• Skip to primary navigation
  • Skip to main content
  • Skip to primary sidebar

রূপকথন

Healthier Lifestyljhhe Choices

  • Facebook
  • Home
  • Shop
  • Blog
    • মেকআপ
      • ব্রাইডাল মেকআপ
      • সেলিব্রিটি মেকআপ
      • চোখের সাজসজ্জা
      • মুখের রূপসজ্জা
      • লিপ মেকআপ
      • মেকআপের ধারণা
      • মেহেদী ডিজাইন
      • নখের ডিজাইন
    • চুলের যত্ন
    • ত্বকের যত্ন
    • চুল স্টাইল
    • স্বাস্থ্য ও সুখ
      • ফিটনেস
      • স্বাস্থ্যকর খাবার
      • ওজন বৃদ্ধি
      • ওজন কমানো
      • যোগ ব্যায়াম
      • ডায়েট টিপস
      • আয়ুর্বেদ
  • Contact Us

Diet Tips

Low FODMAP Diet: ৩ ধাপের পরিকল্পনা ও কোন খাবার খাবেন, কোনটা এড়িয়ে চলবেন

by রূপকথন ডেস্ক

পেটের সমস্যা কি আপনার প্রতিদিনের ‘অজানা যুদ্ধ’?

আপনি সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রোটিন স্মুদি খাচ্ছেন, দুপুরে স্যালাডে রোমান্স, রাতে ব্রাউন রাইস—তারপরও গ্যাস, পেট ফাঁপা, অস্বস্তি? আপনি একা নন। আমাদের অনেকেরই অজান্তে “IBS” বা Irritable Bowel Syndrome বাসা বেঁধেছে। আর এই যন্ত্রণার “গোপন শত্রু” হতে পারে FODMAP—একধরনের কার্বোহাইড্রেট, যা হজমে বিপত্তি ঘটায়।

আজ আমরা জানবো “Low FODMAP Diet” সম্পর্কে—একটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত ডায়েট প্ল্যান যা আপনার পেটকে দিবে শান্তি, শরীরকে দিবে জ্বালানি।

কী এই FODMAP ডায়েট?

FODMAP শব্দটি এসেছে নিচের পাঁচটি শব্দ থেকে:

  • Fermentable
  • Oligosaccharides
  • Disaccharides
  • Monosaccharides
  • And Polyols

এগুলো এমন কিছু কার্বোহাইড্রেট যা আমাদের অন্ত্রে ঠিকমতো হজম হয় না, ফলে পেটে গ্যাস, ফাঁপা, ব্যথা ও বারে বারে বাথরুম—এক কথায় IBS-এর কাহিনি শুরু।

মূল পয়েন্ট

  • Low FODMAP Diet মানে সব কার্ব ছাড়ুন না! বরং বুঝে-শুনে খান।
  • এটি ৩টি ধাপে ভাগ করা হয়—Elimination, Reintroduction এবং Maintenance

এটি শুধুমাত্র ওজন কমাতে নয়, বরং পেটের সুস্থতার জন্য।

High-FODMAP খাবার: এগুলোর সঙ্গে এখনই Breakup করুন

High-FODMAP খাবার হলো এমন কিছু খাদ্য উপাদান যেগুলো অন্ত্রে ঠিকমতো হজম হয় না এবং ফারমেন্ট হয়ে অতিরিক্ত গ্যাস, ফাঁপা পেট, ব্যথা ও বদহজমের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যেমন, পেঁয়াজ ও রসুন আমাদের রান্নার স্বাদ বাড়ায় ঠিকই, কিন্তু IBS রোগীদের জন্য এগুলো সমস্যা বাড়াতে পারে। একইভাবে, আপেল, নাশপাতি, চেরি বা তরমুজের মতো কিছু ফলও FODMAP-সমৃদ্ধ হওয়ায় অন্ত্রে অস্বস্তি তৈরি করে। দুধ বা সফট চিজের মতো ল্যাকটোজযুক্ত খাবারও High-FODMAP-এর তালিকায় পড়ে।

সবচেয়ে বিপজ্জনক বিষয় হলো, অনেক ‘স্বাস্থ্যকর’ মনে হওয়া খাবার—যেমন চুইংগাম, প্রোটিন বার, ‘শুগার ফ্রি’ ক্যান্ডি—এই তালিকায় পড়ে কারণ এতে সোর্সবিটল বা ম্যানিটল জাতীয় Polyol থাকে যা পেটের জন্য সহনীয় নয়। তাই যাদের অন্ত্র অতিমাত্রায় সংবেদনশীল, তাদের জন্য এইসব খাবারের সঙ্গে ‘Breakup’ করাটাই ভালো সিদ্ধান্ত।

এগুলো এমন খাবার যা আপনার অন্ত্রকে অস্থির করে তোলে:

কার্ব-সমৃদ্ধ খাবার: গম, বার্লি, রাই (যা রুটি ও পাস্তা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়)। মধু ও উচ্চ ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপ

ফলমূল: আপেল, পেয়ারা, চেরি, ম্যাংগো, তরমুজ

শাকসবজি: ব্রকলি, ফুলকপি, পেঁয়াজ, রসুন

দুগ্ধজাত: দুধ, দই, সফট চিজ, আইসক্রিম

চিনিযুক্ত খাবার: চুইংগাম, ক্যান্ডি (যাতে সোর্সবিটল, ম্যানিটল থাকে)

প্রো টিপ: অনেক প্রোটিন বার, সুইটেনার, “sugar-free” খাবারও High-FODMAP!

Low-FODMAP খাবার: যেগুলো আপনার অন্ত্রকে ভালোবাসে

Low-FODMAP খাবার মানে এমন কিছু খাদ্য উপাদান যেগুলো সহজপাচ্য, অন্ত্রকে বিরক্ত করে না এবং হজমে সহায়ক হয়। উদাহরণস্বরূপ, কলা, কমলা, আঙ্গুর কিংবা স্ট্রবেরি—এই ফলগুলো না শুধু নিরাপদ, বরং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবারসমৃদ্ধ। সবজির মধ্যে গাজর, শসা, বেল পেপার, কুমড়া বা পালং শাক অন্ত্রবান্ধব হিসেবে বিবেচিত হয়।

শস্য হিসেবে চাল, ওটস ও কুইনোয়া নিরাপদ এবং সহজে হজম হয়। প্রোটিনের উৎস হিসেবে আপনি বেছে নিতে পারেন ডিম, মাছ, মুরগি বা টোফু। এইসব খাবার অন্ত্রের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং দীর্ঘদিন স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলতে সহায়ক হয়। পানীয় হিসেবে ল্যাকটোজ-ফ্রি দুধ, গ্রিন টি বা ঘরে তৈরি লেবু পানি নিরাপদ এবং পেট ঠান্ডা রাখে।

Low-FODMAP খাবার শুধু অন্ত্রের আরাম দেয় না, বরং মুডও ভালো করে তোলে। অন্ত্র আর মস্তিষ্কের সংযোগ বা gut-brain connection এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

শস্য ও কার্ব: চাল, ওটস, কুইনোয়া, গ্লুটেন-ফ্রি রুটি

ফলমূল: কলা, স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, আঙ্গুর, কমলা

সবজি: গাজর, শসা, বেল পেপার, কুমড়া, টমেটো

প্রোটিন: মুরগি, ডিম, মাছ, টোফু

পানীয়: ল্যাকটোজ-ফ্রি দুধ, গ্রিন টি, লেবু পানি

FODMAP ডায়েট প্ল্যান: ৩ ধাপের পথচলা

Low-FODMAP ডায়েট একটি দীর্ঘমেয়াদি পুষ্টিকেন্দ্রিক থেরাপি, যা তিনটি প্রধান ধাপে ভাগ করা হয়। ধাপগুলো হলো: 

১. Elimination—এতে আপনি সব ধরনের High-FODMAP খাবার সম্পূর্ণভাবে খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দেন। সাধারণত এই ধাপ দুই থেকে ছয় সপ্তাহ চলে, এবং এই সময় IBS বা অন্ত্র-সংক্রান্ত উপসর্গ কমছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করা হয়।

২. Reintroduction, যেখানে ধীরে ধীরে বিভিন্ন ধরনের FODMAP খাবার আবার খাদ্যতালিকায় আনা হয়। এটি মূলত পরীক্ষামূলক ধাপ, যা আপনাকে বুঝতে সাহায্য করে কোন খাবার আপনার জন্য সহনীয় আর কোনটা নয়। এই ধাপ ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে চলে।

৩. Maintenance বা পার্সোনালাইজড ফেইজ, যেখানে আপনি শুধুমাত্র সেইসব খাবার রাখেন যেগুলো আপনার শরীর সহ্য করতে পারে। এই ধাপে আপনি একটি ব্যক্তিগত ডায়েট প্ল্যান তৈরি করেন, যাতে অন্ত্র আরাম পায় কিন্তু পুষ্টির ঘাটতিও না হয়।

এই তিনটি ধাপ মেনে চললে আপনার অন্ত্রের সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং আপনি সচেতন খাদ্যাভ্যাসের মধ্য দিয়ে আরও সুস্থ জীবনযাপন করতে পারবেন।

Meal Planning Tips: হালকা রাখুন, কিন্তু তৃপ্তি ছাড়বেন না

  • খাদ্য ডায়েরি রাখুন
  • Meal-prep করুন সপ্তাহে একদিন
  • সহজ খাবার বেছে নিন (৩ উপাদানে রান্না)
  • রান্নায় রসুন তেল ব্যবহার করুন, কিন্তু রসুন নয়!

পরিমিত খাবার খান, গিলে না খেয়ে আস্তে চিবিয়ে খান

Low FODMAP রেসিপি: সহজ, সুস্বাদু ও অন্ত্রবান্ধব খাবার

Low-FODMAP ডায়েট মানেই নিঃস্বাদ খাবার না। একটু পরিকল্পনা আর কিছু পরিচিত উপাদান দিয়েই বানানো যায় এমন কিছু খাবার, যেগুলো অন্ত্রকে শান্ত রাখবে আবার স্বাদেও পিছিয়ে থাকবে না। নিচে তিনটি সহজ ও স্বাস্থ্যকর রেসিপি দেওয়া হলো যা আপনার দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় অনায়াসে জায়গা করে নিতে পারে।

১. গ্রিলড চিকেন কুইনোয়া সালাদ

উপাদান:

  • ১ কাপ রান্না করা কুইনোয়া
  • ১ কাপ গ্রিলড চিকেন ব্রেস্ট (লবণ, লেবু, জিরা দিয়ে ম্যারিনেটেড)
  • ১/২ কাপ চপ করা শসা
  • ১/২ কাপ টমেটো
  • লেটুস পাতা
  • অলিভ অয়েল ও লেবুর রসের ড্রেসিং

প্রস্তুত প্রণালি:
সব উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। উপর দিয়ে একটু লেবুর রস ও অলিভ অয়েল ছিটিয়ে পরিবেশন করুন। এটি লাঞ্চ বা হালকা ডিনারের জন্য আদর্শ।

High-FODMAP Alert: পেঁয়াজ বা রসুন এড়িয়ে চলুন। স্বাদের জন্য রসুন-ইনফিউজড অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন।

২. ভেজিটেবল টোফু স্টির-ফ্রাই

উপাদান:

  • ১ কাপ কাটা টোফু (হার্ড টাইপ)
  • ১ কাপ বেল পেপার (রঙিন)
  • ১/২ কাপ জুচিনি বা কুমড়া
  • ১ চা চামচ জিরা গুঁড়া
  • ১ চা চামচ আদা বাটা
  • ১ চা চামচ ল্যাকটোজ-ফ্রি সয়া সস
  • অলিভ অয়েল

প্রস্তুত প্রণালি:
অলিভ অয়েলে প্রথমে টোফু ভেজে নিন। এরপর একে একে সবজি ও মসলা দিয়ে হালকা আঁচে ভাজুন। ৫-৭ মিনিটেই তৈরি এই স্টির-ফ্রাই অন্ত্রের জন্য হালকা আবার পুষ্টিতে ভরপুর।

পরামর্শ: চাইলে ব্রাউন রাইস বা কুইনোয়ার সঙ্গে পরিবেশন করতে পারেন।

৩. কলা ও ব্লুবেরি স্মুদি

উপাদান:

  • ১ পাকা কলা
  • ১/২ কাপ ব্লুবেরি
  • ১ কাপ ল্যাকটোজ-ফ্রি দুধ বা বাদাম দুধ
  • ১ স্কুপ Low-FODMAP প্রোটিন পাউডার (ঐচ্ছিক)
  • কয়েকটি বরফের টুকরো

প্রস্তুত প্রণালি:
সব উপাদান ব্লেন্ডারে মিশিয়ে নিন। ঠান্ডা করে পরিবেশন করুন। এটি প্রাক-ওয়ার্কআউট বা ব্রেকফাস্ট হিসেবে অসাধারণ একটি পেটবান্ধব ড্রিংক।

Low FODMAP ডায়েটের স্বাস্থ্য উপকারিতা

  • IBS-এর লক্ষণ ৭০-৮০% ক্ষেত্রে কমে যায়
  • গ্যাস, ফাঁপা, বদহজম কমায়
  • খাদ্য সংবেদনশীলতা শনাক্তে সহায়তা করে
  • মন-মেজাজ ভালো রাখে (Gut-Brain connection সত্যিই আছে!)

সার্বিক টিপস:

  • রেসিপিগুলো সহজ উপাদানে তৈরি, যাতে কনফিউশন কম হয়
  • রান্নায় পেঁয়াজ-রসুন বাদ দিলেও স্বাদের ঘাটতি হয় না—লেবু, জিরা, ধনে পাতা দিয়েই কাজ চলে
  • সব উপকরণ ঘরে থাকা যায়, দামেও তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী
  • অন্ত্রের স্বাস্থ্য বিবেচনায় খাবার নির্বাচনে এই ধরনের রেসিপি ভীষণ কার্যকর

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও সতর্কতা

Low-FODMAP ডায়েট চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া শুরু করবেন না। Low-FODMAP ডায়েট শুরু করার আগে অবশ্যই একজন চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এটি খুবই সীমাবদ্ধতাপূর্ণ একটি খাদ্য পরিকল্পনা, যা অনেক গুরুত্বপূর্ণ খাবার তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেয়। ফলে দীর্ঘমেয়াদে পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিতে পারে। তাছাড়া, খাবার নিয়ে অতিরিক্ত সচেতনতা বা ভয় তৈরি হলে মানসিক চাপ বা খাওয়ার ব্যাধি তৈরি হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। তাই মনে রাখবেন, খাবার থেকে সব কিছু বাদ দেওয়া নয়—সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখাটাই আসল কৌশল।

আপনি আপনার পেটের অধিকারও ফিরে পেতে পারেন!

আমরা আমাদের শরীরের যত্ন নিই, কিন্তু পেটের কথাটা অনেক সময় উপেক্ষা করি। Low-FODMAP Diet শুধুমাত্র একটি খাবারের তালিকা নয়, এটি পেটের স্বাধীনতার পথে এক পদক্ষেপ। আপনার পেট কথা বললে শুনুন, উত্তর দিন সচেতন খাবারের মাধ্যমে।

👉 এখনই Low-FODMAP খাবার নির্বাচন করুন, আপনার প্রিয় Health & Nutrition প্রোডাক্টগুলো ট্রাই করুন আর নতুন এক জীবন শুরু করুন!

📢 পেট শান্ত মানেই মন শান্ত। আজই আপনার FODMAP ট্র্যাক শুরু করুন!

Filed Under: Diet Tips, HEALTH & WELLNESS (স্বাস্থ্য ও সুস্থতা) Tagged With: FODMAP Diet Plan, Health & Nutrition, Healthy Gut Tips, IBS নিয়ন্ত্রণ, Low FODMAP ডায়েট, Low FODMAP রেসিপি, অন্ত্রের সমস্যা সমাধান, গ্যাস্ট্রিক সমস্যা ও খাদ্য, হজমে সহায়ক খাবার

প্যালিও ডায়েট: উপকারিতা, ঝুঁকি ও ৭ দিনের খাবার পরিকল্পনা

by রূপকথন ডেস্ক

এক সময়কার গুহাবাসী মানুষদের খাবার এখন আবার ট্রেন্ডে? হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন! প্যালিও ডায়েট (Paleo Diet)—যাকে “কেভম্যান ডায়েট” বলেও ডাকা হয়—এই ডায়েট একেবারে প্রাকৃতিক ও প্রাচীন খাবারের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এখনকার দিনে ফাস্ট ফুড, সংরক্ষণকারী আর প্রক্রিয়াজাত খাবারে ভরা দুনিয়ায় শরীর-মন দুটোই ক্লান্ত। কিন্তু যদি বলা হয়—ফিরে যান প্রাকৃতিক খাদ্যে, ফল-মূল, শাক-সবজিতে ভরসা রাখুন, আর সুস্থ থাকুন? সেটাই প্যালিও ডায়েটের মূলমন্ত্র।

চলুন জেনে নিই কেন এই ডায়েট এত জনপ্রিয় হচ্ছে, কী খেতে হবে, কী এড়িয়ে চলতে হবে, এবং আপনাদের জন্য থাকছে ৭ দিনের একটি সহজ ও মজাদার খাবার পরিকল্পনা।

প্যালিও ডায়েট কী?

প্যালিও ডায়েট হল এমন একটি খাদ্যাভ্যাস যেখানে আপনি প্রাকৃতিক, কম প্রক্রিয়াজাত খাবার খান—যেমন ফল, সবজি, মাংস, ডিম, বাদাম, এবং মাছ।
চিনি, দুধ, দানা (grains), ও প্রক্রিয়াজাত খাবার বাদ দিন—এটাই প্যালিওর মূল সূত্র।

পটভূমি: প্যালিওলিথিক যুগে মানুষ যেভাবে খেত, তার ওপর ভিত্তি করে এই ডায়েট তৈরি। এই ডায়েটের মূল লক্ষ্য হলো শরীরের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি রেসপন্স বাড়ানো এবং অতিরিক্ত ওজন কমানো।

১. স্ট্যান্ডার্ড প্যালিও ডায়েট – কোন গ্রেইন, ডেইরি বা প্রক্রিয়াজাত খাবার নয়।
২. ৮০/২০ প্যালিও – ৮০% সময় প্যালিও, ২০% সময় একটু ছাড়।
৩. অ্যাথলেটিক প্যালিও – শারীরিক শ্রম বা ব্যায়ামের ওপর ভিত্তি করে কার্ব বাড়ানো যায়।
৪. আটো-ইমিউন প্যালিও (AIP) – যাদের অটোইমিউন ডিজিজ আছে, তাদের জন্য উপযোগী ভার্সন।

প্যালিও ডায়েটে যা খাওয়া যায়

  • মাছ (বিশেষত স্যামন, সারডিন)
  • অর্গানিক মাংস
  • ডিম (ফ্রি-রেঞ্জ হলে ভালো)
  • শাক-সবজি
  • ভালো চর্বি (অ্যাভোকাডো, নারকেল তেল)
  • ফলমূল
  • বাদাম ও বীজ (সীমিত পরিমাণে)

প্যালিও ডায়েটে যা এড়ানো উচিত 

  • প্রক্রিয়াজাত খাবার (চিপস, সসেজ, কুকিজ)
  • চিনি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার
  • দধ ও দুগ্ধজাত পণ্য
  • শস্য (গম, চাল, কর্ন)
  • লেগুমস (ডাল, চনা)
  • সয়াবিন ও প্রসেসড তেল

৭ দিনের প্যালিও মিল প্ল্যান 

দিননাস্তাদুপুরের খাবাররাতের খাবার
১মডিম ও পালং শাক ভাজিগ্রিলড চিকেন, অ্যাভোকাডো সালাদস্যামন, ব্রকলি স্টিমড
২য়ফলের স্মুদি (দুধ ছাড়া)গরুর মাংসগ্রিলড মাছ, লেটুস সালাদ
৩য়নারকেল দুধে চিয়া সিড পুডিংটার্কি র‍্যাপ (লেটুসে মোড়া)ডিম ও সবজি অমলেট
৪র্থবাদাম-মিশ্রিত ফলভেজিটেবল স্যুপ ও গ্রিলড চিকেনফ্রাইড ক্যাবেজ ও ফিশ ফিলে
৫মঅ্যাভোকাডো ও ডিমমাটন কারি (তেল কমনারকেল দুধে রান্না করা সবজি
৬ষ্ঠবেকড ডিম ও টমেটোসালমন ও অ্যাভোকাডোগ্রিলড ফিশ ও লেটুস সালাদ
৭মফলমূল ও বাদামভেজি স্টার ফ্রাই ও মাংসডিমের তরকারি ও কুমড়ো ভাজা

প্যালিও বনাম কেটো ডায়েট

ফিচারপ্যালিও ডায়েটকেটো ডায়েট
কার্ব গ্রহণমাঝারিখুব কম
দুগ্ধজাত পণ্যনিষিদ্ধকিছু অনুমোদিত
ফল খাওয়াঅনুমোদিতসীমিত
প্রধান লক্ষ্যপ্রাকৃতিক খাবারকিটোসিসে যাওয়া
ওজন কমানোহ্যাঁহ্যাঁ

আপনার জন্য কোনটা ভালো?
যদি আপনি প্রাকৃতিক ও কম প্রক্রিয়াজাত খাবার খেতে চান তবে প্যালিও বেছে নিন।
কিটোসিস দরকার হলে বা কার্ব কাটতে চাইলে কেটো আপনার জন্য।

প্যালিও ডায়েটের উপকারিতা

১. ওজন কমায় দ্রুত: প্রাকৃতিক খাবারে কার্ব কম থাকায় দ্রুত ক্যালোরি বার্ন হয়।

২. ইনফ্লেমেশন কমায়: শরীরের প্রদাহ বা ইনফ্লেমেশন কমায়, ফলে জয়েন্ট পেইন, মাথাব্যথা ইত্যাদিও হ্রাস পায়।

৩. হার্ট সুস্থ রাখে: ট্রান্স ফ্যাট আর প্রক্রিয়াজাত চর্বি না খেলে হার্ট ভালো থাকে।

৪. ঘুম ও মন-মেজাজ উন্নত করে: রক্তে শর্করার ওঠানামা কম থাকলে ঘুম আর মুড থাকে নিয়ন্ত্রণে।

৫. ব্রেইন ফাংশন বাড়ায়: প্যালিও খাবারে ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ ফ্যাট থাকে, যা স্মৃতি ও মনোযোগ বাড়ায়।

প্যালিও ডায়েটের ঝুঁকি

প্যালিও ডায়েট অনুসরণ করার কিছু ঝুঁকিও রয়েছে, যেগুলো জানা জরুরি। প্রথমত, এই ডায়েটে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য নিষিদ্ধ হওয়ায় শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিতে পারে, যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। দ্বিতীয়ত, কার্বোহাইড্রেট কম থাকার কারণে অনেকের শরীরে ক্লান্তিভাব, মাথা ঘোরা বা এনার্জি ড্রপের সমস্যা দেখা দেয়। তৃতীয়ত, ডাল ও শস্য জাতীয় খাবার বাদ দেওয়ার ফলে ফাইবারের অভাব হতে পারে, যা হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে। এছাড়া প্রোটিন অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে কিডনির ওপর বাড়তি চাপ পড়তে পারে, বিশেষ করে যাদের আগে থেকেই কিডনি সমস্যা রয়েছে। তাই যেকোনো নতুন ডায়েট শুরু করার আগে একজন অভিজ্ঞ পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্যালিও ডায়েট শুধু একটি ডায়েট নয়—এটি একটি জীবনধারা, একটি বার্তা:
“ফিরে যাই প্রকৃতির কোলে, সুস্থতা খুঁজি সহজতায়।”

তবে মনে রাখবেন, এই ডায়েট সবার জন্য নয়। আপনার শরীর, প্রয়োজন ও লক্ষ্য অনুযায়ী বেছে নিন সঠিক পথ।

Filed Under: Diet Tips, Fashion, HEALTH & WELLNESS (স্বাস্থ্য ও সুস্থতা) Tagged With: ৭ দিনের ডায়েট চার্ট, diet for weight loss, healthy eating, nutrition and fitness, paleo diet, paleo lifestyle, paleo meal plan, paleo vs keto, পুষ্টি ও স্বাস্থ্য, প্যালিও ডায়েট

প্যালিও ডায়েট রেসিপি: স্বাস্থ্যকর এবং সহজ প্রস্তুত করার জন্য ১৫টি সেরা রেসিপি

by রূপকথন ডেস্ক

আজকের দুনিয়ায়, সুস্থ ও সঠিক খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা একটা চ্যালেঞ্জ। কাজ, পরিবার এবং অন্যান্য ব্যস্ততায়, দ্রুত কিছু খেয়ে নেওয়া অনেক সহজ মনে হয়। তবে, স্বাস্থ্যকর খাবারের স্বাদ এবং পরিপুষ্টির কোনো বিকল্প নেই। প্যালিও ডায়েট এমন এক খাদ্যাভ্যাস যা আমাদের প্রাচীন পূর্বপুরুষদের খাওয়ার অভ্যাস অনুসরণ করে। এটি পুরোপুরি প্রাকৃতিক, প্রক্রিয়াজাত বা রিফাইন্ড খাবার থেকে মুক্ত এবং অনেক উপকারে ভরা।

আপনি যদি স্বাস্থ্যকর খাবারের সন্ধান করেন, তাহলে প্যালিও ডায়েটের রেসিপিগুলি আপনার জন্য আদর্শ হতে পারে। এই রেসিপিগুলি শুধু স্বাস্থ্যকর নয়, সহজে তৈরি করা যায় এবং দ্রুত প্রস্তুতও হয়। চলুন, এই ব্লগে কিছু জনপ্রিয় প্যালিও ডায়েট রেসিপি শেয়ার করা যাক, যা আপনাকে দ্রুত এবং স্বাস্থ্যকর খাবার তৈরি করতে সাহায্য করবে।

প্যালিও ডায়েট কি?

প্যালিও ডায়েট এমন একটি খাদ্যাভ্যাস যা আমাদের প্রাচীন পূর্বপুরুষদের জীবনধারা অনুসরণ করে। এতে শুধুমাত্র প্রাকৃতিক, অপ্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া হয়, যেমন—মাংস, মাছ, ডিম, ফল, সবজি, বাদাম এবং বীজ। এই ডায়েটটি প্রক্রিয়াজাত খাবারের ব্যবহার কমাতে এবং শর্করা বা সুগার ভরপুর খাবারের ব্যবহার বন্ধ করতে উৎসাহিত করে।

কেন প্যালিও ডায়েট বেছে নেবেন?

১. ওজন কমানো: প্যালিও ডায়েটের মূল সুবিধা হলো এটি আপনাকে স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে। এতে অপ্রক্রিয়াজাত খাবারের উপস্থিতি থাকার কারণে শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূর্ণ হয়, এবং এটি শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়ক।

২. হজমে সাহায্য: প্যালিও ডায়েটের খাবারে প্রাকৃতিক ফাইবার এবং পুষ্টি উপাদান বেশি থাকে, যা হজম ব্যবস্থাকে সহায়ক করে।

৩. মাথাব্যথা ও মানসিক চাপ কমানো: প্যালিও ডায়েটে প্রাকৃতিক খাবারের উপস্থিতি এবং সুস্থ চর্বি খাওয়া মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে।

প্যালিও ডায়েটের জন্য কিছু জনপ্রিয় রেসিপি

১. পালিও মাটন কাবাব

মাংসের কাবাব তো সকলেরই ভালো লাগে, আর প্যালিও ডায়েটে মাংস খাওয়ার অনুমতি রয়েছে। এটি একটি হালকা, প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার।

উপকরণ:

  • ৫০০ গ্রাম মাটন
  • ১ টেবিল চামচ আদা-রসুন বাটা
  • ১ টেবিল চামচ দারচিনি গুঁড়ো
  • ১ টেবিল চামচ কুমিন গুঁড়ো
  • লবণ এবং মরিচ (স্বাদ অনুযায়ী)
  • ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল

প্রস্তুত প্রণালি:
১. মাটন ভালোভাবে কাটা নিয়ে এতে আদা-রসুন বাটা, দারচিনি, কুমিন গুঁড়ো, লবণ ও মরিচ মেশান।
২. মিশ্রণটি ভালোভাবে মাখিয়ে কিছু সময় রেখে দিন।
৩. অলিভ অয়েলে কাবাবগুলি সেঁকে বা গ্রিল করে পরিবেশন করুন।

২. পালিও অ্যাভোকাডো ও টুনা সালাদ

এটি দ্রুত তৈরি করা যায় এবং পুষ্টিকর, বিশেষ করে প্রোটিন এবং ফ্যাটে ভরপুর।

উপকরণ:

  • ১টি অ্যাভোকাডো (কাটা)
  • ১টি টুনা ক্যান
  • ১ টেবিল চামচ লেবুর রস
  • ১/২ কাপ শসা (কাটা)
  • লবণ ও মরিচ (স্বাদ অনুযায়ী)

প্রস্তুত প্রণালি:
১. টুনা ক্যানের পানি ঝরিয়ে মাংসটি আলাদা করুন।
২. অ্যাভোকাডো, শসা, টুনা এবং লেবুর রস একসাথে মেশান।
৩. লবণ এবং মরিচ দিয়ে স্বাদ অনুযায়ী সাজিয়ে পরিবেশন করুন।

৩. পালিও মুরগির মাংসের স্টু

এটি হালকা এবং পুষ্টিকর, যা দ্রুত প্রস্তুত করা যায় এবং শক্তি প্রদান করে।

উপকরণ:

  • ৫০০ গ্রাম মুরগির মাংস (কাটা)
  • ১ টেবিল চামচ আদা-রসুন বাটা
  • ১ কাপ শশা
  • ২ কাপ টমেটো (কাটা)
  • লবণ এবং মরিচ (স্বাদ অনুযায়ী)
  • ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল

প্রস্তুত প্রণালি:
১. মুরগির মাংস সেদ্ধ করে নিন।
২. একটি প্যানে অলিভ অয়েল গরম করে আদা-রসুন বাটা দিয়ে ভাজুন।
৩. শশা, টমেটো এবং সেদ্ধ মাংস দিন।
৪. কিছু সময় সেদ্ধ করে পরিবেশন করুন।

৪. পালিও প্যানকেক

এটি পালিও-friendly প্যানকেক, যা সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর।

উপকরণ:

  • ১ কাপ আলমন্ড ময়দা
  • ২টি ডিম
  • ১/২ কাপ নারকেলের দুধ
  • ১ টেবিল চামচ মধু
  • ১/২ চা চামচ বেকিং পাউডার

প্রস্তুত প্রণালি:
১. সব উপকরণ মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন।
২. একটি প্যানে অলিভ অয়েল দিয়ে মিশ্রণটি ঢেলে নিন।
৩. দুই পিঠে সোনালী হয়ে আসা পর্যন্ত প্যানকেকগুলি সেঁকুন।
৪. মধু বা ফল দিয়ে পরিবেশন করুন।

৫. পালিও স্যুপ

এটি সবজি এবং মাংসের সংমিশ্রণ স্যুপ যা পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু।

উপকরণ:

  • ১ কাপ মাংস (এনিমেল প্রোটিন)
  • ১ কাপ গাজর (কাটা)
  • ১ কাপ ব্রোকলি (কাটা)
  • ২ টেবিল চামচ মসলাপাতা
  • ২ কাপ মাংসের স্টক

প্রস্তুত প্রণালি:
১. একটি প্যানে মাংস ও গাজর একসাথে রান্না করুন।
২. এরপর ব্রোকলি ও মসলাপাতা দিন।
৩. মাংসের স্টক দিয়ে কিছু সময় সেদ্ধ করুন।
৪. গরম গরম পরিবেশন করুন।

৬. পালিও স্যালমন ফিশ

স্যালমন মাছ হলো পালিও ডায়েটের জন্য আদর্শ একটি খাবার, যা স্বাস্থ্যকর চর্বি প্রদান করে।

উপকরণ:

  • ২টি স্যালমন ফিলেট
  • ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল
  • ১/২ চা চামচ লবণ
  • ১/২ চা চামচ মরিচ

প্রস্তুত প্রণালি:
১. স্যালমন ফিলেট গুলোকে অলিভ অয়েল, লবণ ও মরিচ দিয়ে ম্যারিনেট করুন।
২. একটি প্যানে গ্রিল বা সেঁকুন।
৩. স্যালমন মাছ সোনালী হওয়া পর্যন্ত গ্রিল করুন।
৪. গরম গরম পরিবেশন করুন।

৭. পালিও মাশরুম স্যুপ

মাশরুম স্যুপ হলো স্বাদ এবং পুষ্টি সমৃদ্ধ, সহজ এবং তৃপ্তিকর।

উপকরণ:

  • ১ কাপ মাশরুম (কাটা)
  • ১ টেবিল চামচ নারিকেল তেল
  • ২ কাপ মাংসের স্টক
  • ১/২ চা চামচ লবণ
  • ১/২ চা চামচ মরিচ

প্রস্তুত প্রণালি:
১. মাশরুম ও নারিকেল তেল প্যানে দিয়ে হালকা করে ভাজুন।
২. মাংসের স্টক যোগ করুন এবং ১৫ মিনিট সেদ্ধ করুন।
৩. মাশরুম স্যুপটি সেঁকে পরিবেশন করুন।

৮. পালিও প্রোটিন বার

শরীরের প্রোটিনের চাহিদা পূরণের জন্য এই বারগুলো একদম উপযুক্ত।

উপকরণ:

  • ১ কাপ আলমন্ড মাখন
  • ১/২ কাপ ডার্ক চকলেট (কুচি করা)
  • ১/২ কাপ বাদাম
  • ১ টেবিল চামচ মধু

প্রস্তুত প্রণালি:
১. সব উপকরণ মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন।
২. মিশ্রণটি একটি ট্রেতে ঢেলে সমানভাবে ছড়িয়ে দিন।
৩. ঠান্ডা করে স্লাইস করে বার তৈরি করুন।

৯. পালিও ফ্রুট সালাদ

স্বাস্থ্যকর এবং তাজা ফল দিয়ে তৈরি একটি সুস্বাদু সালাদ।

উপকরণ:

  • ১টি আপেল
  • ১টি কলা
  • ১/২ কাপ বেরি
  • ১ টেবিল চামচ লেবুর রস

প্রস্তুত প্রণালি:
১. সব ফল কেটে একসাথে মিশিয়ে নিন।
২. লেবুর রস দিয়ে সঠিকভাবে মেশান।
৩. তাজা ফলের সালাদ পরিবেশন করুন।

১০. পালিও মিষ্টি আলু চিপস

মিষ্টি আলু চিপস একটি স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস।

উপকরণ:

  • ২টি মিষ্টি আলু
  • ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল
  • লবণ (স্বাদ অনুযায়ী)

প্রস্তুত প্রণালি:
১. মিষ্টি আলু স্লাইস করে অলিভ অয়েলে মাখুন।
২. ওভেনে ২০ মিনিট বেক করুন।
৩. সোনালী হওয়া পর্যন্ত বেক করুন এবং পরিবেশন করুন।

প্যালিও ডায়েটের কিছু টিপস

১. প্রাকৃতিক খাবার বেছে নিন: প্যালিও ডায়েটে শুধুমাত্র প্রাকৃতিক, অপ্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া উচিত। Dark চকলেট, বাদাম, এবং তাজা ফল খেতে পারেন।

২. প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে দূরে থাকুন: যেমন প্যাকেটজাত খাবার, পেস্ট্রি, এবং Soft Drinks এগুলো প্যালিও ডায়েটের অংশ নয়।

৩. পর্যাপ্ত পানি পান করুন: প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ গ্লাস পানি পান করতে ভুলবেন না। এটি আপনার হজম প্রক্রিয়া উন্নত করতে সহায়ক।

প্যালিও ডায়েট একটি স্বাস্থ্যকর এবং সহজ খাদ্যাভ্যাস, যা আপনাকে সঠিক পুষ্টি এবং শক্তি দেবে। এতে প্রাকৃতিক উপাদানগুলি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। প্যালিও ডায়েটের রেসিপি গুলি সুস্বাদু, সহজে প্রস্তুতযোগ্য এবং স্বাস্থ্যকর। আপনি যদি স্বাস্থ্যকর জীবনের দিকে পদক্ষেপ নিতে চান, তবে প্যালিও ডায়েট একটি দারুণ অপশন।

এখনই আপনার প্যালিও ডায়েট রেসিপি ট্রাই করুন এবং আপনার স্বাস্থ্যকে সুরক্ষিত রাখুন।

Filed Under: Diet Tips, HEALTH & WELLNESS (স্বাস্থ্য ও সুস্থতা) Tagged With: ওজন কমানোর খাবার, প্যালিও খাবার, প্যালিও ডায়েট, প্যালিও ফুড প্ল্যান, প্যালিও রেসিপি, প্রাকৃতিক ডায়েট, সহজ রান্না, সুস্থ জীবনের খাদ্যাভ্যাস, স্বাস্থ্যকর রেসিপি

এমসিটি তেলের 5টি সুবিধা এবং কেটো ডায়েটে এটি ব্যবহার করার সেরা উপায়

by রূপকথন ডেস্ক

মিডিয়াম-চেইন ট্রাইগ্লিসারাইড (MCTs) সাধারণত সহজলোভ্য এমন তেলে পাওয়া যায়। এমসিটি তেল একটি সম্পূরক যা এই ধরনের চর্বিযুক্ত। এই সম্পূরকটি দ্রুত হারে ওজন নিয়ন্ত্রণে এর কথিত সুবিধার জন্য জনপ্রিয়। কিন্তু এমসিটি তেল কীভাবে আপনার উপকার করতে পারে?

এই নিবন্ধে, আমরা এমসিটি তেলের বিভিন্ন উপকারিতা, এর সম্ভাব্য ঝুঁকি এবং আপনি কীভাবে এটি কেটো ডায়েটের সাথে ব্যবহার করতে পারেন সে সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মতামত দেখি। 

এমসিটি তেল

এই লিখাটি পড়ে আপনি জানতে পারবেন –

  • এমসিটি, টাইপস এবং এমসিটি তেল
  • এমসিটি তেলের বৈজ্ঞানিক স্বাস্থ্য উপকারিতা
  • কেটো ডায়েটে এমসিটি তেল কীভাবে ব্যবহার করবেন
  • এমসিটি তেলের ঝুঁকি: এমসিটি তেল কি আপনার জন্য খারাপ হতে পারে?

এমসিটি, টাইপস এবং এমসিটি তেল

বৈজ্ঞানিকভাবে বলতে গেলে, এমসিটি (মাঝারি-চেইন ট্রাইগ্লিসারাইড) হল ফ্যাটি অ্যাসিড যার চেইন প্রায় ৬-১২টি কার্বন পরমাণু। এইভাবে, এগুলি দীর্ঘ-চেইন ফ্যাটি অ্যাসিডের তুলনায় শরীরের পক্ষে হজম করা তুলনামূলকভাবে সহজ। আনা রেইসডর্ফ, একজন নিবন্ধিত ডায়েটিশিয়ান, এমসিটি তেলের বিভিন্ন প্রকারের বিষয়ে কথা বলেন। ৪টি প্রধান ধরনের MCT তেল আছে। এইগুলো:

ক্যাপ্রোইক অ্যাসিড (৬ কার্বন অণু):

একটি খুব শক্তিশালী গন্ধ আছে এবং সাধারণত সম্পূরক বা খাবারে ব্যবহৃত হয় না। 

ক্যাপ্রিলিক অ্যাসিড (৮ কার্বন অণু):

কিটোন তৈরি করতে শরীর দ্বারা ব্যবহৃত হয়, এছাড়াও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। 

ক্যাপ্রিক অ্যাসিড (১০ কার্বন অণু): 

অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং ইমিউন-বুস্টিং বৈশিষ্ট্য, কার্যকরভাবে শক্তির জন্য ব্যবহৃত হয়। 

লরিক অ্যাসিড (১২ কার্বন অণু):

নারকেল তেলে পাওয়া প্রধান এমসিটি, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। এর মধ্যে, সবচেয়ে সাধারণ যেগুলি আপনি ব্যবহারে খুঁজে পেতে পারেন তা হল ক্যাপ্রোইক এবং ক্যাপ্রিলিক অ্যাসিড।

MCT-এর প্রাকৃতিক উৎস হল মানুষের বুকের দুধ, নারকেল ও পামের মতো তেল এবং পূর্ণ চর্বিযুক্ত গরু বা ছাগলের দুধ। এই খাদ্য উৎসগুলিতে সাধারণত MCT এবং দীর্ঘ-চেইন ট্রাইগ্লিসারাইড উভয়ই থাকে, উভয়ই স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড।

এখানে উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ যে কোনো প্রাকৃতিক উৎসে ১০০% MCT বিষয়বস্তু নেই। উদাহরণস্বরূপ, নারকেল তেলে MCT সামগ্রীর সর্বোচ্চ মাত্র ৫৪% থাকে। পাম এবং নারকেল তেল প্রক্রিয়াজাত করে এমসিটি তেল তৈরি করা হয়।

হার্টের জন্য স্বাস্থ্যকর হতে পারে

হার্টের জন্য স্বাস্থ্যকর

মাঝারি-চেইন ট্রাইগ্লিসারাইডগুলি সহজেই রক্ত ​​​​প্রবাহে শোষিত হয় এবং সরাসরি লিভারে যায়। এই বৈশিষ্ট্যের কারণে, এমসিটি তেল খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) কমাতে এবং এইচডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে দেখা গেছে (যা হার্টের জন্য ভালো)।

মেডিক্যাল সলিউশনস বিসিএন-এর চিকিৎসা উপদেষ্টা ফেলিসিয়া নেয়েল বলেছেন, “এমসিটি-এর বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা এথেরোস্ক্লেরোসিস (ওরফে ধমনীর শক্ত হওয়া) প্রতিরোধে উপকারী হতে পারে, যা হৃদরোগের কারণ হতে পারে।”

এছাড়াও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ রয়েছে যে MCTs প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে, যার ফলে হৃদপিন্ডের পেশীগুলিকে রক্ষা করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে

KaraMD-এর প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ মাহমুদ কারা, ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনায় MCT-এর প্রভাব সম্পর্কে কথা বলেন।

  • এমসিটি দীর্ঘ-চেইন ফর্মের তুলনায় শরীরকে আরও কেটোন তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
  • কেটোনগুলি ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে এবং শরীরের খাদ্যের অণুগুলিকে ভেঙে দিতে সাহায্য করতে পারে যা শক্তির জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • যেহেতু এটি আরও সহজে শোষিত হয়, এমসিটি তেল অগ্ন্যাশয় (ডায়াবেটিসে আক্রান্ত প্রাথমিক অঙ্গ) সংক্রান্ত সমস্যার কারণে পুষ্টি শোষণের সাথে লড়াই করা লোকেদেরও সাহায্য করতে পারে।
  • অধিকন্তু, এমসিটি তেল পরোক্ষভাবে ডায়াবেটিস রোগীদের সাহায্য করতে পারে কারণ এমসিটি তেলের উচ্চতা আমাদের দ্রুত পূর্ণতা অনুভব করতে সাহায্য করতে পারে, যার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রায় অতিরিক্ত খাওয়া এবং অপ্রয়োজনীয় স্পাইক প্রতিরোধ করতে পারে।”

শক্তির মাত্রা উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে

শক্তির মাত্রা উন্নত

ডাঃ কারার মতন, শরীরে উৎপাদিত কেটোন শক্তির মাত্রা উন্নত করে। মাইটোকন্ড্রিয়া হল কোষের পাওয়ার হাউস। একটি গবেষণায় বিশেষভাবে পাওয়া গেছে কিভাবে MCTs মাইটোকন্ড্রিয়া বিপাককে উন্নত করে, কোষে শক্তি উৎপাদন বাড়ায় এবং আপনার শরীরের শক্তির মাত্রা উন্নত করে।

ফ্যাট বিল্ড আপ কমাতে সাহায্য করতে পারে

পেপটাইড YY এবং লেপটিন দুটি হরমোন যা খাবারের পরে তৃপ্তির জন্য দায়ী। একটি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে এমসিটি এই দুটি হরমোনের উৎপাদন বাড়ায়, যার ফলে পূর্ণতার অনুভূতি বৃদ্ধি পায়। এমসিটি শরীরে চর্বি জমা কমায়, যদি আপনি একজন ক্রীড়াবিদ হন এটি আপনার জন্য আদর্শ।

MCT তেল ওজন কমানোর কাজ করতে পারে

MCT তেল ওজন কমানো

গবেষণায় দেখা গেছে যে MCTগুলি সরাসরি রক্ত ​​​​প্রবাহে শোষিত হয় এবং হজম করার প্রয়োজন নেই। পরিবর্তে, তারা সরাসরি লিভারে যায়, টিস্যুতে অতিরিক্ত ফ্যাটি স্তর যোগ করে না। যখন কেউ ওজন কমাতে চায় তখন উন্নত শক্তির মাত্রা এবং চর্বি কমানো একটি নিখুঁত সমন্বয়।

“এমসিটি তেল ক্রীড়াবিদদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়, কারণ এই মাঝারি চেইনগুলি আরও সহজে শোষিত হয়, ওজন হ্রাসে অবদান রাখতে পারে এবং এটি একটি উচ্চ-মানের শক্তির উৎস,” বলেছেন রেক্সএমডি-র চিফ মেডিকেল অফিসার অ্যান্থনি পুওপোলো ৷

প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে

ডাঃ কারা বলেছেন এমসিটি সম্পর্কে কীভাবে আলঝেইমার রোগের লক্ষণগুলিকে প্রভাবিত করে সে ! “দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ সমস্ত মন্দের মূল। অনেক স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন হৃদরোগ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, এবং স্মৃতিভ্রংশ এবং আলঝেইমারের মতো ব্যাধি প্রদাহ দিয়ে শুরু হয়। এমসিটি তেল একটি প্রদাহরোধী হিসাবে কাজ করতে পারে কারণ এটি প্রো-ইনফ্ল্যামেটরি সাইটোকাইনগুলিকে ভেঙে দিতে সাহায্য করতে পারে।”

কেটো ডায়েটে এমসিটি তেল কীভাবে ব্যবহার করবেন

কেটো ডায়েট

আপনার খাদ্যের মধ্যে MCT তেল অন্তর্ভুক্ত করা বেশ সহজ। তেল ঘরের তাপমাত্রায় তরল থেকে যায়, এবং তাই, আপনি এটিকে আপনার খাওয়া যেকোনো খাবার বা পানীয়ের সাথে মিশিয়ে দিতে পারেন। মনে রাখবেন যে MCT তেল রান্নার জন্য উপযুক্ত নয় কারণ উচ্চ তাপমাত্রায় অণুগুলি ভেঙে যায়।

কেটো ডায়েটে এমসিটি তেল ব্যবহার করার কিছু উপায় হল:

  •  এটি আপনার প্রতিদিনের কফিতে মেশানো ।
  •  সালাদ তৈরির সময় জলপাই/অন্যান্য তেলের সাথে এটি ব্যবহার করুন ।
  •  এটিকে আপনার স্মুদির সাথে বা আপনার প্রাক-ওয়ার্কআউট পানীয়ের সাথে মিশ্রিত করুন ।

ডোজ সম্পর্কে, “কোন নির্দিষ্ট প্রস্তাবিত ডোজ নেই। বেশিরভাগ পণ্য প্রতিদিন ১-৩ টেবিল চামচ সুপারিশ করে। ১/২ টেবিল চামচ দিয়ে শুরু করুন কারণ এমসিটি হজমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে যদি আপনি সেগুলিতে অভ্যস্ত না হন।”

এমসিটি তেলের ঝুঁকি

এমসিটি তেলের ঝুঁকি

MCT তেল অতিরিক্ত ব্যবহার করার সম্ভাব্য স্বল্প-মেয়াদী প্রভাব সম্পর্কে মিসেস নেয়েল এই কথা বলেছেন। “সাধারণভাবে, আপনার খাদ্যের অংশ হিসাবে মাঝারি পরিমাণে MCT তেল ব্যবহার করা নিরাপদ।

যাইহোক, দীর্ঘমেয়াদী এবং অত্যধিক ব্যবহার ঝুঁকি থাকতে পারে। কিছু নেতিবাচক সম্ভাব্য স্বাস্থ্য প্রভাব অন্তর্ভুক্ত:

  •  অন্যান্য চর্বির মতো, এটি এখনও ক্যালোরিতে বেশি। স্বাভাবিকভাবে প্রতিদিন আপনার শরীরের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ক্যালোরি গ্রহণ করলে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে।
  • প্রচুর পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে পারে।
  • এমসিটি ক্ষুধার্ত হরমোন নিঃসরণকে উদ্দীপিত করতে পারে, যা আপনাকে অত্যধিক খেতে দেয়।
  • বড় ডোজ লিভারে চর্বি তৈরি করতে পারে।”
  • মিসেস রেইসডর্ফ সম্মত হন, বলেন, “এমসিটি তেলের প্রধান স্বল্পমেয়াদী ঝুঁকিগুলির মধ্যে একটি হল ডায়রিয়া বা গ্যাস যা খুব বেশি গ্রহণের ফলে হতে পারে।”

আপনি যখন সঠিক কেটো ডায়েট করতে চান তখন MCT তেলগুলি সামগ্রিকভাবে উপকারী। তারা ওজন কমানো, চর্বি পোড়ানো, এবং খুব বেশি চর্বিযুক্ত খাবার না খেয়ে উচ্চ শক্তির মাত্রার মতো প্রধান ফিটনেস লক্ষ্যগুলিতে অবদান রাখে।

এমনকি তারা আপনার হার্টকে সুস্থ রাখতে এবং আপনার কোলেস্টেরল এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে অবদান রাখে।

এমনকি আপনি এগুলিকে আপনার ডায়েটে খেতে চান এমন কোনও খাবারে যুক্ত করতে পারেন। শুধু মনে রাখবেন MCT তেল গরম করবেন না।

এই তেলগুলির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুব বেশি নয় (এবং  শুধুমাত্র স্বল্পমেয়াদী)। অতএব, আপনি আজ থেকে এই তেলগুলি আপনার ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করা শুরু করতে পারেন।

Filed Under: Diet Tips

হলুদ চা এর উপকারিতা, প্রস্তুতি, এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

by রূপকথন ডেস্ক

হলুদ চায়ের উপকারিতা আপনাকে এক বা দুই কাপ খাওয়ার চাহিদা গড়ে তুলবে। ঐতিহ্যবাহী চীনা এবং ভারতীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা হাজার হাজার বছর ধরে হলুদ ব্যবহার করে আসছে। আপনি বিভিন্ন উপায়ে আপনার খাদ্যতালিকায় হলুদ ব্যবহার করতে পারেন।

হলুদ চা প্রদাহ কমাতে এবং ঘুমের গুণমান উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। এটি ব্রণর চিকিৎসায়ও সাহায্য করে, হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি  করে এবং লিভার পরিষ্কার করে।

এই নিবন্ধটিতে হলুদ চায়ের উপকারিতা, কীভাবে এটি ব্যবহার করবেন এবং সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

হলুদ চা

এই লিখাটি পড়ে আপনি জানতে পারবেন –

  • হলুদ চায়ের উপকারিতা কি?
  • হলুদ চা কীভাবে প্রস্তুত করবেন
  • হলুদ চায়ের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি?

হলুদ চায়ের উপকারিতা কি?

হলুদ চা প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করে

প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই

এমন শত শত গবেষণা রয়েছে যা কারকিউমিনের কথা বলে, হলুদের যৌগ যা প্রদাহের সাথে লড়াই করে। আরও গবেষণা আমাদের বলে যে আইবুপ্রোফেন এবং অ্যাসপিরিন, দুটি জনপ্রিয় অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ওষুধ, হলুদের কারকিউমিনের মতো কার্যকর নয় যখন এটি প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করে।

হলুদের এই বৈশিষ্ট্যগুলি এটিকে আর্থ্রাইটিস এবং গাউটের লক্ষণগুলির জন্য একটি ভাল চিকিৎসা করে তোলে।

ক্যান্সার চিকিৎসায় সাহায্য করে

হলুদে থাকা কারকিউমিন ক্যান্সার প্রতিরোধী প্রভাব বলে প্রমাণিত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, যৌগটি অন্ত্র, ত্বক, স্তন এবং পাকস্থলীর ক্যান্সারের উপর সর্বোত্তম প্রভাব প্রদর্শন করে। এছাড়াও, কার্কিউমিনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যগুলি ফোলাভাব এবং প্রদাহ কমাতে পারে যা প্রায়শই ক্যান্সারের সাথে যুক্ত থাকে।

আরও গবেষণা আমাদের বলে যে কারকিউমিন কেমোথেরাপি আরও কার্যকর করতে পারে।  আরও মজার বিষয় হল কার্কিউমিনের নির্বাচনী ক্রিয়া – বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে যৌগটি শুধুমাত্র ক্যান্সারযুক্ত কোষগুলিকে লক্ষ্য করে, সুস্থ কোষগুলিকে প্রভাবিত করে না।

ডায়াবেটিস চিকিৎসায় সাহায্য করে

ডায়াবেটিস চিকিৎসা

একাধিক গবেষণার একটি ২০১৩ সালের পর্যালোচনায় বলা হয়েছে যে হলুদের কারকিউমিন রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে পারে এবং তার উপরে, ডায়াবেটিসের অন্যান্য জটিলতা থেকে মুক্তি দিতে পারে। হলুদ চা রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল করতে পারে এবং ডায়াবেটিসকে অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণযোগ্য করে তুলতে পারে।

আরও গুরুত্বপূর্ণ, নিয়মিত হলুদ চা গ্রহণ করা (অথবা আপনার নিয়মিত ডায়েটে হলুদ অন্তর্ভুক্ত করা) এমনকি ডায়াবেটিসকে সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধ করতে পারে। কারণ কারকিউমিন অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষের কার্যকারিতাকে অপ্টিমাইজ করে যা ইনসুলিন তৈরি করে। এটি লিভারের সমস্যাগুলিরও চিকিৎসা  করতে পারে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে বেশ সাধারণ।

আলঝেইমারের চিকিৎসা করে

আলঝেইমারের চিকিৎসা করে

আলঝেইমার রোগ প্রদাহ, অক্সিডেটিভ ক্ষতি এবং ধাতব বিষাক্ততা প্ররোচিত করে মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে – যার সবগুলি হলুদ চায়ে কারকিউমিনের সাহায্যে প্রতিরোধ করা হয়েছে। আরেকটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে কারকিউমিন স্মৃতিশক্তি এবং মেজাজ উন্নত করতে পারে। মস্তিষ্কের প্রদাহ কমাতে কার্কুমিনের ক্ষমতাও বিষন্নতার উন্নতির জন্য কাজ করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

হলুদের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। এটি প্রো-ইনফ্ল্যামেটরি সাইটোকাইনের প্রভাবকেও কমায় ও প্রতিরোধ করে এবং আরেকটি উপায় হল হলুদ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে

গবেষণায় দেখা যায় যে কারকিউমিন হৃদরোগকে বিপরীত করতে পারে। যৌগের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রভাব বিভিন্ন ধরনের কার্ডিওটক্সিসিটির ঝুঁকি কমাতে পারে এবং ডায়াবেটিস সংক্রান্ত হার্টের জটিলতা প্রতিরোধ করতে পারে।

কারকিউমিন এন্ডোথেলিয়ামের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতেও পাওয়া গেছে, যা রক্তনালীগুলির আস্তরণ। যেহেতু এন্ডোথেলিয়াল কর্মহীনতা হৃদরোগের একটি প্রধান কারণ, কারকিউমিন এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

গবেষণা আরও দেখায় যে কারকিউমিন ধমনী আটকে যাওয়া প্রতিরোধ করতে পারে। যৌগটি ধমনীতে জমা কমাতে পারে, যার ফলে হৃদরোগ এবং হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করে।

ওজন হ্রাস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে

ওজন বৃদ্ধির ফলে ফ্যাট টিস্যু প্রসারিত হয় এবং এর ফলে নতুন রক্তনালী তৈরি হয়। কিন্তু গবেষণা দেখায় যে কারকিউমিন গ্রহণ এই রক্তনালীগুলির গঠন প্রতিরোধ করতে পারে। এর অর্থ কম চর্বি বৃদ্ধি এবং অবশেষে ওজন হ্রাস।

যাইহোক, আমরা কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগে আরও গবেষণা প্রয়োজন।

Uveitis এর চিকিৎসা করতে পারে

Uveitis

চোখের প্রদাহও বলা হয়, এটি চোখের একটি অবক্ষয়কারী অবস্থা যা দৃষ্টিকে প্রভাবিত করতে পারে। যাইহোক, সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগে আমাদের আরও গবেষণা দরকার।

লিভার পরিষ্কার করে

হলুদ চায়ের কারকিউমিন লিভারের ডিটক্সিফিকেশনকে উন্নত করতে দেখা গেছে। হলুদ খাওয়া গ্লুটাথিয়ন এস-ট্রান্সফারেজের মাত্রাও বাড়িয়ে দিতে পারে, লিভার দ্বারা উৎপাদিত একটি এনজাইম যা অঙ্গটিকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।

অন্যান্য গবেষণায় বলা হয়েছে কিভাবে কারকিউমিন কিছু পরিমাণে লিভার সিরোসিসকে বিপরীত করতে পারে। এটি যৌগের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী করা যেতে পারে।

ঘুম বাড়ায়

আমরা ইতিমধ্যে দেখেছি, যে কারকিউমিন মানসিক অবস্থা উন্নত করতে পারে – এবং এটি আপনার ঘুমেরও উন্নতি করে। কারকিউমিন খাওয়া দুশ্চিন্তা উপশম করতে এবং অক্সিডেটিভ ক্ষতি প্রতিরোধ করতেও পাওয়া গেছে – যা অন্যতম ঘুমের সমস্যার কারণ হতে পারে।

হলুদ চা ব্রণ নিরাময়ে সাহায্য করে

হলুদে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং কারকিউমিন যৌগ আপনার ত্বকের জন্য বিস্ময়কর কাজ করতে পারে। এক টেবিল চামচ হলুদের সাথে কিছু জল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে পারেন। আপনার মুখে লাগান এবং ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলার আগে ৩০ মিনিটের জন্য রেখে দিন। আপনি প্রতিদিন এটি পুনরাবৃত্তি করতে পারেন।

হলুদ চা কীভাবে প্রস্তুত করবেন

আপনি হলুদ গুঁড়ো দিয়ে চা প্রস্তুত করতে পারেন। আপনি হয় বাজার থেকে এটি কিনতে পারেন বা আপনার বাড়িতেই গোটা হলুদ ছেঁকে নিতে পারেন।

  • ৪ কাপ ফুটানো জলে ১ থেকে ২ চা চামচ হলুদ যোগ করুন।
  • মিশ্রণটি প্রায় ১০ মিনিটের জন্য সিদ্ধ হতে দিন।
  • একটি কাপ বা পাত্রে চা ছেঁকে নিন এবং কিছুটা ঠান্ডা হতে দিন।

চায়ে মধুও মেশাতে পারেন মিষ্টি করতে। মধুতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্যও রয়েছে যা অতিরিক্ত সুবিধা দেয়।আপনি কিছু কালো মরিচ, লেবু বা এমনকি আদার রস যোগ করতে পারেন।

হলুদ চায়ের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি?

গর্ভাবস্থা এবং বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় সমস্যা

গর্ভাবস্থায়, হলুদ চা জরায়ুকে উদ্দীপিত করতে পারে। হলুদ এবং বুকের দুধ খাওয়ানোর বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া যায় না। অতএব, উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।

গলব্লাডারের সমস্যা

হলুদ পিত্তথলির সমস্যা বাড়াতে পারে। পিত্তথলিতে পাথর বা অন্য কোনো সমস্যা থাকলে এটি ব্যবহার করবেন না।

ডায়াবেটিস

যদিও এটি একটি উপকারী, আমরা আপনাকে আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিই কারণ হলুদ ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তচাপকে অনেক বেশি কমিয়ে দিতে পারে।

বন্ধ্যাত্ব

মৌখিকভাবে নেওয়া হলে হলুদ পুরুষদের মধ্যে শুক্রাণুর সংখ্যা হ্রাস করতে পারে। এটি উর্বরতা হ্রাস করতে পারে।

আয়রনের  অভাব

হলুদ লোহা শোষণে হস্তক্ষেপ করতে পারে। তাই যাদের আয়রনের ঘাটতি রয়েছে তাদের অবশ্যই যত্ন নিতে হবে।

সার্জারির সময় সমস্যা

হলুদ রক্ত ​​​​জমাট বাঁধাকে ধীর করে দিতে পারে, তাই আপনাকে একটি নির্ধারিত অস্ত্রোপচারের কমপক্ষে দুই সপ্তাহ আগে এটি গ্রহণ বন্ধ করতে হবে। হলুদ চায়ের উপকারিতা বৈচিত্র্যময় এবং প্রচুর। এটি আপনার ইমিউন সিস্টেমের জন্য দুর্দান্ত উৎস এবং এটি প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে।

এটি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করতে পারে। হলুদ চা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষভাবে ভালো কারণ এটি এর লক্ষণগুলি নিয়ন্ত্রণ করতে এবং চিনির মাত্রা স্থিতিশীল করতে সাহায্য করতে পারে। এটি আপনার হার্ট এবং লিভারের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

যাইহোক, অতিরিক্ত ব্যবহার বিরূপ প্রভাব হতে পারে। উদ্বেগ রয়েছে যে হলুদ গর্ভাবস্থায় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, পিত্তথলির ব্যাধি বাড়িয়ে তুলতে পারে বা উর্বরতাকে প্রভাবিত করতে পারে। আপনি যদি কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনুভব করেন তবে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।

Filed Under: Diet Tips, HEALTH & WELLNESS (স্বাস্থ্য ও সুস্থতা)

কিটো ডায়েট এর আদ্যপ্রান্ত – ১ মাসে ১৫ কেজি পর্যন্ত ওজন কমবে

by লামিয়া তানজিন মাহমুদ

স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল!

আপনি যেহেতু এই লেখাটি পড়ছেন,তাই ধরেই নিচ্ছি আধুনিক প্রযুক্তির যান্ত্রিক সমীকরণের সাথে তাল মিলিয়ে আপনি স্মার্টফোন নয়তো পিসি ব্যবহারে অভ্যস্ত। আমাদের এই যান্ত্রিক জীবন ব্যবস্থার যাতাকলে পিষে, ক্লান্তির সেই অবসর সময় টুকুর সদ্ব্যবহার করার জন্য,আপনি ও হয়ত প্রায়শ ফেইসবুক,টুইটার বা বিভিন্ন সাইট ভিজিট করে থাকেন। আর ঠিক তাই, আপনি রূপকথনের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত এই আর্টিকেলটি পড়ছেন ।

আধুনিক বিশ্বের এই ক্রান্তি লগ্নে এসে প্রযুক্তির উন্নতি সাধনের সাথে সাথে আমাদের অবশ্যই নিজেদের স্বাস্থ্য নিয়ে ও সচেতনতা আবশ্যক।

‘স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল’ ভাব-সম্প্রসারণ হিসেবে ছোটোকালে কম-বেশি সবাই পড়েছি আমরা। মুখস্ত বিদ্যা কিংবা সৃজনশীলতার দরুন নানান কথাবার্তা লিখে পাশ-মার্ক তুলেই হয়তো দায়িত্ব সেড়েছেন অনেকে, কেউ-বা আবার বুঝে-শুনেই যা লেখার লিখে বাস্তব জীবনেও তার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন।

চারপাশে একটু নজর বুলালেই এ কথার সত্যতা কিন্তু আপনি নিজেই যাচাই করতে পারবেন। সকাল সকাল কিছু মানুষকে একসাথে দৌড়াতে দেখেছেন? কিংবা হাসতে? অনেকের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় প্রচুর তাজা শাক-সবজি, ছোটো মাছ এবং দেশীয় ফলের প্রাধান্য দেখতে পাবেন। কেন বলুন তো?

ঘুরে-ফিরে উত্তর কিন্তু ওটাই, স্বাস্থ্য! নিয়মতান্ত্রিক জীবন ও সুসম খাবারে যেটা পরিণত হয় সম্পদে। সুস্বাস্থ্যের চেয়ে বড়ো সম্পদ কি কিছু আছে? অসুস্থ হলেই কেবল বোঝা যায়, সুস্থ থাকার প্রয়োজনিয়তা কী। তাই নয়? স্বাস্থ্য এবং সুস্থ থাকা। এ দুটো বিষয় যে বিষয়টির সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত তার নাম খাবার। এই খাবারের সাথে আবার যে নামটি আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে তার নাম ডায়েট কন্ট্রোল।

আচ্ছা, ডায়েট কন্ট্রোলের নাম শুনেছেন? একটু মুটিয়ে যাওয়া কিংবা মোটা হওয়া থেকে দূরে থাকার জন্য অনেকেই কিন্তু ডায়েট কন্ট্রোলের দিকে ঝুঁকে থাকেন। সেই ডায়েট কন্ট্রোলের দুনিয়ায় সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা নামটি “কিটোজেনিক ডায়েট বা কিটো ডায়েট“।

বিঃদ্রঃ আপনার ব্যক্তিগত ডাক্তারের সাথে পরামর্শ না করে এই ডায়েট অনুসরণ করবেন না

কিটো ডায়েটের পরিচয়ঃ কী এই কিটো ডায়েট? [What is the Keto Diet?]

এক কথায়- ‘নো কার্বোহাইড্রেট!’ অর্থাৎ, এই কিটো ডায়েটের মূল উদ্দেশ্যই হলো শরীরে থাকা যাবতীয় কার্বোহাইড্রেটকে একদম নিঃশেষ করে ফেলা এজন্য কিটো ডায়েটে কার্বোহাইড্রেটকে পুরোপুরি বাদ দেওয়া হয়। আপনারা জানেন, মোটা হওয়ার জন্য কার্বোহাইড্রেট দরকার হয় শরীরে। তাই যারা চিকন হতে চান তাদের জন্য কিটো ডায়েটে এর ঠিক উলটো কাজটা করতে হয়। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় সব খাবার এড়িয়ে যেতে হয়। যাতে শরীরে থাকা চর্বি পুড়তে শুরু করে এবং এক পর্যায়ে জমে থাকা কার্বোহাইড্রেটও পুড়তে শুরু করে। যার কারণে ওজন কমতে থাকে। মূলত কিটো ডায়েটকে সুপার লো-কার্ব ডায়েট বলে। ডায়েটটিতে কার্ব এক্সট্রিম লেভেলে কম থাকে, প্রোটিন মিড লেভেলে এবং ফ্যাট যথেষ্ট হাই থাকে।

টিপিকাল যে কিটো ডায়েট আছে সেখানে মোট ক্যালোরিক নিডের ফ্যাট ৭০%, প্রোটিন ২৫% এবং কার্ব ৫% থাকে। এর মানে হলো একটা পুরো দিনে আপনি যতটা খাবার খাবেন সেই খাবারের সুষম বণ্টনটা এমন হবে। একজন মানুষের স্বাভাবিক যে ডায়েট সেখানে কার্বোহাইড্রেট এর পরিমাণই থাকে ৫০%, ফ্যাট থাকে ৩০% এবং প্রোটিন ২০%। এখন আপনি যদি সারাদিনে ১২০০ ক্যালোরি খান তাহলে এর ৫০% কার্ব মানে ৬০০ ক্যালোরি কার্ব খেতে হবে আপনাকে।

মানবদেহের প্রধান খাদ্য বা জ্বালানি কী জানেন? গ্লুকোজ। আর কিটো ডায়েটের মূল উদ্দেশ্যই হলো এই গ্লুকোজের বদলে কিটোন বডিগুলোকে জ্বালানি বা খাদ্য হিসেবে প্রস্তুত করে ব্যবহার করা। খুব ইফেক্টিভ একটি ফ্যাট লস ডায়েট হিসেবে খ্যাত এই কিটোজেনিক ডায়েটটি মূলত প্রোটিন নির্ভর। অর্থাৎ প্রোটিন খাওয়াটাই কিটো ডায়েটের মূল উদ্দেশ্য।

তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই প্রোটিন দিয়ে মানবদেহের প্রতিদিনের ক্যালোরি নিড এবং রিকোয়ার্মেন্ট পূরণ করা সম্ভব হয় না সেক্ষেত্রে টোটাল ক্যালোরি নিডের ২০%-৩০% প্রোটিন এবং ৫% কার্ব খেয়ে শরীরের বাকি নিড এবং রিকোয়ার্মেন্ট পূরণ করতে হয়।

এতক্ষণের আলাপনে মোটামুটি একটা ধারণা এসেছে না কিটো ডায়েট সম্পর্কে? এমনও অনেকে আছেন যারা কিটো ডায়েট বলতেই বোঝেন প্রচুর মাংস গ্রহণ। আদতে বিষয়টা এমন না। আমাদের শরীরে ৬২% পানি, ১৬% আমিষ, ১৬% চর্বি, ৬% মিনারেল এবং ১% এর থেকেও কম কিংবা কাছাকাছি পরিমানের শর্করা, ভিটামিন এবং অন্যান্য কিছু উপাদান আছে।

কিটো ডায়েটের প্রকারভেদ [Types of Keto Diet]

এখনও পর্যন্ত চার ধরণের কিটো ডায়েট এর সাথে আমাদের পরিচয় ঘটেছে-

(ক) স্ট্যান্ডার্ড কিটোজেনিক ডায়েট – এ ধরণের ডায়েটে ফ্যাট ৭০%, প্রোটিন ২৫% এবং কার্ব ৫% থাকে। সাধারণত কিটো ডায়েট বলতে মানুষ এটাই বুঝে এবং এই স্ট্যান্ডার্ড কিটোজেনিক ডায়েটই বেশি পরিচিত এবং প্রচলিত।

 (খ) সাইক্লিক্যাল কিটোজেনিক ডায়েট – সপ্তাহে দু’দিন-ই কার্ব খাওয়ার অনুমতি আছে এই কিটো ডায়েটে।

(গ) টার্গেটেড কিটজেনিক ডায়েট – প্রথম দুটি কিটো ডায়েটের তুলনায় এই কিটো ডায়েট একটু আলাদাই বটে। কতটা আলাদা সে প্রশ্নের উত্তরে বলতে হয়, এই কিটো ডায়েটে আপনি কার্ব খেতে পারবেন তবে সেটা বিশেষ ক্ষেত্রে। যেমন- ওয়ার্ক-আউটের আগে কিংবা পরে।

(ঘ) হাই প্রোটিন কিটোজেনিক ডায়েট – এই ডায়েটটি কিছুটা স্ট্যান্ডার্ড কিটোজেনিক ডায়েট এর মতো। কেবল প্রোটিনের মাত্রাটা কিছুটা বেড়ে যায়। কেমন সেটা? স্ট্যান্ডার্ড কিটোজেনিক ডায়েট এ প্রোটিন থাকে ২৫% আর এই হাই প্রোটিন কিটোজেনিক ডায়েটে প্রোটিনের পরিমাণ থাকে ৩৫%। অর্থাৎ পুরো বণ্টনটা হলো- ফ্যাট ৬০%, প্রোটিন ৩৫% এবং ফ্যাট ৫%। এথলেট এবং বডিবিল্ডারদের জন্য এই হাই প্রোটিন কিটোজেনিক ডায়েট খুব কার্যকর।

নতুনদের জন্য সহজ কেটোজেনিক ডায়েট এর খাবার পরিকল্পনা [Simple Ketogenic Meal Plan for Beginner]

Ketogenic Meal Plan

কিটোজেনিক ডায়েটের এতক্ষণের আলাপনে কী খেতে পারবেন আর কী খেতে পারবেন না এটুকু জানার পরে ডায়েট চার্ট জানার ব্যাপারে সামান্য আগ্রহ জন্মেছে কি পাঠক? আগ্রহ জিইয়ে রাখার উপহার স্বরূপ এক সপ্তাহের কিটোজেনিক ডায়েট প্ল্যান, শুধু আপনাদের জন্য-

সকালে কী খাবেন?

অনেকের সকালে খাওয়ার অভ্যেস নেই, অনেকের আছে। যাদের আছে তারা সকাল ৮ টা থেকে সাড়ে ৮ টার মধ্যে দুধ এবং চিনি ছাড়া ১ কাপ চা খেতে পারেন। স্বাদ পেতে আদা, লেবু এবং সামান্য লবণ দিতে পারেন।

কুসুম গরম পানির সাথে অ্যাপল সিডার ভিনেগার অথবা কোকোনাট ভিনেগার মিলিয়ে খেতে পারেন। কিংবা লেবু চিপে রস বের করে নিয়েও মিশিয়ে খেতে পারেন।

যারা সকালের খাবার খেতে দেরি করেন, তারাও একই ভাবে বেলা ১১ টার মধ্যে উপর্যুক্ত খাবার খাবেন।

দুপুরে কী খাবেন?

দুপুরের খাবারের শুরুটা হবে অ্যাপল সিডার ভিনেগারের এক চামচের সাথে এক গ্লাস পানি। মিশিয়ে খাবেন। এতে গ্যাস হওয়া থেকে নিরাপদ তো থাকবেনই, সেই সাথে শরীরের চর্বি কাটাতেও এর উপকারিতা আছে।

দুপুরের খাবারে বাটার, শাক, সবজি, মাংস অথবা মাছ, ঘিয়ে ভাজা ডিম এবং বাদাম, শশা এবং টমেটোর সালাদ খাবেন। শাক, মাছ এবং সবজি এক্সট্রা ভার্জিন ওলিভ ওয়েল দিয়ে রান্না করে খাবেন। সবজি কম সেদ্ধ করবেন, এতে সবজির গুণগত মান অব্যাহত থাকে।

১ দিনে সর্বোচ্চ ৬ টা ডিম কুসুমসহ খেতে পারবেন। এতে সমস্যা নেই তাই ভয় পাওয়ার কিছু নেই। প্রোটিন এবং ফ্যাটের ভালো উৎস ডিম। কিটোজেনিক ডায়েট আপনাকে ডিম খাওয়ার অনুমতি দিয়েছে। অতএব…

পাঠক, মাছ আর মাংস কিন্তু একই সাথে খাবেন না। ঠিক আছে? মাছ খেলে মাংস খাবেন না আবার মাংস খেলে মাছ খাবেন না। মুরগি (দেশি বা ফার্ম), উট, দুম্বা, ভেড়া, খাসি, গরু ইত্যাদি, অর্থাৎ যে মাংসই খান না কেন ১ টুকরো। বেশি নয়।

সকালে যারা ৮ টা থেকে সাড়ে ৮ টার মধ্যে সকালের খাবার খান, তরা চেষ্টা করবেন দুপুরের খাবার দেড়টার মধ্যে খেয়ে নিতে। আর ১১ টায় যারা খান, তারা আড়াইটা থেকে ৩ টার মধ্যে খাওয়ার চেষ্টা করবেন।

বিকালে কী খাবেন?

বিকালে খাওয়ার অভ্যেস থাকলে কিংবা ক্ষুধা লাগলে সকালের নাস্তার পুনরাবৃত্তি করবেন। চা, বাটার কফি, বাটার কিংবা ঘিয়ে ভাজা বাদাম ইত্যাদি খেতেই পারেন।

রাতে কী খাবেন?

রাত ৮ টার মধ্যে রাতের খাওয়া শেষ করবেন। দুপুরে যা খেলেন, এখানেও ঠিক তাই। খাবারের কয়েক পদ কম হোক, সমস্যা নেই।

যে ধরণের খাবার খেতে পারবেন না কিটো ডায়েটে! [Foods You Should Avoid on a Ketogenic Diet]

যত ধরণের ডায়েট কন্ট্রোল এর ব্যাপার আছে, প্রায় সবগুলোতেই সাধারণ কিছু বিধিনিষেধ আছে। তেমনই কিছু বিধিনিষেধ আছে কিটো ডায়েটেও-

(ক) মিষ্টিজাতীয় খাবার বাদ! সাথে চিনিও! সাদা চিনি, লাল চিনি বলতে কিছুই থাকবে না খাদ্য তালিকায়। মিষ্টিপ্রেমিদের জন্য দুঃসংবাদই বটে! তবে দুঃসংবাদের এখানেই শেষ নয়, আরও একটু আছে। কোকজাতীয় সব ধরণের ঠাণ্ডা পানীয়, সব ধরণের ফল ও ফলের জুস, কেইক আইসক্রিম, চকোলেইট, স্মুদি, যে-কোন ধরনের মিষ্টান্ন, ইত্যাদি নিষিদ্ধ। খেতেই পারবেন না।

(খ) আটার তৈরি খাবার অনেকের পছন্দের তালিকায় থাকে। একই সাথে ভাত,পাস্তা, নুডুলস, ওটস, কর্নফ্লেক্সও অনেকে বেশ পছন্দ করে খান। দুঃখের সাথে জানাচ্ছি কিটোজেনিক ডায়েটে এগুলোও বাদ!

(গ) বাঙালি মানেই মাছে-ভাতে-ডালে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাওয়া এক অনুভূতি। কী তাইতো? অনেকে বেশ আয়েশ করে ডাল দিয়ে আলুভর্তা, ডাল দিয়ে আম এবং ডাল দিয়ে ডিম অমলেট খেতে ভালোবাসেন। এ ভালোবাসা দোষের কিছু না তবে কিটো ডায়েটে এ ভালোবাসা নিষিদ্ধই বটে! ডালে প্রোটিনের পাশাপাশি প্রচুর কার্ব থাকার কারণে কিটো ডায়েটে সব ধরণের ডাল বাদ!

(ঘ) প্রিয় পাঠক, মাটির নিচের সবজি খেতে কেমন লাগে আপনার? আলু, গাজর, কচু, ওল, মুলা, ইত্যাদি খেতে কেমন লাগে? সর্ষের তেল আর নতুন ওঠা ধনে পাতা দিয়ে ঝাল করে আলু ভর্তার স্বাদ পেতেই বা কেমন লাগে পাঠক? অমৃত নয়? এখানেও দুঃসংবাদ জানাচ্ছি, কিটো ডায়েটে এই মাটির নিচে হওয়া সবজি খাওয়া একদমই বারণ!

(ঙ) সর্বশেষ দুঃসংবাদ তাদের জন্য যারা প্রক্রিয়াজাত খাবার খেতে ভালোবাসেন! জি! ওটাও বাদ! কোন প্রক্রিয়াজাত খাবার আপনি কিটো ডায়েটে খেতে পারবেন না।

যে খাবার গুলো খাওয়ার অনুমতি আছে! [Foods that are Allowed to Eat!]

খাদ্যপ্রেমীরা হয়তো ভাবছেন, সবই যদি বাদ পড়ার তালিকায় যায় তবে খাবেন টা কী? কিংবা হয়তো ভাবছেন, কিটো ডায়েটে কি তবে না খেয়েই ডায়েট কন্ট্রোল করতে হবে? উত্তর হলো- ‘না!’ অনেক কিছু বাদ পড়লেও অনেক মুখরোচক কিছুই আছে যা আপনি এই কিটো ডায়েটে খেতে পারবেন। চলুন একটু জেনে নেওয়া যাক-

(ক) মাংসপ্রেমীদের জন্য সুখবর! কিটো ডায়েটে আপনি মাংস অর্থাৎ গরু এবং মুরগি খেতে পারবেন।

(খ) অনেকে মাংস অত পছন্দ করেন না। এবারের সুখবরটা তাদের জন্য! সব ধরণের মাছ আপনি খেতে পারবেন। বড়ো কিংবা ছোটো কোন বাছ-বিচার নেই। সব মাছ খাওয়া আপনার জন্য প্রযোজ্য। কী খুশি তো ফিশ-লাভারেরা?

(গ) বলুন তো পাঠক, কোন খাবারকে ব্যাচেলর্স ফুড বলা হয়? ডিম, তাইতো? ব্যাচেলর্স লাইফ, হল লাইফ, মেস লাইফ, সাবলেট লাইফে থাকা প্রতিটা মানুষের নিত্য দিনের খুব পরিচিত খাবার কিন্তু ডিম। ঘরে আর কিছু থাকুক বা না থাকুক, ডিম তো থাকবেই। ডিম ভাজি কিংবা ভর্তা করে দিনাতিপাত করে দেয় এমন অনেকেই কিন্তু আছেন। রান্নার ঝামেলা এড়ানো কিংবা সহজে প্রস্তুত করা যায় বলে ডিমের জনপ্রিয়তাও কিন্তু অনেক। আবার অনেকে ডিম খেতেও বেশ পছন্দ করেন। তো ডিম নিয়ে এত আলাপনের মাঝে একটা সুখবর দিয়ে রাখি, কিটো ডায়েটে আপনি ডিম খেতে পারবেন। জি ঠিকই পড়েছেন। ডিম খাওয়ার অনুমতি আপনি কিটো ডায়েটে পাচ্ছেন।

(ঘ) ঘি এবং বাটার কার না পছন্দ? ঘিয়ে ভাজা লুচি কিংবা পরোটার স্বাদ অমৃত-তুল্য অনেকের কাছেই। আর বাটার? সে তো আরেক ধাপ এগিয়ে। পাউরুটি এবং বাটার যেন মানিকজোড়। বলছি, এই বাটার এবং ঘি-ও আপনি খেতে পারবেন কিটো ডায়েটে!

(ঙ) বাদাম পছন্দ? খেতে ভালোবাসেন? বাদামের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানলে এই জিনিস না খেয়ে থাকা অসম্ভবই হবে আপনার জন্য। কিটো ডায়েট এই অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবারটি আপনার জন্য বরাদ্দ রেখেছে।

(চ) স্বাস্থ্য সম্মত যত তেল আছে, যেমন- অলিভ অয়েল, কোকোনাট অয়েল, ক্যানলা অয়েল, এর সবই খেতে পারবেন।

(ছ) সবুজ যত সবজি আছে, যেমন- পালং, ব্রকলি, বাঁধাকপি ইত্যাদির সবই খেতে পারবেন। তবে রংটা সবুজ হতে হবে।

(জ) মশলা খেতে পারবেন, প্রায় সবই। এতে মানা নেই।

কেন কিটো ডায়েট ভালো? [Benefits of Ketogenic Diet]

প্রায় হুট করেই বাংলাদেশে যেন কিটো ডায়েট বিষয়টা জনপ্রিয় হয়ে উঠলো। এখন প্রশ্ন আসতেই পারে, জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এই কিটো ডায়েট আদতে কতটা ভালো আর কেনই-বা ভালো? উত্তর খুঁজতে কিছু বিষয়ের আলাপন জুড়ে দিচ্ছি-

  • যদি প্রচুর ফ্যাট কমানোর ইচ্ছা থাকে তবে কিটো ডায়েটকে ভরসা আপনি করতেই পারেন! কারণ এই ডায়েটে খুব অল্প সময়েই অনেক ফ্যাট কমানো যায়।
  • এই ডায়েটে ফ্যাট আর প্রোটিন গ্রহণের আধিক্যের কারণে পেট খালি থাকার সম্ভাবনাও থাকে না। অনেক বেশি প্রোটিন শরীরে থাকলে এমনিতেও ক্ষুধা পায় না। এজন্য ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে আনা খুব সহজ হয়ে যায়।
  • মেদ কমে যাবে ঠিকই কিন্তু শরীরে পেশীর পরিমাণ ঠিক থাকবে।
  • গবেষণা জানাচ্ছে, যে সকল মানুষ কিটো ডায়েটে অভ্যস্ত তারা টিপিক্যাল লো-ফ্যাট ক্যালোরির যত রেস্ট্রিক্টেড ডায়েট আছে, সে সমস্ত ডায়েটের চাইতে ২.২ গুণ বেশি ওজন কমাতে সক্ষম হয়েছেন।
  • হার্ট ডিজিজ, ব্লাড প্রেশার, ব্লাড সুগারের রিস্ক কমায় কিটো ডায়েট। একই সাথে পিসিওএস এবং ডায়াবিটিস রোগীদের জন্যও ডায়েটটি বেশ কার্যকর। শুধু ওজন কমানো না বরং ইনসুলিন আর ব্লাড সুগারও নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ সাহায্য করে কিটো ডায়েট।
  • তবে ভেজিটেরিয়ানদের জন্য কিটো ডায়েটটা আসলেই মুশকিলের ব্যাপারই বটে! কারণটা ইতোমধ্যে হয়তো বুঝেও গেছেন। কিটো ডায়েটে প্রোটিন যতটা গ্রহণ করতে হয় শাক-সবজি থেকে সেই পরিমাণটা সংগ্রহ করা আসলেই খুব কঠিন। আবার শাক-সবজিতে শর্করাও থাকে। কিটো ডায়েটে শর্করা আবার নিষেধ! সুতরাং একই সাথে শর্করা আর প্রোটিন, বুঝতেই পারছেন বিষয়টা আসলেই সাংঘর্ষিক।

আছে বিপরীত কিছু ঘটনাও! [Common Side Effects on a Keto Diet]

হঠাৎ জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এই কিটো ডায়েট আদতে কতটা সুফল বয়ে আনে কিংবা কুফল, সে আলাপে যাবো না তবে একটা ডাক্তারের ঘটনা উল্লেখ করতে চাই। মন দিয়ে পড়ুন ,সিদ্ধান্ত আপনাদের!

মেয়েটির বয়স ৩০, উচ্চতা ৫ ফুট ৩। উচ্চশিক্ষিতা এবং একজন মা। দুটি ফুটফুটে সন্তানের জননী সে। জনৈক ডাক্তারের চেম্বারে গিয়েছিলেন তীব্র শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে অথচ তার পরিবারে শ্বাসকষ্টের কোন রোগী নেই! রিপোর্ট জানালো কিটো ডায়েটে আকৃষ্ট হয়ে ৫ মাস ধরে কিটো ডায়েট এ আছেন মেয়েটি। এই ৫ মাসে ৮ কেজি ওজন কমিয়ে ৭২ কেজি থেকে ৬৪ কেজিতে নামিয়ে এনেছেন। সবই ঠিক ছিল কিন্তু সমস্যা বেঁধেছে অন্য জায়গায়। ওজন কমলেও শরীরের নানান জায়গায় নানান রকম সমস্যার দেখা মিলছে। বুকের ভেতর অস্থির লাগা, শরীর দূর্বল লাগা, মাথা ঘোরা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য। সব মিলিয়ে দিশেহারা মেয়েটি।

প্রশ্ন রাখছি, কী বুঝলেন? সবার কি সব সয়?

ডায়েট সম্পর্কে অনেকের ধারণা শূন্যেরও নিচে, এ আপনি জানেন?

ইউটিউব, গুগল ঘেটে অল্প সময়ে ওজন কমাতে অনেকেই ঝুঁকে যান কিটো ডায়েটের দিকে। নাম পালটে অনেকে লো কার্ব ডায়েট বলেও ফলাও করে প্রচার করছেন কিন্তু কাজ তো ঐ একই। কিন্তু সত্যি বলতে কী, আমরা অনেকেই ভুলে যাই যে আমরা আদতে মানুষ। হ্যাঁ, এটাও ঠিক মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। কিন্তু এটাও মাথায় রাখতে হবে যে জীবন একটাই! গেইমের মতো একাধিক লাইফ আমরা পাবো না ,তাই সব কিছু নিয়ে নিজের উপর এক্সপেরিমেন্টটা না চালালেই কী নয়?

না, আমি এও বলছি না যে কিটো ডায়েট ভালো নয়, বরং অনেকের কাজে এসেছে। কিন্তু যদি সর্বসাকুল্যে চিন্তা করতে যান, তাহলে কিন্তু এই কিটো ডায়েট আদতে সাধারণ কোনো মানুষের জন্য উপযুক্ত নয়। বিভিন্ন ডাক্তাররা অন্তত এমনটাই বক্তব্য দিয়েছেন। এখন কেন এই কিটো ডায়েট সর্বসাকুল্যে প্রযোজ্য নয়, সে বিষয়ে একটু আলাপের প্রয়োজন আছে বইকি! তো চলুন বিভিন্ন ডাক্তার এবং বিশেষজ্ঞদের মতামত জেনে নেওয়া যাক-

আচ্ছা পাঠক, উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে এমন কাউকে দেখেছেন কখনও? এই মানুষগুলোর জন্য লবণ খাওয়া কিন্তু একদম নিষিদ্ধ! আবার ধরুন যিনি থাইরয়েড ডিজঅর্ডারে ভুগছেন, স্বাভাবিকভাবেই তার গ্লোটেনযুক্ত খাবার নিষিদ্ধ। একইভাবে গবেষণা করেই কিটো ডায়েটকে মূলত সাজানো হয়েছিল মৃগী রোগীদের থেরাপডিউডিক ডায়েট হিসেবে। প্রয়োজনীয় অনেক পুষ্টি উপাদানকে বাদ দিয়ে কেবল হাই ফ্যাট, হাই প্রোটিন এবং নামেমাত্র কিছু কার্বোহাইড্রেড দিয়ে সাজানো হয় এই কিটো ডায়েট। এই ডায়েট তৈরির নেপথ্যে ছিল মৃগী রোগীদের সুস্থতা। কিন্তু ঔষধ আবিষ্কারের আগে এই কিটো ডায়েটের সাইড ইফেক্ট প্রকট হয়ে ধরা দেয়। অতিরিক্ত ওজন হ্রাস, স্বাস্থ্য জটিলতা সহ ডায়েটটি গ্রহণযোগ্যতা হারাতে শুরু করে। আমাদের মস্তিষ্কের প্রধান খাদ্যই হচ্ছে শর্করা বা গ্লুকোজ যেটা আমাদের সারাদিনের অ্যানার্জি বহন করে। এখন আপনি চিন্তা করুন, এত প্রয়োজনীয় এই শর্করা বাদ দিয়ে অতিরিক্ত চর্বি যখন আপনি গ্রহণ করছেন শর্করার পরিবর্তে, তা আদতে কতটা কাজে দেবে? সাময়িকভাবে এটা হয়তো শরীরে থাকা অতিরিক্ত চর্বিকে পুড়িয়ে, ভেঙে ওজন কমিয়ে দেয় এবং শরীরে স্বাভাবিক মেটাবলিজমের বিরুদ্ধে হয়ত কাজও করে, তবে সেটা সাময়িক। কিন্তু দীর্ঘসময় ধরে এই অবস্থা চলতে থাকলে কিছু সমস্যা হয়। অতিরিক্ত ফ্যাট বার্ন হওয়ার দরুন কিটন বডি অতিরিক্ত তৈরি হয় যা প্রাথমিকভাবে রক্তে কিটোসিস এবং পরবর্তী সময়ে কিটোএসিডোসিসে রুপান্তরিত হয়। আর এগুলো রক্তের সাধারণ পিএইচ লেভেলকে একদম ক্ষতিগ্রস্থ করে ফেলে।

পড়ুন: ৩০ দিনে ওজন কমানোর কার্যকরী উপায়

কিটো ডায়েটের শুরুর দিকে প্রথম ২/৩ সপ্তাহ কোনরকমে ঝুঁকির বাইরে ফেললেও দীর্ঘমেয়াদী কিটো ডায়েট শরীরের জন্য মোটেও সুখকর কিছু না। মাথা ঘোরানো, মাথাব্যথা, বুক ধরফর করা, বমি বমি ভাব, শরীর ব্যথা, কাজে অমনযোগিতা, ভুলে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা হ্রাস, সারাদিন পিপাসা পাওয়া, খিটখিটে মেজাজ ইত্যাদি দেখা দেয়। আরও ভয়ংকর তথ্য দেই পাঠক? হুট করে না জেনে-বুঝে এই কিটো ডায়েট অনুসরণ করে অতিরিক্ত চর্বি গ্রহণ করার ফলে রক্তে কোলেস্টেরল, এলডিএল, টিজি বেড়ে গিয়ে স্ট্রোক এবং হৃদরোগ এর ঝুঁকি বেড়ে যায়।

এখানেই শেষ নয়! অতিরিক্ত চর্বি গ্রহণের কারণে উপর্যুক্ত সমস্যা তো আছেই, বাড়তি হিসেবে যোগ দেয় ডায়রিয়া। আবার ডায়েটে ফাইবার কম থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্যকে বোনাস হিসেবেও পেতে পারেন! ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত যারা, তাদের জন্য এই কিটো ডায়েট মোটেও আদর্শ নয়। লিভার দুর্বল তো করবেই, পিত্তথলিতে পাথর, প্যানাক্রিয়াস সহ হজম শক্তি পর্যন্ত কমিয়ে দেবে। এতো গেলো শরীরের ভেতরকার সমস্যা। বাইরের কথায় একটু আসি- ত্বকের উজ্জ্বলতা হারানোর পাশাপাশি চুল পড়ে যাওয়ার আধিক্য দেখা দেবে! হরমোনাল ইম্ব্যালেন্স যাদের আছে, গর্ভবতি, দুগ্ধদানকারি মা, আর্থ্রাইটিসে ভোগা মানুষদের জন্যও এই কিটো ডায়েট আদর্শ নয়। মেয়েদের জন্য বলছি- ডায়েট শুরুর পূর্বে জেনে-বুঝে আগাবেন। সামান্য এদিক ওদিকে ঋতুস্রাবের সমস্যার পাশাপাশি বাচ্চা ধারণেও কিন্তু সমস্যা হতে পারে।

কিডনি রোগীদের কথা একটু না বললেই নয়। এই রোগীদের একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রোটিন খাওয়ার অনুমতি থাকে। কিটো ডায়েটে মাত্রার অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণের ফলে কিডনিতে চাপ পড়ে। দীর্ঘসময় এই চাপ নেওয়ার ক্ষমতা কিডনির থাকে না ফলে কিডনিতে পাথর হয়ে বিকল হয়ে যাওয়ার ঘটনা কিন্তু বিরল নয়।

পাঠক, একটু হলেও এবার হয়ত ধারণা পেয়েছেন যে কিটো ডায়েট আদতে সর্বসাকুল্যের জন্য নয়। এবং দীর্ঘমেয়াদের জন্যও আদর্শ নয়। আবার হুট করে ছেড়ে দিলে আগের চেয়ে বেশি হারে ওজন বেড়ে যাবে। মূলত এখনও পর্যন্ত কোন গবেষণায় কিটো ডায়েটের দীর্ঘমেয়াদী কিংবা সর্বসাকুল্যে গ্রহণযোগ্যতার বিষয় আবিষ্কৃত হয়নি। তাই একে পুর্ন নিরাপদ ভাবার আগে একটু ভাবতে হবে। ডাক্তার কিংবা পুষ্টিবিদ এর পরামর্শ ছাড়া ফেইসবুক, ইউটিউব এবং গুগলের উপর ভরসা করে নিজের শরীর নিয়ে এক্সপেরিমেন্টে না যাওয়ার অনুরোধ জানাবো। শরীরের চাহিদা অনুযায়ী ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস তৈরি করুন। ভালো চিন্তা করুন এবং প্রফুল্ল থাকুন। বাজে চিন্তা এবং বাজে অভ্যাস থাকলে তা বাদ দিয়ে দিন। সুস্থতা হাতে এসে ধরা দেবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মানবজীবনের ৭টি বদভ্যাস এর তালিকা করেছে যেগুলো মানব মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর –

  • সকালে কিছু না খাওয়া।
  • রাতে খুব দেরিতে ঘুমানো।
  • বেশি চিনি ও মিষ্টান্ন গ্রহণ।
  • দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা।
  • খাওয়ার সাথে টিভি দেখা, মোবাইল চালানো অথবা কম্পিউটার চালানো।
  • ঘুমানোর সময় মাথায় কিছু দিয়ে ঢেকে রাখা- টুপি বা স্কার্ফ জাতীয়।
  • প্রস্রাবের বেগ থাকা সত্ত্বেও আঁটকে রাখা।

সুস্থ জীবন যাপনের জন্য শরীরে কম বেশি সব ধরণের খাবারই কিন্তু দরকার হয়। শরীর যেহেতু আপনার, একে ভালো রাখার দায়িত্বটাও আপনার। আর তাই সিদ্ধান্তটাও আপনার।

Filed Under: Diet Tips, Weight Loss (ওয়েট লস)

Primary Sidebar

সাম্প্রতিক লেখা

১৬টি সেরা খাবার সকালবেলার দৌড়ের পর খাওয়ার জন্য – পোস্ট-রান রিকভারি পুষ্টি

ওজন কমাতে সেরা ২০টি ডিটক্স স্মুদি: উপাদান, প্রস্তুতি ও উপকারিতা

সহজে হজম হয় এমন ১৬টি হালকা খাবারের রেসিপি

১৫টি লো-শুগার ফল ও সবজি যা আপনার লো-কার্ব ডায়েটের জন্য উপযুক্ত

ত্বকে গ্লো চাই? ২০টি ফল যা আপনার স্কিনকে করে তুলবে উজ্জ্বল ও দীপ্তিময়

বিভাগ সমূহ

  • Fashion
  • HAIR CARE (চুলের যত্ন)
    • Basic Hair Care (বেসিক হেয়ার কেয়ার)
    • Dandruff (খুশকি)
    • Dry Hair Care (শুকনো হেয়ার কেয়ার)
    • Hair Care Ideas
    • Hair Fall ( চুল পড়া)
    • Hair Growth ( চুল বৃদ্ধি)
    • Hair Treatment (চুল চিকিৎসা)
    • Oily Hair Care ( তৈলাক্ত চুলের যত্ন)
  • HEALTH & WELLNESS (স্বাস্থ্য ও সুস্থতা)
    • Diet Tips
    • Fitness
    • Healthy Food
    • Home Remedies
    • Ingredients and Uses
    • Nutrition (পুষ্টি)
    • Weight Gain
    • Weight Loss (ওয়েট লস)
  • Lifestyle (জীবনযাপন )
  • MAKEUP (মেকআপ)
    • Bridal Makeup (ব্রাইডাল মেকআপ)
    • Eye Makeup (চোখের সাজসজ্জা)
    • Lip Make up (লিপ আপ করুন)
  • SKIN CARE (ত্বকের যত্ন)
    • Acne
    • Anti Ageing
    • Beauty Secrets
    • Dry Skin
    • Face Care Tips
    • Face Packs and Masks
    • Glowing skin
    • Homemade Tips
    • Oily Skin
    • Skin Care Ideas
    • Skin Care Problems
    • Sunscreen
  • Top 10's

Copyright © 2025 · RUP KOTHON · All rights reserved ®