
যখন আপনি কারো লম্বা ও সুন্দর চুল দেখেন তখন নিজেকে ঈর্ষান্বিত না হওয়া থেকে বিরত রাখাটা খুব কষ্টসাধ্য হয়ে পরে।
আর যখন আপনি জানতে পারেন তারা জন্মই হয়েছে এরকম সুন্দর চুল নিয়ে আর আপনি আঁটকে আছেন আপনার সেই শুষ্ক, রুক্ষ, কোঁকড়ানো এবং নিয়ন্ত্রণ অসাধ্য চুল নিয়ে যেই চুলে কোন উজ্জ্বলতাই নেই তখন কষ্টটা আরো বেশিই হয়।
কিন্তু, অনেক নারী জানেই না যে এই সমস্যাগুলোর সমাধানও আছে। সঠিকভাবে চুলের যত্ন নেওয়ার মাধ্যমে আপনি আপনার চুলকে সুন্দর করে তুলতে পারেন। নিচে আমি ৭ টি সহজ উপায়ের তালিকা দিয়েছি যা আপনার চুলকে স্বাস্থ্যকর, লম্বা, রেশমি এবং কোমল করে তুলবে।
কিভাবে আপনার চুলকে রেশমি, লম্বা এবং কোমল করে তুলবেন | Chul Lomba Korar Upay
১. অ্যালোভেরা
উপকরণ
- অ্যালোভেরা পাতা
- ২ টেবিল চামচ পানি
- স্প্রে বোতল
প্রক্রিয়া
- অ্যালভেরা পাতা থেকে ২ টেবিল চামচ পরিমাণ জেল নিন। অবশ্যই পরিষ্কার জেলটি ব্যবহার করবেন, হলুদটি না।
- মশ্রিণ ঘনত্ব পাওয়ার জন্য ভালোভাবে ব্লেন্ড করুন।
- জেলে ২ টেবিল চামচ পানি যোগ করুন এবং ভালোভাবে মিশান।
- একটি স্প্রে বোতলে লিকুইডটি ঢালুন এবং ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে নিন।
- চুল ধুয়ে শুকানোর পর অ্যালোভেরা সল্যুশনটি আপনার চুলে স্প্রে করুন।
- আবার চুল ধোয়া লাগবে না। অর্থাৎ, চুলের স্প্রের মত করেই ব্যবহার করুন।
কতবার?
সপ্তাহে ৩-৪ বার।
কেন কাজ করে?
অ্যালোভেরাতে প্রচুর প্রোটিওলাইটিক এনজাইম রয়েছে যা আপনার স্ক্যাল্পের ক্ষতিগ্রস্থ কোষ পুনরায় ঠিক করে। এটি গ্রন্থিকোষের স্বাস্থ্য উন্নয়নে সাহায্য করে এবং আপনার চুলের বৃদ্ধি বাড়ায়। এই উপকরণের আদ্রতা বৈশিষ্ট্য আপনার চুলকে হাইড্রেট করতে সাহায্য করে এবং সারাদিন চুলকে কন্ডিশনড রাখতে সাহায্য করে। এটি আপনার চুলকে একটি মসৃণ গঠন প্রদান করবে এবং কোঁকড়াভাব কমাবে।
২. নারিকেল তেল/অলিভ অয়েল দিয়ে গরম তেল ম্যাসাজ
উপকরণ
- ২-৩ টেবিল চামচ নারিকেল তেল/অলিভ অয়েল
- গরম তোয়ালে
প্রক্রিয়া
- ২-৩ টেবিল চামচ (আপনার চুলের লম্বার উপর পরিমাণ নির্ভর) আপনার পছন্দের তেল নিন এবং হালকা গরম না হওয়া পর্যন্ত কয়েক সেকেন্ড তেলটি গরম করুন।
- আপনার স্ক্যাল্পে তেলটি ম্যাসাজ করুন এবং চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত তেলটি লাগান।
- ১৫ মিনিট স্ক্যাল্প ম্যাসাজ করুন এবং এবং আরো ৩০ মিনিট তেলটি মাথায় রাখুন।
- তেল মাথায় রেখে অপেক্ষা করার সময় আপনার চুল একটি গরম তোয়ালে দিয়ে ঢেকে রাখুন।
- একটি সালফেট মুক্ত হালকা শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন এবং কন্ডিশনার লাগিয়ে চুল ধুয়ে প্রক্রিয়া শেষ করুন।
কতবার?
প্রতি সপ্তাহে ২ বার।
কেন কাজ করে
গরম তেলের ম্যাসাজ আপনার চুলের কোষগুলোকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে, চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এটি আপনার চুলের জন্য একটি কার্যকর কন্ডিশনিং ট্রিটমেন্ট যা খুশকি এবং চুলকানির বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করে। এটির আপনার চুলের গভীরে প্রবেশ করার ক্ষমতা আছে, যা আপনার চুলে সবচেয়ে বেশি পুষ্টি জোগায়। অলিভ অয়েল এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফ্যাটি এসিড এবং ভিটামিন ই তে পরিপূর্ণ যা আপনার চুলকে কন্ডিশনিং করতে সাহায্য করে, সেই সাথে চুলের ক্ষয় প্রতিরোধ এবং সংশোধন করতে সাহায্য করে।
৩. দই
উপকরণ
- ১ কাপ দই
- ২ টেবিল চামচ আমলকি গুড়ো
প্রক্রিয়া
- দুইটি উপকরণ একসাথে মিশিয়ে একটি মশ্রিণ পেস্ট তৈরি করুন।
- উপকরণগুলো আপনার স্ক্যাল্প এবং চুলে লাগান।
- আপনার চুল উপকরণগুলো দিয়ে পুরোপুরি ঢেকে যাওয়ার পর ৩০ মিনিট মাস্কটি মাথায় রাখুন।
- একটি সালফেট মুক্ত হালকা শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন।
- কন্ডিশনার লাগান।
কতবার?
প্রতি সপ্তাহে ১-২ বার।
কেন কাজ করে
দই ভিটামিন বি৫ এবং ডি বহন করে যা চুলের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি আপনার চুলগুলোকে মজবুত করতে সাহায্য করে, সেই সাথে খুশকির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। মাস্কে থাকা আমলকি আপনার চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে স্ক্যাল্পে প্রচুর ভিটামিন সি প্রদান করে।
৪. ডিম
উপকরণ
- ১ টি পুরো ডিম
- ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল
- ১ টেবিল চামচ মধু
- শাওয়ার ক্যাপ
প্রক্রিয়া
- ডিমটি ফাটিয়ে নিয়ে সব উপকরণ একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
- মাস্কটি আপনার স্ক্যাল্প এবং চুলে লাগান।
- আপনার স্ক্যাল্প এবং চুল পুরোপুরি ঢেকে গেলে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন।
- চুল থেকে পেস্টের গড়িয়ে পরা এড়ানোর জন্য আপনি একটি শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে চুল ঢেকে দিন।
- ঠান্ডা পানি এবং সালফেট মুক্ত হালকা শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
- কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
কতবার?
প্রতি সপ্তাহে ১-২ বার।
কেন কাজ করে
ডিম সবচেয়ে বেশি প্রোটিনের উৎসগুলোর মধ্যে একটি। এটি আপনার চুলে পুষ্টি এবং উজ্জ্বলতা প্রদানে সহায়তা করে এবং চুলের গঠন উন্নত করে। এটি ক্ষতিগ্রস্থ চুল ঠিক করে এবং নিষ্প্রাণ চুলে প্রাণ ফিরিয়ে দেয়। সবসময় এই চুলের মাস্কটির ব্যবহারে আপনার চুলকে মজবুত এবং কন্ডিশনিং করতে সাহায্য করে এবং চুলকে আরো নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
৫. মেথির বীজ
উপকরণ
- ১/৪ কাপ মেথির বীজ
- ১ কাপ পানি
প্রক্রিয়া
- মেথির বীজ পানিতে ভিজান এবং সারারাত রেখে দিন।
- পরেরদিন সকালে সামান্য পানি দিয়ে বীজগুলো ব্লেন্ড করে নিন যাতে মশ্রিণ একটি মিশ্রণ তৈরি হয়।
- পেস্টটি আপনার স্ক্যাল্প এবং চুলে লাগান।
- মেথির বীজ ৩০ মিনিট আপনার চুলে রাখুন।
- একটি সালফেট মুক্ত কোমল শ্যাম্পু দিয়ে আপনার চুল ধুয়ে ফেলুন।
- কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
কতবার?
প্রতি সপ্তাহে ১ বার।
কেন কাজ করে
মেথির বীজে প্রচুর প্রোটিন, আয়রন, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম এবং লিকিথিন আছে। চুলের এই প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুলো চুল ঝরে পরা, খুশকি হওয়া, ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া এবং চুল পেঁকে যাওয়া প্রতিরোধে একসাথে কাজ করে, সেই সাথে চুল ঘন ও মজবুত করতে সাহায্য করে।
৬. পেঁয়াজের রস
উপকরণ
- একটি বড় আঁকারের পেঁয়াজের রস
- ৩-৪ ফোঁটা ল্যাভেন্ডার এ্যাসেন্সিয়াল তেল
প্রক্রিয়া
- সকল উপকরণ একসাথে মিশান।
- সল্যুশনটি আপনার স্ক্যাল্পে লাগান এবং ম্যাসাজ করুন।
- ১০-১৫ মিনিট পেঁয়াজের রস মাথায় রাখুন।
- একটি সালফেট মুক্ত কোমল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- কন্ডিশনার লাগিয়ে প্রক্রিয়াটি সমাপ্ত করুন।
কতবার?
প্রতি সপ্তাহে ২ বার।
কেন কাজ করে
পেঁয়াজের রস চুল পড়া বন্ধ করে, চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং চুল পুনরায় জন্মাতে সাহায্য করে। এতে সম্ভবত উচ্চ সালফার বৈশিষ্ট্য আছে যা রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং ভালো পুষ্টি প্রদান করে। এছাড়াও পেঁয়াজ বায়োটিন, ম্যাংগানিজ, ফ্লেভানয়েডস, ভিটামিন সি, ফসফরাস, ফলিক এসিড এবং কপারের খুব ভালো উৎস যা চুলের স্বাস্থ্য এবং উজ্জ্বলতা পুণরুদ্ধার করতে সাহায্য করে।
৭. আপেল সিডার ভিনেগার
উপকরণ
- ১ টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার
- ১ কাপ পানি
প্রক্রিয়া
- এক কাপ পানির সাথে আপেল সিডার ভিনেগার মিশান এবং একটি জগে নিন।
- একটি সালফেট মুক্ত হালকা শ্যাম্পু দিয়ে আপনার চুল ধুয়ে নিন।
- আপনার চুল কন্ডিশন করুন।
- চুল কন্ডিশন করার পর আপেল সিডার ভিনেগারের মিশ্রণটি চুলে ঢালুন।
- চুল আবার ধোয়ার কোন প্রয়োজন নেই।
কতবার?
প্রতি সপ্তাহে ১ বার।
কেন কাজ করে
এই ট্রিটমেন্টটি চুলের ধূলাবালি, তেল, ময়লা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। তীব্র রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার ছাড়াই এটি আপনার চুল পরিষ্কার করে, আপনার চুলকে নরম এবং রেশমি করে তোলে।
অতিরিক্ত কিছু টিপস
১. একটি সুষম খাদ্যতালিকা অনুসরণ করুন
আপনার চুলে যথেষ্ট পুষ্টির যোগান দেওয়াই স্বাস্থ্যকর চুল পাওয়ার মূল চাবিকাঠি। আপনার চুল যদি ভেতর থেকে পুষ্টিকর না হয় তাহলে আপনি আপনার চুলে কি দিচ্ছেন তা মোটেও গুরুত্ব পাবেনা। নিশ্চিত করুন যে আপনি প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, প্রোটিন এবং পুষ্টি পাচ্ছেন। এছাড়াও, নিজেকে হাইড্রেটেড রাখার চেষ্টা করুন।
২. সঠিক পণ্য বাছাই করুন
যখন আপনার চুলের স্বাস্থ্যের কথা আসে তখন প্রাকৃতিক অথবা হারবাল শ্যাম্পু যাতে কোন ক্ষতিকর রাসায়নিক যেমন এস.এল.এস এবং সালফেট নেই এমন শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত। এর কারণ হল সালফেট চুলের জন্য ক্ষতিকর এবং আপনার চুলের প্রাকৃতিক তেল মুছে ফেলে। একটি ভালো চুলের কন্ডিশনার যা সিলিকন মুক্ত তাতে বিনিয়োগ করা খুব ভালো একটি চিন্তা।
৩. তেল ম্যাসাজ
সপ্তাহে অন্তত একবার নিজেকে (অথবা কারো মাধ্যমে) একটি চমৎকার এবং আরামাদায়ক তেলের ম্যাসাজ প্রদান করুন। তেলের ম্যাসাজ শুধু চিন্তা মুক্ত করতেই সাহায্য করে না, এটি মাথার রক্ত চলাচল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে যা আপনার কোষগ্রন্থি গুলোতে পুষ্টি জোগায়।
৪. বড় দাঁতযুক্ত কাঠের চিরুনি ব্যবহার করুন
বড় দাঁতযুক্ত কাঠের চিরুনি চুলের ভেঙে যাওয়া প্রতিরোধ করে। চুল আচড়ানোর জন্য এটি একটি আদর্শ চিরুনি। প্রতিদিন কয়েকবার চুল আচাড়ানো উচিত এতে স্ক্যাল্পের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে। ভিজা অবস্থায় চুল আচড়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে কারণ ভিজা চুল খুব নরম এবং ভঙ্গুর থাকে।
৫. কন্ডিশনিং কখনো বাদ দিবেন না
যখন চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখার কথা আসে তখন কন্ডিশনিং করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শ্যাম্পুর করার পর চুল কন্ডিশনিং করা কখনোই বাদ দিবেন না। সপ্তাহে অন্তত একবার ঘরে তৈরি খুবই হাইড্রেটিং মাস্ক ব্যবহার করে চুলের গভীর কন্ডিশনিং করা খুবই ভালো একটি উপায়। যদি আপনার চুল খুবই শুষ্ক হয়, তাহলে খুব ভালো আদ্রতা সম্পন্ন কন্ডিশনার ব্যবহার করা উত্তম উপায়।
৬. সবসময় ঠান্ডা পানি দিয়ে চুল ধুবেন
ঠান্ডা পানি আপনার চুলের কোষগুলো বন্ধ করতে সাহায্য করে, আপনার চুল কোমল এবং রেশমি করতে সাহায্য করে। এটি আপনার চুল থেকে আদ্রতা হারিয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
৭. নিয়মিত চুল ট্রিম করুন
৬-৮ সপ্তাহ পর পর আপনার চুল ট্রিম করা আবশ্যক। এটি চুলে দুমুখো আগা হওয়া প্রতিরোধ করে এবং চুলের আগার অন্যান্য ক্ষতিও প্রতিরোধ করে।
৮. চুলে হিট প্রদানের সরঞ্জামগুলোর ব্যবহার বন্ধ করুন
প্রতিদিন চুলে হিট প্রদান করা আপনার চুলের গুরুতর ক্ষতি করতে পারে। যদি আপনি আপনার স্ট্রেইটনার ব্যবহারে আসক্ত হন, তাহলে এমন কিছু চুলের স্টাইল ব্যবহার করতে হবে যাতে কোন প্রকার হিট ব্যবহার করা লাগে না।
৯. চুল মাত্রাতিরিক্ত পরিষ্কার করবেন না
প্রতি সপ্তাহে তিন বারের বিশি চুল ধুলে চুল নিস্তেজ, শুষ্ক এবং প্রাণহীন হয়ে পড়ে। তাই সপ্তাহে শুধুমাত্র ২-৩ বার চুল পরিষ্কার করবেন।
১০. আপনার চুল স্বাভাবিক তাপমাত্রায় শুকাতে দিন
ব্লো-ড্রায়ার ব্যবহারের পরিবর্তে আপনার চুল স্বাভাবিক তাপমাত্রায় শুকাতে দিন। শুধুমাত্র আলতো করে আপনার চুলের অতিরিক্ত পানি একটি তোয়ালে দিয়ে নিঙরে নিন এবং পুরোপুরি শুকিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত খোলা রাখুন। তোয়ালে দিয়ে খুব জোরে আপনার চুল ঘষবেন না কারণ এতে আপনার চুলের ক্ষতি হতে পারে।
এখন আপনি জানেন কিভাবে আপনি আপনার চুল রেশমি, লম্বা এবং কোমল করবেন। তাহলে আর দেরি কেন? এখনি সময় এই প্যাকগুলো পরীক্ষা করে দেখার। সুন্দর চুল পাওয়া অসাধ্য কিছু নয়, সঠিক রুটিন অনুসরণ করার মাধ্যমে আপনি আপনার স্বপ্নের চুল পাবেন।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.