তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নেওয়া যতটা কঠিন ঠিক তেমনি শুষ্ক ত্বকের যত্ন নেওয়া ততটাই কঠি্ন। শুষ্ক ত্বকের সাথে নানা রকম সমস্যা জড়িত যেমন মৃত কোষ, চুলকানি এবং সংবেদনশীল ত্বক। কিন্তু, সঠিক যত্নের মাধ্যমে আপনি এই সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারেন। প্রতিদিন শুষ্ক ত্বকের যত্নের জন্য একটি রুটিন ধারাবাহিকভাবে অনুসরণ করলে ত্বকের শুষ্কতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
ত্বকের শুষ্কতা থেকে মুক্তি পেতে আপনাকে যা করতে হবে তা নিচে দেওয়া হলোঃ
শুষ্ক ত্বকের জন্য দৈনিক স্কিন কেয়ার রুটিন
১. সকাল

ধাপ ১ঃ সবার প্রথমে আপনাকে যা করতে হবে তা হলো সকালে ঘুম থেকে উঠার পর পরেই আপনার মুখমন্ডল ঠান্ডা পানি দিয়ে কিছুক্ষন ধুয়ে নিবেন। এটি আপনার ত্বককে সম্পূর্ণরূপে সতেজ করে তুলে।
ধাপ ২ঃ এরপর, একটি ময়েশ্চারাইজিং ক্লিনজার নিন এবং এটি দিয়ে আস্তে আস্তে আপনার ত্বক পরিষ্কার করে নিন। এবং আপনি অবশ্যই একটি প্রাকৃতিক পণ্য বাছাই করবেন যাতে কেমিক্যালের মাত্রা অনেক কম থাকে।
ধাপ ৩ঃ ক্লিনজিং এর পর আপনার স্কিন টোন করুন। একটি টোনার নিন যেটি আপনার ত্বক শুষ্ক করে না। প্রাকৃতিক এবং ভালো উপায় হিসেবে আপনি গোলাপ জল ব্যবহার করতে পারেন।
ধাপ ৪ঃ এরপরের ধাপ হলো ময়েশ্চারাইজিং – এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। ত্বকে মিশে না যাওয়া পর্যন্ত ময়েশ্চারাইজার আপনার পুরো মুখে ভালোভাবে লাগান।
ধাপ ৫ঃ অতপর, আপনি যদি বাহিরে যান তাহলে সানস্ক্রিন অবশ্যই লাগাবেন। এবং এটি অবশ্যই এসপিএফ ৩০ অথবা এর থেকে বেশি হতে হবে। কয়েক ঘন্টা পর পর এটি লাগাবেন।
ধাপ ৬ঃ আপনি যদি মেকাপ ব্যবহার করতে চান তাহলে হালকা মেকাপ করাই উত্তম। ময়েশ্চারাইজার, বিবি ক্রিম এবং কনসিলার সবচেয়ে ভালো বিকল্প। এগুলো অবশ্যই ময়েশ্চারাইজিং হতে হবে যা যে কোন প্রকার শুষ্কতা থেকে রক্ষা করবে।
২. দুপুর

ধাপ ১ঃ আপনার সকালের রুটিন কয়েক ঘন্টার জন্য ভালভাবে স্থায়ী থাকে, কিন্তু তারপর আপনার চা নাস্তার বিরতিতে দুপুরের খাবার খাওয়ার আগে একবার টাচ আপ করে নেওয়া উত্তম। ময়েশ্চারাইজার নিয়ে আপনার পুরো মুখে লাগান অথবা শুষ্ক হয়ে যাওয়া স্থানে লাগান।
ধাপ ২ঃ আপনার ঠোঁটের যত্ন নেওয়া এবং তাদের ময়েশ্চারাইজড রাখাটাও গুরুত্বপূর্ণ। আপনার ঠোট সারাদিন কোমল রাখতে সবসময় একটি বাটার লিপ বাম সাথে রাখুন।
ধাপ ৩ঃ বাহিরের ত্বকের যত্ন ছাড়াও আপনার শরীরের ভিতরে কি প্রবেশ করছে তাতে লক্ষ্য রাখুন। অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে পানি পান করবেন – এটি মৌলিক উপায়। যদি পানি পান করা সম্ভব না হয়, তাহলে প্রচুর পরিমাণে পানীয় এবং পানীয় জাতীয় খাবার খেতে হবে। সচেতন হন এবং সোডার পরিবর্তে সতেজ জুস বেছে নিন।
ধাপ ৪ঃ ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খান। এটি আপনার ত্বককে ভিতর থেকে দৃঢ়, উজ্জ্বল এবং ময়েশ্চারাইজড করে তুলবে। মাত্রাতিরিক্ত ভাজা খাবার পরিহার করুন এবং বেশিরভাগ কাঁচা এবং সিদ্ধ খাবার বেছে নিন।
ধাপ ৫ঃ এবং আপনি আপনার শিক্ষাক্ষেত্র/ কর্মক্ষেত্র থেকে বের হওয়ার আগে, আরেকবার ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন।
৩. রাত

ধাপ ১ঃ আপনার রাতের স্কিন কেয়ার রুটিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারন যখন আপনি ঘুমান তখন ত্বকের সবচেয়ে বেশি কাজ হয়, এবং এই সময় আপনি যদি আপনার ত্বকে সঠিক পণ্যটি ব্যবহার করেন, আপনার ত্বক আরো দ্রুত নিরাময় হবে এবং সুস্থ থাকবে।
ধাপ ২ঃ ঘরে ফিরে আসার পর, উষ্ণ পানি দিয়ে আপনার মুখ ধুয়ে নিন এবং একটি ক্লিনজিং তেল অথবা মেকাপ রিমুভার দিয়ে মেকাপ তুলে নিন।
ধাপ ৩ঃ তারপর, আপনার মুখ সকালে যেভাবে পরিষ্কার করেছেন ঠিক সেভাবে পরিষ্কার করে নিন। এরপর একটি ভারি এবং নারিশিং নাইট ক্রিম লাগান যা আপনার ত্বককে সারারাত ময়েশ্চারাইজড রাখবে।
ধাপ ৪ঃ আপনাকে অবশ্যই ৭-৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে।
এবং মনে রাখবেন সপ্তাহে একবার অবশ্যই একটি ময়েশ্চারাইজিং ফেইস মাস্ক লাগাবেন এবং ত্বকে স্ক্রাবিং করবেন।
এখন, আপনার শুষ্ক ত্বকের যত্নের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপসঃ
শুষ্ক ত্বকের যত্নের জন্য টিপস
- . মাত্রাতিরিক্ত গরম পানি দিয়ে গোসল করা থেকে দূরে থাকুন। এটা আপনার ত্বককে আরো শুষ্ক এবং ক্ষতিগ্রস্থ করে তুলে।
- . সবসময় কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন, এবং এটি আপনার জন্য উত্তম।
- আপনার ত্বকে ক্লিনজিং করার পর খালি রেখে দিবেন না। সাথে সাথে একটি ময়েশ্চারাইজার লাগাবেন।
- আপনার ব্যাগে সবসময় একটি ময়েশ্চারাইজিং ফেশিয়াল মিস্ট রাখা খুবই উত্তম বুদ্ধি। এটি ব্যবহার করা এবং সাথে রাখা সহজ।
- যে সকল পণ্যে অনেক বেশি কেমিক্যাল এবং মাত্রাতিরিক্ত সুগন্ধ রয়েছে তা শুষ্ক ত্বকের মানুষের জন্য একেবারেই নিষিদ্ধ। এরা ত্বককে শুষ্ক, লাল, আঁশযুক্ত এবং চুলকানি প্রবণ করে তুলে।
- আরামদায়ক কাপড় পরিধান করুন যা আপনার ত্বকে চুলকায় না। হালকা সুতি এবং খাদি কাপড় ভালো বিকল্প।
- বেশিক্ষণ রোদে থাকা থেকে বিরত থাকুন। ট্যানিং এবং শুষ্কতা একটি মারাত্মক সংমিশ্রণ হতে পারে।
- আপনার হাতের তালু এবং আঙ্গুল প্রতিদিন ময়েশ্চারাইজড করবেন কারন এদের দ্বারা সকল প্রকার কাজ করা হয়। আপনার পায়ের তালু ও ময়েশ্চারাইজড করার কথা অবশ্যই মনে রাখবেন।
প্রতিনিয়ত যত্ন নেওয়ার মাধ্যমে, আপনি আপনার শুষ্ক ত্বককে হারাতে পারেন। আর তার জন্য লক্ষ্যে অটল থাকা এবং হার না মানাই আসল। উপরে উল্লিখিত রূটিনটি অনুসরন করুন, এবং কিছুদিনের মধ্যেই আপনি আপনার ত্বকে পার্থক্য নিজেই লক্ষ্য করবেন।