• Skip to primary navigation
  • Skip to main content
  • Skip to primary sidebar

রূপকথন

Healthier Lifestyljhhe Choices

  • Facebook
  • Home
  • Shop
  • Blog
    • মেকআপ
      • ব্রাইডাল মেকআপ
      • সেলিব্রিটি মেকআপ
      • চোখের সাজসজ্জা
      • মুখের রূপসজ্জা
      • লিপ মেকআপ
      • মেকআপের ধারণা
      • মেহেদী ডিজাইন
      • নখের ডিজাইন
    • চুলের যত্ন
    • ত্বকের যত্ন
    • চুল স্টাইল
    • স্বাস্থ্য ও সুখ
      • ফিটনেস
      • স্বাস্থ্যকর খাবার
      • ওজন বৃদ্ধি
      • ওজন কমানো
      • যোগ ব্যায়াম
      • ডায়েট টিপস
      • আয়ুর্বেদ
  • Contact Us

Weight Loss (ওয়েট লস)

ভেগান ডায়েট ওজন কমানোর: একটি টেকসই পথ যা আপনাকে সুস্থ ও সুন্দর রাখবে

by রূপকথন ডেস্ক

আপনি কি ওজন কমাতে চান এবং একই সাথে পরিবেশ ও নৈতিক দিক থেকে সচেতন থাকতে চান? তাহলে ভেগান ডায়েট আপনার জন্য আদর্শ হতে পারে। এটি শুধু ওজন কমানোর জন্যই উপকারী নয়, এটি হজম, হৃদরোগের স্বাস্থ্য ও অন্যান্য অনেক সুবিধাও প্রদান করে। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জানবো কীভাবে ভেগান ডায়েট আপনাকে সুস্থভাবে ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে।

ভেগান ডায়েট কী?

ভেগান ডায়েট এমন একটি ডায়েট যেখানে প্রাণীজাত কোনো পণ্য ব্যবহৃত হয় না, এর বদলে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন উদ্ভিজ্জ খাদ্য—যেমন সবজি, ফল, ডাল, বাদাম, শস্য ইত্যাদি। তবে, ভেগান ডায়েট ব্যবহার করে যদি আপনি সঠিকভাবে ওজন কমাতে চান, তবে জানতে হবে কোন খাবারগুলি আপনার ডায়েটে রাখা উচিত এবং কোনগুলো এড়িয়ে চলা উচিত।

ভেগান ডায়েট ও ওয়েট লসের বিজ্ঞান

অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে, ভেগান ডায়েটের সঙ্গে ওজন কমানোর সম্পর্ক রয়েছে। ভেগান খাবার সাধারণত কম ক্যালোরি ও স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত হয় এবং এতে প্রচুর ফাইবার থাকে, যা আপনাকে দীর্ঘ সময় ধরে পূর্ণ রাখে। নিচে কিছু কারণ দেওয়া হলো কেন এটি কাজ করে:

  • কম ক্যালোরি ডেন্সিটি: ভেগান খাবার, যেমন সবজি ও ফল, কম ক্যালোরি কিন্তু প্রচুর পুষ্টি সমৃদ্ধ, ফলে আপনি কম ক্যালোরি খেতে পারবেন কিন্তু খিদে অনুভব করবেন না।
  • প্রচুর ফাইবার: ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার আপনাকে তৃপ্ত রাখতে সাহায্য করে এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক।

৫টি ভেগান ডায়েট টিপস যা আপনার ওয়েট লসকে আরও কার্যকরী করবে

১. সারা দিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন
পানি আপনার বিপাকীয় প্রক্রিয়াকে সক্রিয় রাখে এবং অতিরিক্ত খাবার খাওয়া থেকে আপনাকে বিরত রাখে। দিনে কমপক্ষে ৮ গ্লাস পানি পান করুন।

২. প্রোটিনের দিকে মনোযোগ দিন
অনেকে মনে করেন ভেগান ডায়েটে প্রোটিনের অভাব থাকে। কিন্তু ভেগান প্রোটিনের উৎস যেমন মটর, ডাল, টোফু, এবং কোইনোয়া রয়েছে।

৩. পরিপূর্ণ খাবার খান
প্রক্রিয়াজাত ভেগান খাবার থেকে দূরে থাকুন। ফল, সবজি, শস্য ইত্যাদি পরিপূর্ণ এবং পুষ্টিকর খাবার খান।

৪. পোরশনের দিকে খেয়াল রাখুন
ভেগান খাবারও বেশি খেলে আপনার ওজন বাড়তে পারে। তাই খাবারের পরিমাণ মনোযোগ দিয়ে খাওয়া উচিত।

৫. কার্বস কম খাওয়ার চেষ্টা করুন
সাদা চাল বা সাদা রুটি কম খান, এগুলোর জায়গায় ব্রাউন রাইস বা গোটা শস্যের রুটি খান।

সুস্থ ও সাসটেইনেবল ওয়েট লসের জন্য ভেগান ডায়েট

  1. পরিবেশবান্ধব: ভেগান ডায়েটের কার্বন ফুটপ্রিন্ট অনেক কম, যা পরিবেশ রক্ষায় সহায়তা করে।
  2. সাশ্রয়ী: ভেগান খাবার, যেমন ডাল ও শস্য, প্রক্রিয়াজাত মাংসের চেয়ে অনেক সস্তা।
  3. শরীরের জন্য ভালো: ভেগান ডায়েটে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও মিনারেল থাকে, যা আমাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।

কীভাবে ওজন কমানোর জন্য ভেগান ডায়েট শুরু করবেন ?

ওজন কমানোর জন্য ভেগান ডায়েট শুরু করতে চাইলে ধাপে ধাপে উদ্ভিজ্জভিত্তিক খাবারে অভ্যস্ত হওয়া জরুরি। ফলমূল, শাকসবজি, ডাল, গোটা শস্য, বাদাম ও বীজজাত খাবারের দিকে মনোযোগ দিন। পুষ্টিকর ও সম্পূর্ণ খাবার বেছে নিন। পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখুন, যাতে ক্যালোরি ঘাটতি তৈরি হয়। ফাইবার, প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর চর্বি সমন্বিত ব্যালেন্সড খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। ভিন্নধর্মী ভেগান রেসিপি ও মিল প্ল্যানিং করুন, যাতে ক্ষুধা কমে এবং আপনি তৃপ্ত থাকেন। ধৈর্য ও নিয়মিততা হলো টেকসই ও সফল ওজন কমানোর মূল চাবিকাঠি।

নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করলে আপনি একটি পরিকল্পিত ও সুষম ভেগান ওজন কমানোর ডায়েট তৈরি করতে পারবেন:

১. পর্যাপ্ত প্রোটিন খান

ওজন কমানোর ডায়েট শুরু করলে প্রোটিন গ্রহণের উপর আলাদা গুরুত্ব দিতে হয়। প্রোটিন ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ, মাংসপেশি রক্ষা, ওজন কমানো এবং সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভেগান ডায়েটে প্রোটিন নিশ্চিত করতে হলে ডাল, মসুর, ছোলা, টোফু, টেম্পে, এডামামে ইত্যাদি খান। বাদাম ও বীজ—যেমন: আমন্ড, চিয়া সিড, হেম্প সিডেও প্রোটিন থাকে। এইসব খাবার প্রতিদিনের ডায়েটে রাখুন যেন শরীরের প্রোটিন ও অ্যামিনো অ্যাসিডের চাহিদা পূরণ হয়।

প্রয়োজনে কোয়িনোয়া ও নিউট্রিশনাল ইস্টের মতো প্রোটিন-সমৃদ্ধ ফোর্টিফায়েড খাবার যুক্ত করুন। পি প্রোটিন বা রাইস প্রোটিন পাউডারের মতো ভেগান প্রোটিন সাপ্লিমেন্টও স্মুদি বা অন্য রেসিপিতে ব্যবহার করতে পারেন। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, উদ্ভিজ্জ প্রোটিন পাউডার উচ্চ-তীব্রতার অনুশীলনে হুই প্রোটিনের মতোই কার্যকর। আপনার প্রোটিন গ্রহণ পর্যবেক্ষণ করুন এবং প্রয়োজনে রেজিস্টার্ড ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিন।

২. ফাইবারসমৃদ্ধ খাবারে মনোযোগ দিন

ওজন কমাতে ফাইবার খুব বড় একটি সহায়ক উপাদান। এটি দীর্ঘ সময় তৃপ্তি দেয়, অতিরিক্ত খাওয়া কমায় এবং হজমের স্বাস্থ্য উন্নত করে। গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যালোরি বা ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট যাই হোক না কেন, ফাইবার গ্রহণ ওজন কমায়।

ফাইবার বাড়ানোর কিছু উপায়:

  • ব্রাউন রাইস, কোয়িনোয়া, ওটস, হোল হুইট পাস্তার মতো গোটা শস্য নির্বাচন করুন।
  • ডাল, মসুর, ছোলার মতো ফাইবার-সমৃদ্ধ ডাল ও লিগিউম খান। এগুলো সালাদ, স্যুপ বা স্ট্যুতে দিন।
  • নন-স্টার্চি সবজি যেমন: পালং, ব্রকলি, ক্যাপসিকাম এবং ফাইবার-সমৃদ্ধ ফল যেমন: বেরি, আপেল ও লেবুজাতীয় ফল নিয়মিত খান।
  • বাজার থেকে কিনতে গেলে প্যাকেটের লেবেল চেক করুন, প্রতি সার্ভিংয়ে অন্তত ৩-৫ গ্রাম ফাইবার আছে কি না দেখুন।

৩. প্রক্রিয়াজাত ভেগান খাবার এড়িয়ে চলুন

ভেগান ডায়েটে নানা রকমের প্লান্ট-ভিত্তিক বিকল্প থাকলেও সব ভেগান-লেবেলযুক্ত খাবার স্বাস্থ্যকর নয়। বিশেষ করে ওজন কমানোর জন্য প্রক্রিয়াজাত ভেগান খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। ভেগান বার্গার, পিজ্জা, ফ্রোজেন খাবার বা মিষ্টান্নের মধ্যে উচ্চমাত্রার চিনি, ট্রান্স ফ্যাট ও অ্যাডিটিভ থাকে, যা ওজন কমানো ব্যাহত করে।

এই ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাবার বরং ওজন বাড়িয়ে দেয়। তাই সম্পূর্ণ, প্রাকৃতিক, অপ্রক্রিয়াজাত খাবার বেছে নিন। এতে ক্যালোরি কম থাকে এবং পুষ্টি ও ফাইবার বেশি থাকে, যা ওজন কমাতে সহায়তা করে।

৪. খাবারের লেবেল ভালোভাবে পড়ুন

ওজন কমাতে চাইলে খাদ্যপণ্যের লেবেল ভালোভাবে পড়া জরুরি। অনেক প্রক্রিয়াজাত খাবারে লুকানো পশু-উৎপাদিত উপাদান, অতিরিক্ত চিনি বা অস্বাস্থ্যকর চর্বি থাকতে পারে। তাই “ভেগান” বা “প্লান্ট-বেসড” লেবেল দেখে কিনুন। উপাদান তালিকায় প্রাণীজাত উপাদান আছে কি না খতিয়ে দেখুন।

এছাড়া ক্যালোরি, স্যাচুরেটেড ফ্যাট, ট্রান্স ফ্যাট, যোগ চিনি এবং সোডিয়ামের মাত্রা লক্ষ্য করুন। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত খাবারের লেবেল ব্যবহার করে, তাদের ওজন কমানোর হার ২–৪ গুণ বেশি।

কম চিনি, কম ফ্যাট এবং বেশি ফাইবারযুক্ত খাবার বেছে নিন এবং সচেতনভাবে খাবার নির্বাচন করুন।

৫. চিনি বাদ দিন

ওজন কমাতে হলে পরিশোধিত চিনি খাওয়া একেবারে কমিয়ে দিতে হবে। চকলেট, কোমল পানীয়, ও নানা প্রক্রিয়াজাত খাবারে থাকা রিফাইন্ড সুগার শুধুই খালি ক্যালোরি দেয়। এগুলো শক্তি দ্রুত বাড়িয়ে আবার দ্রুত কমিয়ে দেয়, ফলে ক্ষুধা বাড়ে ও ওজন বাড়ে।

এর পরিবর্তে প্রাকৃতিক মিষ্টির উৎস যেমন: ফলমুল খান। ফল শরীরে ভিটামিন, মিনারেল ও ফাইবার সরবরাহ করে। প্রয়োজন হলে খুব অল্প পরিমাণে ম্যাপল সিরাপ বা আগাভ নেকটার ব্যবহার করতে পারেন, তবে পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

ভেগান ডায়েটে ওজন কমানোর জন্য কিছু কার্যকর টিপস

ভেগান ডায়েট অনুসরণ করে ওজন কমানো সম্ভব, তবে আরও কার্যকরভাবে ফল পেতে নিচের টিপসগুলো অনুসরণ করুন:

১. হাইড্রেটেড থাকুন

পর্যাপ্ত পানি পান করলে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং অতিরিক্ত খাওয়া এড়ানো যায়। অনেক সময় পিপাসাকে ক্ষুধা ভেবে খাওয়া শুরু করি, যা ওজন বাড়াতে পারে।

২. সচেতনভাবে খাবার খান (Mindful Eating)

আপনি কী খাচ্ছেন এবং কতটুকু খাচ্ছেন, সেদিকে মনোযোগ দিন। ধীরে ধীরে চিবিয়ে খেলে সহজে বোঝা যায় কখন পেট ভরে গেছে, ফলে অতিরিক্ত খাওয়া কমে যায়।

৩. পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করুন

ছোট প্লেট ও বাটি ব্যবহার করলে খাবারের পরিমাণে নিয়ন্ত্রণ থাকে। রেস্টোরেন্টে খাওয়ার সময়েও খাবারের পরিমাণ সম্পর্কে সচেতন থাকুন।

৪. শারীরিক ব্যায়াম করুন

ডায়েটের পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম করুন। কার্ডিও এবং স্ট্রেংথ ট্রেনিং-এর সংমিশ্রণ আপনার বিপাকক্রিয়া (metabolism) বাড়াবে ও ক্যালোরি বার্ন করতে সাহায্য করবে।

৫. পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন

প্রতিদিন রাতে ৭-৯ ঘণ্টা মানসম্মত ঘুম নিন। ঘুমের অভাবে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণকারী হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং ওজন বাড়তে পারে।

৬. স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করুন

চিন্তা বা মানসিক চাপ থেকে “ইমোশনাল ইটিং”-এর অভ্যাস তৈরি হয়, যা ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। ধ্যান, যোগব্যায়াম, বা গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের মতো স্ট্রেস কমানোর কৌশলগুলো অনুশীলন করুন।

৭. ধৈর্য ধরুন

টেকসই ওজন কমানোতে সময় লাগে। ডায়েট অনুসরণ করুন, এমনকি প্রথম দিকে দৃশ্যমান ফলাফল না পেলেও। সময়ের সাথে ফল আসবেই।

৮. স্কেল ছাড়া বিজয় উদ্‌যাপন করুন

ওজন মাপার যন্ত্রের সংখ্যার বাইরে আরও অনেক ভালো ফলাফল আছে—শক্তি বৃদ্ধি, ফিটনেস উন্নতি, মানসিক ভালোলাগা—এইসব উন্নতিতেও খুশি হোন এবং সেগুলো উদ্‌যাপন করুন।

এই নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করলে আপনি স্বাস্থ্যকর, টেকসই ও পরিকল্পিতভাবে ভেগান ডায়েটের মাধ্যমে ওজন কমাতে পারবেন। ভেগান ডায়েট একটি দারুণ উপায় ওজন কমানোর, শরীর সুস্থ রাখার এবং পরিবেশ রক্ষায় সহায়তা করার। সঠিকভাবে ভেগান খাবার খেলে আপনি সহজেই স্বাস্থ্যকর ওজন কমাতে পারেন। তাহলে আপনি কি প্রস্তুত? আজ থেকেই আপনার ভেগান ডায়েট শুরু করুন।

Filed Under: HEALTH & WELLNESS (স্বাস্থ্য ও সুস্থতা), Weight Loss (ওয়েট লস)

মাত্র ৭ দিনে তলপেটে চর্বি কমানোর ১০০% কার্যকরী সহজ উপায়।

by রূপকথন ডেস্ক

যদিও মাত্র এক সপ্তাহে পেটের চর্বি পুরোপুরিভাবে কমানো বৈজ্ঞানিকভাবে সম্ভব নয়। জানা যায়, পেটের মেদ বেশ জেদি। এটি ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, বিপাকীয় সিনড্রোম এবং PCOS এর সাথে যুক্ত। তাই স্বাস্থ্যকর খাদ্য, সঠিক হাইড্রেশন এবং ভাল ঘুম সেই অতিরিক্ত পেটের চর্বি ঝরিয়ে ফেলতে অনেকটাই সাহায্য করে।

পেটের চর্বি দ্রুত ঝরাতে প্রয়োজনীয় কিছু টিপস আমরা সবার সাথে শেয়ার করছি :

 ১. দিনের শুরুটা হোক মেথি ভেজানো পানি দিয়ে (Start The Day With Fenugreek Water):

 মেথি ভেজানো পানি

মেথি বীজ চর্বি জমা প্রতিরোধ করতে পারে এবং এতে হাইপোগ্লাইসেমিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা টাইপ 2 ডায়াবেটিস রোগীদের ইনসুলিন সংবেদনশীলতা সচল করতে পারে। সকালের নাস্তার ৩০ মিনিট আগে প্রথমে মেথি ভেজানো পানি পান করুন (এক কাপ পানিতে দুই চা চামচ মেথির বীজ যোগ করুন (৩৭৫ মিলি) এবং সারারাত ভিজিয়ে রাখুন) । আপনার হাইপোগ্লাইসেমিয়া থাকলে ডিটক্স ওয়াটারে মেথির বীজ যোগ করা এড়িয়ে চলুন।

২. সকালের নাস্তা হোক উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ  (Have A High-Protein Breakfast):

 উচ্চ-প্রোটিন-সমৃদ্ধ

উচ্চ-প্রোটিনযুক্ত  সকালের নাস্তা, যেমন প্রোটিন পাউডার স্মুদি এবং ডিম বা দই এবং ওটমিল, আপনাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য ক্ষুধামুক্ত রাখতে সাহায্য করে। প্রোটিনগুলি হজম হতে বেশি সময় নেয় এবং তাই তৃপ্তি বাড়ায়।প্রোটিন জাতীয় খাদ্য উৎসগুলো  শরীরে থার্মোজেনেসিস বাড়ায়, যার ফলে প্রোটিন হজম করতে ক্যালোরি পোড়াতে হবে । প্রোটিন চর্বিহীন পেশী তৈরিতেও সাহায্য করে। চর্বিহীন পেশীতে পাওয়া মাইটোকন্ড্রিয়ার সংখ্যা বেশি। যদি চর্বিহীন পেশী বৃদ্ধি পায়, তবে মাইটোকন্ড্রিয়ার সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়, যা ফলস্বরূপ, বিপাক বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

৩. অল্প অল্প করে বার বার খান (Eat Smaller Portions More Often):

অল্প-অল্প-করে-বার-বার খান

খাবার নিয়ন্ত্রণের অনুশীলন করা, ক্যালোরি কমানোর একটি দুর্দান্ত উপায়। প্রতিবেলার খাবারে আপনার কতটা প্রোটিন, শাকসবজি, গোটা শস্য এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে ধারণা রাখা উত্তম। একটি নিয়ম হিসাবে, প্লেটের অর্ধেক চর্বিহীন প্রোটিন হওয়া উচিত, এর এক-চতুর্থাংশ শাকসবজি হওয়া উচিত, এবং বাকিগুলি পুরো শস্য এবং স্বাস্থ্যকর চর্বিযুক্ত হওয়া উচিত। এছাড়াও, আপনার খাবারের জন্য ছোট প্লেট ব্যবহার করুন। পেট ভরে ২ বেলা খাবার পরিবর্তে অল্প অল্প করে ৩ বার খাওয়া উত্তম।

৪. শর্করা এবং চিনি হ্রাস করুন (Reduce Refined Carbs And Sugar):

শর্করা-এবং-চিনি-হ্রাস-করুন

গবেষণা প্রমাণ করে যে, পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট এবং চিনির বর্ধিত ব্যবহার ওজন বাড়াতে পারে । পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট হজম করা সহজ। এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ায়। পরিশোধিত চিনি বেশি খেলে চর্বি বাড়ায় এবং ওজন বৃদ্ধি করে। তাই বার্গার, পিৎজা, কেক, পেস্ট্রি, চুরো, সোডা ইত্যাদি খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো।

৫. পেটের চর্বি কমাতে পর্যাপ্ত পানি পান করুন (Drink Enough Water To Reduce Belly Fat):

পেটের-চর্বি-কমাতে-পর্যাপ্ত-পানি-পান-করুন

বিভিন্ন গবেষণা প্রমাণ করে যে, প্রতিদিন আনুমানিক আট গ্লাস পানি পান করা উত্তম। এতে থার্মোজেনেসিস, তৃপ্তি এবং চর্বি সচলতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। পেটের মেদ কমাতে সারাদিন পানিতে চুমুক দিতে থাকুন। 

৬. উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবারের পরিমাণ বাড়ান (Increase Intake Of High-Fiber Foods):

উচ্চ-ফাইবারযুক্ত-খাবার

ফাইবার জাতীয় খাবারে কম গ্লাইসেমিক সূচক রয়েছে তাই  এটি পেটে জেলের মতো স্তর তৈরি করে ক্ষুধা নিবারণে সাহায্য করে। ফাইবার ভাল অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার জন্য খাদ্য হিসাবেও কাজ করে, যা চর্বিকে শর্ট-চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড এ ভেঙ্গে দেয়। শর্ট-চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড পেটের চর্বি কমাতে সাহায্য করতে পারে। ফাইবার কোলনে খাদ্য স্থানান্তরকে সহজ করে । এটি হজম শক্তিকে উন্নত করে।

৭. ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ ফ্যাটি মাছ খান(Consume Omega-3 Rich Fatty Fish):

ওমেগা-৩-সমৃদ্ধ-ফ্যাটি-মাছ

স্যামন, টুনা এবং ম্যাকেরেলের মতো ফ্যাটি মাছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড (PUFAs) প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে, যার ফলে প্রদাহ-প্ররোচিত ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি হ্রাস পায়।PUFAs এছাড়াও চর্বি জমা প্রতিরোধ, শরীরের গঠন উন্নত করতে এবং তৃপ্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করতে পারে।

৮. প্রচুর পরিমানে গাঢ় শাক-সবজি খান (Consume Veggies And Dark Leafy Greens):

 গাঢ়-শাক-সবজি

গাঢ়  শাকসবজি ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজগুলির ভাল উৎস । বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন যে নিয়মিত সবজি খাওয়া কোমরের পরিধি কমাতে সাহায্য করে এবং স্থূলতার ঝুঁকি কমায়। এটা লক্ষ করা গুরুত্বপূর্ণ যে, যদিও শাকসবজি এবং ফল পেটের চর্বি ঝরাতে সাহায্য করতে পারে, তবে আপনাকে অবশ্যই খাবার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ করা যাবে না।

৯. লবণের ব্যবহার কমিয়ে দিন (Reduce Salt Consumption):

লবণের-ব্যবহার-কমিয়ে দিন

উচ্চ লবণের ব্যবহারের ফলে স্থূলতা, ইনসুলিন প্রতিরোধ, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস হতে পারে। লবণ শরীরে পানি  ধরে রাখে, যার ফলে আপনার সামগ্রিক শরীরের ওজন বৃদ্ধি পায়।

 ১0. গ্রিন টি/ব্ল্যাক কফি খান (Consume Green Tea/Black Coffee):

Green Tea

গ্রিন টি ওজন কমাতে দারুণ উপকারী। এটিতে EGCG রয়েছে, যা একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা টক্সিন বের করে দেয় এবং শরীর ফুলে যাওয়া  কমাতে সাহায্য করে। গ্রিন টি-তে থাকা ক্যাফেইন ওজন কমাতেও সাহায্য করে। কফিতে থাকা ক্যাফেইন এবং ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড তৃপ্তি বাড়ায় এবং থার্মোজেনেসিসকে প্ররোচিত করে। পেটের চর্বি জমানো যতটা সহজ,কমানো ততটাই কঠিন। লাইসেন্সপ্রাপ্ত ডাক্তারের অস্ত্রোপচার ছাড়া এক সপ্তাহের মধ্যে পেটের চর্বি কমানো সম্ভব নয়।  এই টিপসগুলি  অনুসরণ করলে এবং চর্বি ঝরানোর পণ করলে তবেই আপনি পেটের চর্বি ঝরাতে শুরু করবেন। চিনি, লবণ এবং উচ্চ পরিমাণে কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন এবং প্রচুর পানি পান  করুন। নিয়মিত ব্যায়ামের সাথে এই খাদ্যাভ্যাস গুলো গড়ে তুলুন এবং আপনি অবশেষে ফলাফল দেখতে পাবেন। যাইহোক, আপনার পেটে চর্বি জমার অন্য কোনো অন্তর্নিহিত কারণ আছে কিনা তা খুঁজে বের করতে প্রয়োজনে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।

Filed Under: Weight Loss (ওয়েট লস) Tagged With: তলপেটে চর্বি

আপেল সিডার ভিনেগার কি ওজন কমাতে সাহায্য করে ? [Apple Cider Vinegar for Weight Loss]

by লামিয়া তানজিন মাহমুদ

মেদবিহীন, ছিপছিপে সুন্দর স্বাস্থ্য ছোট বড় সবারই খুব প্রিয়। আর নিজের সুগঠিত, সুগড়ন ও কার্যক্ষম শরীর সবারই কাম্য । পরিসংখ্যানে জানা যায়, যুগোপযোগী এবং উপযুক্ত খাবার গ্রহণে সক্ষম মানুষই স্বাভাবিক ওজন ও সুস্থ শরীর নিয়ে বেঁচে থাকেন। আর ঠিক তাই, খাবার নির্বাচনে এবং নিয়মিত শরীরচর্চায় আমাদের সকলের একমাত্র ব্রত হওয়া উচিত। তথাপি এই প্রত্যাশা পূরণ সহজ কাজ নয়।

আমরা জানি যুগে যুগে ইতিহাসে, শক্ত মনের মানুষই স্বাভাবিক চিন্তাধারা এবং সাবলীল মননশীলতার ছাপ রেখে গেছেন। একটা সময় ছিল যখন মানুষ, সিনেমার রঙীন পর্দায় চিকন কিংবা মুটিয়ে যাওয়া নায়ক-নায়িকা দেখে তাদের মতো নিজেদেরকে সাজানোর ব্যর্থ প্রয়াসে নিজেদের অলস অবসরের সময় অতিবাহিত করতো ।

গড়বাঁধা অলস জীবনাসরের সেই সময় এখন পাল্টে গেছে ,পাল্টানোর সেই অদম্য গতি, এতটাই প্রবল যে শরীর নিয়ে অসচেতন মানুষগুলো ও এখন হাঁটছে সচেতনতার পথে। তবে, বিষয়টি মন্দ নয়। চলমান মহামারীতে বেঁচে থাকাটাই যেখানে অনিশ্চিত সেখানে স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন হওয়াকে অনেকে বিলাসিতা ভাবলেও মূলত এটিই ঠিক।

ওজন অনুচিন্তন!

অনেক হলো জীবনাদর্শের নিয়মানুবর্তিতা । প্রসঙ্গে ফেরা যাক এবার তবে – স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবনার শুরুতে যেটা সবার আগে মাথায় আসে, তার নাম ওজন। অতিরিক্ত ওজনে মুটিয়ে যাওয়া মানুষগুলোকে কাছ থেকে দেখেছেন কখনও? চিকন হওয়ার জন্য কিংবা একটা পরিমিত ওজনে আসার জন্য তাদের প্রচেষ্টা কিন্তু দেখার মতো। জিম থেকে শুরু করে ডায়েট, ব্যায়াম, সকালে হাঁটা ইত্যাদি বিষয়গুলোতে তারা নিজেদের খুব ভালোভাবেই অভ্যস্ত করে ফেলেন। নিয়ম মেনে হাত ধোওয়া, পরিষ্কার -পরিচ্ছন্ন থাকা, চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখা, ব্যায়াম করা, পরিমিত খাওয়া, বাইরে বের হলে ও হাঁচি-কাশির প্রাদুর্ভাব হলে মাস্ক পরা এগুলো কি খুব কঠিন? তবে সত্যি বলতে, একসময় কঠিন মনে হলেও এখনের পরিস্থিতি অনুযায়ী সব স্বাভাবিক ।

অভ্যাসের শুরুটা শুরুটা হওয়া উচিত খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনার মাধ্যমে। সেক্ষেত্রে পছন্দের শুরুতে থাকে কিটো ডায়েট, কারও কারও আবার অ্যাপল সিডার ভিনেগার। ওজন ভাবনার সাথে অ্যাপল সিডার ভিনেগার এর সম্পর্ক যারা আঁচ করতে পারছেন না, আজকের এই চেষ্টা শুধুমাত্র তাদের জন্য।

অ্যাপল সিডার ভিনেগার কী? [What is Apple Cider Vinegar?]

অ্যাসিটিক অ্যাসিড এবং পানির সংমিশ্রণে তৈরি হয় ভিনেগার। এক্ষেত্রে চিনি বা ইথানলকে গাজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অ্যাসিটিক অ্যাসিডে রূপান্তরিত করা হয়। বাংলায় যাকে সিরকা নামে চিনে থাকেন আমাদের মায়েরা, সেটাই আসলে ভিনেগার। ভিনেগার বা সিরকা, যে নামেই ডাকুন, পদার্থটা আদতে আদ্যোপান্ত তরল। লেখার এ পর্যায়ে একটা মজার তথ্য জানিয়ে রাখি- মুলত টক ওয়াইনকেই কিন্তু ভিনেগার বলা হয়! বাজারে যে কয়েক ধরণের ভিনেগার পাওয়া যায় তার মধ্যে সাদা ভিনেগার, বলস্যামিক ভিনেগার, অ্যাপল সিডার ভিনেগারগুলো বেশ প্রচলিত।

ওজন নিয়ন্ত্রণে অ্যাপল সিডার ভিনেগার [Apple Cider Vinegar for Weight Loss]

অ্যাপল সিডার ভিনেগার মূলত জনপ্রিয় হতে শুরু করেছেই ওজন কমানোর কারণে। এই ভিনেগারে থাকা অ্যাসিটিক অ্যাসিড খাওয়ার ইচ্ছা কমিয়ে দেয়। আর বাড়িয়ে দেয় শরীরের মেটাবলিজম। 

বলা হয়ে থাকে ওজন কমানো, কোলেস্টেরল, রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি এবং পেটের যে-কোন সমস্যায় অ্যাপল সিডার ভিনেগার টনিকের মত কাজ করে। ভিনেগারটি অ্যাসিড সম্প্রদায়ের সদস্য হলেও অ্যাসিডিটি দূর করার ক্ষেত্রে কিন্তু বেশ কার্যকর। খাওয়ার আগে ১ কাপ পানিতে ১-২ চামচ অ্যাপল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে খেয়ে নিবেন।

দিনে ১-২ বার পান করলেই যথেষ্ট, মূলত এই অ্যাপল সিডার ভিনেগার ওজন কমানোর জন্যই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। শর্করায় যে ওজন বাড়ে তা ইতোমধ্যে কিটো ডায়েট এর আর্টিকেলে আপনারা জেনেছেন। হুট করে খাবারের তালিকা থেকে শর্করা এড়িয়ে চলাটা শর্করা-প্রেমি বাঙালির জন্য কঠিনই বটে। সেক্ষেত্রে শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়ার পর এই অ্যাপল সিডার ভিনেগার পানির সাথে মিশিয়ে পান করলে দিনের পরবর্তী সময়গুলোতে ক্ষুধা লাগার বিষয়টা থেকে মুক্তি পাবেন।

অতিরিক্ত মুটিয়ে যাওয়া ১৭৫ জনকে নিয়ে জাপানে একটা গবেষণা হয়েছিল। গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল ওজন কমানোর ক্ষেত্রে অ্যাপল সিডার ভিনেগার আদতে কাজে দেয় কী না। ফলাফল ইতিবাচক। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে অ্যাপল সিডার ভিনেগারকে যদি নিত্যদিনের ডায়েটে যোগ করতে পারেন তাহলে ক্ষুধাবোধ থেকে মুক্তি তো পাবেনই সেই সাথে ওজন নিয়ন্ত্রণেও রাখতে পারবেন।

অ্যাপল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম [How to Drink ACV for Weight Loss]

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন খাওয়ার আগে ১-২ টেবিল চামচ পরিমাণ অথবা ১৫-৩০ মিলি অ্যাপল সিডার ভিনেগারই সারাদিনের জন্য পরিমিত পরিমাণ।

অথবা এই পুরো পরিমাণকে ২-৩ ডোজ আকারে ভাগ করে নিয়েও সারাদিন খেতে পারেন। পছন্দ আপনার।

তবে হ্যাঁ, খেতে হবে অবশ্যই পানিতে মিশিয়ে। এক গ্লাস পানিতে ১/২ টেবিল চামচ অর্থাৎ ৫-১০ মিলিলিটার পরিমাণ অ্যাপল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে খেতে হবে।

ঘরে তৈরি করুন আপেল সিডার ভিনেগার [How to Make Apple Cider Vinegar at Home]

১০টি আপেল নিয়ে ভালো করে ধুয়ে কাপড় দিয়ে মুছবেন। প্রত্যেকটা আপেলকে ৪ কিংবা ৮ কিংবা যত ইচ্ছা ছোটো টুকরো করে কেটে নেবেন। বিচি অথবা বিচির অংশ বাদ দিতে হবে না। সবটা নেবেন।

আপেলের রঙ বাদামি না হওয়া পর্যন্ত রেখে দিন। রঙ ধরলে বড়ো কাঁচের জারে আপেলের টুকরোগুলো রাখুন। এবার ১ কাপ পানিতে ১ চা চামচ চিনি গুলিয়ে জারে ঢেলে দিন। কাঁচের জার যেন অবশ্যই ভালো করে ধুরে রোদে শুকানো হয়।

আপেলের টুকরো গুলো পুরোপুরি ডুবে না যাওয়া পর্যন্ত চিনি মেশানো পানি ঢালবেন। পরিমাণ তো জানেন? ১ কাপের জন্য ১ চা চামচ চিনি। আপেলগুলো পুরোপুরি ডুবে গেলে ২ টেবিল চামচ সাদা ভিনেগার দিন।

এবার টিস্যু দিয়ে জারের মুখ ঢেকে দিয়ে রান্নাঘরের ক্যাবিনেটে রেখে দিন ৩ সপ্তাহ। লক্ষ্য রাখবেন, কোনভাবেই যাতে বাতাস না ঢোকে জারের ভেতর। ৩সপ্তাহ পর জার বের করে আপেলের টুকরো তুলে ফেলবেন। তারপর তরলটাকে ভালোভাবে কাঠের চামচ দিয়ে নাড়বেন, নেড়েচেড়ে আবার আগের জায়গায় রেখে দিবেন। এরপর নিয়ম করে প্রতিদিন একবার চামচ দিয়ে নাড়বন। এভাবে ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ দেখুন। টক ভাব এসেছে? এলেই হয়ে গেলো আপনার ভিনেগার।

Apple Cider Vinegar at Home

আপেল সিডার ভিনেগারের উপকারিতা [Benefits of Apple Cider Vinegar]

৯৪% পানি, ১% কার্বোহাইড্রেট সহ ফ্যাট এবং প্রোটিন-শুন্য অ্যাপল সিডার ভিনেগার ১০০ মিলিতে ২২ ক্যালোরির যোগান দেয়।দেখতে গাঢ় মধুর মত আর ঘ্রাণে হালকা টকের এই পানীয়তে আছে সেলুলোজ ও অ্যাসিটিক অ্যাসিডের দারুণ মিশেল যেটাই মূলত শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে কাজ করে। রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ সালমা পারভিন এ ব্যাপারে বলেন- রোজ নিয়ম করে ১-২ চামচ অ্যাপল সিডার ভিনেগার শুধু ওজনই কমায় না বরং মেটাবলিজম বাড়ায় ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের জোগান দেয় শরীরে। অ্যাপল সিডার ভিনেগারে প্রচুর পরিমাণে আঁশ বা ফাইবার থাকার দরুন ভিনেগারটি কোষ্ঠকাঠিন্য কমানোর ক্ষেত্রে বেশ সহায়ক। টাইপ টু ডায়াবিটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের সমস্যার যে ঝুঁকি তা কমিয়ে এনে হৃদরোগের আশঙ্কাও কমিয়ে দেয় অ্যাপল সিডার ভিনেগার। এখানে একটা কিন্তু আছে। ডায়াবিটিসে আক্রান্ত যাদের ঔষধ খাওয়া

লাগে,তবে এখানে কিছু সতর্কতা আছে। পুষ্টিবিদ সালমা পারভিন জানান, কিছু কিছু ক্ষেত্রে অ্যাপল সিডার ভিনেগার না খাওয়াই সবচেয়ে ভালো। অন্তঃসত্ত্বা মা, বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন মা এবং কিডনি রোগিদের জন্য অ্যাপল সিডার ভিনেগার একদমই নিষেধ। প্রশ্ন আসা খুব স্বাভাবিক, কেন নিষেধ? উত্তর এটাই, এ অবস্থায় অ্যাপল সিডার ভিনেগার শরীরে স্থায়ী ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই করে না। অতএব অ্যাপল সিডার ভিনেগার খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নেবেন।

অনেক কথার ফুলঝুরি ছড়িয়ে এবার আসল আলাপনে আসা যাক। ঠিক কী কী কারণে অ্যাপল সিডার ভিনেগারের এত জনপ্রিয়তা, কী কারণেই বা এর ব্যবহার হুট করে বেড়ে গেলো তা জানার প্রয়োজন আছে বইকি! চলুন একটু করে জেনে নেই অ্যাপল সিডারের অন্যান্য ব্যবহারগুলোও।

  • ব্লাড সুগার কমানোর কাজে অ্যাপল সিডার ভিনেগার!

ব্লাড সুগার যাদের আছে তারা জানেন এর ভাবনা ভাবাটা কতটা দূর্বিষহ। এই দূর্বিষহ ভাবনা থেকে কিছুটা রেহাই দিতেই যেন অ্যাপল সিডার ভিনেগার এর আবির্ভাব। ব্লাড সুগার এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ এর পাশাপাশি কোলেস্টেরলের মাত্রাও কমিয়ে আনে অ্যাপল সিডার ভিনেগার। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। ডায়াবিটিস ও ক্যান্সার রোগিরা এর সুফল বেশ ভালোভাবেই পেয়ে থাকেন। তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই অ্যাপল সিডার ভিনেগার খাওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।

  • খুশকি ভাবনায় অ্যাপল সিডার ভিনেগার!

খুশকি নিয়ে ভাবেন না এমন কে আছেন বলুন তো? ঘুম হারাম করে দেওয়ার মতো চিন্তা নয় কী? সমস্যা যেমন আছে, সমাধানও কিন্তু আছে। ১ টেবিল চামচের ৪ ভাগের ১ ভাগ ভিনেগার নিন। ওতে মেশান ১ কাপ পানির ৪ ভাগের ১ ভাগ। মেশানো পানি চুলের ত্বকে ভালো করে ঘষে নিয়ে ১৫ মিনিট রাখুন। এরপর শ্যাম্পু করে ধুয়ে নিন। সপ্তাহে ২ বার করুন আরও ভালো ফলাফল পেতে।

  • রোদের আঁচ এবং ব্রণ যখন শত্রু!

চলছে তীব্র রোদের সময়। সূর্য যেন উপচে পড়ে তাপ ছড়াতেই বেশি ব্যস্ত। ঝড়ছে ঘাম, ক্লান্ত হচ্ছে শরীর। একই সাথে চেহারায় পড়ছে রোদে পড়া কালচে ছোপ। গরমের দিনের জাতীয় সমস্যা! তবে সমাধান হিসেবে এবারও অ্যাপল সিডার ভিনেগারের পথেই হাঁটবো আমরা।

১ কাপ ভিনেগার, ১ কাপ গোলাপজল, ১ কাপ পানি ভালো করে মিশিয়ে ফ্রিজে রাখুন। বাইরে থেকে ঘরে ফিরে রোদে পোড়া জায়গা গুলোতে এই মিশ্রণ মাখিয়ে বাতাসে শুকিয়ে নিন। পাতলা নরম সুতি কাপড় দিয়ে আলতো ঘষে মুছে পরিষ্কার করে নিন। এই কাজটি চালু রাখুন। ফল পাবেন।

একইভাবে ব্রণ নিয়েও অনেকে অনেক ঝামেলা পোহান। সমাধান হিসেবে অ্যাপল সিডার ভিনেগার এর নামই বলতে হবে। কেন? বলছি-
অ্যাপল সিডার ভিনেগারটিতে অ্যান্টি ব্যাক্টেরিয়াল প্রভাব প্রাকৃতিক টোনারের কাজ করে। যার কাজ মুখের ব্রণের বৃদ্ধি কমিয়ে এনে মুখের যাবতীয় ব্রণ দূর করা। এই অ্যাপল সিডার ভিনেগারটি মুখের পিএইচ এর মাত্রা ঠিক রেখে মুখের অন্যান্য দাগ দূরীকরণে সাহায্য করে।

এছাড়া এটি খুব দ্রুতই ত্বকের একদম গভীরে প্রবেশ করে। যা ব্রণের জীবাণু ধ্বংস করে দেয়। এ কারণে ব্রণ হলে কী করবেন জানেন? ভিনেগার আর পানির মিশ্রণে কটন বাড ডুবিয়ে একদম সরাসরি ব্রণের উপর রেখে মুছবেন। ব্রণের চারপাশও মুছবেন। একই নিয়মে প্রতিদিন নিয়ম করে ২ বার যত্ন নিতে থাকুন। ব্রণের জীবাণু পুরোপুরি নির্মূল হবে এবং ব্রণের দাগ পড়বে না মুখে।

  • ডায়রিয়ার হঠাৎ প্রাদুর্ভাব দূরীকরণে অ্যাপল সিডার ভিনেগার!

অনেক সময় এমন হয় না যে হুট করে ডায়রিয়া হয়ে গেলো। ঘরে স্যালাইন নেই। তখন কী করবেন? সময় নিয়ে গুড়, লবণ মিশিয়ে স্যালাইন বানাবেন? অবশ্যই না! বাড়িতে অ্যাপল সিডার ভিনেগার থাকলে চটজলদি এক চামচ পানিতে গুলে খেয়ে নিলে খুব দ্রুত উপকার পাবেন। এখানে একটু করে জানিয়ে রাখি, ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণে ডায়রিয়া হলে এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন।

  • খাবার সংরক্ষণে অ্যাপল সিডার ভিনেগার!

অনেকে খাবার সংরক্ষণে ভিনেগার ব্যবহার করেন। এ আপনারা জানেন। মজার ব্যাপার হলো এই অ্যাপল সিডার ভিনেগার দিয়েও আপনি কিন্তু খাবার সংরক্ষণ করতে পারবেন। ভিনেগারটিতে অ্যাসিটিক অ্যাসিড থাকার কারণে খাবারের এনজাইম ও ব্যাক্টেরিয়া ধ্বংস হয়ে প্রিজারভেটিভ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

  • গন্ধ দূর করতে অ্যাপল সিডার ভিনেগার!

গরমের দিন চলছে না? প্রচুর ঘামছেন। সারা শরীর ঘামে ভিজে বাজে গন্ধ ছড়াচ্ছে। একই সাথে জুতা মোজার বিষয় তো আছেই। গন্ধটা বিব্রতকর অবশ্যই। এজন্য কী করবেন জানেন? অ্যাপল সিডার ভিনেগার পানিতে মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করুন। গোসলের পরে এই পানি বগল, পা সহ যেখানে ঘাম বেশি হয়, সেখানে মাখিয়ে নিন। ব্যাক্টেরিয়া মরবে। ঘামের গন্ধও দূর হবে।

বাইরে যাওয়ার আগে এটা করতে পারেন। আবার ঘরে ফিরে এসে কুসুম গরম পানিতে ভিনেগার মিশিয়ে রোদে পোড়া জায়গায় মাখাবেন। উপকার পাবেন। একই কথা প্রযোজ্য মুখের গন্ধের ক্ষেত্রেও। অ্যাপল সিডার ভিনেগারে অ্যান্টি ব্যাক্টেরিয়াল নামক উপাদানের উপস্থিতি থাকার দরুন পানির সাথে অ্যাপল সিডার ভিনেগারটি মিশিয়ে কুলকুচি করে ফেলে দিলে মুখের দুর্গন্ধ নিমেষেই দূর হবে।

  • ডিশ ডিটারজেন্ট হিসেবে অ্যাপল সিডার ভিনেগারের ব্যবহার!

অনেক সময় দেখা যায় ঘরে ব্যবহৃত প্লেট বাটি কেমন তেল চিটচিটে হয়ে আছে। সাবান কিংবা ছাই এ কাজ হচ্ছে না। এসব ক্ষেত্রে পরিষ্কারক হিসেবে অ্যাপল সিডার ভিনেগার কিন্তু বেশ কাজের। যে ডিশ ওয়াশার দিয়ে প্লেট বাটি পরিষ্কার করেন তার সঙ্গে ভিনেগার মিশিয়ে প্লেট বাটি সহ আনুষঙ্গিক যা যা ধোয়ার ধুয়ে নিন। সিঙ্কটাও ধুয়ে ফেলতে পারেন। ফলাফল নিজেই দেখুন।

  • স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অ্যাপল সিডার ভিনেগারের ব্যবহার!

মানব দেহের পুরো Ph এর সমতা রক্ষার কাজ কিন্তু অ্যাপল সিডার ভিনেগার করতে সক্ষম। যাদের শরীরে Ph এর মাত্রা কম থাকে তাদের কিছু সমস্যা থাকে। তারা যে-কোন রোগে খুব দ্রুত আক্রান্ত হয়ে পড়ে। এবং তাদের শরীরে শক্তিও থাকে তুলনামূলক কম। সুতরাং বুঝতেই পারছেন ভিনেগারটি এদিক থেকে কতটা এগিয়ে। নিয়মিত এই ভিনেগার পানে দেহে শক্তি জমা হয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে।শরীরের লিভার ভালো রাখার জন্য এবং অ্যালার্জি প্রতিরোধের জন্য অ্যাপল সিডার বেশ কার্যকর।

এছাড়া যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা আছে, তারা চটজলদি সমাধান পেতে ১ গ্লাস পানিতে ১ চামচ অ্যাপল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে খেয়ে ফেলুন। দ্রুত ফল পাবেন। তবে হ্যাঁ, যাদের আলসার আছে তাদের কাছে অনুরোধ- আপনারা এ জিনিস ভুলেও পান করবেন না।

আপেল সিডার ভিনেগারের ক্ষতিকর প্রভাব [Side Effects of Apple Cider Vinegar]

প্রাকৃতিক বলেই প্রতিক্রিয়ার ঊর্দ্ধে থাকবে এমন কিন্তু কিছুই নেই। আর তাই, ব্যতিক্রমের তালিকায় নাম লেখায়নি অতি প্রয়োজনীয় এবং সুপরিচিত এই অ্যাপল সিডার ভিনেগারটিও। আছে কিছু বিরূপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও। একটু আলাপনের প্রয়োজন আছে এই বিষয়ে।

অ্যালার্জি আছে এমন ব্যক্তিদের অনেকের ক্ষেত্রেই অ্যাপল সিডার ভিনেগার উলটো প্রতিক্রিয়া দেখায়। আবার ডায়াবিটিসের কারণে যাদের ইনসুলিন নিতে হচ্ছে তাদের নির্ধারিত ঔষধের সাথেও অ্যাপল সিডার ভিনেগারের সংঘর্ষ হতে পারে। অ্যাপল সিডার ভিনেগার এর অতিরিক্ত ব্যবহার ত্বকের সমস্যার কারণ হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। মূলত এর কোন ঔষধি গুণাগুণ কিংবা পুষ্টিগুণ নেই। নেই কোন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ক্লিনিকাল প্রমাণও। যেমন – ওজন হ্রাসের কথাই ধরুন। যে কারণে জনস্বাস্থ্য সংস্থা চিকিৎসা সংকান্ত নির্দেশিকায় এই অ্যাপল সিডার ভিনেগার ব্যবহারের প্রস্তাব দেয় না। তবে সামান্যতম ব্যবহার নিরাপদ হিসেবেই বিবেচিত হয়। আবার ট্যাবলেট আকারে অ্যাপল সিডার ভিনেগারে মুখ, গলা, পেট, কিডনির নরম টিস্যুতেও ক্ষত সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। অনেকে আছেন যারা সাময়িক ঔষধ হিসেবে অ্যাপল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করেন, অনেকে চোখ ধোওয়া এবং কান পরিষ্কারের জন্যও অ্যাপল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করেন। যার ব্যবহার আদতে বিপজ্জনকই বটে!

মূলত অতিরিক্ত কোনকিছুই ভালো না। তা যতই প্রাকৃতিক হোক না কেন! যে কারণে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন আছে বইকি! পরামর্শ নিয়ে খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে কিংবা পরে পানি মিশিয়ে অ্যাপল সিডার ভিনেগার পান করুন। তবে হ্যাঁ, রাতে ঠিক ঘুমোনোর আগে এ ভিনেগার খাবেন না। ঐ সময়ে এটা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। ঘুমোনোর অন্তত ৩০ মিনিট আগে যাবতীয় খাওয়া দাওয়া শেষ করবেন।

অনেকে আছেন যে-কোন খাবার খাওয়ার আগে শুঁকে দেখেন। অভ্যেসটা ভালো তবে অ্যাপল সিডার ভিনেগারের ক্ষেত্রে এই অভ্যেসটা একটু এড়িয়ে যেতে হবে। এর তীব্র গন্ধ নাকের জন্য ভালো নয়। চোখের জন্যও নয়।

অনেকে ভরা পেটে এই ভিনেগার পান করেন। যা আদতে অনুচিত। পাঠক, ভিনেগার মেশানো পানি খেতে হবে খালি পেটে, ভরা পেটে খেলে লাভ তো হবেই না বরং শরীরে নানান ধরণের সমস্যা দেখা দিবে।একটা বিষয় স্পষ্ট করে জানিয়ে রাখা ভালো, অনেকে রাতের বেলায় এই ভিনেগার খেয়ে ঘুমোতে যান। এটা সম্পূর্ণ অস্বাস্থ্যকর। ভুলেও যদি রাতে খেয়ে ফেলেন, তাহলে অন্তত ৩০ মিনিট সোজা হয়ে বসে থাকবেন। পান করে সাথে সাথে শুয়ে পড়বেন না।একইসাথে অনেকটা ওজন কমানোর চিন্তায় অনেকেই একসাথে অনেকটা অ্যাপল সিডার ভিনেগার খেয়ে ফেলেন। এখানে একটা বিষয় বোঝা দরকার, সবকিছু সবার শরীর নিতে পারে না। তাই শুরুটা অল্পে হওয়া ভালো। ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে এলেই না হয় পরিমাণ বাড়ানো যাবে।

এ পর্যায়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় জানিয়ে রাখি। অনেকেই আছেন ভিনেগার মেশানো পানি খেয়েই দাঁত ব্রাশ করে ফেলেন। দয়া করে এ ভুল করবেন না। কেন করবেন না? এতে দাঁতের অ্যানামেল ক্ষয়ে যায়। ক্যাভিটি দেখা দেয়। তবে পানীয় পান করার ৩০ মিনিট পর দাঁত ব্রাশ করতে পারেন।

পরিশেষে, ওজন কমানোর জন্য কী নেই? অনেক কিছুই আছে। তবে প্রয়োজন আছে সদিচ্ছার। কম খাওয়া কিংবা পরিমিত খাওয়া, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাসে লিপ্ত থাকাই আপনাকে একটা সুস্থ জীবন দেবে। এ আপনি বিশ্বাস করেন? জীবন কিন্তু অতটাও মন্দ নয়, শুধু জীবনটা কাটানোর নিয়মটা জানতে হয়।

Filed Under: Weight Loss (ওয়েট লস)

কিটো ডায়েট এর আদ্যপ্রান্ত – ১ মাসে ১৫ কেজি পর্যন্ত ওজন কমবে

by লামিয়া তানজিন মাহমুদ

স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল!

আপনি যেহেতু এই লেখাটি পড়ছেন,তাই ধরেই নিচ্ছি আধুনিক প্রযুক্তির যান্ত্রিক সমীকরণের সাথে তাল মিলিয়ে আপনি স্মার্টফোন নয়তো পিসি ব্যবহারে অভ্যস্ত। আমাদের এই যান্ত্রিক জীবন ব্যবস্থার যাতাকলে পিষে, ক্লান্তির সেই অবসর সময় টুকুর সদ্ব্যবহার করার জন্য,আপনি ও হয়ত প্রায়শ ফেইসবুক,টুইটার বা বিভিন্ন সাইট ভিজিট করে থাকেন। আর ঠিক তাই, আপনি রূপকথনের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত এই আর্টিকেলটি পড়ছেন ।

আধুনিক বিশ্বের এই ক্রান্তি লগ্নে এসে প্রযুক্তির উন্নতি সাধনের সাথে সাথে আমাদের অবশ্যই নিজেদের স্বাস্থ্য নিয়ে ও সচেতনতা আবশ্যক।

‘স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল’ ভাব-সম্প্রসারণ হিসেবে ছোটোকালে কম-বেশি সবাই পড়েছি আমরা। মুখস্ত বিদ্যা কিংবা সৃজনশীলতার দরুন নানান কথাবার্তা লিখে পাশ-মার্ক তুলেই হয়তো দায়িত্ব সেড়েছেন অনেকে, কেউ-বা আবার বুঝে-শুনেই যা লেখার লিখে বাস্তব জীবনেও তার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন।

চারপাশে একটু নজর বুলালেই এ কথার সত্যতা কিন্তু আপনি নিজেই যাচাই করতে পারবেন। সকাল সকাল কিছু মানুষকে একসাথে দৌড়াতে দেখেছেন? কিংবা হাসতে? অনেকের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় প্রচুর তাজা শাক-সবজি, ছোটো মাছ এবং দেশীয় ফলের প্রাধান্য দেখতে পাবেন। কেন বলুন তো?

ঘুরে-ফিরে উত্তর কিন্তু ওটাই, স্বাস্থ্য! নিয়মতান্ত্রিক জীবন ও সুসম খাবারে যেটা পরিণত হয় সম্পদে। সুস্বাস্থ্যের চেয়ে বড়ো সম্পদ কি কিছু আছে? অসুস্থ হলেই কেবল বোঝা যায়, সুস্থ থাকার প্রয়োজনিয়তা কী। তাই নয়? স্বাস্থ্য এবং সুস্থ থাকা। এ দুটো বিষয় যে বিষয়টির সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত তার নাম খাবার। এই খাবারের সাথে আবার যে নামটি আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে তার নাম ডায়েট কন্ট্রোল।

আচ্ছা, ডায়েট কন্ট্রোলের নাম শুনেছেন? একটু মুটিয়ে যাওয়া কিংবা মোটা হওয়া থেকে দূরে থাকার জন্য অনেকেই কিন্তু ডায়েট কন্ট্রোলের দিকে ঝুঁকে থাকেন। সেই ডায়েট কন্ট্রোলের দুনিয়ায় সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা নামটি “কিটোজেনিক ডায়েট বা কিটো ডায়েট“।

বিঃদ্রঃ আপনার ব্যক্তিগত ডাক্তারের সাথে পরামর্শ না করে এই ডায়েট অনুসরণ করবেন না

কিটো ডায়েটের পরিচয়ঃ কী এই কিটো ডায়েট? [What is the Keto Diet?]

এক কথায়- ‘নো কার্বোহাইড্রেট!’ অর্থাৎ, এই কিটো ডায়েটের মূল উদ্দেশ্যই হলো শরীরে থাকা যাবতীয় কার্বোহাইড্রেটকে একদম নিঃশেষ করে ফেলা এজন্য কিটো ডায়েটে কার্বোহাইড্রেটকে পুরোপুরি বাদ দেওয়া হয়। আপনারা জানেন, মোটা হওয়ার জন্য কার্বোহাইড্রেট দরকার হয় শরীরে। তাই যারা চিকন হতে চান তাদের জন্য কিটো ডায়েটে এর ঠিক উলটো কাজটা করতে হয়। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় সব খাবার এড়িয়ে যেতে হয়। যাতে শরীরে থাকা চর্বি পুড়তে শুরু করে এবং এক পর্যায়ে জমে থাকা কার্বোহাইড্রেটও পুড়তে শুরু করে। যার কারণে ওজন কমতে থাকে। মূলত কিটো ডায়েটকে সুপার লো-কার্ব ডায়েট বলে। ডায়েটটিতে কার্ব এক্সট্রিম লেভেলে কম থাকে, প্রোটিন মিড লেভেলে এবং ফ্যাট যথেষ্ট হাই থাকে।

টিপিকাল যে কিটো ডায়েট আছে সেখানে মোট ক্যালোরিক নিডের ফ্যাট ৭০%, প্রোটিন ২৫% এবং কার্ব ৫% থাকে। এর মানে হলো একটা পুরো দিনে আপনি যতটা খাবার খাবেন সেই খাবারের সুষম বণ্টনটা এমন হবে। একজন মানুষের স্বাভাবিক যে ডায়েট সেখানে কার্বোহাইড্রেট এর পরিমাণই থাকে ৫০%, ফ্যাট থাকে ৩০% এবং প্রোটিন ২০%। এখন আপনি যদি সারাদিনে ১২০০ ক্যালোরি খান তাহলে এর ৫০% কার্ব মানে ৬০০ ক্যালোরি কার্ব খেতে হবে আপনাকে।

মানবদেহের প্রধান খাদ্য বা জ্বালানি কী জানেন? গ্লুকোজ। আর কিটো ডায়েটের মূল উদ্দেশ্যই হলো এই গ্লুকোজের বদলে কিটোন বডিগুলোকে জ্বালানি বা খাদ্য হিসেবে প্রস্তুত করে ব্যবহার করা। খুব ইফেক্টিভ একটি ফ্যাট লস ডায়েট হিসেবে খ্যাত এই কিটোজেনিক ডায়েটটি মূলত প্রোটিন নির্ভর। অর্থাৎ প্রোটিন খাওয়াটাই কিটো ডায়েটের মূল উদ্দেশ্য।

তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই প্রোটিন দিয়ে মানবদেহের প্রতিদিনের ক্যালোরি নিড এবং রিকোয়ার্মেন্ট পূরণ করা সম্ভব হয় না সেক্ষেত্রে টোটাল ক্যালোরি নিডের ২০%-৩০% প্রোটিন এবং ৫% কার্ব খেয়ে শরীরের বাকি নিড এবং রিকোয়ার্মেন্ট পূরণ করতে হয়।

এতক্ষণের আলাপনে মোটামুটি একটা ধারণা এসেছে না কিটো ডায়েট সম্পর্কে? এমনও অনেকে আছেন যারা কিটো ডায়েট বলতেই বোঝেন প্রচুর মাংস গ্রহণ। আদতে বিষয়টা এমন না। আমাদের শরীরে ৬২% পানি, ১৬% আমিষ, ১৬% চর্বি, ৬% মিনারেল এবং ১% এর থেকেও কম কিংবা কাছাকাছি পরিমানের শর্করা, ভিটামিন এবং অন্যান্য কিছু উপাদান আছে।

কিটো ডায়েটের প্রকারভেদ [Types of Keto Diet]

এখনও পর্যন্ত চার ধরণের কিটো ডায়েট এর সাথে আমাদের পরিচয় ঘটেছে-

(ক) স্ট্যান্ডার্ড কিটোজেনিক ডায়েট – এ ধরণের ডায়েটে ফ্যাট ৭০%, প্রোটিন ২৫% এবং কার্ব ৫% থাকে। সাধারণত কিটো ডায়েট বলতে মানুষ এটাই বুঝে এবং এই স্ট্যান্ডার্ড কিটোজেনিক ডায়েটই বেশি পরিচিত এবং প্রচলিত।

 (খ) সাইক্লিক্যাল কিটোজেনিক ডায়েট – সপ্তাহে দু’দিন-ই কার্ব খাওয়ার অনুমতি আছে এই কিটো ডায়েটে।

(গ) টার্গেটেড কিটজেনিক ডায়েট – প্রথম দুটি কিটো ডায়েটের তুলনায় এই কিটো ডায়েট একটু আলাদাই বটে। কতটা আলাদা সে প্রশ্নের উত্তরে বলতে হয়, এই কিটো ডায়েটে আপনি কার্ব খেতে পারবেন তবে সেটা বিশেষ ক্ষেত্রে। যেমন- ওয়ার্ক-আউটের আগে কিংবা পরে।

(ঘ) হাই প্রোটিন কিটোজেনিক ডায়েট – এই ডায়েটটি কিছুটা স্ট্যান্ডার্ড কিটোজেনিক ডায়েট এর মতো। কেবল প্রোটিনের মাত্রাটা কিছুটা বেড়ে যায়। কেমন সেটা? স্ট্যান্ডার্ড কিটোজেনিক ডায়েট এ প্রোটিন থাকে ২৫% আর এই হাই প্রোটিন কিটোজেনিক ডায়েটে প্রোটিনের পরিমাণ থাকে ৩৫%। অর্থাৎ পুরো বণ্টনটা হলো- ফ্যাট ৬০%, প্রোটিন ৩৫% এবং ফ্যাট ৫%। এথলেট এবং বডিবিল্ডারদের জন্য এই হাই প্রোটিন কিটোজেনিক ডায়েট খুব কার্যকর।

নতুনদের জন্য সহজ কেটোজেনিক ডায়েট এর খাবার পরিকল্পনা [Simple Ketogenic Meal Plan for Beginner]

Ketogenic Meal Plan

কিটোজেনিক ডায়েটের এতক্ষণের আলাপনে কী খেতে পারবেন আর কী খেতে পারবেন না এটুকু জানার পরে ডায়েট চার্ট জানার ব্যাপারে সামান্য আগ্রহ জন্মেছে কি পাঠক? আগ্রহ জিইয়ে রাখার উপহার স্বরূপ এক সপ্তাহের কিটোজেনিক ডায়েট প্ল্যান, শুধু আপনাদের জন্য-

সকালে কী খাবেন?

অনেকের সকালে খাওয়ার অভ্যেস নেই, অনেকের আছে। যাদের আছে তারা সকাল ৮ টা থেকে সাড়ে ৮ টার মধ্যে দুধ এবং চিনি ছাড়া ১ কাপ চা খেতে পারেন। স্বাদ পেতে আদা, লেবু এবং সামান্য লবণ দিতে পারেন।

কুসুম গরম পানির সাথে অ্যাপল সিডার ভিনেগার অথবা কোকোনাট ভিনেগার মিলিয়ে খেতে পারেন। কিংবা লেবু চিপে রস বের করে নিয়েও মিশিয়ে খেতে পারেন।

যারা সকালের খাবার খেতে দেরি করেন, তারাও একই ভাবে বেলা ১১ টার মধ্যে উপর্যুক্ত খাবার খাবেন।

দুপুরে কী খাবেন?

দুপুরের খাবারের শুরুটা হবে অ্যাপল সিডার ভিনেগারের এক চামচের সাথে এক গ্লাস পানি। মিশিয়ে খাবেন। এতে গ্যাস হওয়া থেকে নিরাপদ তো থাকবেনই, সেই সাথে শরীরের চর্বি কাটাতেও এর উপকারিতা আছে।

দুপুরের খাবারে বাটার, শাক, সবজি, মাংস অথবা মাছ, ঘিয়ে ভাজা ডিম এবং বাদাম, শশা এবং টমেটোর সালাদ খাবেন। শাক, মাছ এবং সবজি এক্সট্রা ভার্জিন ওলিভ ওয়েল দিয়ে রান্না করে খাবেন। সবজি কম সেদ্ধ করবেন, এতে সবজির গুণগত মান অব্যাহত থাকে।

১ দিনে সর্বোচ্চ ৬ টা ডিম কুসুমসহ খেতে পারবেন। এতে সমস্যা নেই তাই ভয় পাওয়ার কিছু নেই। প্রোটিন এবং ফ্যাটের ভালো উৎস ডিম। কিটোজেনিক ডায়েট আপনাকে ডিম খাওয়ার অনুমতি দিয়েছে। অতএব…

পাঠক, মাছ আর মাংস কিন্তু একই সাথে খাবেন না। ঠিক আছে? মাছ খেলে মাংস খাবেন না আবার মাংস খেলে মাছ খাবেন না। মুরগি (দেশি বা ফার্ম), উট, দুম্বা, ভেড়া, খাসি, গরু ইত্যাদি, অর্থাৎ যে মাংসই খান না কেন ১ টুকরো। বেশি নয়।

সকালে যারা ৮ টা থেকে সাড়ে ৮ টার মধ্যে সকালের খাবার খান, তরা চেষ্টা করবেন দুপুরের খাবার দেড়টার মধ্যে খেয়ে নিতে। আর ১১ টায় যারা খান, তারা আড়াইটা থেকে ৩ টার মধ্যে খাওয়ার চেষ্টা করবেন।

বিকালে কী খাবেন?

বিকালে খাওয়ার অভ্যেস থাকলে কিংবা ক্ষুধা লাগলে সকালের নাস্তার পুনরাবৃত্তি করবেন। চা, বাটার কফি, বাটার কিংবা ঘিয়ে ভাজা বাদাম ইত্যাদি খেতেই পারেন।

রাতে কী খাবেন?

রাত ৮ টার মধ্যে রাতের খাওয়া শেষ করবেন। দুপুরে যা খেলেন, এখানেও ঠিক তাই। খাবারের কয়েক পদ কম হোক, সমস্যা নেই।

যে ধরণের খাবার খেতে পারবেন না কিটো ডায়েটে! [Foods You Should Avoid on a Ketogenic Diet]

যত ধরণের ডায়েট কন্ট্রোল এর ব্যাপার আছে, প্রায় সবগুলোতেই সাধারণ কিছু বিধিনিষেধ আছে। তেমনই কিছু বিধিনিষেধ আছে কিটো ডায়েটেও-

(ক) মিষ্টিজাতীয় খাবার বাদ! সাথে চিনিও! সাদা চিনি, লাল চিনি বলতে কিছুই থাকবে না খাদ্য তালিকায়। মিষ্টিপ্রেমিদের জন্য দুঃসংবাদই বটে! তবে দুঃসংবাদের এখানেই শেষ নয়, আরও একটু আছে। কোকজাতীয় সব ধরণের ঠাণ্ডা পানীয়, সব ধরণের ফল ও ফলের জুস, কেইক আইসক্রিম, চকোলেইট, স্মুদি, যে-কোন ধরনের মিষ্টান্ন, ইত্যাদি নিষিদ্ধ। খেতেই পারবেন না।

(খ) আটার তৈরি খাবার অনেকের পছন্দের তালিকায় থাকে। একই সাথে ভাত,পাস্তা, নুডুলস, ওটস, কর্নফ্লেক্সও অনেকে বেশ পছন্দ করে খান। দুঃখের সাথে জানাচ্ছি কিটোজেনিক ডায়েটে এগুলোও বাদ!

(গ) বাঙালি মানেই মাছে-ভাতে-ডালে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাওয়া এক অনুভূতি। কী তাইতো? অনেকে বেশ আয়েশ করে ডাল দিয়ে আলুভর্তা, ডাল দিয়ে আম এবং ডাল দিয়ে ডিম অমলেট খেতে ভালোবাসেন। এ ভালোবাসা দোষের কিছু না তবে কিটো ডায়েটে এ ভালোবাসা নিষিদ্ধই বটে! ডালে প্রোটিনের পাশাপাশি প্রচুর কার্ব থাকার কারণে কিটো ডায়েটে সব ধরণের ডাল বাদ!

(ঘ) প্রিয় পাঠক, মাটির নিচের সবজি খেতে কেমন লাগে আপনার? আলু, গাজর, কচু, ওল, মুলা, ইত্যাদি খেতে কেমন লাগে? সর্ষের তেল আর নতুন ওঠা ধনে পাতা দিয়ে ঝাল করে আলু ভর্তার স্বাদ পেতেই বা কেমন লাগে পাঠক? অমৃত নয়? এখানেও দুঃসংবাদ জানাচ্ছি, কিটো ডায়েটে এই মাটির নিচে হওয়া সবজি খাওয়া একদমই বারণ!

(ঙ) সর্বশেষ দুঃসংবাদ তাদের জন্য যারা প্রক্রিয়াজাত খাবার খেতে ভালোবাসেন! জি! ওটাও বাদ! কোন প্রক্রিয়াজাত খাবার আপনি কিটো ডায়েটে খেতে পারবেন না।

যে খাবার গুলো খাওয়ার অনুমতি আছে! [Foods that are Allowed to Eat!]

খাদ্যপ্রেমীরা হয়তো ভাবছেন, সবই যদি বাদ পড়ার তালিকায় যায় তবে খাবেন টা কী? কিংবা হয়তো ভাবছেন, কিটো ডায়েটে কি তবে না খেয়েই ডায়েট কন্ট্রোল করতে হবে? উত্তর হলো- ‘না!’ অনেক কিছু বাদ পড়লেও অনেক মুখরোচক কিছুই আছে যা আপনি এই কিটো ডায়েটে খেতে পারবেন। চলুন একটু জেনে নেওয়া যাক-

(ক) মাংসপ্রেমীদের জন্য সুখবর! কিটো ডায়েটে আপনি মাংস অর্থাৎ গরু এবং মুরগি খেতে পারবেন।

(খ) অনেকে মাংস অত পছন্দ করেন না। এবারের সুখবরটা তাদের জন্য! সব ধরণের মাছ আপনি খেতে পারবেন। বড়ো কিংবা ছোটো কোন বাছ-বিচার নেই। সব মাছ খাওয়া আপনার জন্য প্রযোজ্য। কী খুশি তো ফিশ-লাভারেরা?

(গ) বলুন তো পাঠক, কোন খাবারকে ব্যাচেলর্স ফুড বলা হয়? ডিম, তাইতো? ব্যাচেলর্স লাইফ, হল লাইফ, মেস লাইফ, সাবলেট লাইফে থাকা প্রতিটা মানুষের নিত্য দিনের খুব পরিচিত খাবার কিন্তু ডিম। ঘরে আর কিছু থাকুক বা না থাকুক, ডিম তো থাকবেই। ডিম ভাজি কিংবা ভর্তা করে দিনাতিপাত করে দেয় এমন অনেকেই কিন্তু আছেন। রান্নার ঝামেলা এড়ানো কিংবা সহজে প্রস্তুত করা যায় বলে ডিমের জনপ্রিয়তাও কিন্তু অনেক। আবার অনেকে ডিম খেতেও বেশ পছন্দ করেন। তো ডিম নিয়ে এত আলাপনের মাঝে একটা সুখবর দিয়ে রাখি, কিটো ডায়েটে আপনি ডিম খেতে পারবেন। জি ঠিকই পড়েছেন। ডিম খাওয়ার অনুমতি আপনি কিটো ডায়েটে পাচ্ছেন।

(ঘ) ঘি এবং বাটার কার না পছন্দ? ঘিয়ে ভাজা লুচি কিংবা পরোটার স্বাদ অমৃত-তুল্য অনেকের কাছেই। আর বাটার? সে তো আরেক ধাপ এগিয়ে। পাউরুটি এবং বাটার যেন মানিকজোড়। বলছি, এই বাটার এবং ঘি-ও আপনি খেতে পারবেন কিটো ডায়েটে!

(ঙ) বাদাম পছন্দ? খেতে ভালোবাসেন? বাদামের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানলে এই জিনিস না খেয়ে থাকা অসম্ভবই হবে আপনার জন্য। কিটো ডায়েট এই অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবারটি আপনার জন্য বরাদ্দ রেখেছে।

(চ) স্বাস্থ্য সম্মত যত তেল আছে, যেমন- অলিভ অয়েল, কোকোনাট অয়েল, ক্যানলা অয়েল, এর সবই খেতে পারবেন।

(ছ) সবুজ যত সবজি আছে, যেমন- পালং, ব্রকলি, বাঁধাকপি ইত্যাদির সবই খেতে পারবেন। তবে রংটা সবুজ হতে হবে।

(জ) মশলা খেতে পারবেন, প্রায় সবই। এতে মানা নেই।

কেন কিটো ডায়েট ভালো? [Benefits of Ketogenic Diet]

প্রায় হুট করেই বাংলাদেশে যেন কিটো ডায়েট বিষয়টা জনপ্রিয় হয়ে উঠলো। এখন প্রশ্ন আসতেই পারে, জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এই কিটো ডায়েট আদতে কতটা ভালো আর কেনই-বা ভালো? উত্তর খুঁজতে কিছু বিষয়ের আলাপন জুড়ে দিচ্ছি-

  • যদি প্রচুর ফ্যাট কমানোর ইচ্ছা থাকে তবে কিটো ডায়েটকে ভরসা আপনি করতেই পারেন! কারণ এই ডায়েটে খুব অল্প সময়েই অনেক ফ্যাট কমানো যায়।
  • এই ডায়েটে ফ্যাট আর প্রোটিন গ্রহণের আধিক্যের কারণে পেট খালি থাকার সম্ভাবনাও থাকে না। অনেক বেশি প্রোটিন শরীরে থাকলে এমনিতেও ক্ষুধা পায় না। এজন্য ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে আনা খুব সহজ হয়ে যায়।
  • মেদ কমে যাবে ঠিকই কিন্তু শরীরে পেশীর পরিমাণ ঠিক থাকবে।
  • গবেষণা জানাচ্ছে, যে সকল মানুষ কিটো ডায়েটে অভ্যস্ত তারা টিপিক্যাল লো-ফ্যাট ক্যালোরির যত রেস্ট্রিক্টেড ডায়েট আছে, সে সমস্ত ডায়েটের চাইতে ২.২ গুণ বেশি ওজন কমাতে সক্ষম হয়েছেন।
  • হার্ট ডিজিজ, ব্লাড প্রেশার, ব্লাড সুগারের রিস্ক কমায় কিটো ডায়েট। একই সাথে পিসিওএস এবং ডায়াবিটিস রোগীদের জন্যও ডায়েটটি বেশ কার্যকর। শুধু ওজন কমানো না বরং ইনসুলিন আর ব্লাড সুগারও নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ সাহায্য করে কিটো ডায়েট।
  • তবে ভেজিটেরিয়ানদের জন্য কিটো ডায়েটটা আসলেই মুশকিলের ব্যাপারই বটে! কারণটা ইতোমধ্যে হয়তো বুঝেও গেছেন। কিটো ডায়েটে প্রোটিন যতটা গ্রহণ করতে হয় শাক-সবজি থেকে সেই পরিমাণটা সংগ্রহ করা আসলেই খুব কঠিন। আবার শাক-সবজিতে শর্করাও থাকে। কিটো ডায়েটে শর্করা আবার নিষেধ! সুতরাং একই সাথে শর্করা আর প্রোটিন, বুঝতেই পারছেন বিষয়টা আসলেই সাংঘর্ষিক।

আছে বিপরীত কিছু ঘটনাও! [Common Side Effects on a Keto Diet]

হঠাৎ জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এই কিটো ডায়েট আদতে কতটা সুফল বয়ে আনে কিংবা কুফল, সে আলাপে যাবো না তবে একটা ডাক্তারের ঘটনা উল্লেখ করতে চাই। মন দিয়ে পড়ুন ,সিদ্ধান্ত আপনাদের!

মেয়েটির বয়স ৩০, উচ্চতা ৫ ফুট ৩। উচ্চশিক্ষিতা এবং একজন মা। দুটি ফুটফুটে সন্তানের জননী সে। জনৈক ডাক্তারের চেম্বারে গিয়েছিলেন তীব্র শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে অথচ তার পরিবারে শ্বাসকষ্টের কোন রোগী নেই! রিপোর্ট জানালো কিটো ডায়েটে আকৃষ্ট হয়ে ৫ মাস ধরে কিটো ডায়েট এ আছেন মেয়েটি। এই ৫ মাসে ৮ কেজি ওজন কমিয়ে ৭২ কেজি থেকে ৬৪ কেজিতে নামিয়ে এনেছেন। সবই ঠিক ছিল কিন্তু সমস্যা বেঁধেছে অন্য জায়গায়। ওজন কমলেও শরীরের নানান জায়গায় নানান রকম সমস্যার দেখা মিলছে। বুকের ভেতর অস্থির লাগা, শরীর দূর্বল লাগা, মাথা ঘোরা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য। সব মিলিয়ে দিশেহারা মেয়েটি।

প্রশ্ন রাখছি, কী বুঝলেন? সবার কি সব সয়?

ডায়েট সম্পর্কে অনেকের ধারণা শূন্যেরও নিচে, এ আপনি জানেন?

ইউটিউব, গুগল ঘেটে অল্প সময়ে ওজন কমাতে অনেকেই ঝুঁকে যান কিটো ডায়েটের দিকে। নাম পালটে অনেকে লো কার্ব ডায়েট বলেও ফলাও করে প্রচার করছেন কিন্তু কাজ তো ঐ একই। কিন্তু সত্যি বলতে কী, আমরা অনেকেই ভুলে যাই যে আমরা আদতে মানুষ। হ্যাঁ, এটাও ঠিক মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। কিন্তু এটাও মাথায় রাখতে হবে যে জীবন একটাই! গেইমের মতো একাধিক লাইফ আমরা পাবো না ,তাই সব কিছু নিয়ে নিজের উপর এক্সপেরিমেন্টটা না চালালেই কী নয়?

না, আমি এও বলছি না যে কিটো ডায়েট ভালো নয়, বরং অনেকের কাজে এসেছে। কিন্তু যদি সর্বসাকুল্যে চিন্তা করতে যান, তাহলে কিন্তু এই কিটো ডায়েট আদতে সাধারণ কোনো মানুষের জন্য উপযুক্ত নয়। বিভিন্ন ডাক্তাররা অন্তত এমনটাই বক্তব্য দিয়েছেন। এখন কেন এই কিটো ডায়েট সর্বসাকুল্যে প্রযোজ্য নয়, সে বিষয়ে একটু আলাপের প্রয়োজন আছে বইকি! তো চলুন বিভিন্ন ডাক্তার এবং বিশেষজ্ঞদের মতামত জেনে নেওয়া যাক-

আচ্ছা পাঠক, উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে এমন কাউকে দেখেছেন কখনও? এই মানুষগুলোর জন্য লবণ খাওয়া কিন্তু একদম নিষিদ্ধ! আবার ধরুন যিনি থাইরয়েড ডিজঅর্ডারে ভুগছেন, স্বাভাবিকভাবেই তার গ্লোটেনযুক্ত খাবার নিষিদ্ধ। একইভাবে গবেষণা করেই কিটো ডায়েটকে মূলত সাজানো হয়েছিল মৃগী রোগীদের থেরাপডিউডিক ডায়েট হিসেবে। প্রয়োজনীয় অনেক পুষ্টি উপাদানকে বাদ দিয়ে কেবল হাই ফ্যাট, হাই প্রোটিন এবং নামেমাত্র কিছু কার্বোহাইড্রেড দিয়ে সাজানো হয় এই কিটো ডায়েট। এই ডায়েট তৈরির নেপথ্যে ছিল মৃগী রোগীদের সুস্থতা। কিন্তু ঔষধ আবিষ্কারের আগে এই কিটো ডায়েটের সাইড ইফেক্ট প্রকট হয়ে ধরা দেয়। অতিরিক্ত ওজন হ্রাস, স্বাস্থ্য জটিলতা সহ ডায়েটটি গ্রহণযোগ্যতা হারাতে শুরু করে। আমাদের মস্তিষ্কের প্রধান খাদ্যই হচ্ছে শর্করা বা গ্লুকোজ যেটা আমাদের সারাদিনের অ্যানার্জি বহন করে। এখন আপনি চিন্তা করুন, এত প্রয়োজনীয় এই শর্করা বাদ দিয়ে অতিরিক্ত চর্বি যখন আপনি গ্রহণ করছেন শর্করার পরিবর্তে, তা আদতে কতটা কাজে দেবে? সাময়িকভাবে এটা হয়তো শরীরে থাকা অতিরিক্ত চর্বিকে পুড়িয়ে, ভেঙে ওজন কমিয়ে দেয় এবং শরীরে স্বাভাবিক মেটাবলিজমের বিরুদ্ধে হয়ত কাজও করে, তবে সেটা সাময়িক। কিন্তু দীর্ঘসময় ধরে এই অবস্থা চলতে থাকলে কিছু সমস্যা হয়। অতিরিক্ত ফ্যাট বার্ন হওয়ার দরুন কিটন বডি অতিরিক্ত তৈরি হয় যা প্রাথমিকভাবে রক্তে কিটোসিস এবং পরবর্তী সময়ে কিটোএসিডোসিসে রুপান্তরিত হয়। আর এগুলো রক্তের সাধারণ পিএইচ লেভেলকে একদম ক্ষতিগ্রস্থ করে ফেলে।

পড়ুন: ৩০ দিনে ওজন কমানোর কার্যকরী উপায়

কিটো ডায়েটের শুরুর দিকে প্রথম ২/৩ সপ্তাহ কোনরকমে ঝুঁকির বাইরে ফেললেও দীর্ঘমেয়াদী কিটো ডায়েট শরীরের জন্য মোটেও সুখকর কিছু না। মাথা ঘোরানো, মাথাব্যথা, বুক ধরফর করা, বমি বমি ভাব, শরীর ব্যথা, কাজে অমনযোগিতা, ভুলে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা হ্রাস, সারাদিন পিপাসা পাওয়া, খিটখিটে মেজাজ ইত্যাদি দেখা দেয়। আরও ভয়ংকর তথ্য দেই পাঠক? হুট করে না জেনে-বুঝে এই কিটো ডায়েট অনুসরণ করে অতিরিক্ত চর্বি গ্রহণ করার ফলে রক্তে কোলেস্টেরল, এলডিএল, টিজি বেড়ে গিয়ে স্ট্রোক এবং হৃদরোগ এর ঝুঁকি বেড়ে যায়।

এখানেই শেষ নয়! অতিরিক্ত চর্বি গ্রহণের কারণে উপর্যুক্ত সমস্যা তো আছেই, বাড়তি হিসেবে যোগ দেয় ডায়রিয়া। আবার ডায়েটে ফাইবার কম থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্যকে বোনাস হিসেবেও পেতে পারেন! ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত যারা, তাদের জন্য এই কিটো ডায়েট মোটেও আদর্শ নয়। লিভার দুর্বল তো করবেই, পিত্তথলিতে পাথর, প্যানাক্রিয়াস সহ হজম শক্তি পর্যন্ত কমিয়ে দেবে। এতো গেলো শরীরের ভেতরকার সমস্যা। বাইরের কথায় একটু আসি- ত্বকের উজ্জ্বলতা হারানোর পাশাপাশি চুল পড়ে যাওয়ার আধিক্য দেখা দেবে! হরমোনাল ইম্ব্যালেন্স যাদের আছে, গর্ভবতি, দুগ্ধদানকারি মা, আর্থ্রাইটিসে ভোগা মানুষদের জন্যও এই কিটো ডায়েট আদর্শ নয়। মেয়েদের জন্য বলছি- ডায়েট শুরুর পূর্বে জেনে-বুঝে আগাবেন। সামান্য এদিক ওদিকে ঋতুস্রাবের সমস্যার পাশাপাশি বাচ্চা ধারণেও কিন্তু সমস্যা হতে পারে।

কিডনি রোগীদের কথা একটু না বললেই নয়। এই রোগীদের একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রোটিন খাওয়ার অনুমতি থাকে। কিটো ডায়েটে মাত্রার অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণের ফলে কিডনিতে চাপ পড়ে। দীর্ঘসময় এই চাপ নেওয়ার ক্ষমতা কিডনির থাকে না ফলে কিডনিতে পাথর হয়ে বিকল হয়ে যাওয়ার ঘটনা কিন্তু বিরল নয়।

পাঠক, একটু হলেও এবার হয়ত ধারণা পেয়েছেন যে কিটো ডায়েট আদতে সর্বসাকুল্যের জন্য নয়। এবং দীর্ঘমেয়াদের জন্যও আদর্শ নয়। আবার হুট করে ছেড়ে দিলে আগের চেয়ে বেশি হারে ওজন বেড়ে যাবে। মূলত এখনও পর্যন্ত কোন গবেষণায় কিটো ডায়েটের দীর্ঘমেয়াদী কিংবা সর্বসাকুল্যে গ্রহণযোগ্যতার বিষয় আবিষ্কৃত হয়নি। তাই একে পুর্ন নিরাপদ ভাবার আগে একটু ভাবতে হবে। ডাক্তার কিংবা পুষ্টিবিদ এর পরামর্শ ছাড়া ফেইসবুক, ইউটিউব এবং গুগলের উপর ভরসা করে নিজের শরীর নিয়ে এক্সপেরিমেন্টে না যাওয়ার অনুরোধ জানাবো। শরীরের চাহিদা অনুযায়ী ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস তৈরি করুন। ভালো চিন্তা করুন এবং প্রফুল্ল থাকুন। বাজে চিন্তা এবং বাজে অভ্যাস থাকলে তা বাদ দিয়ে দিন। সুস্থতা হাতে এসে ধরা দেবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মানবজীবনের ৭টি বদভ্যাস এর তালিকা করেছে যেগুলো মানব মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর –

  • সকালে কিছু না খাওয়া।
  • রাতে খুব দেরিতে ঘুমানো।
  • বেশি চিনি ও মিষ্টান্ন গ্রহণ।
  • দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা।
  • খাওয়ার সাথে টিভি দেখা, মোবাইল চালানো অথবা কম্পিউটার চালানো।
  • ঘুমানোর সময় মাথায় কিছু দিয়ে ঢেকে রাখা- টুপি বা স্কার্ফ জাতীয়।
  • প্রস্রাবের বেগ থাকা সত্ত্বেও আঁটকে রাখা।

সুস্থ জীবন যাপনের জন্য শরীরে কম বেশি সব ধরণের খাবারই কিন্তু দরকার হয়। শরীর যেহেতু আপনার, একে ভালো রাখার দায়িত্বটাও আপনার। আর তাই সিদ্ধান্তটাও আপনার।

Filed Under: Diet Tips, Weight Loss (ওয়েট লস)

৩০ দিনে ওজন কমানোর কার্যকরী উপায়

by Mohona Leave a Comment

মাত্রাতিরিক্ত ওজন একজন মানুষকে দুর্দশাগ্রস্ত করে তুলে। মিডিয়া এবং সমাজ থেকে আমাদের প্রতিনিয়ত একটা কথাই শুনতে হয় তা হল “অস্থুল বা পাতলা ধরনের হওয়াই সুন্দর”। কিন্তু মূল কথা হল সকল স্বাস্থ্য গড়নই সুন্দর। অতিরিক্ত ওজনে আপনাকে দেখতে কেমন দেখাবে সেটা মূল সমস্যা না, মূল সমস্যা হল আপনার স্বাস্থ্য। কিন্তু শুধু অনুশীলন করা এবং অতিরিক্ত ওজন নিয়ে সবসময় চিন্তা-ভাবনা আপনাকে তেমন কোন ভালো ফল দিবে না।

ওজন কমানোর জন্য আপনাকে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

প্রথমত: আপনাকে মেনে নিতে হবে যে আপনার ওজন স্বাভাবিক নয় এবং মানুষের গড় ওজন থেকে অনেক উপরে।

দ্বিতীয়ত: অতিরিক্ত ওজন কমানর জন্য নিজেকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করা এবং শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে যাওয়া যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করেন।

যদি কেউ এই পদক্ষেপ গুলো গ্রহন করেন এবং সঠিকভাবে চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গিকার করেন তাহলে ৩০ দিনে ওজন কমানোর জন্য একটি খাদ্য পরিকল্পনা আছে যা আপনাকে সত্যিই ৩০ দিনে ওজন কমাতে সাহায্য করবে।

কিভাবে আপনি ৩০ দিনে ওজন কমাবেন?

৩০ দিনে ওজন কমানোর কার্যকরী উপায়

ওজন কমানোর জন্য সবসময় একটি স্বাস্থ্যকর পদ্ধতি থাকে। খুব দ্রুত বা কঠোরভাবে ওজন কমানো এবং বাড়ানো একজন ব্যক্তির জন্য এবং তার শরীরের জন্য বিপদজনক। এরকম ওজনে উঠা-নামা করা দেহে প্রয়োজনীয় পুষ্টি এবং খনিজ সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এবং ব্যক্তিকে আরো অসুস্থ এবং রোগাক্রান্ত করে দিতে পারে। এখানে ওজন কমানোর জন্য একটি পরিকল্পিত এবং পূরনাঙ্গ পথ আছে যার মাধ্যমে আপনি কি খাচ্ছেন এবং কখন খাচ্ছেন তা লক্ষ্য রাখতে পারবেন।

৩০ দিনে ওজন কমানর একটি সহজ খাদ্যপরিকল্পনা নিম্নে তুলে ধরা হলঃ

১. সত্য স্বীকার করার মানুষিকতা

এক মাসে ওজন কমানোর জন্য আপনার প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হল আপনাকে সত্যটা স্বীকার করতে হবে যে আপনি আপনার ওজন বাড়িয়ে ফেলেছেন এবং আপনার ওজন স্বাভাবিকের থেকে বেশি। হয়তো ইতিমধ্যে আপনি অতিরিক্ত স্বাস্থ্যের অধিকারী এবং বর্তমানে কলেজ বা কর্মক্ষেত্রে নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।

পরিস্থিতি যেরকমই হোক না কেন, সবসময় মনে রাখবেন যে যখন থেকে আপনি পরিস্থিতি স্বীকার করার মানুষিকতা দেখানো শুরু করবেন ঠিক তখনি আপনি নিজেকে এবং নিজের সব কিছু পরিবর্তন করতে পারবেন। সুতরাং, নিজেকে প্রশ্ন করার মাধ্যমে পরিবর্তন শুরু করুন।

নিজেকে প্রশ্ন করুন এই মুহূর্তে আপনার ওজন কতটুকু এবং একটি লক্ষ্য আছে যেটি এই এক মাসে আপনাকে পুরন করতেই হবে। এটির জন্য আপনার নিজেকে ঘৃণা করতে হবে না। অতীতে যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। অতীত পরিবর্তন করার জন্য আপনি কিছুই করতে পারবেন না, কিন্তু ঠিক এই মুহূর্তে আপনি আপনার জীবনধারা পরিবর্তন করে ফেলতে পারেন এবং নিজেকে সারাজীবনের জন্য পুরোপুরি বদলে ফেলতে পারেন।

২. লক্ষ্য স্থির করুন

দ্বিতীয় যে জিনিষটি আপনাকে করতে হবে তা হল কিছু লক্ষ্য স্থির করতে হবে যা বাস্তববাদী বা গ্রহনযোগ্য।

আমি জানি এখানে এমন কিছু কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত অদ্ভুত খাদ্যপরিকল্পনা আছে যা আপনাকে মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই ওজন কমানোর নিশ্চয়তা দেয়। এটি সত্যিই খুব হাস্যকর।

যদি একটি খাদ্যপরিকল্পনা আপনাকে ৭ দিনে ৭ পাউন্ড কমাতে সাহায্য করে তাহলে এটি অবশ্যই আপনার স্বাস্থের জন্য ভালো না। আসলে, এটি একটি অস্থায়ী পরিকল্পনা এবং এটি একটা সময়ের পরে আপনাকে অসুস্থ করে ফেলতে পারে।

আপনার অবশ্যই ধৈর্য্য থাকতে হবে এবং লক্ষ্যগুলো স্থির করতে হবে যা বাস্তবসম্মত। একটি মোটামোটি সহজ লক্ষ্য হল এক মাসে ২-৩ কেজি ওজন কমানো এবং এই লক্ষ্যটি যথাসময়ে পুরন করা সম্ভব এবং এর লক্ষণ আপনার শরীরেও দেখাবে। একটি চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করার আগে এভাবেই চিন্তা করুন।

৩. কার্ডিও (Cardio) করার চেষ্টা করুন

তৃতীয় পদক্ষেপটি হল আপনার দৈনন্দিন কর্মসূচিতে কার্ডিও অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। নতুনদের জন্য সপ্তাহে ৫ বার ৩০ মিনিট ব্যায়াম করাই যথেষ্ট। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আপনি ৪০ মিনিট বা তার থেকেও বেশি সময় ব্যায়াম করতে পারবেন। এটা সবসময় আপনার সাচ্ছন্দ্যতার স্তরের উপর নির্ভর করে।

মনে রাখবেন, আপনি যেই ব্যায়াম রুটিন অনুশীলন করেন সেই ব্যায়াম রুটিনই সবসময় অনুশীলন করবেন। আপনার ব্যায়াম করার দিন গুলো থেকে একটি দিনও ছুটি নিবেন না। সবসময় মনে রাখবেন যখন আপনি ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন, তখন প্রতি ক্যালোরি গণনা করা হচ্ছে। আপনি দুই মিনিট শরীর গরম করার মাধ্যমে শুরু করতে পারেন এবং শরীর কিছুক্ষণ প্রসারণের মাধ্যমে শেষ করতে পারেন।

যদি আপনি কিভাবে কার্ডিও ব্যায়াম অনুশীলন করতে হবে তা বুঝতে না পারেন তাহলে ইউটিউবে ভিডিও দেখার মাধ্যমে চেষ্টা করতে পারেন।

৪. সঠিক সময়ে খাবার গ্রহন করুন

সঠিক খাবার খাওয়া যতটা গুরুত্বপূর্ণ, সঠিক সময়ে খাবার খাওয়াও ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। রাত ৮ টার পর রাতের খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন এবং রাতের খাবার খাওয়ার পর ঘুমাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই কিছুক্ষণ কাজ করে নিবেন।

৫. নাস্তা গ্রহণে সতর্ক থাকুন

বেশিরভাগ ওজন বাড়ার প্রধান কারন হচ্ছে অতিমাত্রায় ভারী নাস্তা গ্রহণ করা! প্রতিটা আহারের মাঝখানে আমরা নিজেরাই নিজেদের যেকোন কিছু এবং সবকিছু খাওয়ার স্বাধীনতা দেই। জলখাবার বা নাস্তা খাওয়া খারাপ নয়, কিন্তু স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। বিস্কুটের বদলে রোস্টেড বাদাম অথবা সালাদ খান। যতটা সম্ভব ক্যাফেইন গ্রহণ করা হ্রাস করুন।

৬. নিজের বল প্রশিক্ষণ

বল প্রশিক্ষণ এমন একটি জিনিষ যা আপনি অনুশীলনের সময় কখনই হাত ছাড়া করতে চাইবেন না। কার্ডিও প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করার পর ১০ মিনিট সময় বল প্রশিক্ষণে ব্যয় করুন। এক্ষেত্রে ডাম্ববেলস খুব ভালো একটি বিকল্প, কিন্তু যদি আপনার ঘরে ডাম্ববেলস না থাকে তাহলে এটির পরিবর্তে ভারী পানির বোতল ব্যবহার করতে পারেন। কিছু সংখ্যক মহিলা বালু ভরতি বোতলও পছন্দ করেন। এই প্রশিক্ষণ আপনার অনুশীলনকে আরো কার্যকরী করে তুলবে। এতে নিশ্চিতভাবে আপনার শরীরকে একটি সুন্দর আকৃতি দিবে এবং আপনার বাহু, অ্যাবস এবং নিতম্বকে দৃঢ় করবে।

৭. হাঁটুন

কার্ডিও এর পরিবর্তে হাঁটাকে আপনি বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন না। ওজন কমানোর জন্য আপনাকে অবশ্যই হাঁটা এবং কার্ডিও দু’টিই সমন্বয় করে করতে হবে।

আপনি কি জানেন এটা আপনার জন্য কতটা কার্যকর?

সকালে ৪৫ মিনিটের জন্য হাঁটা আপনার শরীরের ১৬০ ক্যালোরি পর্যন্ত খরচ করতে পারে। যদি আপনি আরো দ্রুত হাঁটতে পারেন তাহলে এটি অবশ্যই আপনাকে আরো বেশি ক্যালোরি খরচ করতে সাহায্য করবে। এটি মেটাবলিজম (metabolism) বৃদ্ধি করে এবং আরো দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে।

যদি আপনার কাছে হাঁটা কিছুটা বিরক্তিকর মনে হয় তাহলে আপনার সকল পছন্দের গান গুলো নিয়ে একটি প্লেলিস্ট তৈরি করুন, আপনার মুঠোফোনে ডাউনলোড করুন এবং যখন হাঁটবেন তখন শুনতে থাকুন। এটা অবশ্যই আপনাকে ব্যায়াম করতে উৎসাহ জোগাবে।

৮. সিঁড়ি আরোহণ

বেশ কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, যারা নিয়মিত সিঁড়ি আরোহণ করেন তারা অন্যদের তুলনায় দ্রুত ওজন কমাতে সক্ষম। যদি আপনি দিনে ৫ মিনিট শুধু সিঁড়ি আরোহণে ব্যয় করতে পারেন, তাহলে আপনি নিশ্চিতভাবে কিছু অতিরিক্ত ক্যালোরি খরচ করতে পারবেন। উপরের দিকের সিঁড়িতে উঠার উপকারিতা হচ্ছে এটি আপনার হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দেবে এবং আপনাকে মুহূর্তের মধ্যে ঘামিয়ে দিবে। আপনি দিনে ৩ বার এই অনুশীলনটি করতে পারেন এবং মাসের শেষে আপনার শরীরে একটি পরিবর্তন দেখতে পাবেন।

৯. টিভি দেখার সময় প্রশিক্ষণ

এখন, আপনাদের মধ্যে কতজন আসলেই এটি সম্পর্কে শুনেছেন? অনেকেই বলে টিভি দেখার সময় ব্যায়াম করা নিজেকে অলসতা এবং শ্রমবিমুখতা থেকে দূরে রাখার একটি দুর্দান্ত উপায়। সারাদিন হাঁটা এবং ব্যায়ামের পর টিভি দেখার সময় বিজ্ঞাপন বিরতিতে আপনি যদি কিছুক্ষণ লাফাতে থাকেন, বুকডাউন এবং শরীর প্রসারণ করতে থাকেন তাহলে এটি আপনার কোন ক্ষতি করবে না। বরং এটি আপনি যা খেয়েছেন তা হজম করতে সাহায্য করবে! এই কৌশলটি আপনার ওজন এক মাসের মধ্যে ৩ কেজি কমাতে অবশ্যই সাহায্য করবে।

১০. প্রোটিন

ওজন হ্রাস করা সবসময়ই স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার সাথে সম্পর্কিত। অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে আপনি ওজন হ্রাস করতে পারবেন না। যদি আপনি আপনার শরীরে কোন পরিবর্তন দেখতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই আপনার খাদ্যাভাস এবং জীবনধারা পরিবর্তন করতে হবে।

আপনার সম্পূর্ণ খাদ্যতালিকাটি এমন সব খাবার দিয়ে সাজান যেগুলোতে অনেক প্রোটিন আছে। অর্থাৎ, আপনার খাদ্যতালিকাতে ফল, শাক-সবজি, ডাল, ডিম এবং চর্বিহীন মাংস এগুলো রাখতে পারেন। ফলের তালিকা থেকে আম এবং কলা দূরে রাখুন কারন এগুলো সামান্য হলেও ওজন বাড়িয়ে দেয়। আপনি দিনে একটির বেশি কলা কখনই খাবেন না।

আলু অথবা মিষ্টি আলু খাবেন না কারন এরাও আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। দিনে একটির বেশি ডিম খাবেন না এবং গরুর মাংস এবং ছাগলের মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। এগুলোর থেকে মুরগির মাংস অপেক্ষাকৃত বেশি স্বাস্থ্যকর। আপনার খাদ্য তালিকাতে ডালও খুব ভালো সংযোজন হতে পারে।

১১. অস্বাস্থ্যকর খাবার নয়

পরবর্তী যে জিনিষটি আপনাকে করতে হবে তা হল আপনার তালিকা থেকে অস্বাস্থ্যকর/ভাজা-পোড়া খাবার বাদ দিতে হবে। আপনাকে সাদা খাবার থকে দূরে থাকতে হবে, যেমন নুডলস, পাস্তা এবং সাদা পাউরুটি। এগুলোর পরিবর্তে আপনি বাদামি পাউরুটি বা মাল্টি-গ্রেইন পাউরুটি খেতে পারেন। মাঝে মাঝে গমের পাস্তা খাওয়াও ভালো। রাস্তার খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন কারন এগুলো নিম্ন মানের তেল দিয়ে রান্না করা হয়।

১২. চিনিকে না বলুন

ওজন কমানোর জন্য আপনাকে আরেকটি জিনিষ অবশ্যই করতে হবে আর তা হল চিনি থেকে দূরে থাকতে হবে। এটি সম্পূর্ণভাবে না তো না-ই। কেক থেকে শুরু করে মাফিন, বিস্কুট এবং আইস্ক্রিম, এদের সব গুলোই আপনার শত্রু। এই খাবার গুলো আপনার মেটাবলিজম কমিয়ে ফেলে এবং আপনার ওজন হ্রাস করা বন্ধ করে দেয়। যেহেতু তারা প্রচুর ক্যালোরিপূর্ণ, তাই এরা কিছুদিনের মধ্যেই আপনাকে অলস এবং মোটা বানিয়ে দিবে। বেশিরভাগ গবেষক বলেছেন, ডায়েট থেকে বিরত থাকার দিনেও মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে দূরে থাকাই ভালো। যতদিন পর্যন্ত আপনি ওজন হ্রাস করার পরিকল্পনা করবেন, মনে রাখবেন আপনার খাদ্য তালিকা থেকে অবশ্যই মিষ্টি জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে!

১৩. গ্রিন টি

গবেষকদের মতে, গ্রিন টি পান করা ওজন হ্রাস করতে সাহায্য করে। যদি আপনি দিনে ৩-৪ কাপ গ্রিন টি পান করেন, তাহলে আপনি আপনার মেটাবলিজম বৃদ্ধি  করতে পারবেন এবং অতিরিক্ত ওজন গুলো দ্রুত ঝরিয়ে ফেলতে পারবেন। ব্যায়াম করার সময় এটা আপনাকে আরো ক্যালোরি ঝরাতে সাহায্য করবে। এবং আপনাকে এই পানীয় নিয়ে চিন্তা করতে হবে না কারন এর কোন ক্যালোরি নেই। এটি পানির মতই নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। সকালে এক কাপ, সন্ধ্যায় হালকা নাস্তার সাথে আরেক কাপ এবং সবশেষে রাতের খাবারের পর আরেক কাপ পান করুন।

১৪. পানি পান করুন

যদি আপনি এক মাসের মধ্যে আপনার ওজন দ্রুত কমাতে চান তাহলে প্রতিদিন ২ লিটার পানি পান করুন। এটি আপনার শরীর থেকে সকল দূষিত পদার্থ বের করে দিবে এবং আপনার শরীর সবসময় বিশুদ্ধ রাখবে। এমনকি যখনই আপনি খেতে বসবেন প্রতিবারই ছোট বোতলের এক বোতল পানি পান করবেন। এটি আসলে আপনাকে কম খেতে সাহায্য করবে। খাওয়া শেষে আরো এক গ্লাস পানি পান করুন। এইভাবে আপনি খাবার থেকে অনেক কম কম ক্যালোরি গ্রহন করবেন এবং অবশেষে আপনার ওজন আরো কমতে থাকবে।

১৫. সুষম খাবার

কোন খাবার খেলে আপনি এক মাসের মধ্যে ওজন কমাতে পারবেন, এই ব্যাপারটি নিয়ে আপনি কি খুব বেশি চিন্তিত? আমি আপনাকে একটি ছোট পরামর্শ দিচ্ছিঃ

প্রাতরাশঃ এক কাপ দুধ, ফল, দুইটি রুটির সাথে ডিম এবং গ্রিন টি।

মধ্যাহ্নভোজঃ ভাত, দুই পিস মাংস/মাছ, এক বাটি সবজি।

সান্ধ্যভোজনঃ ঘরে তৈরি মুরগির স্যুপ/ভাতের সাথে মুরগি/ভাতের সাথে সবজি এবং ডাল।

নাস্তাঃ চিনি মুক্ত বিস্কুট/টোস্ট।

১৬. টিভি দেখার সময় খাওয়া থেকে বিরত থাকুন

টিভি দেখার সময় যতটা সম্ভব চেষ্টা করবেন না খেতে। কারন এই সময় আপনি যতটুকু খেতে পারেন তার থেকেও বেশি খেয়ে ফেলেবেন। এমনকি যখন আপনি খাবেন তখন খাওয়ার দিকেই মনোযোগ দিন এবং আস্তে আস্তে খান। খাবারের প্রতিটি গ্রাস উপভোগ করুন। এটি প্রকৃতপক্ষে আপনাকে ঠিকমত খেতে সাহায্য করবে এবং ওজন কমানোর জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু খেতে সাহায্য করবে।

১৭. সপ্তাহে একবার ডায়েট থেকে বিরত থাকুন

আপনি সপ্তাহে একবার ডায়েট করা থেকে বিরত থাকতে পারেন। আর এটি শুক্রবার করার চেষ্টা করুন। এই দিনে আপনি যে খাবারটি খেতে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন তা খেতে পারবেন। যাই হোক, অতিরিক্ত খেয়ে ফেলা থেকে বিরত থাকবেন অথবা সারাদিন ধরে খেয়ে যাওয়া থেকে দূরে থাকবেন। এর জন্য একবারের ভোজই যথেষ্ট।

১৮. ব্যায়াম করার আগে কফি পান করুন

ব্যায়াম করার ১ ঘন্টা আগে আপনি এক কাপ গরম কফি পান করতে পারেন। অবশ্যই এটি চিনিবিহীন হতে হবে। যে সকল মানুষ এই কৌশলটি অনুসরণ করেছে তারা সকলেই এক মাসের মধ্যে নিজেদের শরীরে অনেক গুলো পরিবর্তন লক্ষ্য করেছে।

১৯. আরো একটু বেশি ঘুমান

ওজন কমানোর সবচেয়ে বড় গোপন বিষয়টি হল ভালো ঘুম। আপনি যদি প্রতিদিন ৮ ঘন্টার মত ঘুমান তাহলে আবশ্যই আপনার শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরানোর সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে। কারন শরীর তখনি খুব ভালো কাজ করে যখন বিশ্রামে থাকে। যদি আপনি নিয়মমাফিক বিশ্রাম নেন তাহলে ওজন হ্রাস করা আপনার হাতের মুঠোয় চলে আসবে।

২০. কোন প্রকার কঠোর খাদ্যতালিকা অনুসরণ করবেন না

ওজন কমানোর সময় কখনোই কোন কঠোর খাদ্যতালিকা অনুসরণ করবেন না। সবসময় মনে রাখবেন, আপনাকে সুস্থ থাকতে হবে এবং দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করার জন্য শরীর সুরক্ষিত রাখতে হবে। যদি আপনি এই কথাটি মনে রাখেন তাহলে আপনি এত দ্রুত আপনার লক্ষ্য গুলো অর্জন করতে পারবেন যা আপনার কল্পনার বাহিরে।

২১. নিজেকে দৃঢ়বদ্ধ এবং অনুপ্রাণিত রাখুন

ওজন কমানোর সর্বশেষ এবং গুরুত্বপূর্ণ ধাপটি হলো অনুপ্রেরণা এবং দৃঢ়তা। আপনি যদি উপরের পরামর্শগুলো অনুসরণ করতে পারেন এবং আপনার লক্ষ্যে মনোযোগী হতে পারেন, তাহলে কেউ আপনাকে ওজন কমানো থেকে দূরে সরাতে পারবে না।

২২. সপ্তাহে একবার নিজের ইচ্ছামত খান

স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার মানে এই না যে আপনি নিজেকে সুস্বাদু খাবার থেকে বঞ্চিত করবেন। আপনার সকল ইচ্ছাপূরণে নিজেকে নিজে বাধা দিবেন না। সপ্তাহে একবার আপনার পছন্দের খাবার গুলো খান যেগুল আপনি খুব উপভোগ করেন। কিন্তু যতটুকু খাবার আপনার পেট গ্রহন করতে পারে ঠিক ততটুকুই খাবেন। অতিরিক্ত খাওয়া বর্জন করুন এবং আপনার শরীর সক্রিয়, স্বাস্থ্যকর এবং মেটাবলিজম স্তর উন্নত রাখতে আপনি প্রতিদিন ৪৫ মিনিট শারিরিক পরিশ্রম করছেন তা নিশ্চিত করুন।

সত্যিকার অর্থে আপনার কতটুকু খাওয়া উচিত?


আমাদের ওজন তখনি বৃদ্ধি পায় যখন আমরা আমাদের দেহের প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার খাই। আপনার প্রতিদিন কতটুকু ক্যালোরি লাগবে তা জানতে আপনাকে একজন ডাক্তারের শরনাপন্ন হতে হবে। ডাক্তার আপনার দৈনিক রুটিন, কাজের ধরণ, দৈনন্দিন জীবনধারা অভ্যাস, খাদ্য অভ্যাস, ভ্রমণ অবস্থা এবং শারিরিক কার্যকলাপ দেখে আপনার প্রতিদিনের ক্যালোরির চাহিদাগুলির মূল্যায়ন করতে সহায়তা করবে। আপনার কতটুকু ক্যালোরি লাগবে তা জানার পর দ্বিতীয় ধাপ হল- আপনি কি খাবেন তা পরিকল্পনা করা।

আপনি যদি আপনার ক্যালোরির সীমা অতিক্রম করতে না চান তাহলে আপনাকে যতটা সম্ভব ঘরের খাবার খেতে হবে। সকল প্রকার প্যাকেটজাত খাদ্য, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য এবং ফাস্ট ফুড পরিত্যাগ করতে হবে। বাহিরে খাওয়া এবং বাহিরের প্যাকেটজাত খাবার খাওয়াকে একেবারেই না! বলতে হবে। এছাড়াও, যখন ঘরে রান্না করবেন তখন কম তেল ব্যবহার করবেন।

আপনার ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য নিম্নে একটি তালিকা দেওয়া হলো যা আপনাকে অনুসরন করতে হবেঃ

১. ওজন কমানোর  জন্য কাঁচা শাক-সবজি, ফল এবং সালাদ খাওয়া সবচেয়ে ভাল।

২. অলিভ অয়েল এবং সয়াবিন তেল রান্না করার জন্য খুব ভাল।

৩. চর্বি অপসারণের জন্য দুধ দুইবার জ্বাল দিবে্ন।

৪. মিষ্টি খাওয়া পরিহার করুন, ঘরে বানালেও তা পরিহার করুন।

৫. নাস্তা খাওয়ার সময় হারবাল চা মধু দিয়ে পান করুন।

সবশেষে, সুস্থ থাকার চেষ্টা করুন কিন্তু পাতলা নয়। আপনার গড়ন যেমনই হক না কেন আপনি সুন্দর। যখন আপনি ভিতর থেকে সুস্থ অনুভব করা শুরু করবেন, তখনই অল্প একটু মেদ আপনাকে প্রভাবিত করবে না। এবং যদি আপনি আপনার দেহ আরো সুগঠিত করতে চান তাহলে আপনি এগিয়ে যান এবং অনুশীলন শুরু করুন।

Filed Under: Weight Loss (ওয়েট লস)

Primary Sidebar

সাম্প্রতিক লেখা

১৬টি সেরা খাবার সকালবেলার দৌড়ের পর খাওয়ার জন্য – পোস্ট-রান রিকভারি পুষ্টি

ওজন কমাতে সেরা ২০টি ডিটক্স স্মুদি: উপাদান, প্রস্তুতি ও উপকারিতা

সহজে হজম হয় এমন ১৬টি হালকা খাবারের রেসিপি

Low FODMAP Diet: ৩ ধাপের পরিকল্পনা ও কোন খাবার খাবেন, কোনটা এড়িয়ে চলবেন

প্যালিও ডায়েট: উপকারিতা, ঝুঁকি ও ৭ দিনের খাবার পরিকল্পনা

বিভাগ সমূহ

  • Fashion
  • HAIR CARE (চুলের যত্ন)
    • Basic Hair Care (বেসিক হেয়ার কেয়ার)
    • Dandruff (খুশকি)
    • Dry Hair Care (শুকনো হেয়ার কেয়ার)
    • Hair Care Ideas
    • Hair Fall ( চুল পড়া)
    • Hair Growth ( চুল বৃদ্ধি)
    • Hair Treatment (চুল চিকিৎসা)
    • Oily Hair Care ( তৈলাক্ত চুলের যত্ন)
  • HEALTH & WELLNESS (স্বাস্থ্য ও সুস্থতা)
    • Diet Tips
    • Fitness
    • Healthy Food
    • Home Remedies
    • Ingredients and Uses
    • Nutrition (পুষ্টি)
    • Weight Gain
    • Weight Loss (ওয়েট লস)
  • Lifestyle (জীবনযাপন )
  • MAKEUP (মেকআপ)
    • Bridal Makeup (ব্রাইডাল মেকআপ)
    • Eye Makeup (চোখের সাজসজ্জা)
    • Lip Make up (লিপ আপ করুন)
  • SKIN CARE (ত্বকের যত্ন)
    • Acne
    • Anti Ageing
    • Beauty Secrets
    • Dry Skin
    • Face Care Tips
    • Face Packs and Masks
    • Glowing skin
    • Homemade Tips
    • Oily Skin
    • Skin Care Ideas
    • Skin Care Problems
    • Sunscreen
  • Top 10's

Copyright © 2025 · RUP KOTHON · All rights reserved ®