মেদবিহীন, ছিপছিপে সুন্দর স্বাস্থ্য ছোট বড় সবারই খুব প্রিয়। আর নিজের সুগঠিত, সুগড়ন ও কার্যক্ষম শরীর সবারই কাম্য । পরিসংখ্যানে জানা যায়, যুগোপযোগী এবং উপযুক্ত খাবার গ্রহণে সক্ষম মানুষই স্বাভাবিক ওজন ও সুস্থ শরীর নিয়ে বেঁচে থাকেন। আর ঠিক তাই, খাবার নির্বাচনে এবং নিয়মিত শরীরচর্চায় আমাদের সকলের একমাত্র ব্রত হওয়া উচিত। তথাপি এই প্রত্যাশা পূরণ সহজ কাজ নয়।
আমরা জানি যুগে যুগে ইতিহাসে, শক্ত মনের মানুষই স্বাভাবিক চিন্তাধারা এবং সাবলীল মননশীলতার ছাপ রেখে গেছেন। একটা সময় ছিল যখন মানুষ, সিনেমার রঙীন পর্দায় চিকন কিংবা মুটিয়ে যাওয়া নায়ক-নায়িকা দেখে তাদের মতো নিজেদেরকে সাজানোর ব্যর্থ প্রয়াসে নিজেদের অলস অবসরের সময় অতিবাহিত করতো ।
গড়বাঁধা অলস জীবনাসরের সেই সময় এখন পাল্টে গেছে ,পাল্টানোর সেই অদম্য গতি, এতটাই প্রবল যে শরীর নিয়ে অসচেতন মানুষগুলো ও এখন হাঁটছে সচেতনতার পথে। তবে, বিষয়টি মন্দ নয়। চলমান মহামারীতে বেঁচে থাকাটাই যেখানে অনিশ্চিত সেখানে স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন হওয়াকে অনেকে বিলাসিতা ভাবলেও মূলত এটিই ঠিক।
ওজন অনুচিন্তন!
অনেক হলো জীবনাদর্শের নিয়মানুবর্তিতা । প্রসঙ্গে ফেরা যাক এবার তবে – স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবনার শুরুতে যেটা সবার আগে মাথায় আসে, তার নাম ওজন। অতিরিক্ত ওজনে মুটিয়ে যাওয়া মানুষগুলোকে কাছ থেকে দেখেছেন কখনও? চিকন হওয়ার জন্য কিংবা একটা পরিমিত ওজনে আসার জন্য তাদের প্রচেষ্টা কিন্তু দেখার মতো। জিম থেকে শুরু করে ডায়েট, ব্যায়াম, সকালে হাঁটা ইত্যাদি বিষয়গুলোতে তারা নিজেদের খুব ভালোভাবেই অভ্যস্ত করে ফেলেন। নিয়ম মেনে হাত ধোওয়া, পরিষ্কার -পরিচ্ছন্ন থাকা, চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখা, ব্যায়াম করা, পরিমিত খাওয়া, বাইরে বের হলে ও হাঁচি-কাশির প্রাদুর্ভাব হলে মাস্ক পরা এগুলো কি খুব কঠিন? তবে সত্যি বলতে, একসময় কঠিন মনে হলেও এখনের পরিস্থিতি অনুযায়ী সব স্বাভাবিক ।
অভ্যাসের শুরুটা শুরুটা হওয়া উচিত খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনার মাধ্যমে। সেক্ষেত্রে পছন্দের শুরুতে থাকে কিটো ডায়েট, কারও কারও আবার অ্যাপল সিডার ভিনেগার। ওজন ভাবনার সাথে অ্যাপল সিডার ভিনেগার এর সম্পর্ক যারা আঁচ করতে পারছেন না, আজকের এই চেষ্টা শুধুমাত্র তাদের জন্য।
অ্যাপল সিডার ভিনেগার কী? [What is Apple Cider Vinegar?]
অ্যাসিটিক অ্যাসিড এবং পানির সংমিশ্রণে তৈরি হয় ভিনেগার। এক্ষেত্রে চিনি বা ইথানলকে গাজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অ্যাসিটিক অ্যাসিডে রূপান্তরিত করা হয়। বাংলায় যাকে সিরকা নামে চিনে থাকেন আমাদের মায়েরা, সেটাই আসলে ভিনেগার। ভিনেগার বা সিরকা, যে নামেই ডাকুন, পদার্থটা আদতে আদ্যোপান্ত তরল। লেখার এ পর্যায়ে একটা মজার তথ্য জানিয়ে রাখি- মুলত টক ওয়াইনকেই কিন্তু ভিনেগার বলা হয়! বাজারে যে কয়েক ধরণের ভিনেগার পাওয়া যায় তার মধ্যে সাদা ভিনেগার, বলস্যামিক ভিনেগার, অ্যাপল সিডার ভিনেগারগুলো বেশ প্রচলিত।
ওজন নিয়ন্ত্রণে অ্যাপল সিডার ভিনেগার [Apple Cider Vinegar for Weight Loss]
অ্যাপল সিডার ভিনেগার মূলত জনপ্রিয় হতে শুরু করেছেই ওজন কমানোর কারণে। এই ভিনেগারে থাকা অ্যাসিটিক অ্যাসিড খাওয়ার ইচ্ছা কমিয়ে দেয়। আর বাড়িয়ে দেয় শরীরের মেটাবলিজম।
বলা হয়ে থাকে ওজন কমানো, কোলেস্টেরল, রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি এবং পেটের যে-কোন সমস্যায় অ্যাপল সিডার ভিনেগার টনিকের মত কাজ করে। ভিনেগারটি অ্যাসিড সম্প্রদায়ের সদস্য হলেও অ্যাসিডিটি দূর করার ক্ষেত্রে কিন্তু বেশ কার্যকর। খাওয়ার আগে ১ কাপ পানিতে ১-২ চামচ অ্যাপল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে খেয়ে নিবেন।
দিনে ১-২ বার পান করলেই যথেষ্ট, মূলত এই অ্যাপল সিডার ভিনেগার ওজন কমানোর জন্যই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। শর্করায় যে ওজন বাড়ে তা ইতোমধ্যে কিটো ডায়েট এর আর্টিকেলে আপনারা জেনেছেন। হুট করে খাবারের তালিকা থেকে শর্করা এড়িয়ে চলাটা শর্করা-প্রেমি বাঙালির জন্য কঠিনই বটে। সেক্ষেত্রে শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়ার পর এই অ্যাপল সিডার ভিনেগার পানির সাথে মিশিয়ে পান করলে দিনের পরবর্তী সময়গুলোতে ক্ষুধা লাগার বিষয়টা থেকে মুক্তি পাবেন।
অতিরিক্ত মুটিয়ে যাওয়া ১৭৫ জনকে নিয়ে জাপানে একটা গবেষণা হয়েছিল। গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল ওজন কমানোর ক্ষেত্রে অ্যাপল সিডার ভিনেগার আদতে কাজে দেয় কী না। ফলাফল ইতিবাচক। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে অ্যাপল সিডার ভিনেগারকে যদি নিত্যদিনের ডায়েটে যোগ করতে পারেন তাহলে ক্ষুধাবোধ থেকে মুক্তি তো পাবেনই সেই সাথে ওজন নিয়ন্ত্রণেও রাখতে পারবেন।
অ্যাপল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম [How to Drink ACV for Weight Loss]
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন খাওয়ার আগে ১-২ টেবিল চামচ পরিমাণ অথবা ১৫-৩০ মিলি অ্যাপল সিডার ভিনেগারই সারাদিনের জন্য পরিমিত পরিমাণ।
অথবা এই পুরো পরিমাণকে ২-৩ ডোজ আকারে ভাগ করে নিয়েও সারাদিন খেতে পারেন। পছন্দ আপনার।
তবে হ্যাঁ, খেতে হবে অবশ্যই পানিতে মিশিয়ে। এক গ্লাস পানিতে ১/২ টেবিল চামচ অর্থাৎ ৫-১০ মিলিলিটার পরিমাণ অ্যাপল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে খেতে হবে।
ঘরে তৈরি করুন আপেল সিডার ভিনেগার [How to Make Apple Cider Vinegar at Home]
১০টি আপেল নিয়ে ভালো করে ধুয়ে কাপড় দিয়ে মুছবেন। প্রত্যেকটা আপেলকে ৪ কিংবা ৮ কিংবা যত ইচ্ছা ছোটো টুকরো করে কেটে নেবেন। বিচি অথবা বিচির অংশ বাদ দিতে হবে না। সবটা নেবেন।
আপেলের রঙ বাদামি না হওয়া পর্যন্ত রেখে দিন। রঙ ধরলে বড়ো কাঁচের জারে আপেলের টুকরোগুলো রাখুন। এবার ১ কাপ পানিতে ১ চা চামচ চিনি গুলিয়ে জারে ঢেলে দিন। কাঁচের জার যেন অবশ্যই ভালো করে ধুরে রোদে শুকানো হয়।
আপেলের টুকরো গুলো পুরোপুরি ডুবে না যাওয়া পর্যন্ত চিনি মেশানো পানি ঢালবেন। পরিমাণ তো জানেন? ১ কাপের জন্য ১ চা চামচ চিনি। আপেলগুলো পুরোপুরি ডুবে গেলে ২ টেবিল চামচ সাদা ভিনেগার দিন।
এবার টিস্যু দিয়ে জারের মুখ ঢেকে দিয়ে রান্নাঘরের ক্যাবিনেটে রেখে দিন ৩ সপ্তাহ। লক্ষ্য রাখবেন, কোনভাবেই যাতে বাতাস না ঢোকে জারের ভেতর। ৩সপ্তাহ পর জার বের করে আপেলের টুকরো তুলে ফেলবেন। তারপর তরলটাকে ভালোভাবে কাঠের চামচ দিয়ে নাড়বেন, নেড়েচেড়ে আবার আগের জায়গায় রেখে দিবেন। এরপর নিয়ম করে প্রতিদিন একবার চামচ দিয়ে নাড়বন। এভাবে ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ দেখুন। টক ভাব এসেছে? এলেই হয়ে গেলো আপনার ভিনেগার।
আপেল সিডার ভিনেগারের উপকারিতা [Benefits of Apple Cider Vinegar]
৯৪% পানি, ১% কার্বোহাইড্রেট সহ ফ্যাট এবং প্রোটিন-শুন্য অ্যাপল সিডার ভিনেগার ১০০ মিলিতে ২২ ক্যালোরির যোগান দেয়।দেখতে গাঢ় মধুর মত আর ঘ্রাণে হালকা টকের এই পানীয়তে আছে সেলুলোজ ও অ্যাসিটিক অ্যাসিডের দারুণ মিশেল যেটাই মূলত শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে কাজ করে। রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ সালমা পারভিন এ ব্যাপারে বলেন- রোজ নিয়ম করে ১-২ চামচ অ্যাপল সিডার ভিনেগার শুধু ওজনই কমায় না বরং মেটাবলিজম বাড়ায় ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের জোগান দেয় শরীরে। অ্যাপল সিডার ভিনেগারে প্রচুর পরিমাণে আঁশ বা ফাইবার থাকার দরুন ভিনেগারটি কোষ্ঠকাঠিন্য কমানোর ক্ষেত্রে বেশ সহায়ক। টাইপ টু ডায়াবিটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের সমস্যার যে ঝুঁকি তা কমিয়ে এনে হৃদরোগের আশঙ্কাও কমিয়ে দেয় অ্যাপল সিডার ভিনেগার। এখানে একটা কিন্তু আছে। ডায়াবিটিসে আক্রান্ত যাদের ঔষধ খাওয়া
লাগে,তবে এখানে কিছু সতর্কতা আছে। পুষ্টিবিদ সালমা পারভিন জানান, কিছু কিছু ক্ষেত্রে অ্যাপল সিডার ভিনেগার না খাওয়াই সবচেয়ে ভালো। অন্তঃসত্ত্বা মা, বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন মা এবং কিডনি রোগিদের জন্য অ্যাপল সিডার ভিনেগার একদমই নিষেধ। প্রশ্ন আসা খুব স্বাভাবিক, কেন নিষেধ? উত্তর এটাই, এ অবস্থায় অ্যাপল সিডার ভিনেগার শরীরে স্থায়ী ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই করে না। অতএব অ্যাপল সিডার ভিনেগার খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নেবেন।
অনেক কথার ফুলঝুরি ছড়িয়ে এবার আসল আলাপনে আসা যাক। ঠিক কী কী কারণে অ্যাপল সিডার ভিনেগারের এত জনপ্রিয়তা, কী কারণেই বা এর ব্যবহার হুট করে বেড়ে গেলো তা জানার প্রয়োজন আছে বইকি! চলুন একটু করে জেনে নেই অ্যাপল সিডারের অন্যান্য ব্যবহারগুলোও।
- ব্লাড সুগার কমানোর কাজে অ্যাপল সিডার ভিনেগার!
ব্লাড সুগার যাদের আছে তারা জানেন এর ভাবনা ভাবাটা কতটা দূর্বিষহ। এই দূর্বিষহ ভাবনা থেকে কিছুটা রেহাই দিতেই যেন অ্যাপল সিডার ভিনেগার এর আবির্ভাব। ব্লাড সুগার এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ এর পাশাপাশি কোলেস্টেরলের মাত্রাও কমিয়ে আনে অ্যাপল সিডার ভিনেগার। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। ডায়াবিটিস ও ক্যান্সার রোগিরা এর সুফল বেশ ভালোভাবেই পেয়ে থাকেন। তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই অ্যাপল সিডার ভিনেগার খাওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
- খুশকি ভাবনায় অ্যাপল সিডার ভিনেগার!
খুশকি নিয়ে ভাবেন না এমন কে আছেন বলুন তো? ঘুম হারাম করে দেওয়ার মতো চিন্তা নয় কী? সমস্যা যেমন আছে, সমাধানও কিন্তু আছে। ১ টেবিল চামচের ৪ ভাগের ১ ভাগ ভিনেগার নিন। ওতে মেশান ১ কাপ পানির ৪ ভাগের ১ ভাগ। মেশানো পানি চুলের ত্বকে ভালো করে ঘষে নিয়ে ১৫ মিনিট রাখুন। এরপর শ্যাম্পু করে ধুয়ে নিন। সপ্তাহে ২ বার করুন আরও ভালো ফলাফল পেতে।
- রোদের আঁচ এবং ব্রণ যখন শত্রু!
চলছে তীব্র রোদের সময়। সূর্য যেন উপচে পড়ে তাপ ছড়াতেই বেশি ব্যস্ত। ঝড়ছে ঘাম, ক্লান্ত হচ্ছে শরীর। একই সাথে চেহারায় পড়ছে রোদে পড়া কালচে ছোপ। গরমের দিনের জাতীয় সমস্যা! তবে সমাধান হিসেবে এবারও অ্যাপল সিডার ভিনেগারের পথেই হাঁটবো আমরা।
১ কাপ ভিনেগার, ১ কাপ গোলাপজল, ১ কাপ পানি ভালো করে মিশিয়ে ফ্রিজে রাখুন। বাইরে থেকে ঘরে ফিরে রোদে পোড়া জায়গা গুলোতে এই মিশ্রণ মাখিয়ে বাতাসে শুকিয়ে নিন। পাতলা নরম সুতি কাপড় দিয়ে আলতো ঘষে মুছে পরিষ্কার করে নিন। এই কাজটি চালু রাখুন। ফল পাবেন।
একইভাবে ব্রণ নিয়েও অনেকে অনেক ঝামেলা পোহান। সমাধান হিসেবে অ্যাপল সিডার ভিনেগার এর নামই বলতে হবে। কেন? বলছি-
অ্যাপল সিডার ভিনেগারটিতে অ্যান্টি ব্যাক্টেরিয়াল প্রভাব প্রাকৃতিক টোনারের কাজ করে। যার কাজ মুখের ব্রণের বৃদ্ধি কমিয়ে এনে মুখের যাবতীয় ব্রণ দূর করা। এই অ্যাপল সিডার ভিনেগারটি মুখের পিএইচ এর মাত্রা ঠিক রেখে মুখের অন্যান্য দাগ দূরীকরণে সাহায্য করে।
এছাড়া এটি খুব দ্রুতই ত্বকের একদম গভীরে প্রবেশ করে। যা ব্রণের জীবাণু ধ্বংস করে দেয়। এ কারণে ব্রণ হলে কী করবেন জানেন? ভিনেগার আর পানির মিশ্রণে কটন বাড ডুবিয়ে একদম সরাসরি ব্রণের উপর রেখে মুছবেন। ব্রণের চারপাশও মুছবেন। একই নিয়মে প্রতিদিন নিয়ম করে ২ বার যত্ন নিতে থাকুন। ব্রণের জীবাণু পুরোপুরি নির্মূল হবে এবং ব্রণের দাগ পড়বে না মুখে।
- ডায়রিয়ার হঠাৎ প্রাদুর্ভাব দূরীকরণে অ্যাপল সিডার ভিনেগার!
অনেক সময় এমন হয় না যে হুট করে ডায়রিয়া হয়ে গেলো। ঘরে স্যালাইন নেই। তখন কী করবেন? সময় নিয়ে গুড়, লবণ মিশিয়ে স্যালাইন বানাবেন? অবশ্যই না! বাড়িতে অ্যাপল সিডার ভিনেগার থাকলে চটজলদি এক চামচ পানিতে গুলে খেয়ে নিলে খুব দ্রুত উপকার পাবেন। এখানে একটু করে জানিয়ে রাখি, ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণে ডায়রিয়া হলে এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন।
- খাবার সংরক্ষণে অ্যাপল সিডার ভিনেগার!
অনেকে খাবার সংরক্ষণে ভিনেগার ব্যবহার করেন। এ আপনারা জানেন। মজার ব্যাপার হলো এই অ্যাপল সিডার ভিনেগার দিয়েও আপনি কিন্তু খাবার সংরক্ষণ করতে পারবেন। ভিনেগারটিতে অ্যাসিটিক অ্যাসিড থাকার কারণে খাবারের এনজাইম ও ব্যাক্টেরিয়া ধ্বংস হয়ে প্রিজারভেটিভ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
- গন্ধ দূর করতে অ্যাপল সিডার ভিনেগার!
গরমের দিন চলছে না? প্রচুর ঘামছেন। সারা শরীর ঘামে ভিজে বাজে গন্ধ ছড়াচ্ছে। একই সাথে জুতা মোজার বিষয় তো আছেই। গন্ধটা বিব্রতকর অবশ্যই। এজন্য কী করবেন জানেন? অ্যাপল সিডার ভিনেগার পানিতে মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করুন। গোসলের পরে এই পানি বগল, পা সহ যেখানে ঘাম বেশি হয়, সেখানে মাখিয়ে নিন। ব্যাক্টেরিয়া মরবে। ঘামের গন্ধও দূর হবে।
বাইরে যাওয়ার আগে এটা করতে পারেন। আবার ঘরে ফিরে এসে কুসুম গরম পানিতে ভিনেগার মিশিয়ে রোদে পোড়া জায়গায় মাখাবেন। উপকার পাবেন। একই কথা প্রযোজ্য মুখের গন্ধের ক্ষেত্রেও। অ্যাপল সিডার ভিনেগারে অ্যান্টি ব্যাক্টেরিয়াল নামক উপাদানের উপস্থিতি থাকার দরুন পানির সাথে অ্যাপল সিডার ভিনেগারটি মিশিয়ে কুলকুচি করে ফেলে দিলে মুখের দুর্গন্ধ নিমেষেই দূর হবে।
- ডিশ ডিটারজেন্ট হিসেবে অ্যাপল সিডার ভিনেগারের ব্যবহার!
অনেক সময় দেখা যায় ঘরে ব্যবহৃত প্লেট বাটি কেমন তেল চিটচিটে হয়ে আছে। সাবান কিংবা ছাই এ কাজ হচ্ছে না। এসব ক্ষেত্রে পরিষ্কারক হিসেবে অ্যাপল সিডার ভিনেগার কিন্তু বেশ কাজের। যে ডিশ ওয়াশার দিয়ে প্লেট বাটি পরিষ্কার করেন তার সঙ্গে ভিনেগার মিশিয়ে প্লেট বাটি সহ আনুষঙ্গিক যা যা ধোয়ার ধুয়ে নিন। সিঙ্কটাও ধুয়ে ফেলতে পারেন। ফলাফল নিজেই দেখুন।
- স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অ্যাপল সিডার ভিনেগারের ব্যবহার!
মানব দেহের পুরো Ph এর সমতা রক্ষার কাজ কিন্তু অ্যাপল সিডার ভিনেগার করতে সক্ষম। যাদের শরীরে Ph এর মাত্রা কম থাকে তাদের কিছু সমস্যা থাকে। তারা যে-কোন রোগে খুব দ্রুত আক্রান্ত হয়ে পড়ে। এবং তাদের শরীরে শক্তিও থাকে তুলনামূলক কম। সুতরাং বুঝতেই পারছেন ভিনেগারটি এদিক থেকে কতটা এগিয়ে। নিয়মিত এই ভিনেগার পানে দেহে শক্তি জমা হয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে।শরীরের লিভার ভালো রাখার জন্য এবং অ্যালার্জি প্রতিরোধের জন্য অ্যাপল সিডার বেশ কার্যকর।
এছাড়া যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা আছে, তারা চটজলদি সমাধান পেতে ১ গ্লাস পানিতে ১ চামচ অ্যাপল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে খেয়ে ফেলুন। দ্রুত ফল পাবেন। তবে হ্যাঁ, যাদের আলসার আছে তাদের কাছে অনুরোধ- আপনারা এ জিনিস ভুলেও পান করবেন না।
আপেল সিডার ভিনেগারের ক্ষতিকর প্রভাব [Side Effects of Apple Cider Vinegar]
প্রাকৃতিক বলেই প্রতিক্রিয়ার ঊর্দ্ধে থাকবে এমন কিন্তু কিছুই নেই। আর তাই, ব্যতিক্রমের তালিকায় নাম লেখায়নি অতি প্রয়োজনীয় এবং সুপরিচিত এই অ্যাপল সিডার ভিনেগারটিও। আছে কিছু বিরূপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও। একটু আলাপনের প্রয়োজন আছে এই বিষয়ে।
অ্যালার্জি আছে এমন ব্যক্তিদের অনেকের ক্ষেত্রেই অ্যাপল সিডার ভিনেগার উলটো প্রতিক্রিয়া দেখায়। আবার ডায়াবিটিসের কারণে যাদের ইনসুলিন নিতে হচ্ছে তাদের নির্ধারিত ঔষধের সাথেও অ্যাপল সিডার ভিনেগারের সংঘর্ষ হতে পারে। অ্যাপল সিডার ভিনেগার এর অতিরিক্ত ব্যবহার ত্বকের সমস্যার কারণ হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। মূলত এর কোন ঔষধি গুণাগুণ কিংবা পুষ্টিগুণ নেই। নেই কোন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ক্লিনিকাল প্রমাণও। যেমন – ওজন হ্রাসের কথাই ধরুন। যে কারণে জনস্বাস্থ্য সংস্থা চিকিৎসা সংকান্ত নির্দেশিকায় এই অ্যাপল সিডার ভিনেগার ব্যবহারের প্রস্তাব দেয় না। তবে সামান্যতম ব্যবহার নিরাপদ হিসেবেই বিবেচিত হয়। আবার ট্যাবলেট আকারে অ্যাপল সিডার ভিনেগারে মুখ, গলা, পেট, কিডনির নরম টিস্যুতেও ক্ষত সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। অনেকে আছেন যারা সাময়িক ঔষধ হিসেবে অ্যাপল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করেন, অনেকে চোখ ধোওয়া এবং কান পরিষ্কারের জন্যও অ্যাপল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করেন। যার ব্যবহার আদতে বিপজ্জনকই বটে!
মূলত অতিরিক্ত কোনকিছুই ভালো না। তা যতই প্রাকৃতিক হোক না কেন! যে কারণে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন আছে বইকি! পরামর্শ নিয়ে খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে কিংবা পরে পানি মিশিয়ে অ্যাপল সিডার ভিনেগার পান করুন। তবে হ্যাঁ, রাতে ঠিক ঘুমোনোর আগে এ ভিনেগার খাবেন না। ঐ সময়ে এটা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। ঘুমোনোর অন্তত ৩০ মিনিট আগে যাবতীয় খাওয়া দাওয়া শেষ করবেন।
অনেকে আছেন যে-কোন খাবার খাওয়ার আগে শুঁকে দেখেন। অভ্যেসটা ভালো তবে অ্যাপল সিডার ভিনেগারের ক্ষেত্রে এই অভ্যেসটা একটু এড়িয়ে যেতে হবে। এর তীব্র গন্ধ নাকের জন্য ভালো নয়। চোখের জন্যও নয়।
অনেকে ভরা পেটে এই ভিনেগার পান করেন। যা আদতে অনুচিত। পাঠক, ভিনেগার মেশানো পানি খেতে হবে খালি পেটে, ভরা পেটে খেলে লাভ তো হবেই না বরং শরীরে নানান ধরণের সমস্যা দেখা দিবে।একটা বিষয় স্পষ্ট করে জানিয়ে রাখা ভালো, অনেকে রাতের বেলায় এই ভিনেগার খেয়ে ঘুমোতে যান। এটা সম্পূর্ণ অস্বাস্থ্যকর। ভুলেও যদি রাতে খেয়ে ফেলেন, তাহলে অন্তত ৩০ মিনিট সোজা হয়ে বসে থাকবেন। পান করে সাথে সাথে শুয়ে পড়বেন না।একইসাথে অনেকটা ওজন কমানোর চিন্তায় অনেকেই একসাথে অনেকটা অ্যাপল সিডার ভিনেগার খেয়ে ফেলেন। এখানে একটা বিষয় বোঝা দরকার, সবকিছু সবার শরীর নিতে পারে না। তাই শুরুটা অল্পে হওয়া ভালো। ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে এলেই না হয় পরিমাণ বাড়ানো যাবে।
এ পর্যায়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় জানিয়ে রাখি। অনেকেই আছেন ভিনেগার মেশানো পানি খেয়েই দাঁত ব্রাশ করে ফেলেন। দয়া করে এ ভুল করবেন না। কেন করবেন না? এতে দাঁতের অ্যানামেল ক্ষয়ে যায়। ক্যাভিটি দেখা দেয়। তবে পানীয় পান করার ৩০ মিনিট পর দাঁত ব্রাশ করতে পারেন।
পরিশেষে, ওজন কমানোর জন্য কী নেই? অনেক কিছুই আছে। তবে প্রয়োজন আছে সদিচ্ছার। কম খাওয়া কিংবা পরিমিত খাওয়া, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাসে লিপ্ত থাকাই আপনাকে একটা সুস্থ জীবন দেবে। এ আপনি বিশ্বাস করেন? জীবন কিন্তু অতটাও মন্দ নয়, শুধু জীবনটা কাটানোর নিয়মটা জানতে হয়।