লিভার আমাদের শরীরের দ্বিতীয় বৃহত্তম অঙ্গ এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থিগুলোর মধ্যে একটি। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের লিভারের ওজন প্রায় ১.৪ কেজি। লিভারের কাজ অবিরাম (non-stop) যা প্রোটিন সংশ্লেষণ, হজম, গ্লাইকোজেন স্টোরেজ, পিত্ত উৎপাদন, হরমোন স্রাব এবং লাল রক্তের কোয় বিভাজক এর প্রয়োজনীয় জৈব রাসায়নিক উৎপাদন করে থাকে।
লিভারের সবচেয়ে বড় শত্রু অ্যালকোহল। এছাড়া আমাদের জীবনধারায় আমরা প্রতিদিন নানা রকম অস্বাস্থ্যকর খাবার খাই (তেল-চর্বি এবং ট্রান্স ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার) এতে করে লিভার অতিরিক্ত কাজ করতে হয়।
অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন দেহের লিভারের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে। ওজন বৃদ্ধি, হৃদরোগ, দীর্ঘ সময় ক্লান্তি অনুভব করা, হজমের সমস্যা, এলার্জি, লিভার সিরোসিস, এসিডিস (ascites), হেপাটাইটিস বি বা সি , এবং এমনকি লিভার ফেইলিউর (liver failure) ইত্যাদি এই সমস্ত অসুখ দেখা দিতে পারে অসুস্থ লিভারের কারণে।
এমন কিছু খাবার আছে যা খেয়ে আমরা আমাদের ঐ রোগের উপসর্গগুলো কমাতে বা মুক্তি লাভ করতে পারি। নিচে লিভার সুস্থ রাখার জন্য ২০টি খাবারের তালিকা দেয়া হল।
আসুন প্রথমে আমরা যেনে নিই অসুস্থকর লিভারের উপসর্গগুলো কি কি যা আমাদের জানা খুবই প্রয়োজন।
- ওজন কমাতে অক্ষমতা (Inability to lose weight)
- ব্লোটিং (Bloating)
- লাল মূত্র (Dark urine)
- ক্ষুদা মন্দা (Poor appetite)
- আপোষহীনতা ( Compromised immunity)
- কোষ্ঠকাঠিন্য (Constipation)
- মাথা ব্যথা (Headache)
- বুক জ্বালা এবং অ্যাসিড রিফক্স (Heartburn and acid reflux)
- বিষণতা (Depression)
- দুচিন্তাগ্রস্থ হওয়া (Anxiety)
- দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি (Chronic fatigue)
- অত্যাধিক ঘামা (Excessive sweating)
- উচ্চরক্তচাপ (Hypertension)
- রোসাসিয়া (Rosacea)
- বোরিং (Bruising)
- চোখ এবং চামড়া হলুদ হওয়া (Yellow skin and eyes)
যদি উপরের লক্ষণগুলো আপনার শরীরে দেখা দেয়, তাহলে বুঝবেন আপনার লিভার সঠিকভাবে কাজ করছে না।
তাই ডাক্তারের পরামর্শে আপনাকে অবশ্যই নীচের খাবার নিয়মিত খেতে হবে।
স্বাস্থ্যকর লিভারের জন্য ২০টি সেরা খাবার
১. রসুন (Garlic)
কিভাবে সাহায্য করেঃ
আপনার লিভার সুস্থ রাখতে ডিটক্সিফিকেশন (detoxification) এর গুরুত্ব অপরিসীম। এর জন্য যে খাদ্যটি আপনাকে সাহায্য করবে তা হল রসুন। রসুন অ্যালিসিন সমৃদ্ধ, এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে শরীরকে রক্ষা করে। এটি লিভারকে এনজাইম সক্রিয় করতে উৎসাহিত করে এবং ক্ষতিকারক পর্দাথ অপসারিত করে। এ ছাড়া শরীরের রোগ প্রতিরোধের সক্ষমতাও বাড়ায় রসুন।
সাধারণত বেশি সময় নিয়ে রান্না করলে রসুনে থাকা অ্যালিসিন নষ্ট হয়ে যায়। তাই চেষ্টা করুন কাঁচা রসুন খেতে তবে দিনে দু’-তিন কোয়ার বেশি না খাওয়াই ভাল।
যদি রসুন কাঁচা থেকে না পারেন, তাহলে হামদর্দ এর রসুনের রসুনের ক্যাপসুল আকারে পাওয়া যাই সেটি খেতে পারেন।।
স্বাস্থ্যকর লিভারের জন্য রসুন (Garlic) খাবার নিয়ম ঃ
- এক টুকরো কাচাঁ রসুন প্রতিদিন সকালে খেতে হবে। যদি সম্ভব হয় তাহলে মধুর সাথে খেতে পারেন।
- প্রতিদিন রান্না করে খাবারের মধ্যে ১/২ টেবিল চামচ রসুন বাটা দিন।
রসুনের কি কোনোই খারাপ দিক নেই? এ সম্পর্কে বারডেম জেনারেল হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ পুষ্টিবিদ শামছুন্নাহার নাহিদ বলেন, ‘রসুন সবার জন্যই ভালো, তবে রসুন যেহেতু রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দিয়ে অ্যাসপিরিনের মতো কাজ করে, সেহেতু গর্ভকালে রসুন আলাদা করে না খাওয়াই ভালো। এ ছাড়া বড় কোনো অস্ত্রোপচারের পরেও কাঁচা রসুন খাওয়ায় খানিকটা বিধিনিষেধ আছে। এ ছাড়া সবাই রসুন খেতে পারবেন নিশ্চিন্তে। (১)
২. ব্রকলি (Broccoli)
কিভাবে সাহায্য করেঃ
ব্রকলি আইসোথিয়োকানেটস (isothiocyanates) এর চমৎকার উৎস। এতে প্রচুর পরিমাণে সালফার রয়েছে। ব্রকলি আমাদের শরীরের কোষের জিনের নিয়ন্ত্রয়ন করতে সাহায্য করে।
ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীগণ কর্তৃক পরিচালিত একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় নিশ্চিত করেছেন যে, ব্রকলি খাওয়ার ফলে অকার্যকর ফ্যাটি লিভার বিকিরণের ঝুঁকি কমায় এবং লিভার ক্যান্সার থেকে লিভারকে রক্ষা করতে সাহায্য করেছে।
স্বাস্থ্যকর লিভারের জন্য ব্রকলি (Broccoli) খাবার নিয়ম ঃ
- ১ কাপ, প্রতি সপ্তাহে ২-৩ বার।
৩. জিনসেং (Ginseng)
কিভাবে সাহায্য করেঃ
জিনসেং (Ginseng) একটি ঔষধি গাছ যেখান থেকে প্যানাক্স জিনসেং (Panax Ginseng) শিকড় পাওয়া যায়। এটি জিনসেনোসাইড নামে পরিচিত, এতে প্রচুর পরিমাণে ঔষধের গুণাবলী বিদ্যমান। জিনসেং (Ginseng) ৪০টি গুণানুণ রয়েছে, যা লিভারের আঘাত, লিভারের বিষাক্ততা, সিরোসিস এবং ফ্যাট লিভারের বিরুদ্ধে রক্ষা পাওয়ার গুণাগুণ রয়েছে।
স্বাস্থ্যকর লিভারের জন্য জিনসেং (Ginseng) খাবার নিয়ম ঃ
- প্রতিদিন ২ কাপ জিন্সেং চা।
৪. বীটরুট (Beetroot)
কিভাবে সাহায্য করেঃ
বীটরুট (Beetroot) এ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা বেটেলের নামে পরিচিত। ফার্মাসিউটিকাল জৈব রসায়ন বিভাগের, মেডিকেল বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়, পোল্যান্ডে নিশ্চিত করেছেন যে, বীটরুট রস দীর্ঘমেয়াদী খাওয়ানোর ফলে ডিএনএ (DNA) ক্ষতি এবং ক্যান্সার রোগ দ্বারা সৃষ্ট লিভারের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।
স্বাস্থ্যকর লিভারের জন্য বীটরুট (Beetroot) খাবার নিয়ম ঃ
- প্রতিদিন ১ গ্লাস বীটরুট এর জুস।
- এক কাপ বীটরুট ২-৩ বার সাপ্তাহে।
৫. গাজর (Carrot)
কিভাবে সাহায্য করেঃ
গাজর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ এবং ডায়েটি ফাইবারে (dietary fiber) সমৃদ্ধ। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউট্রিশন বিজ্ঞানীরা, হায়দ্রাবাদ, জামিয়া উসমানিয়া, ভারত, আট সপ্তাহের জন্য গাজর রস দিয়ে চর্বি বানিয়ে একটি গবেষণা করেন।
তারা দেখেছেন যে, গাজর রস উল্লেখযোগ্যভাবে ডিএইচএ (DHA), ট্রাইগ্লিসারাইড (triglyceride), এবং এমইউএফএ (MUFA) (Mono Unsaturated Fatty Acids) এর মাত্রা কমে যায়। অতএব, গাজর আপনার শরীরকে nonalcoholic fatty live এবং liver toxicity রোগ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
স্বাস্থ্যকর লিভারের জন্য গাজর (Carrot)) খাবার নিয়ম ঃ
- প্রতি ২ দিনে ১ গ্লাস গাজরের জুস।
- ১ কাপ রান্না করা গাজার প্রতি ২-৩ দিনে।
৬. সবুজ শাকসবজি (Leafy Greens)
কিভাবে সাহায্য করেঃ
সবুজ শাক-সবজি অক্সিডেটিভ ক্ষতি এবং অন্যান্য রোগ থেকে আপনার লিভার কে রক্ষা করতে পারে। সবুজ শাক-বসজি, পালং শাক, লেটুস, মুলা শাক, সরিষা শাক, মিষ্টি আলুর শাক, রকেট মরিচ ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি এবং কে, ক্যালসিয়াম, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমূহ। এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন এবং এন্টি-ইনফ্লোমেটরি।
অবার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেছেন যে, সবুজ শাক সবজি লিভার কে ফ্যাট লিভার এবং সিভি (CV) থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
স্বাস্থ্যকর লিভারের জন্য শাক সবজি (Leafy Greens) খাবার নিয়ম ঃ
প্রতি দিন ১-২ কাপ সবুজ শাক-সবজি খেতে হবে।
৭. গ্রীন টি (Green Tea)
কিভাবে সাহায্য করেঃ
এটি সকলেই জানে যে, গ্রীন টি একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। গ্রীন টির ক্যাটচীন স্বাস্থ্যকর হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে পলিফেনল।
চীনা বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেছেন যে, গ্রীন টি পানকারীদের উল্লেখযোগ্যভাবে লিভার ক্যান্সার, লিভারের রোগ, লিভার স্ট্যাটোস, লিভার সিরোসিস এবং হেপাটাইটিস হ্রাস পায়। (source)
তাছাড়া, ইসফাহান ইউনিভার্সিটি অব মেডিক্যাল সায়েন্সেসের গবেষকরা, ইরান, conducted a double-blind, placebo- controlled, randomized ক্লিনিকাল ট্রায়াল করেন নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি (Non-alcoholic fatty) লিভার রোগীদের উপর। তারা তাদের কে ১২ সাপ্তাহের জন্য গ্রীন টি এক্সট্র্যাক্ট (green tea extract) বা গ্রীন টি এক্সট্র্যাক্ট সাপ্লিমেন্ট (green tea extract supplement) খাওয়ান। ১২ সাপ্তাহের পর দেখা গেল যে, গ্রীন টি এক্সট্র্যাক্ট উল্লেখযোগ্যভাবে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার রোগের সাথে যুক্ত লিভার এনজাইম হ্রাস করে। (source)
স্বাস্থ্যকর লিভারের জন্য গ্রীন টি (Green Tea) খাবার নিয়ম ঃ
- প্রতিদিন ২-৩ কাপ গ্রীন টি।
৮. হলুদ (Turmeric)
কিভাবে সাহায্য করেঃ
হলুদ একটি শিকড় যা রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়। হলুদে যে জৈব সারকোজী যোগ হয় তা ঔষধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এতে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লমেটরি (anti-inflammatory), অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট (antioxidant), অ্যান্টিফানগাল (antifungal), অ্যান্টিভাইরাল (antiviral) এবং অ্যান্টিভেগটেলিএল (antibacterial) এর বৈশিষ্ট। কুরকুমিন লিভার রোগ এবং প্রদাহজনিত রোগ দ্বারা প্রদাহ, আক্সিড্যাটিভ (oxidative) চাপ কমানো, লিপিড মেটাবোলিজম উন্নত করে এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
তেল-আভিভ সৌরক্কি (Tel-Aviv Sourasky) মেডিকেল সেন্টার, ইসরাইলের বিজ্ঞানীরা লিভার সিরোসিস (liver cirrhosis) এর উপর একটি পরীক্ষা পরিচালিত করেছেন। তারা ১২ সাপ্তাহ ধরে হলুদ নিয়ে গবেষণায় সম্পূরক ছিলেন এবং ১২ সাপ্তাহ শেষে বিজ্ঞানীরা পেয়েছে, হলুদ অ্যান্টি-ইনফ্লমেটরি হ্রাস করে চর্বিযুক্ত লিভার সিরোসিসের উন্নতি করে।
স্বাস্থ্যকর লিভারের জন্য হলুদ (Turmeric) খাবার নিয়ম ঃ
- ১-৩ গ্রাম হলুদের গুঁড়া/পেস্ট প্রতি দিন।
- প্রতিদিন ১.৫-৩ গ্রাম হলুদের রস।
- ৪০০-৬০০ মিলিগ্রাম হলুদ সম্পৃক্ত খাবার, প্রতিদিন ২-৩ বার।
- হলুদের রস ১৫-৩০ ড্রপ, প্রতিদিন ৩-৪ বার।
৯. আভাকাডো (Avocado)
কিভাবে সাহায্য করেঃ
বাট্টার (buttery) এবং নাটি (nutty) ফল স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী এবং লিভারকে ভাল রাখার অন্যতম উপাদান। আভাকাডো সুস্থ ফ্যাট সমৃদ্ধ এবং যা anti-inflammatory বিরোধী এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য । নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার থেকে খারাপ জীবন যাপন সৃষ্টি হয়। এভোকাডো anti-inflammatory এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রতিরোধ করার জন্য অত্যন্ত উপকারী।
জাপানী বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে পেয়েছেন, আভাকাডো লিভার ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে।
স্বাস্থ্যকর লিভারের জন্য আভাকাডো (Avocado) খাবার নিয়ম ঃ
- ২-৫ টুকরা, প্রতি সপ্তাহে ২-৩ বার।
১০. লেবু (Lemon)
কিভাবে সাহায্য করেঃ
লেবু vitamin C এর প্রধান উৎস, যা একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট (antioxidant ). গবেষকরা পেয়েছেন, সাইট্রিক অ্যাসিড লিভারের অক্সিডেটিভ ক্ষতির (oxidative damage) হাত থেকে লিভারকে সাহায্য করে।
স্বাস্থ্যকর লিভারের জন্য লেবু (Lemon) খাবার নিয়ম ঃ
- প্রতিদিন ½- ১টি করে লেবু।
১১. আপেল (Apple)
কিভাবে সাহায্য করেঃ
বিজ্ঞানীরা লিভার ও সিরাম লিপিড স্তরের উপর ডিহাইড্রেড আপেলের প্রভাব সম্পর্কে গবেষণা করেছেন। তিন মাস পরে গবেষণায় পাওয়া গেছে, আপেল সফলভাবে সিরাম এবং লিভার লিপিড মাত্রা হ্রাস করে।
চিনা গবেষকরা নিশ্চিত করেছেন যে, আপেল পলিফেনল প্রদাহজনক সিগন্যাল পন্থাকে নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অতএব লিভারের বিভিন্ন রোগ যেমন হেপাটিক স্ট্যাটটোসিস (hepatic steatosis) রোগ থেকে রক্ষা করে।
স্বাস্থ্যকর লিভারের জন্য আপেল (Apple) খাবার নিয়ম ঃ
- প্রতিদিন ১টি করে আপেল।
১২. অলিভ ওয়েল (Olive Oil)
কিভাবে সাহায্য করেঃ
সাধারণত আমাদের প্রতিদিনের খাবারের অস্বাস্থ্যকর তেল হতে লিভারের রোগ হয়। বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন, যারা অলিভ ওয়েল (Olive oil) খায় তাদের লিভারের রোগ কম হয়।
অলিভ ওয়েল (Olive oil) খাওয়ার ফলে খারাপ কলেস্টেরল এবং সিরাম ট্রাইগ্লিসারাইড মাত্রা কমায় এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা এবং লিপিড অক্সিডেশন বৃদ্ধি করে।
অতএব, আপনার লিভার স্বাস্থ্যকর রাখতে আপনার রান্না করার সময় অলিভ ওয়েল (Olive Oil) ব্যবহার করুন।
স্বাস্থ্যকর লিভারের জন্য অলিভ ওয়েল (Olive Oil) খাবার নিয়ম ঃ
- প্রতিদিন ৫-১০ টেবিল চামচ।
১৩. অ্যাসপারাগাস (Asparagus)
কিভাবে সাহায্য করেঃ
অ্যাসপারাগাস ভিটামিন এ (A), সি (C), ই (E), কে (K), ফোল্ট, কলিন, এবং ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস এবং পটাসিয়াম খনিজ পর্দাথের প্রধান উৎস।
জেজু ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, কোরিয়া থেকে বিজ্ঞানীরা young shoots নিয়ে পরীক্ষা চালিয়ে পেয়েছেন, এবং অ্যাসপারাগাসের পাতা হেপাটোমার সেল বৃদ্ধি দমন করতে সাহায্য এবং প্রতিক্রিয়াশীল অক্সিজেন (ROS) এবং অন্যান্য কোষের বিষাক্ত পদার্থ যেমন হাইড্রোজেন পারক্সাইড, ইথানল ইত্যাদি কমাতে সাহায্য করে।
স্বাস্থ্যকর লিভারের জন্য অ্যাসপারাগাস (Asparagus) খাবার নিয়ম ঃ
- আপনার শরীরের জন্য প্রতি দিনে 16-32 মিলিগ্রাম।
১৪. ওয়ালনাট (Walnut)
কিভাবে সাহায্য করেঃ
ওয়ালনাট এ সুস্থ ফ্যাট সমৃদ্ধ, যা anti-inflammatory এর বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আমেরিকান বিজ্ঞানীরা গবেষণায় পেয়েছেন যে, যখন উচ্চ চর্বিযুক্ত খাদ্য লিভারে প্রবাহিত হয়, তখন ওয়ালনাট হিপ্যাটিক ট্রাইগ্লিসারাইড হ্রাস করে।
লিভার হোমোস্টাসিসের সাথে জড়িত এনজাইমগুলির মাত্রা কমিয়ে আনে এবং হেপাটিক প্রদাহ জড়িত জিন (genes) দমন করে।
স্বাস্থ্যকর লিভারের জন্য ওয়ালনাট (Walnut) খাবার নিয়ম ঃ
- ৭ টি ওয়ালনাট প্রতিদিন।
১৫. রেড ক্যাবেজ (Red Cabbage)
কিভাবে সাহায্য করেঃ
রেড ক্যাবেজ অ্যান্টিঅক্সিজেন্ট (antioxidants) এবং anthocyanin এ পরিপূর্ণ। বিজ্ঞানীরা, চর্বিযুক্ত একটি উচ্চ কোলেস্টেরল খাদ্য এবং তারপর ২৫০-৫০০ মিগ্রা রেড ক্যাবেজ খেতে বলেন। তারা গবেষণায় পেয়েছেন, রেড ক্যাবেজ কোলেস্টর সমৃদ্ধ খাদ্য দ্বারা উৎপন্ন রোগকে দমনে সাহায্য করে এবং জীবাণুর বিরুদ্ধে লিভারকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
স্বাস্থ্যকর লিভারের জন্য রেড ক্যাবেজ (Red Cabbage) খাবার নিয়ম ঃ
প্রতিদিন এক কাপ করে রেড ক্যাবেজ, ২-৩ বার প্রতি সাপ্তাহে।
১৬. জাম্বুরা (Grapefruit)
কিভাবে সাহায্য করেঃ
জাম্বুরায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এ পরিপূর্ণ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। জাপানি বিজ্ঞানী একটি পরীক্ষা চালায়, যেখানে তারা চর্বিযুক্ত রস, অরবালকো রস এবং চিনি মিশ্রণের পরীক্ষা করেন। জাম্বুরা জুস খাওয়ার ফলে লিভারের এনজাইমগুলো খুব দ্রুত সক্রিয় হয়ে উঠে যা হ্যাপ্যাটিক অক্সিজেন থেকে রক্ষা করে।
স্বাস্থ্যকর লিভারের জন্য জাম্বুরা (Grapefruit) খাবার নিয়ম ঃ
- ½ -১ গ্লাস জাম্বুরা রস (তাজা রস এবং চিনি বা কৃত্রিম মিষ্টি ছাড়া) প্রতিদিন।
১৭. আস্ত শস্যদানা (Whole Grains)
কিভাবে সাহায্য করেঃ
পুরো শস্য, যেমন রাই, বার্লি, বাদামি চাল, কুইনো ইত্যাদি যা চর্বি কমাতে সাহায্য করে। এগুলো সকল ধরনের লিভারের রোগ থেকে লিভারকে মুক্ত রাখে।
স্বাস্থ্যকর লিভারের জন্য শস্য (Whole Grains) খাবার নিয়ম ঃ
- প্রতিদিন আস্ত শস্যদানা ২-৩ টি
১৮. টমেটো (Tomatoes)
কিভাবে সাহায্য করেঃ
টমেটোর রস/জুস আপনার লিভারের জন্য খুবই উপকারী। টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা লিভারের বিভিন্ন রোগ এবং লিভারকে বিভিন্ন আঘাতে থেকে রক্ষা করে এবং লিভারকে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সুরক্ষা করতে সাহায্য করে।
গবেষকরা কার্সিনোজেন সাথে চর্বি এবং তারা ৬ সপ্তাহের জন্য টমেটো নিয়ে পরীক্ষা করেন। তারা গবেষণা করে পেয়েছেন, টমেটো কলেস্টোরলের মাত্রা নির্ণয় করে ফলে লিভারের ক্ষতি হ্রাস করে। তাই লিভারের ঝুঁকি কমাতে টমেটো খাওয়া উচিত।
স্বাস্থ্যকর লিভারের জন্য টমেটো (Tomatoes) খাবার নিয়ম ঃ
- প্রতিদিন এক গ্লাস টমেটো জুস।
- প্রতিদিন ২-৩ টি টমেটো।
১৯. ড্যানডেলিওন (Dandelion)
কিভাবে সাহায্য করেঃ
ড্যানডেলিওন হল একটি ওষুধি ফুল এতে রয়েছে অ্যান্টিএইয়াম্যাটিক (antirheumatic) এবং diuretic বৈশিষ্ট। বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন যখন ড্যানডেলিওন উচ্চ কোলেস্টরের খাদ্য খরগোশ কে খাওয়ানো হয়, তখন প্লাজমা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টটি সক্রিয় হয় এবং লিপিড এর মাত্রা হ্রাস পায়। তাই, লিভারের সমস্যা দূর করার জন্য ড্যানডেলিওন ব্যবহার করা যেতে পারে।
স্বাস্থ্যকর লিভারের জন্য ড্যানডেলিওন (Dandelion) খাবার নিয়ম ঃ
- ডোজ নির্ধারণের জন্য ডাক্তারের পরমর্শ নিন।
২০. ব্রাসেলস স্প্রাউট (Brussels Sprouts)
কিভাবে সাহায্য করেঃ
ব্রাসেলস স্প্রাটস ভিটামিন এ, কে, সি, ফ্লেট এবং ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়ামে পরিপূর্ণ। গবেষকরা গবেষণা করে পেয়েছেন, ব্রাসেলস স্প্রাউট অক্সিডেটিভ চাপ কমাতে সাহায্য করে।
স্বাস্থ্যকর লিভারের জন্য ব্রাসেলস স্প্রাউট (Brussels Sprouts) খাবার নিয়ম ঃ
- ½-১ কাপ, প্রতি সপ্তাহে ২-৩ বার।
এই ২০টি খাবার আপনার লিভারকে সুস্থ রাখবে এবং যে কোন লিভারের রোগ থেকে মুক্ত রাখতে সাহায্য করবে এছাড়াও লিভারের detoxification সাহায্য করে। আপনি আপনার প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে চাইলে আপনার দৈনন্দিন খাদ্যের তালিকায় এই খাবারগুলো অন্তর্ভুক্ত করুন।
আপনার স্বাস্থ্যের যত্ন নিন। আর আমাদের সাথে থাকুন!
সতর্কতা: এই ২০টি খাবারে র যেকোনো একটি বা অনেক গুলো হয়তো আপনার শরীরে সংবেদনশীল থাকতে পারে বা আপনার অন্য কোনো রোগের জন্য বিধিনিষেদ থাকতে পারে তাই খাবার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে খাবেন।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.