ব্রণের সঙ্গে কি সংগ্রাম করে যাচ্ছেন? যদি উত্তর হ্যাঁ হয়, তাহলে ফেসিয়াল স্টিম আপনাকে এর সাথে মোকাবেলা করতে সাহায্য করবে। আপনার ত্বকের লোমকূপ পরিষ্কার এবং ব্রণ প্রতিরোধ করার জন্য এটি একটি দুর্দান্ত উপায়। আমি জানি আপনাদের মধ্যে অনেকেই এই প্রক্রিয়াটি করে দেখবেন কিনা তা নিয়ে দ্বিধাবোধ করবেন, কিন্তু আপনি যদি এটি সঠিক উপায়ে করেন, তাহলে ফেসিয়াল স্টিমিং আপনাকে খুব ভালো ফলাফল প্রদান করবে। এবং আজকে আমি সঠিক উপায়ে করার পদ্ধতিটি আলোচনা করবো।
কিভাবে ফেসিয়াল স্টিমিং ব্রণ কমাতে সাহায্য করে

কোন স্কিন কেয়ার রুটিন অনুসরণ করার আগে আপনাকে অবশ্যই বুঝতে হবে কেন এবং কিভাবে এটি আপনাকে সাহায্য করবে। ব্রণ তখনি হয় যখন আপনার ত্বকের লোমকুপ গুলো তেল, চর্বি অথবা মৃত চামড়ার কোষ এবং ব্যাকটেরিয়া দ্বারা বন্ধ হয়ে যায়। PubMed Health এর প্রকাশিত একটি আর্টিকেলে বলা হয় ত্বক গরম পানি অথবা ফেসিয়াল ষ্টীম দিয়ে ট্রিট্মেন্ট করালে এটি লোমকূপ পরিষ্কার এবং ধুলাবালি মুক্ত করতে সাহায্য করে। এটি ব্রণের প্রাদুর্ভাব কমাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আপনি আপনার ত্বকে যে অয়েন্টমেন্ট অথবা ক্রিম ব্যবহার করেন, ফেসিয়াল স্টিমিং এদের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে। স্টিম নেওয়ার পর আপনার ত্বক আরো নরম হয়, এবং এরপর আপনি আপনার ত্বকে যাই ব্যবহার করেন তা আরো ভালো কাজ করে।
এখন আপনি জানেন যে কেনো ব্রণ দূর করতে অয়েন্টমেন্ট এবং ক্রিমগুলো কাজ করতো না! এরা যদি ত্বকের গভীর স্তরে প্রবেশ করতে না পারে, তারা কোন মতেই কাজ করবেনা – এবং ফেসিয়াল স্টিমিং এটি করতে সাহায্য করে। এছাড়া যখন আপনার লোমকুপগুলো পরিষ্কার থাকবে তখন আবার সেই কুৎসিত ব্রণগুলো ফিরে আসা নিয়ে আপনাকে কোনো চিন্তাই করতে হবে না। ব্রণের জন্য ফেসিয়াল স্টিমিং এর ব্যবহার সম্পর্কে আরো কিছু উপকারিতা জেনে নেওয়া যাক।
ব্রণের জন্য ফেসিয়াল স্টিম ব্যবহারের উপকারিতা
১. এটি ভালোভাবে আপনার ত্বক পরিষ্কার করে
মখে স্টিমের ব্যবহার আপনার ত্বকের লোমকুপ গুলো খুলতে সাহায্য করে, ধুলাবালি পরিষ্কার করে এবং ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাক্টেরিয়া দূর করে। ব্ল্যাকহেডস এবং হোয়াইটহেডস (বন্ধ হয়ে যাওয়া লোমকূপের কারণে সৃষ্ট) নরম করে তুলে এদের থেকে সহজে মুক্তি পেতে সহায়তা করে।
২. রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করে
ফেসিয়াল স্টিম মুখের ঘাম ঝরায়। যার ফলে, এটি আপনার রক্তনালী প্রসারিত করে এবং মুখের রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করে। রক্ত আপনার মুখে অক্সিজেন এবং অন্যান্য পুষ্টিগুণ সরবরাহ করে আপনার ত্বককে স্বাস্থ্যসম্মত এবং উজ্জ্বল করে তুলে।
৩. এটি ত্বককে হাইড্রেট করে
ফেসিয়াল স্টিমিং আপনার ত্বককে হাইড্রেট করতে সাহায্য করে। যখন আপনার লোমকূপগুলো খোলা থাকে, তখন এরা প্রাকৃতিক তেল নিঃসরণ করে যা আপনার ত্বক ময়েশ্চারাইজড রাখে এবং ত্বক শুষ্ক হওয়া থেকে রক্ষা করে।
৪. এটি কোলাজেনের প্রবাহ বাড়ায়
স্টিম নেওয়ার পর আপনার মুখে রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি পায়, যার ফলে আপনার ত্বকে পুষ্টি এবং অক্সিজেন পৌছায়। এটি কোলাজেনের উৎপাদন বৃদ্ধি করে, ত্বকের নমনীয়তা উন্নত করে, এবং বয়সের ছাপ এবং বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে।
৫. এটি আপনাকে রিল্যাক্স হতে সাহায্য করে
ব্যতিক্রমীভাবে ফেসিয়াল স্টিমিং আপনার ত্বককে শীতল এবং সতেজ করে তুলে। এবং যখন আপনি পানিতে এসেনশিয়াল তেল যোগ করেন, এটা একটি পরিপূর্ণ এ্যারোমা থেরাপি সেশনের মত কাজ করে যা আপনার ত্বককে শুধু উজ্জলই করে না, আপনার ইন্দ্রিয়গুলোকে শীতল করে।
সবচেয়ে সেরা বিষয়টি হলো আপনি এসকল উপকারিতাগুলো ঘরে বসেই উপভোগ করতে পারবেন! ঘরেই আপনার মুখ স্টিম করার প্রক্রিয়াটি নিম্নে ধাপে ধাপে দেওয়া হলোঃ
কিভাবে ঘরে বসেই ব্রণের জন্য ফেসিয়াল স্টিমিং করতে হবে
ঘরেই ফেসিয়াল স্টিমিং করার জন্য কয়েকটি প্রক্রিয়া আছে, এবং এদের নিয়ে নিছে আলোচনা করা হলোঃ
একটি পাত্রের ব্যবহার

ধাপ ১. টেবিলে একটি বড় পাত্র নিন। একটি চেয়ার নিন এবং এর উচ্চতা টেবিলে রাখা পাত্রের সাথে সমন্বয় করে নিন।
অথবা
আপনি এটি আপনার সিঙ্কেও করতে পারেন। পানি বের হওয়ার স্থানটি বন্ধ করে নিন এবং এর কাছে একটি চেয়ার নিন। আপনার সুবিধা মত উচ্চতা সমন্বয় করে নিন।
ধাপ ২. একটি রাবার ব্যান্ড বা তোয়ালে দিয়ে আপনার চুল বেধে নিন। একটি ক্লিনজার দিয়ে আপনার মুখ এবং ঘাড় পরিষ্কার করে নিন।
ধাপ ৩. পানি গরম করুন। পানির পরিমান পাত্র অথবা সিঙ্ক এর আকারের উপর নির্ভর করে।
ধাপ ৪. আপনি গরম পানির সাথে কিছু হারবাল পাতা যোগ করতে পারেন, যেমন পেপারমিন্ট, ইউক্যালিপ্টাস, রোজমেরি, ল্যাভেন্ডার এবং ক্যামোমিল। অথবা আপনার পছন্দের যেকোন এসেনশিয়াল তেল যোগ করতে পারেন। যদি আপনি হারবাল পাতা ব্যবহার করেন, আপনার প্যান চুলা থেকে নামানোর আগেই তা মিশাবেন, এবং যদি আপনি এসেনশিয়াল তেল ব্যবহার করেন তাহলে পাত্রে/সিঙ্কে পানি ঢালার পর এটি যোগ করবেন।
ধাপ ৫. পাত্র/সিঙ্কে পানি ঢেলে ফেলার পর এবং এসেনশিয়াল তেল যোগ করার পর (আপনি যদি এটি ব্যবহার করেন), তোয়ালে আপনার মাথার উপর দিন এবং মুখ তোয়ালের ভিতরে রেখে তোয়ালের বাকি অংশ দিয়ে পাত্র/সিঙ্ক ঢেকে দিন। আপনার মুখ পাত্র/ সিঙ্ক থেকে ৬ ইঞ্চি উপরে রাখুন।
ধাপ ৬. আপনি কতটা উত্তাপ সহ্য করতে পারেন তার উপর ভিত্তি করে দূরত্ব নির্ধারণ করুন। মুখ ঠান্ডা করার জন্য আপনার যতবার ইচ্ছা ততবার তোয়ালের এক কোণা উঠাতে পারেন।
ধাপ ৭. এটি ১০ মিনিটের বেশি করবেন না।
তোয়ালের ব্যবহার

উপরে বর্ণিত ১ থেকে ৪ ধাপ পর্যন্ত অনুসরন করুন। এরপর, নিম্নলিখিত কাজগুলো অনুসরন করুন।
ধাপ ১. একটি নরম এবং পরিষ্কার তোয়ালে গরম পানিতে ভিজিয়ে নিন এবং ভালোভাবে নিঙরে নিন।
ধাপ ২. আপনি যদি একটি চেয়ারে বসে থাকেন তাহলে পেছনের দিকে হেলান দিয়ে বসুন এবং আপনার মুখে গরম তোয়ালেটি রাখুন। তোয়ালেটি যাতে আপনার মুখটি ভালোভাবে ঢেকে রাখে। আপনি শুয়ে থেকেও একই পদ্ধতিটি ব্যবহার করতে পারেন।
ধাপ ৩. সেশনটি ১০ মিনিটের বেশি কখনো করবেন না। প্রতিবার ২ মিনিট পর পর তোয়ালে মুখ থেকে সরিয়ে নিবেন।
ফেসিয়াল স্টিমারের ব্যবহার

ধাপ ১. একটি ফেসিয়াল স্টিমার কিনে নিন। এগুলো অনলাইন শপিং এ কিনতে পাবেন।
ধাপ ২. কতটুকু পানি ব্যবহার করতে হবে তা জানতে নির্দেশাবলী ভালোভাবে পড়ুন। তদানুসারে স্টিমারে পানি ভরে নিন এবং টেবিলে বসান।আপ্নি যে চেয়ারে বসে স্টিম নিবেন ওই চেয়ারের দূরত্ব স্টিমারের সাথে ঠিক করে নিন।
ধাপ ৩. চুল নিরাপদে রাখতে একটি তোয়ালে বা ব্যান্ড দিয়ে ছুল বেঁধে নিন। একটি ভালো ক্লিনজার দিয়ে আপনার মুখ পরিষ্কার করে নিন।
ধাপ ৪. স্টিমারের উপরে কৌণিক স্থানটিতে আপনার মুখ বসান। নির্দেশাবলী অনুযায়ী স্টিমার থেকে আপনার মুখের দূরত্ব ঠিক করে নিন।
ধাপ ৫. একনাগাড়ে ২-৩ মিনিট স্টিম নিন। আপনার ত্বকে মানিয়ে নিচ্ছে কিনা তা দেখতে এর মধ্যে একবার বিরতি নিন। আপনাকে এটা করতে হবে কারন, অন্যান্য প্রক্রিয়ার তুলনায় , ফেসিয়াল স্টিমার শক্তিশালী স্টিম প্রদান করে।
স্টিমিং প্রক্রিয়া নিয়ে নেওয়ার পর আপনার মুখ শুকিয়ে নিন অথবা প্রাকৃতিকভাবে শুকাতে দিন। এরপর ত্বকের সিরাম বা অথবা ক্রিম আপনার মুখে লাগিয়ে নিন।
এখন পরবর্তী প্রশ্নটি হলো, আপনি ঘরে কতবার ফেসিয়াল স্টিমিং করতে পারবেন? এখানে আপনার উত্তরটি দেওয়া হলোঃ
কতবার আপনি ফেসিয়াল স্টিমিং করতে পারবেন এবং কতখনের জন্য?
আমরা জানি যে কোন কিছুর বেশি বযবহার করা মোটেও ভালো না। মাত্রাতিরিক্ত স্টিমিং আপনার ব্রণের জন্য ক্ষতিকারক। তাই, সপ্তাহে একবার স্টিম করা আপনার মুখের জন্য উত্তম। যদি আপনার লোমকূপগুলো মাত্রাতিরিক্ত দূষিত হয়ে থাকে তাহলে আপনি সপ্তাহে ২ বার ফেসিয়াল স্টিমিং করতে পারেন – কিন্তু এর থেকে বেশি না। এভাবে আপনি দুই সপ্তাহের জন্য করতে পারেন এবং এরপর বার সপ্তাহে একদিন করে করতে পারেন।
সাধারনত, একনাগাড়ে ১০ মিনিটের বেশি স্টিমিং করা উচিত নয়। কিন্তু, আপনি আপনার ত্বকের ধরণ অনুযায়ী সময় বাড়াতে বা কমাতে পারেন।
১. সাধারণ বা মিশ্র ত্বকের জন্যঃ সপ্তাহে একবার ১২ মিনিটের জন্য
২. শুষ্ক ত্বকের জন্যঃ সপ্তাহে দুইবার ১০ মিনিটের জন্য
৩. তৈলাক্ত ত্বকের জন্যঃ সপ্তাহে দুইবার ১২ মিনিটের জন্য
৪. সংবেদনশীল ত্বকের জন্যঃ আপনার ত্বক-বিশেষজ্ঞের সাথে কনসাল্ট করে জেনে নিন যে আপনার ত্বক স্টিমিং সহনশীল নাকি না।
আপনি যদি স্পা এর মত অনুভূতি পেতে চান, আপনি এ্যাসেনশিয়াল তেল ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু কোন এসেনশিয়াল তেলটি আপনি বেছে নিবেন?
ফেসিয়াল স্টিমিং এর জন্য এসেনশিয়াল তেল

যেই এসেনশিয়াল অয়েলটি কাজ করবে তা আপনার ত্বকের ধরণের উপর নির্ভর করে। (সাধারণত, সব এসেনশিয়াল তেল ভালো – যদি আপনি এলারজিক না হন)
ব্রণের জন্য টি ট্রি তেল এবং রোজমেরি তেল ব্যবহার করুন।
আপনার ত্বক যদি শুষ্ক হয় এবং ব্রণ থাকে, টি ট্রি তেলের সাথে জেসমিন এবং রোজ এসেনশিয়াল তেল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। (যেকোন দুইটি অথবা তিনটি একসাথে)।
যদি আপনার ত্বক সংবেদনশীল হয় এবং ব্রণ থাকে, টি ট্রি তেল, ল্যাভেন্ডার এবং জেরেনিয়াম তেল ব্যবহার করতে পারেন।
এসেনশিয়াল তেল ২-৩ ফোঁটার বেশি ব্যবহার করবেন না (যদি আপনি পাত্র বা ফেসিয়াল স্টিমার ব্যবহার করেন)। পানির পরিমান যদি আরো বেশি হয় (সিঙ্ক বা বেসিনে হলে), প্রতিটি এসেনশিয়াল অয়েল ৪-৫ ফোঁটা ব্যবহার করতে পারেন, কিন্তু এর থকে বেশি না।
প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ, কিন্তু আপনি যে ফলাফলটি পাবেন তা আর কোনটির মত হবে না, বিশেষ করে ত্বক পরিষ্কার এবং সুন্দর হবে। আপনার ত্বকের যত্ন নিতে আপনাকে সময় বের করে নিতে হবে। নিয়মিত ফেশিয়াল স্টিমিং আপনার ত্বকে প্রাকৃতিক তেল বৃদ্ধি করে এবং লোমকূপগুলো বন্ধ হতে দেয় না।
তাহলে আর দেরি কেন? ব্যবহার করে দেখুন, এবং আমি নিশ্চিত আপনি এটি পছন্দ করবেন।