আপনার চোখগুলো কি দেখতে অবিকল রেকুনের (আমেরিকান স্তন্যপায়ী প্রাণী যার চোখের চারপাশ অনেক কালো) মত কালো হয়ে গেছে?
হ্যাঁ, আমি আপনার কষ্টটা বুঝতে পারছি। ডার্ক সার্কেল লুকিয়ে রাখা বা মেইকাপ দিয়ে ঢেকে রাখা অনেক কঠিন। এবং, তখন ব্যাপারটা কেমন হয় যখন আপনি মেইকাপ লাগাতে পছন্দ না করেন? এটা ভাবাটা অনেকটা দুঃস্বপ্নের মত, যার সবচেয়ে বড় কারণ হলো ডার্ক সার্কেল।
ঠিকমত না ঘুমানো, দুশ্চিন্তা, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং চোখের নিচের সংবেদনশীল ত্বকের যত্ন না নেওয়া সহজেই আপনার ত্বক নিস্তেজ এবং কালো করে তুলে।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বক এর উজ্জলতা এবং নমনীয়তা হারাতে থাকে। এই মুখ্য সমস্যাটি সমাধান করার জন্য সর্বোত্তম উপায় হলো চোখের নিচের স্থানের যত্ন নেওয়া শুরু করা। আর তাই আমি আপনার জন্য একটি শক্তিশালী উপাদান নিয়ে এসেছি – ক্যাস্টর অয়েল।
এই তেলটি কিভাবে আপনার ডার্ক সার্কেল দূর করতে সাহায্য করে তা সম্পর্কে আরো জানতে চান? এর উপকারীতা এবং ডার্ক সার্কেল দূর করতে ঘরে কিভাবে ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করবেন তা জানতে নিচে পড়তে থাকুন।
ডার্ক সার্কেল দূর করতে ক্যাস্টর অয়েলের উপকারিতা
সাময়িক ব্যবহারের জন্য অরগ্যানিক ক্যাস্টর অয়েল সেরা। ডার্ক সার্কেল, শুষ্কতা, চুলকানি, একজিমা সোরিয়াসিস ইত্যাদি দূর করতে এটি খুব ভালো প্রতিকার হিসেবে কাজ করে। ত্বকের জন্য এর উপকারিতা গুলো নিচে দেওয়া হলোঃ
- এটি খুব ভালো একটি ময়েশ্চারাইজার। এতে প্রচুর পরিমানে
ফ্যাটি এসিড রয়েছে যা আপনার ত্বকে পুষ্টি জোগায় এবং ত্বককে হাইড্রেটেড রাখে। - এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বহন করে যা আপনার ত্বককে র্যাডিকেল
দ্বারা ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। - সকল প্রকার দূষণ এবং ময়লা শুষে নেয়, এবং ত্বককে
পরিষ্কার এবং সতেজ করে তুলে। - ক্যাস্টর অয়েল কোলাজেন এবং স্থিতিস্থাপকতার সমন্বয় বৃদ্ধি
করে। এটি মুখের চামড়া ঝুলে পরা এবং বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে। এটি ত্বককে পুনরায়
নবীন করে তুলে এবং ত্বককে আরো প্রাণবন্ত ও উজ্জ্বল করে তুলে। - এটি প্রাকৃতিকভাবেই ফাংগাস এবং সংক্রামক রোগের জীবাণুনাশক
হিসেবে কাজ করে।
ক্যাস্টর অয়েলের এই বৈশিষ্ট্যগুলো ডার্ক সার্কেলের প্রধান কারণগুলো খুঁজে বের করে তা দূর করে। এটি ব্যবহারের আরেকটি সুবিধা হলো এর বলিরেখা দূর করার ক্ষমতা রয়েছে। চলুন দেখে নেই ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করার বিভিন্ন পদ্ধতি।
ডার্ক সার্কেলের জন্য ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করার পদ্ধতি
১. সরাসরি ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার
২. ক্যাস্টর অয়েল এবং দুধ
৩. ক্যাস্টর অয়েল এবং বাদাম তেল
৪. ক্যাস্টর অয়েল এবং নারিকেল তেল
এই রেসিপি গুলো বযবহারে আর কোনো ডার্ক সার্কেল থাকবে না
১. সরাসরি ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার
উপকরণ
- কয়েক ফোঁটা ক্যাস্টর অয়েল
প্রক্রিয়া
- আপনার আঙ্গুলের অগ্রভাগে তেলটি নিন এবং ঘষতে থাকুন যাতে তেলটি
হালকা গরম হয়। - আপনার চোখের নিচে তেলটি লাগান।
- এক থেকে দুই মিনিট আলতোভাবে ম্যাসাজ করুন।
- সারারাত চোখের নিচে লাগিয়ে রাখুন।
কতবার ব্যবহার করবেন
প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এটি ব্যবহার করবেন ।
এটি কিভাবে কাজ করে
উপরে বর্ণিত অনেকগুলো উপকারিতা থেকেই বোঝা যায় যে ক্যাস্টর অয়েল একাই ডার্ক সার্কেল দূর করতে পারে।
২. ক্যাস্টর অয়েল এবং দুধ
উপকরণ
- ১ চা চামচ ক্যাস্টর অয়েল
- ১ চা চামচ দুধ
প্রক্রিয়া
- একটি ছোট পাত্রে দুধ এবং তেল ভালোভাবে ফেটিয়ে নিন যাতে তেল
দুধের সাথে ভালোভাবে মিশে যায়। - মিশ্রনটি আপনার চোখের নিচে লাগান এবং এক ঘন্টার জন্য রেখে
দিন। - কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
কতবার ব্যবহার করবেন
প্রতিদিন একবার লাগাবেন।
এটি কিভাবে কাজ করে
দুধে থাকা ল্যাকটিক এসিড আপনার ত্বকের রঙ উজ্জ্বল করবে। এটি ত্বকের মৃত এবং মরা কোষগুলো দূর করে প্রাণবন্ত এবং উজ্জ্বল ত্বক বের করে আনে।
৩. ক্যাস্টর অয়েল এবং বাদাম তেল
উপকরণ
- ৩-৪ ফোঁটা ক্যাস্টর অয়েল
- ৩-৪ ফোঁটা বাদাম তেল
প্রক্রিয়া
- তেলগুলো মিশিয়ে নিন এবং এটি আপনার চোখের চারপাশে লাগান।
- আপনার আঙ্গুল দিয়ে চোখের নিচের ত্বক আলতোভাবে চাপুন।
- সারারাত তেলটি চোখে লাগিয়ে রাখুন।
- আপনি চাইলে এই তেলটি বেশি করে বানিয়ে একটি বায়ুরোধী জারে
রেখে দিতে পারেন।
কতবার ব্যবহার করবেন
ঘুমাতে যাওয়ার আগে প্রতিদিন রাতে লাগাবেন।
এটি কিভাবে কাজ করে
বাদাম তেল ময়েশ্চার হিসেবে কাজ করে। এটি ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লক করতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুন ক্যাস্টর অয়েলের ১১ টি উপকারিতা, ব্যবহার বিধি ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
৪. ক্যাস্টর অয়েল এবং নারিকেল তেল
উপকরণ
- ক্যাস্টর অয়েল
- নারিকেল তেল
প্রক্রিয়া
- সমপরিমাণ ক্যাস্টর অয়েল এবং নারিকেল তেল নিন। ভালোভাবে
মিশিয়ে নিন। - মিশ্রনটি ডার্ক সার্কেল এবং চোখের পাতার উপরে লাগান।
- এক অথবা দুই মিনিট ম্যাসাজ করুন এবং সারারাত রেখে দিন।
কতবার ব্যবহার করবেন
আশানুরূপ ফল না পাওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন রাতে লাগান।
এটি কিভাবে কাজ করে
ক্যাস্টর অয়েলের মত নারিকেল তেলেও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফ্যাটি এসিড রয়েছে। এছাড়াও এটি প্রদাহ প্রতিরোধক। এটি রক্তের শিরা এবং কৈসিক নাড়ীতে রক্তপ্রবাহ বাড়াতে সাহায্য করে।
যদিও ক্যাস্টর অয়েল এবং অন্য উপকরণগুলো ব্যবহার করা নিরাপদ, তারপরও কিছু সতর্কতা অবলম্বন এবং কিছু নির্দিষ্ট বিষয় মনে রাখা ভালো।
টিপস এবং সতর্কতা
- তেল ব্যবহারে সতর্ক থাকুন যাতে তেল কোনভাবেই চোখের মধ্যে না
যায়। আর যদি চলে যায় তাহলে তুলোর সাহায্যে চোখ থেকে বের করে ফেলুন এবং এরপর
পরিষ্কার পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলুন। - সবসময় আপনার অনামিকা আঙ্গুল দিয়ে ছোখের চারপাশে ম্যাসাজ
করুন। এই আঙ্গুলটি চোখের নিচে চাপ সৃষ্টি করে এবং চোখের নিচের সংবেদনশীল ত্বকের
জন্য উপযোগী। - ধুয়ে ফেলার পর,
ত্বক শুকিয়ে নিন এবং একটি ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। - আপনি যদি কখনো ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করে না থাকেন, তাহলে আপনার
হাতের কনুইয়ে অল্প একটু লাগিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। এটি করার কারণ হলো আপনি
এই তেলের সংস্পর্শে এলারজিক বা আপনার ত্বক এই তেলে সনবেদনশীল কিনা তা দেখা।
ক্যাস্টর অয়েল অনেক বছর ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে, বিশেষ করে আয়ুরবেদিক ঔষধে ব্যবহার হয়ে আসছে অনেক রকম ত্বকের সমস্যা দূর করতে। এর উপাদানগুলো ত্বককে সর্বোত্তম রাখতে সাহায্য করে।
এটি আপনার ত্বকের যত্নের রুটিনে যোগ করে, আপনি কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ডার্ক সার্কেল দূর করতে পারেন। এবং এর প্রভাব অবশ্যই দীর্ঘস্থায়ী হবে যদি সঠিক জীবনধারা এবং খাওয়া-ডাওয়ার অভ্যাস করা হয়।