কেমিক্যালযুক্ত কিছু চুলের পণ্য মাথার ত্বকের ডার্মাটাইটিসকে আরও খারাপ করতে পারে।
মাথার ত্বকে খুশকির কারণ যাই হোক না কেন, এর চিকিৎসা হিসেবে চুলে তেলের ব্যবহার সকলকেই বিস্মিত করবে।
যারা ক্যামিকেল মিশ্রিত চুলের পণ্য এড়িয়ে চলতে চান তারা হারবাল চুলের তেল বেশি ব্যবহার করতে পারেন।
চুলের গোড়ায় হালকা গরম তেল ব্যবহার করা, খুশকি নির্মূলে একটি কার্যকর পন্থা হিসেবে কাজ করে, কারণ তারা চুলের স্ট্র্যান্ডগুলিকে মসৃণ করে, চুল পড়া কমায় এবং চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে।
আসুন জেনে নেওয়া যাক খুশকির জন্য সেরা কিছু তেল সম্পর্কে:
১. নারকেল তেল (Coconut Oil):

নারকেল তেল মাথার ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করতে সাহায্য করে। এটি মাথার ত্বকে খুশকির কারণ হতে পারে এমন ছত্রাক কমাতেও সাহায্য করে।
২. রোজমেরি তেল (Rosemary Oil):

খুশকির জন্য রোজমেরি তেল ব্যবহার করতে পারেন কারণ এতে নির্দিষ্ট অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি একটি অ্যান্টি-ফাঙ্গাল এজেন্ট হিসাবেও কাজ করে। কেউ কেউ মতামত দিয়ে থাকেন যে এটি মাথার ত্বকের চুলকানি কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
৩. তুলসী তেল (Basil Oil):

তুলসী তেলের গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিকের ঘন অনুপাত খুশকি কমাতে পারে এবং চুল পড়া নিরাময়ে সাহায্য করতে পারে। এটি চুলকানিযুক্ত মাথার ত্বকের চিকিৎসা করতেও সহায়তা করতে পারে।
৪. টি ট্রি অয়েল (Tea Tree Oil):

চা গাছের তেলে বা টি ট্রি অয়েল এ অ্যান্টি-ফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা খুশকি এবং মাথার ত্বকের জ্বালা/চুলকানি উপশম করতে সাহায্য করতে পারে।
৫. লেমনগ্রাস তেল (Lemongrass Oil)

একটি গবেষণায় দেখা যায় যে,অ্যান্টি-ড্যান্ড্রাফ হেয়ার টনিক ধারণকারী লেমনগ্রাস তেল, খুশকি দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও আরো অনেক গুলো গবেষণা এই তেলকে খুশকি নিরোধক বলে আখ্যায়িত করেছে।
৬. পেপারমিন্ট তেল (Peppermint Oil):

পেপারমিন্ট তেলে শক্তিশালী অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে তাই এটি খুশকির চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে।
অ্যান্টি-ড্যান্ড্রাফ হেয়ার অয়েল কীভাবে প্রয়োগ করবেন?
চুলে তেল ব্যবহার করা সহজ। আপনার আঙ্গুল দিয়ে আপনার মাথার ত্বকে কয়েক ফোঁটা তেল ম্যাসাজ করুন। আপনি হয় আপনার চুলে তেলটি সারারাত রেখে দিতে পারেন বা এটি দিয়ে ১ থেকে ২ ঘন্টা পর ধুয়ে ফেলতে পারেন।

যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই তেল লাগান। প্রয়োজনের অতিরিক্ত তেল লাগানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই।
হেয়ার অয়েল প্রয়োগ করার পরবর্তী পদক্ষেপ কি হওয়া উচিত?
একবার আপনি আপনার পছন্দের তেল প্রয়োগ করার পরে, আপনাকে পরবর্তী ক্ষতি রোধ করতে অবশ্যই যত্ন নিতে হবে।
- চিরুনি দিয়ে চুল টানবেন না (হয় ব্রাশ দিয়ে বা আপনার আঙ্গুল দিয়ে যত্ন করে টেনে নিবেন)। গরম তেল দেয়া অবস্থায় চুল দুর্বল হতে পারে তখন এটি টানলে চুল ভেঙে যেতে পারে বা পড়ে যেতে পারে।
- টাইট করে চুল বাধা এড়িয়ে চলতে হবে। আঁটসাঁট পনিটেল বা আঁটসাঁট বিনুনি করা উচিত না। যদি চুল বাঁধতে চান সেক্ষেত্রে ক্লিপ ব্যবহার করে বাঁধতে পারেন।
- চুলে তেল দেয়া অবস্থায় চুলের মাস্ক বা ক্রিম বা চুলের কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে না। একসাথে একাধিক চিকিৎসা চুল পাতলা করতে পারে। অতএব, ফোকাস শুধু একটিতেই হতে হবে।
- তেল দেওয়ার সাথে সাথে চুল ধুয়ে ফেলবেন না। তেলটিকে চুলের মরা চামড়া তুলে আনার জন্য এবং আপনার মাথার ত্বকের গোড়ায় প্রবেশ করতে কিছু সময় দিতে হবে । চুলের তেল মাথার ত্বকে প্রায় ১ থেকে ২ ঘন্টা রেখে দিতে পারেন।
আসলে খুশকি হওয়ার কারণ অনেক যার কারণে সর্বদাই চুলের যত্ন নেওয়া আমাদের জন্য অপরিহার্য। খুশকির চিকিৎসার জন্য অনেক ওভার-দ্য-কাউন্টার লোশন এবং শ্যাম্পু পাওয়া গেলেও, এই পোস্টে উল্লিখিত তেলের মতো প্রাকৃতিক প্রতিকার বেছে নিতে পারেন অনেকেই, এতে খুশকি নিয়ন্ত্রণে করা যাবে অনেকখানি। ফলাফল পেতে নিশ্চিত করতে হবে যে, এটি নিয়মমতো এবং নিয়মিত ব্যবহার হচ্ছে কিনা। কিন্তু সমস্যা সমাধান না হলে, একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে ।