এইতো বেশ কিছুদিন ধরে শীতের একটা আবেশ ছড়িয়ে পড়লো পুরো দেশে। যদিও এখনকার শীত অতটা জাঁকালো নয়, তবুও! অন্দরমহলে রাজত্ব বিস্তার করে তবেই না বসন্তকে আসার সুযোগ করে দিলো বিদায়ী ঋতু শীতকাল। আর বসন্তটাও বলিহারি! তারিখ না জানলে তো বোঝাই দায় যে চলমান ঋতুটার নাম বসন্ত। ঘাবড়াচ্ছেন? ভাবছেন শিরোনাম বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ষড়ঋতুর রচনা লিখতে বসেছি? একদম না।
আজকের আলাপনের বিষয় ত্বক নিয়ে। মুখ ধোওয়ার সময় প্রায়শই আমরা কিছু ভুল করি, যা আমাদের ত্বককে ভেতর থেকে মলিনতায় ঢেকে দেয়। ভুলগুলো পাকাপোক্ত হয় এই ঋতুগুলোর খেয়ালেই। ভাবছেন, কেমন করে? চলুন খোলাসা হয়ে যাক –
ঋতু ভিত্তিক মুখের যত্ন নিয়ে একটু কথা
আমরা যে জাতি হিসেবে অলস, এ তো নতুন নয় বরং জানা কথা। তাই না? কতটা অলস এ আর বলতে! ধরুন, মুখের যত্ন কিংবা সাধারণ মুখ ধোওয়া নিয়েও যদি বলি, সেখানেও কিন্তু আমাদের আলসেমি তুঙ্গে! এমনও হয়, শীতকালে ঠাণ্ডার ভয়ে পানিই ছোঁয় না অনেকে। আর গরমে ঘষে-মেজে পারলে ছাল-চামড়া তুলে নেয়! প্রশ্ন হলো, এগুলো কি আদৌ নিয়ম?
নিয়ম অনিয়মের পালাক্রমে একটা নিয়ম জানিয়ে রাখি – মুখ ধোওয়ার মতো সাধারণ বিষয়ে কিছু নিয়ম কিন্তু আছে। আর এই নিয়ম এক দুই দিনের তো নয়ই বরং ঋতু ভেদে সবসময় নিয়ম মেনেই নিয়মিত মানতে হয় এই নিয়ম। যার অনিয়মে তাৎক্ষণিক সমস্যা সহ দীর্ঘকালীন সমস্যারা দল বেঁধে হাজির হতে একটুও সময় নেয় না।
অনীহা? না আলস্য?
অনেকে আলস্যের কারণে হোক আর গুরুত্ব না দেওয়ার কারণেই হোক, মুখ ঠিকঠাক ধুতেই চান না। কোন রকম পানির স্পর্শ নিয়েই দায় সারেন। এ কি আদতে মুখ ধোওয়া? আমরা অনেকে নিয়ম জানি না অথবা বলা যায়, জানলেও মানি না। অথচ সমস্যার মুখ দেখলেই আয়োজন করে ভাবতে বসে যাই – “কী হলো? কেন হলো?” ওদিকে সমাধান যে সমস্যার জন্ম নেওয়ার আগেই করা যেতো, তা কিন্তু ভুল করেও ভাবতে যাই না। আর এতে ফলাফল কী দাঁড়ায় জানেন? ব্রন, বলিরেখা, বয়সের ছাপ, শুষ্কতা, তেলচিটে ভাব ইত্যাদি। কি? সমস্যাগুলো পরিচিত লাগছে না? এই সমস্যার শুরুটা কোত্থেকে হয়, জানেন? আলস্যের দাপটে ভুলভাবে মুখ ধোওয়া থেকে।
মুখ ধোওয়ার কিছু বিষয় যা আপনার জানা প্রয়োজন
একটা মজার তথ্য কি জানেন? অনেকে তারুণ্য বোঝাতে সাজসজ্জা করেন। কিন্তু ত্বক বিশেষজ্ঞরা বলেন, ঠিকভাবে যদি মুখ ধোওয়া হয়, তাহলে সেই ধোওয়াটাই ত্বককে বেশ ভালো রাখে এবং তারুণ্য বাড়িয়ে তোলে। আর এজন্য একটা সুন্দর ত্বক ধারণ করতে প্রয়োজন স্বাস্থ্যকর কিছু অভ্যাসের। যেন-তেন নয়, মুখ ধোওয়াকে ভাবতে হবে অবশ্য করণীয় কাজ হিসেবে। কারণ দরজায় উঁকি মারছে গ্রীষ্ম। খেয়াল করে দেখেছেন? বাতাসে আদ্রতা কিন্তু এখন মিশ্র।
এই মুখ ঘামাচ্ছে তো এই ত্বক খুব করে টানছে। বাড়তি হিসেবে যোগ হচ্ছে মুখে বাড়তি তেলের আগমন। বিরক্তিকর ব্যাপারই বটে, তাই না? তবে যত বিরক্তিকরই হোক না কেন, এসব কারণে বারবার মুখ ধোওয়ার কথা যদি ভেবে থাকেন তবে তা বেমালুম ভুলে যান।
কারণ প্রতিটা ত্বকে একটা স্বাভাবিক মাত্রার তেলতেলে ভাব থাকে, যাকে ময়েশ্চার বলে। বারবার পানির স্পর্শ পেলে এই তেলতেলে ভাবটা চলে যায়। এতে করে ত্বক খুব দ্রুতই তেল হারিয়ে রুক্ষ, শুষ্ক, প্রাণহীন হয়ে যায়। এবার তাহলে প্রশ্ন, বারবার মুখ ধুয়ে নিলে ত্বকের ক্ষতি, আবার কম ধুলেও ক্ষতি, তাহলে দিনে কিংবা রোজ কতবার মুখ ধোওয়া উচিৎ আমাদের?
আর কীভাবে?
প্রশ্নেরা উঁকি মারছে কি?
চলুন জেনে নেওয়া যাক :
মুখ ধোওয়ার সময় যে ভুলগুলো আপনার ত্বককে মলিন করে তোলে (Common Mistakes Made When Washing Your Face)
১. মুখ কীভাবে ধুবেন?
অনেকে মুখ ধুতে ক্লিনজার ব্যবহার করেন। খুব ভালো বিষয় এটা। তবে এখানে একটু খেয়াল রাখার বিষয় আছে। আর তা হলো, যে ক্লিনজার দিয়েই মুখ ধুয়ে নেন না কেন, সেই ক্লিনজার যেন মুখ ধোয়ার পরে ভালোভাবে ধুয়ে চলে যায়। অর্থাৎ ত্বকে সেই ক্লিনজারের বিন্দুমাত্র কণাও যাতে আঁটকে না থাকে।
অনেকে তাড়াহুড়োয় কোনমতে ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে নেন। এতে ক্লিনজারের আঠালো অথবা পিচ্ছিল বিষয়টা মুখে আঁটকে থাকে। এতে কী হয় জানেন? ত্বকে আঁটকে থাকা এই ক্লিনজারই আরও বেশি ধুলা, বালি, ময়লা টেনে আঁটকে রাখে। আর তাতে কিন্তু মুখের ত্বকের ক্ষতিটাই হয়। অতএব, যা-ই ব্যবহার করুন না কেন, মুখের ত্বকে এর প্রমাণ রাখার কোন প্রয়োজন নেই। ধুয়ে নেবেন। কেমন?
২. যতই মুখ ধোওয়া, ততই ভালো?
আমরা অনেকেই ভাবি বেশি বেশি মুখ ধুলেই বুঝি মুখের ত্বকের জন্য ভালো হবে। এটা আপাতত ভালো মনে হলেও আদতে তা কিছুটা সমস্যার জন্ম দেয়। বারবার সাবান দিয়ে মুখ ধুয়ে নেন, এরকম অনেকেই আছেন। এতে কী সমস্যা হয়, জানেন? ত্বকে স্বাভাবিক তেলের পরিমাণ একদমই কমে যায়।
আবার যদি একদমই মুখ না ধোওয়া হয়, কিংবা স্বাভাবিক এর থেকে কম ধোওয়া হয় তবে সেক্ষেত্রে কিছু ছত্রাক জন্ম নেয় মুখের ত্বকে যারা ত্বকের সমস্যা বাড়িয়ে দেয়।
এখন জিজ্ঞাসা থাকতে পারে, কতবার মুখ ধোয়া জরুরি!
উত্তর – ২ বার।
দিনে কেবল ২ বার যদি ঠিক নিয়মটি মেনে মুখ ধুয়ে নিতে পারেন, একাধিকবারের কী প্রয়োজন বলুন তো? এখন কোন দুই বার মুখ ধুবেন, সেটা হলো প্রশ্ন! সমস্যা নেই জানিয়ে দিচ্ছি-
প্রথমবারের মুখ ধোয়াটা হবে সকালে, ঘুম থেকে উঠে। আর দ্বিতীয় এবং শেষ বারের মুখ ধোয়াটা হবে বাইরে থেকে ফিরে, অথবা আপনি যদি বাসাতেই অবস্থান নেন সেক্ষেত্রে ঘুমের আগে একবার মুখ ধুয়ে নেবেন। তবে যে হারে গরম পড়া শুরু হয়েছে, এতে একাধিকবার মুখ ধোওয়ার আবশ্যিকতা অস্বীকার করাই যায় না।
সেক্ষেত্রে পরামর্শ এই মূল দুই বারের মাঝে যদি মুখ ধোওয়ার প্রয়োজন অনুভব করেন তবে সেটা সাবান দিয়ে কিন্তু ভুলেও নয়। পরিষ্কার পাতলা কাপড় কিংবা টিস্যু অথবা মুখে ঝাপটা মেরে পানি দিয়ে ধুয়ে নিলেই হয়ে যাবে। কিন্তু এখানে একটু সাবধান হবেন। বেশি নয়, কেমন? অতিরক্ত পানিও মুখের ত্বকের তেল কেড়ে নেয়।
৩. মুখ ধুয়েই কি ময়েশ্চারাইজার মাখেন?
ময়েশ্চারাইজার এর বিষয়টা হচ্ছে – ত্বকে স্বাভাবিক তেলতেলে ভাব বজায় রাখা। ভালো একটি ময়েশ্চারাইজার আপনার ত্বককে এই অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যাওয়া থেকে কিন্তু বাঁচিয়ে রাখে। তাই এর গুরুত্ব অস্বীকার করার উপায়ই নেই।
এক্ষেত্রে আরেকটু বিষয় আছে। সেটা হলো, সকলের ত্বক কিন্তু এক নয়। খেয়াল করে দেখবেন, কারও ত্বক বেজায় শুষ্ক। আবার অনেকের ত্বক তেলেতেলে। সেক্ষেত্রে ত্বক এর ধরণ বুঝে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হয়। যাদের ত্বক তেলতেলে, তারা ওয়াটার বেইজ এর ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করে উপকার পাবেন। আবার যাদের ত্বক শুষ্ক, তারা অয়েলি টাইপ ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন। আর এই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে মুখ ধোয়ার পরপরই।
এবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি দেই- বাজারে যত ধরণের ময়েশ্চারাইজার আছে এদের মধ্যে যদি সবচেয়ে ভালো ময়েশ্চারাইজার পেতে চান তবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে নারিকেল তেল বানিয়ে নিন। এর চেয়ে ভালো ময়েশ্চারাইজার আর নেই। উপকার এর কথা জানতে চাইলে বলবো, ব্যবহার করেই দেখুন। নারিকেল তেলে সমস্যা হলে অলিভ অয়েলও মাখতে পারেন মুখে। এটাও একই কাজ করে। পড়ুন: ঘরোয়া উপায়ে ত্বকের বলিরেখা দূর করুন
৪. মুখ ধোওয়ার ক্ষেত্রে কেমন পানি ব্যবহার করা উচিৎ?
নিশ্চিত করে বলতে পারি, এই প্রশ্ন আপনাদের ভাবাবে। বাড়তি হিসেবে পালটা প্রশ্ন মাথায় আসতেও পারে- “পানির আবার ধরণ কী? মুখ ধোওয়া হলেই হলো!”
একটা তথ্য জানিয়ে রাখি, যে পানি আপনি পান করতে পারবেন না, সে পানি মুখ ধোওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করতেও যাবেন না। মুখ ধোওয়ার ক্ষেত্রে পানির ধরণের গুরুত্বটা একটু কি বুঝাতে পারলাম? আসুন খোলাসা করছি-
আমরা অনেকেই, বেশিরইভাগই মুখ ধোওয়া নিয়ে মোটেও সচেতন নই। সেখানে মুখ ধুয়ে নিতে গেলে কী পানি ব্যবহার করছি, তাও ভেবে দেখি না। অথচ এই মুখটাই বেশি দেখা যায় বাইরে থেকে। সব বাদ দিন, বাইরে থেকে ফিরে কিংবা আয়নার সামনে দাঁড়ালে নিজের মলিন মুখ দেখতে ভালো লাগবে আপনার? এ জন্যই প্রয়োজন যত্নের। যা হবে সাধ্যের মধ্যে।
একটু ঠাণ্ডা পড়লেই অনেকে ধোয়া ওঠা গরম পানিতে মুখ ধুয়ে নেন। আবার ভিষণ গরমে হিমশীতল পানিতে মুখ ধুয়ে নেন। আদতে এই প্রচণ্ড গরম কিংবা ঠাণ্ডা, দুই-ই মুখের ত্বকের জন্য ভয়াবহ ক্ষতিকর। এটা কিন্তু মুখের ত্বককে স্থায়ীভাবে শুষ্ক করে তোলে। একটু চিন্তা লাগছে না এসব জেনে? ভয়ের কিছু নেই। মুখ ধোওয়ার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি ব্যবহার করবেন। এটিই ত্বকের জন্য সবচেয়ে ভালো হবে। এবং ত্বককে ভালো রাখতে বেশ কাজে দেবে। বিশেষ করে পরিশোধিত পানি দিয়ে মুখ ধোওয়ার অভ্যাস করলে এটি আপনার ত্বকের জন্য সবচেয়ে বেশি ভালো হবে।
৫. ক্লিনজারের ক্ষেত্রে ভুল করছেন না তো?
মুখ ধোওয়ার ক্ষেত্রে ক্লিনজারের ব্যবহারের কথা ইতোমধ্যে জানেন আপনারা। কিন্তু এটা কি জানেন? ত্বকভেদে ক্লিনজারও কিন্তু ভিন্ন হয়। এক্ষেত্রে একেক ত্বকের জন্য একেক ক্লিনজার ব্যবহার করাই উচিৎ। আর এ জন্য চাই ঠিকভাবে ক্লিনজার বেছে নেওয়া, যেটি আপনার ত্বক গ্রহণ করতে পারবে। আর তারও আগে আপনার জানতে হবে, আপনার ত্বকের ধরণ।
ক্লিনজার ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু কথা না বললেই নয়, আর তা হলো- প্রতিটা পণ্যের কিছু ব্যবহারবিধি থাকে। কোন পণ্য কত পরিমাণে, দৈনিক কতবার, কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, তার একটা নির্দেশাবলি থাকে। এটা মেনে চলা দরকার। নির্দেশাবলিতে দেওয়া নিয়মের হেরফের হলে কিন্তু ত্বক ধীরে ধীরে ড্যামেজ হয়ে যায়। এটা মাথায় রাখবেন। আর অবশ্যই বাইরের কিনে আনা পণ্যের মেয়াদ এর তারিখ দেখে নেবেন। মেয়াদ থাকার মধ্যেই পণ্য শেষ করবেন।
আর যদি ঘরোয়া উপায় জানতে চান তবে বলবো- অ্যালোভেরা, কাঁচা হলুদ এর বিকল্প নেই।
৬. মুখ ধোওয়ার আগে হাত ধোওয়া জরুরি!
মুখ ধোওয়ার আগে আয়োজন করে যে হাত ধুয়ে নিতে হয়, এ কি আপনারা জানতেন? কিংবা জানলেও মানতেন? ভাবছেন, প্রয়োজনিয়তা কী এর? আসুন বলছি-
অনেকের যুক্তি এমন, হাত দিয়েই যেহেতু মুখ ধোওয়া হচ্ছে তাহলে হাত কেন আগে ধুয়ে নিতে হবে! উত্তর হলো, আমাদের হাত কি জীবাণুমুক্ত? হলে কতটা? যে হাত মুখে লাগাবেন, সেই হাতের জীবাণু কি মুখে যাবে না? প্রশ্নগুলো কি আপনাদের একটু হলেও ভাবাচ্ছে, পাঠক? যদি উত্তর হ্যাঁ হয় তো এই লেখন স্বার্থক। ভাবনা থেকেই না হয় ভালো কিছু হোক। তবু হোক।
প্রসঙ্গে ফিরি- মুখ ধোওয়ার আগে হাতটা ভালো করে ধুয়ে নেবেন। এরপর এই হাত মুখে লাগলেও সমস্যা নেই। মুখ ধুয়ে নেবেন আলতো হাতে। মনে রাখবেন, এটা আপনার মুখের ত্বক। কাদামাটির স্তুপ না যে দলাই-মলাই করবেন।
৭. মুখ মুছতে তোয়ালে? নো ওয়ে!
আচ্ছা, মুখ ধোওয়ার পরে আপনারা কি তোয়ালে ব্যবহার করেন? সেক্ষেত্রে কীভাবে ব্যবহার করেন? ঘষে ঘষে? উত্তর হ্যাঁ হলে, সর্বনাশ করছেন!
অনেকেই এই কাজটা করেন। তড়িঘড়ি করে মুখ ধুয়ে এসেই খুব জোরে জোরে তোয়ালে দিয়ে মুখ ঘষেন। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে এতে ত্বকের অস্বস্তি সৃষ্টিকারী পানি, ধুলো-বালি দ্রুত মুছে যায়। আদতে এটি ত্বকের শুষ্কতা বাড়াতে সাহায্য করে। অনেক ক্ষেত্রে বয়সের আগেই দ্রুত ত্বকের চামড়া ঝুলে পড়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে। এক্ষেত্রে করণীয় হলো – নরম কাপড়ে মুখ মোছার অভ্যেস করা। এবং আলতো করে চেপে পানি মুছে নেওয়া। ভুলেও ঘষাঘষি করবেন ন।
আরেকটা ব্যাপার, মুখ মোছার কাপড় যেন নরম এবং পরিষ্কার হয়। নইলে এতক্ষণ যা যা বুঝিয়ে এলাম, প্রতিটা ধাপই ব্যর্থ হতে বাধ্য যদি আপনি তোয়ালে সংক্রান্ত এই ভুল পদক্ষেপ গুলো অব্যাহত রাখেন।
৮. সাজগোজ করেন?
এতক্ষণের লেখনের আলাপনে সবটুকু নারী ও পুরুষের জন্য থাকলেও এখনের আলাপনটুকু কেবল নারীদের জন্য। একটু একপেশে আলাপ করবো এখানে। আচ্ছা, নারীদের বলছি, সাজতে ভালোবাসেন? সাজেন আপনারা?
বাঙালি হোক কিংবা না হোক, একটু কাজল, ঠোঁটকে সামান্য রাঙানো এটুকু তো একটা নারী করতেই পারে, তাই না বলুন? কিংবা ধরুন মাঝে মাঝে একটু ভারি সাজ, ক্ষতি তো নেই। বরং সাজলে একেকটা নারীকে যে কতটা মায়াবতী লাগে, সে আর বলতে? তো সেই মায়াবতীদের বলছি, আয়েশ করে সাজেন কিংবা সাজতে পছন্দ করেন এমন অনেকে আছেন। কিন্তু এই সাজগোজের পর্ব শেষে মুখ থেকে এই কৃত্রিমতা তুলে ফেলার অভ্যেস আছে তো? অনেকে এই সাজ নিয়েই দিব্যি ঘুমিয়ে যান। এতে ক্ষতিটা হয় ত্বকের, বিশ্বাস করুন। তাই এইখানে সাজগোজ নিয়ে একটু বিশদে যাবো। দরকার আছে বইকি!
যারা সাজগোজ করেন, তারা অন্তত এটা জানেন যে মূলত সাজগোজের এই উপাদানের প্রতিটাই কৃত্রিম। আর সকল ধরণের কৃত্রিম পণ্য আমাদের ত্বকের জন্য কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে ভালো ফল এনে দেয় না। ফলে ব্রণ, শুষ্কতা, তৈলাক্তভাব সহ অনেক ধরণের সমস্যা কিন্তু দেখা যায় যা আপনার মুখের ত্বকের ধীরে ধীরে ড্যামেজ এর দিকে যাওয়ার অন্যতম কারণ। এজন্য কী করবেন জানেন? যেখানে যেখানে কৃত্রিম প্রসাধনী লাগাবেন, সে জায়গা ভালো করে ধুয়ে নেবেন।
এক্ষেত্রে নারিকেল তেল, জলপাই তেল ব্যবহার করলে ভালো ফল পাবেন। আর সেটা ব্যবহার করতে হবে অবশ্যই টিস্যু কিংবা তুলা দিয়ে। এক্ষেত্রে তুলা এবং টিস্যুতে তেল লাগিয়ে মুখ থেকে প্রসাধনী তুলে ফেলতে হবে। তারপর আপনার পছন্দমতো ক্লিনজার দিয়ে ধুয়ে নিয়ে নরম কাপড়ে আলতো আলতো চাপ দিয়ে মুছে নেবেন। আর ত্বক মুছেই তাতে ময়েশ্চারাইজার মাখাবেন। এভাবেই রাতে ঘুম দিন। আর সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখুন ত্বক কতটা কোমল আর মোলায়েম হয়ে উঠেছে।
মনে রাখা প্রয়োজন!
এখন যে বিষয় নিয়ে বলবো, বলছি না তা কেউ জানে না। জানে, কিন্তু নানান ধরণের ব্যস্ততায় মনে রাখার ফুরসত মেলে না তাই মনে করিয়ে দিতেই লেখন শেষে এই ক্ষুদ্র আয়োজন।
যখন মুখ ধুতে নেবেন, চুলটা বাঁধবেন ভালো করে। খেয়াল করে দেখবেন, যেদিকটায় চুল থাকে সেদিকটায় আমরা তেল আর শ্যাম্পু ছাড়া অন্য কিছু মাখতে যাই না। তাই না? এক্ষেত্রে ধরুন আপনি মুখ ধুয়ে নিতে গেলেন আর গাল বেয়ে চুল পড়ে রইলো। আপনি ঐ চুল তো সরালেনই না বরং গালের ঐ জায়গা ঠিকঠাক ধোওয়া হলো না। হয় না এমন, বলুন? কি মিললো তো অভ্যাসটা? চুলটা না-হয় এবার থেকে বেঁধেই নিলেন!
আরেকটা বিষয় একটু জানিয়ে রাখি , বাড়িতে কিছু ঘরোয়া উপাদান দিয়ে এমন কিছু বানিয়ে ফেলুন যা আপনার ত্বকের উপর দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব ফেলবে না। এবং বয়সও ধরে রাখবে। একটা তথ্য জানিয়ে দেই- আমাদের কিছু ঋতুভিত্তিক রোগ বালাই বা শারীরিক উপসর্গ থাকে। এক্ষেত্রে প্রতিষেধক হিসেবে আমরা খুঁজতে যাই কৃত্রিম কিছু। আসলে, যখন যে ঋতু চলে আর সেই ঋতুতে যত ফল আর শাক, সবজি পাওয়া যায়, সেগুলোই কিন্তু ঐ ঋতুতে শারীরিক সব সমস্যার সমাধান।
এটা কিন্তু আপনি চাইলেই পরীক্ষা করে দেখতেই পারেন। প্রাকৃতিক যেহেতু তাই নিশ্চিত করেই বলা যায়, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তো চলুন, এবার থেকে না হয় প্রকৃতির উপরেই নিজেদের সুস্থ রাখার ভার ছেড়ে দেই! আপত্তি নেই তো?