ওজন কমানো শুধুমাত্র স্বাস্থ্যকর খাওয়ার সাথে সম্পর্কিত নয়, এটি আপনার শরীরের হরমোনের অবস্থা সাথেও সম্পর্কিত। ওজন কমানো সহজ কাজ নয়।
কিন্তু, আপনি কি জানেন আপনার শরীরের হরমোন গুলোর ভারসাম্য যদি ঠিক না থাকে তাহলে আপনার দেহের মাত্রাতিরিক্ত মেদ ঝরানো যে অনেক কঠিন হয়ে পড়ে?
হরমোন আপনার দেহের সংকটপূর্ণ প্রতিক্রিয়া এবং ক্রিয়াকলাপ গুলো যেমন বিপাক, প্রদাহ, মেনোপোজ, গ্লুকোজের উঠা-নামা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে।
হরমোন ভারসাম্য বিপর্যয়ের প্রধান কারণগুলো হলো দুশ্চিন্তা, বয়স, জিন এবং নিম্ন জীবনধারা যেটা নিষ্ক্রিয় বিপাক, বদহজম, অনিয়ন্ত্রিত ক্ষুধার দিকে ধাবিত করে — এসব কারন আপনাকে ওজন বৃদ্ধির দিকে নিয়ে যায়।
যদিও নারীরা অতিমাত্রায় হরমোন নিঃসরণে অভ্যস্ত, কিন্তু হমোনের দীর্ঘকালস্থায়ী ভারসাম্যহীনতা আপনাকে মেদবৃদ্ধিজনিত রোগে আক্রান্ত করে দিতে পারে।
সুতরাং, চলুন দেখে নেই আপনার ওজন বৃদ্ধির জন্য কোন হরমোনটি দায়ী এবং এ বিষয়ে আপনি কি করতে পারেন।
১. থাইরয়েড (Thyroid)
থাইরয়েড গ্রন্থি, এটি আপনার গলার তলদেশে অবস্থিত এবং এই গ্রন্থি তিনটি হরমোন উৎপাদন করে — টি৩ (T3), টি৪ (T4) এবং ক্যালসিটোনিন (Calcitonin)। এই হরমোনগুলো বিপাক, ঘুম, হৃদ কম্পন, শরীরের বিকাশ, মস্তিষ্কের বিকাশ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রন করে। মাঝে মাঝে থাইরয়েড গ্রন্থি থাইরয়েড হরমোন কম উৎপাদন করে যার ফলে হাইপোথাইরয়েডিজম হয়।
হাইপোথাইরয়েডিজম প্রায়ই ওজন বৃদ্ধি, বিষণ্নতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, ক্লান্তি, উচ্চ রক্তচাপ, ধীর হৃদ স্পন্দন ইত্যাদির সাথে যুক্ত থাকে। হাইপোথাইরয়েডিজম অনেক কারণে হতে পারে যেমন গ্লুটেনের অসহিষ্ণুতা, অপুষ্টি, দূষিত পরিবেশ ইত্যাদি। এমনকি থাইরয়েডের কারনে আপনি শুধু মোটা হবেন না, আপনার শরীরে পানিও চলে আসবে। শুধুমাত্র থাইরয়েডের ভারসাম্যহীনতার কারনে আপনার ওজন ৫-১০ পাউন্ড বেড়ে যেতে পারে।
কিভাবে থাইরয়েডের ভারসাম্যহীনতার চিকিৎসা করবেন?
- টি৩ (T3) এবং টি৪ (T4) এর পাশাপাশি থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন (টিএসএইচ) এরও পরীক্ষা করান। একজন ডাক্তার দ্বারা রিপোর্ট গুলো পর্যবেক্ষণ করান।
- কাঁচা শাকসবজি খাওয়া এড়িয়ে চলুন। ভালোভাবে রান্না করা খাবার খান।
- আয়োডিনযুক্ত লবন খান।
- জিংক যুক্ত খাবার যেমন অয়েস্টার এবং কুমড়োর বীজ খান।
- মাছের তেল এবং ভিটামিন ডি এর সাপ্লিমেন্ট খান।
- যদি আপনার ডাক্তার নির্দেশনা দেন তবে থাইরয়েডের ঔষধ খান।
২. ইনসুলিন (Insulin)
ইনসুলিন হল একটি হরমোন যা অগ্ন্যাশয় দ্বারা নিঃসরিত হয়, যা গ্লুকোজকে কোষের ভিতর বহন করতে সাহায্য করে যা শক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয় অথবা চর্বি হিসেবে দেহে জমা থাকে।
এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে। অনেক সময় মাত্রাতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার, অ্যালকোহল, কৃত্রিম চিনিযুক্ত পানীয় এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহন করা (অথবা অনেক সময় অতিরিক্ত ফল খাওয়া) ইনসুলিন প্রতিরোধ করতে পারে।
এক্ষেত্রে, পেশীর কোষগুলো গ্লুকোজযুক্ত ইনসুলিন গুলো চিনতে পারে না, এবং যার কারণে গ্লুকোজ গুলো রক্তের মধ্যে থেকে যায় ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পায়। পরিশেষে এটি ওজন বৃদ্ধির দিকে নিয়ে যায় এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস হয়।
কিভাবে ইনসুলিনের চিকিৎসা করবেন?
- আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করুন এবং আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
- সপ্তাহে ৪ ঘন্টা ব্যায়াম করুন।
- প্রক্রিয়াজাত খাবার, অ্যালকোহল, গভীর রাতে খাওয়া, বায়ু ভর্তি এবং কৃত্রিম চিনিযুক্ত পানীয় ইত্যাদি পরিহার করুন।
- সবুজ পাতাযুক্ত সবজি, মৌসুমি সবজি (দিনে ৪-৫ বার) এবং মৌসুমি ফল (দিনে ৩ বার) গ্রহন করুন।
- আপনার দেহে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের মাত্রা উন্নত করতে চর্বিযুক্ত মাছ, বাদাম, অলিভ অয়েল ইত্যাদি গ্রহন করুন।
- কম ক্যালোরিযুক্ত (২০০০-২২০০ ক্যালোরি) কিন্তু অধিক মাত্রায় পুষ্টিকর খাদ্য খান।
- প্রতিদিন ৩-৪ লিটার পানি পান করুন।
৩. লেপটিন (Leptin)
সাধারন অবস্থায় থাকাকালীন, খাওয়ার সময় আপনার পেট ভরে গেলে হরমোন লেপটিন আপনাকে পেট ভরার সংকেত দিবে এবং আপনাকে খাওয়া বন্ধ করতে বলবে। কিন্তু যে সকল খাবারে উচ্চমাত্রায় চিনি থাকে যেমন ক্যান্ডি, চকোলেট, ফল (সেই সকল ফলে প্রচুর ফ্রুক্টোজ থাকে) এবং প্রক্রিয়াজাত ফল, এসব খাবার মাত্রাতিরিক্ত গ্রহন করলে, এসব খাবারে থাকা অতিরিক্ত ফ্রুক্টোজ চর্বিতে রুপান্তরিত হয় যা লিভার, পেট এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গে জমা হয়।
এখন, এই চর্বির কোষগুলো লেপটিন নিঃসরণ করে। আপনি যত বেশি ফ্রুক্টোজ যুক্ত খাবার গ্রহন করবেন, তত বেশি লেপটিন নিঃসরিত হবে। এর ফলে শরীর থেকে লেপটিন উধাও হয়ে যায় এবং মস্তিষ্ক অতিরিক্ত খাবার খাওয়া বন্ধ করার সংকেত নেওয়া বন্ধ করে দেয়। শেষ পর্যন্ত এটি আপনাকে ওজন বৃদ্ধির দিকে ধাবিত করে।
কিভাবে লেপটিন স্তর নিম্নমুখী রাখবেন?
- আপনাকে সঠিক বিশ্রাম নিতে হবে। গবেষনায় দেখা গেছে, কম ঘুমালে দেহে লেপটিনের মাত্রা কমে যায় এবং মস্তিষ্ক খাবার খাওয়া বন্ধ করার সংকেত নেওয়া বন্ধ করে দেয়। তাই, আপনাকে অবশ্যই প্রতিদিন কমপক্ষে ৭-৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে।
- ২ ঘন্টা পর পর খান।
- চিনিযুক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার বর্জন করুন, দিনে ৩ বার ফল খান, গাড়ো সবুজ পাতাযুক্ত সবজি খান এবং স্বাস্থ্যকর নাস্তা গ্রহন করুন।
- নিজেকে হাইড্রেটেড রাখুন কারন ডিহাইড্রেশনও আপনার ক্ষুধা বাড়িয়ে দিবে।
৪. ঘ্রেলিন (Ghrelin)
ঘ্রেলিনকে সবাই “ক্ষুধার হরমোন” হিসেবে চিনে, এটি ক্ষুধা বাড়াতে এবং দেহে চর্বি জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। এটি প্রধানত পাকস্থলী থেকে নিঃসরিত হয়। সামান্য পরিমান ঘ্রেলিন ছোট অন্ত্র, মস্তিষ্ক, এবং অগ্ন্যাশয় থেকেও নিঃসরিত হয়। রক্তে উচ্চ মাত্রায় ঘ্রেলিনের উপস্থিতি দেহের ওজন বাড়িয়ে দেয় এবং এই হরমোন মোটা মানুষের জন্য আরো বেশি ক্ষতিকর। এমনকি যখন কেউ খাবার খুব কম খায় অথবা উপবাস বা রোজা রাখলে তখন ঘ্রেলিনের মাত্রা আরো বেশি বেড়ে যায়।
কিভাবে ঘ্রেলিনের মাত্রা কমাবেন?
- ২-৩ ঘন্টা পর পর খান।
- দিনে ৬ বার খাবার খান।
- তাজা ফল, শাক-সবজি, প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার, আঁশযুক্ত খাবার এবং স্বাস্থ্যকর তেল জাতীয় খাবার গ্রহন করুন।
- খাবার খাওয়ার ২০ মিনিট আগে ১ কাপ পানি পান করবেন।
- যদি সমস্যা না যায় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
- নিজেকে কর্মক্ষম রাখুন।
৫. ইস্ট্রোজেন (Estrogen)
উচ্চ এবং নিম্ন মাত্রার ইস্ট্রোজেন দুটিই ওজন বৃদ্ধির জন্য দায়ী। প্রথমত, আমি আপনাকে জানাতে চাই কিভাবে উচ্চমাত্রার ইস্ট্রোজেন আপনার ওজন বাড়াতে পারে। সাধারনত দেহে উচ্চমাত্রার ইস্ট্রোজেন ডিম্বাশয়ে এই হরমোন অত্যাধিক মাত্রায় উত্পাদনের কারনে হয় অথবা ইস্ট্রোজেন সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণের কারণেও হয়। বর্তমানে, যখন আপনি সুস্থ থাকেন তখন আপনার দেহ যথেষ্ট পরিমাণ ইন্সুলিন উৎপাদন করতে পারে এবং আপনার রক্তে শর্করার মাত্রাও ঠিক থাকে।
কিন্তু, যখন আপনার দেহে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বেড়ে যায়, তখন ইন্সুলিন উৎপাদনের কোষগুলিতে চাপ সৃষ্টি হয়। যার ফলে, এটি আপনার দেহে ইন্সুলিনের উৎপাদন প্রতিরোধ করে এবং আপনার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে ওজন বৃদ্ধি করে দেয়।
দ্বিতীয়ত, প্রি-মেনোপোজাল নারীদের দেহে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কম থাকে, যেটি একজন নারীর গর্ভবতী হওয়ার ক্ষমতা কেড়ে নেয়। ডিম্বাশয়ের কোষগুলো ইস্ট্রোজেন উত্পাদন করার ফলে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা আরো হ্রাস পায়। এখন যথেষ্ট পরিমাণ ইস্ট্রোজেনের সরবরাহ পেতে দেহ অন্যান্য কোষ খোঁজা শুরু করে যেগুলো ইস্টোজেন উৎপাদন করে। এবং এরকম একটি উত্স হচ্ছে চর্বির কোষ। যখন ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমে যায়, শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য দেহ তার সকল শক্তির উৎসকে চর্বিতে রুপান্তর করে। পরবর্তীতে এটি দেহের নিচের অংশের ওজন বৃদ্ধি করে দেয়।
কিভাবে শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা ঠিক রাখবেন?
- প্রক্রিয়াজাত মাংস খাওয়া এড়িয়ে চলুন। স্থানীয় বাজার থেকে মাংস কিনুন।
- অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন।
- প্রতিদিন ব্যায়াম করুন। আপনি মেনোপোজের স্বীকার হয়ে থাকলে দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকার জন্য যোগ ব্যায়াম করুন।
- শস্যজাতীয় খাবার, সতেজ সবজি এবং ফল খান।
- আপনার দেহের ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বজায় রাখার জন্য আপনার জীবনধারাতে আনা পরিবর্তনগুলো সম্পর্কে আপনার ডাক্তারকে অবগত করুন।
৬. কর্টিসোল (Cortisol)
কর্টিসোল একটি স্টেরয়েড হরমোন যা অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি দ্বারা উৎপন্ন হয়। যখন আপনি মানুষিক চাপ, বিষণ্ণ, চিন্তিত, উদ্বিগ্ন, রাগান্বিত, শারীরিকভাবে আহত ইত্যাদি থাকেন তখন এই হরমোনটি নিঃসরিত হয়। কর্টিসোলের দুটি প্রধান ফাংশন হল শক্তি নিয়ন্ত্রণ করা এবং শক্তির যোগান দেওয়া।
আমি আপনাকে বিস্তারিত জানাচ্ছি।
কর্টিসোল দেহের একটি নির্দিষ্ট কাজ পরিচালনা করতে কোন ধরনের শক্তি (শর্করা, প্রোটিন অথবা চর্বি) প্রয়োজন তা প্রথমে স্থির করে শক্তি নিয়ন্ত্রন করে। কর্টিসোল সংরক্ষিত চর্বি থেকে তেল “ক্ষুধার্ত কোষ” অথবা কর্মঠ পেশীগুলোতে পরিবহনের মাধ্যমে শক্তি জোগাতে সহায়তা করে। মূলত, কর্টিসোল স্বল্পমেয়াদী চাপের (মানসিক, শারীরিক, বাস্তব বা কল্পিত) প্রতিক্রিয়া সামলাতে প্রয়োজন হয়।
কিন্তু নিম্নমানের জীবনধারা নির্বাচন এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার বদঅভ্যাসের কারনে, আপনার শরীরে প্রতিনিয়ত চাপের সৃষ্টি হতে পারে। যেটি আপনার কর্টিসোল নিঃসরণের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় যা দেহকে হাইপারিনসুলিনেমিক (Hyperinsulinemic) করে তুলে, অন্ত্রের অভ্যন্তরে চর্বি বৃদ্ধি করে এবং চর্বি কোষকে আরো পরিপক্ক করে তুলে।
কিভাবে কর্টিসোলের মাত্রা কমাবেন?
- কি কি করতে হবে তার একটি তালিকা তৈরি করুন এবং যেই কাজগুলো সম্পূর্ণ করেছেন তাতে টিক চিহ্ন দিন। এটি শুধুমাত্র আপনার কাজ গুলো স্মরণ করিয়ে দিবে না বরং আপনাকে ভালো অনুভব করাবে।
- চাপ কমানোর সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে নিজের জন্য সময় বের করা। আপনি সবসময় করতে চেয়ে ছিলেন এমন একটি শখ পুরন করুন, নতুন কিছু শিখুন, বই পড়ুন, আপনার পছন্দের চলচ্চিত্র দেখুন এবং আরো অনেক কিছু করতে পারেন।
- পরিবার অথবা বন্ধুদের সাথে সময় কাটান। যদি আপনাকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য সঠিক কেউ থাকে তাহলে এর থেকে ভালো আর কিছুই হতে পারেনা। বিশেষ করে যারা আপনার সমালোচনা করেন না এবং আপনার অনেক ভালো চান।
- আপনার প্রতিদিনের জীবনযাত্রা থেকে কয়েকদিনের জন্য ছুটি নিন এবং এমন কিছু করুন যা আপনি আগে কখনো করেননি।
- লোকেরা আপনার সম্পর্কে কি ভাবছে তা নিয়ে চিন্তা করা বন্ধ করুন।
- দেহ এবং মনের চাপ কমানোর জন্য প্রতিদিন এক ঘন্টা গভীরভাবে শ্বাস নিন, যোগব্যায়াম করুন এবং ধ্যান করুন।
- প্রতি রাতে ৭-৮ ঘন্টা ঘুমান।
- মদ, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং ডুবো তেলে ভাজা খাবার পরিহার করুন।
৭. টেস্টোস্টেরোন (Testosterone)
মহিলাদের দেহে অল্প মাত্রার টেস্টোস্টেরোন উৎপন্ন হয়। টেস্টোস্টেরোন মেদ ঝরাতে সাহায্য করে, হাড় ও মাংসপেশী আরো মজবুত করে এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। নারীদের মধ্যে, ডিম্বাশয়ে টেস্টোস্টেরোন উৎপন্ন হয়। বয়সের বৃদ্ধি এবং চাপ উল্লেখযোগ্যভাবে নারীদের মধ্যে টেসটোসটের মাত্রা কমাতে পারে। এবং কম মাত্রার টেস্টোস্টেরোন হাড়ের ঘনত্ব হ্রাস, পেশীর ভরের ক্ষতি, স্থুলতা বৃদ্ধি, বিষন্নতার কারনের সাথে সম্পর্কিত। এটি দেহে চাপ ও প্রদাহ বাড়িয়ে দিতে পারে যেটি দেহে মেদ আরো বাড়াতে সাহায্য করে।
কিভাবে দেহে টেস্টোস্টেরোনের মাত্রা বাড়াবেন?
- ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে আপনার টেস্টোস্টেরোন মাত্রা পরীক্ষা করুন।
- ওজন হ্রাসের জন্য আপনার খাদ্যে আঁশযুক্ত খাবার যেমন ফ্লাক্স সীডস (Flaxseeds), আলুবোখারা, কুমড়োর বীজ, আস্ত শস্যদানা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করুন।
- টেস্টোস্টেরোনের মাত্রা আরো উন্নত করতে নিয়মিত ব্যায়াম করুন আপনার বিপাক বৃদ্ধি করুন।
- কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করার জন্য ভিটামিন সি, প্রোবায়োটিক্স এবং ম্যাগনেসিয়াম সাপ্লিমেন্ট নিন।
- মদ পান থেকে বিরত থাকুন কারন এটি লিভার এবং কিডনি ক্ষতি করতে পারে।
- টেস্টোস্টেরোনের মাত্রা বাড়াতে জিংক এবং প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহন করুন।
৮. প্রজেস্টেরন (Progesterone)
দেহের স্বাভাবিক কার্যকলাপ ঠিক রাখতে প্রজেস্টেরন এবং ইস্ট্রোজেন হরমোন অবশ্যই সঠিক ভারসাম্যে থাকতে হবে। মেনোপোজ, চাপ, গর্ভনিরোধক ঔষধ সেবন অথবা এন্টিবায়োটিক আছে এমন সব খাবার খাওয়ার কারনে এবং এমন সব হরমোন যেগুলো দেহে ইস্ট্রোজেনে রূপান্তরিত হয় এ সকল কারনে প্রজেস্টেরনের মাত্রা নিচে নেমে যেতে পারে। এটি ধীরে ধীরে ওজন বৃদ্ধি এবং বিষন্নতা সৃষ্টি করতে পারে।
কিভাবে দেহে প্রজেস্টেরনের মাত্রা বাড়াবেন?
- কোন জন্ম নিয়ন্ত্রন পদ্ধতি আপনার জন্য ভালো হবে তা জানার জন্য আপনার স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করুন।
- প্রক্রিয়াজাত মাংস খাওয়া বন্ধ করুন।
- প্রতিদিন ব্যায়াম করুন।
- গভীরভাবে শ্বাস নেওয়ার অনুশীলন করুন।
- শারীরিক ও মানুষিক চাপ এড়িয়ে চলুন।
৯. ম্যালাটনিন (Melatonin)
ম্যালোটনিন পাইনেল গ্রান্ড দ্বারা নিঃসরিত হয় যেটি ঘুমানো এবং ঘুম থেকে উঠার সময় সার্কাডিয়ানের (Circadian) উঠা-নামার ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। ম্যালোটনিনের মাত্রা সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বাড়তে থাকে এবং খুব ভোরে কমে যায়। তাই, আপনি যদি একটি অন্ধকার রুমে ঘুমান, তাহলে ম্যালোটনিনের মাত্রা বেড়ে যাবে এবং আপনার দেহের তাপমাত্রা কমে যাবে।
বৃদ্ধিজনিত হরমোন তখন মুক্তি পায়, যেটি শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে, শারীরিক গঠন উন্নত করে, মেদবিহীন পেশী তৈরিতে সাহায্য করে এবং হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে। কিন্তু সার্কাডিয়ানের (Circadian) উঠা-নামা ব্যাহত হওয়ার কারনে আপনাদের মধ্যে অনেকেরই পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম হয় না অথবা শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ অন্ধকার পান না। এটি চাপ বৃদ্ধি করে যেটি আপনার দেহে প্রদাহ বৃদ্ধি করে এবং ওজন ও বৃদ্ধি করে।
কিভাবে ম্যালোটনিন স্তর বাড়াবেন?
- প্রএকটি অন্ধকার রুমে ঘুমান।
- তিদিন ৭-৮ ঘন্টা ঘুমান।
- রাতে অনেক দেরি করে খাবেন না।
- ঘুমোতে যাওয়ার আগে আপনার সমস্ত গ্যাজেট বন্ধ করুন।
- বাদাম। চেরী, এলাচ, ধনে পাতা এবং সূর্যমুখী ফুলের বীজ খান কারন এরা সকলে ম্যালোটনিন সরবরাহ করে।
১০. গ্লুকোকোরটিকয়েডস (Glucocorticoids)
প্রদাহ থেকে আরোগ্য লাভের প্রাথমিক পদক্ষেপ। দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ফলাফলের কারণ হতে পারে। এবং তাদের মধ্যে ওজন বৃদ্ধি একটি। গ্লুকোকোরটিকয়েডস প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। গ্লুকোকোরটিকয়েডস দেহে চিনি, চর্বি এবং প্রোটিনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে। এবং গবেষনায় খুঁজে পাওয়া গেছে গ্লুকোকোরটিকয়েডস চর্বির ভাঙ্গন এবং প্রোটিনের ভাঙ্গন বৃদ্ধি করে এবং শক্তির উৎস হিসেবে গ্লুকোজ অথবা চিনির ব্যবহার হ্রাস করে।
সুতরাং, রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গেলে দেহ ইন্সুলিন প্রতিরোধক হয়ে যায়। আর দেহে ইন্সুলিন না থাকলে পরবর্তীতে দেহ মোটা হতে থাকে এবং দেহে ইন্সুলিন না থাকলে ডায়াবেটিস ও বেড়ে যেতে থাকে।
কিভাবে গ্লুকোকোরটিকয়েডসের মাত্রা কমাবেন?
- শরীরের মধ্যে প্রদাহ কমাতে শারীরিক এবং মানসিক চাপ হ্রাস করুন।
- প্রদাহ কমানোর জন্য তাজা শাকসবজি, ফল, চর্বিহীন প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর তেল জাতীয় খাদ্য যেমন বাদাম, বীজ, জলপাইয়ের তেল, মাছের তেল ইত্যাদি খান।
- ৭-৮ ঘন্টা ঘুমান।
- প্রতিদিন ৩-৪ লিটার পানি পান করুন।
- নিজেকে শারীরিক ও মানুষিকভাবে কর্মক্ষম রাখার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
- দীর্ঘ সময় ধরে হাঁটুন।
- আপনার কাছের মানুষগুলোর সাথে সময় কাটান এবং নিজের জন্যও কিছু সময় রাখুন।
- আপনি যদি বিষণ্নতা, উদ্বেগ, PTSD ইত্যাদিতে ভুগতে থাকেন তাহলে একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
- কোন কঠোর খাদ্যতালিকা অনুসরন করবেন না কারণ এরা আপনার দেহে প্রদাহ বৃদ্ধি করে।
হরমোনের কারনে ওজন বৃদ্ধি অনেক জটিল হতে পারে, এবং তাই হরমোনের ভারসাম্যহীনতা সঙ্গে মোকাবিলা করার সময় আপনাকে খুব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
নিচে একটি তালিকা দেওয়া হলো যেগুলো আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবেঃ
সতর্কতাঃ
- কখনো নিজে নিজে ঔষধ সেবন করবেন না কারন ওজন বৃদ্ধি বিভিন্ন কারনে হতে পারে এবং আপনাকে এমন একটি ওজন কমানোর উপায় খুঁজে নিতে হবে যেটি আপনার স্বাস্থ্যর কোন ক্ষতি করবে না।
- আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন এবং আপনার ওজন হরমোনের কারনে বৃদ্ধি পাচ্ছে কিনা তা জানতে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করান।
- যদি হ্যাঁ হয়, তবে একটি হরমোনই ওজন বৃদ্ধির কারন নাকি অন্যান্য হরমোন ও ওজন বৃদ্ধির কারন তা খুঁজে বের করতে হবে।
সুতরাং, এই ১০ টি হরমোন আপনার ওজন বৃদ্ধির জন্য দায়ী হতে পারে। যদিও এটি শুনতে জটিল মনে হবে, কিন্তু এর মাধ্যমেই আপনি আপনার ওজন হ্রাস করতে না পারার কারন জানতে পারবেন এবং অনেক বড় চিন্তা থকে মুক্তি পাবেন। এবং এর থেকে বড় মুক্তি আর কোন কিছুতেই হতে পারে না।
এই অনুচ্ছেদটি অনুসরণ করুন এবং নিশ্চিতভাবে আপনি খুব দ্রুত ওজন কমাতে সক্ষম হবেন।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.