আপনি আপনার চোখ সুন্দর ভাবে সাজাতে চান কিন্তু অনেক সময় তা আর হয়ে না। দেখা যায়, কখনো আইলাইনারের সেইফটা সঠিকভাবে আসছে না, কখনো মোটা, আবার কখনো চিকন যেটা আপনি চান না।
যার কারণে আপনি বিয়ে বা পার্টিতে যোগ দিতে চাইলেও তা আর হয়ে উঠেনা। স্বাভাবিক আপনার মন খারাপ হবে।
আর মন খারাপ হবে না, আমি আজ আপনাদের শেখাব কিভাবে খুব সহজেই চোখে আইলাইনার দিয়ে চোখকে নিখুঁতভাবে সাজাতে পারেন।
আইলাইনার দেয়ার জন্য যে জিনিসগুলো প্রয়োজন তা হলঃ
১. আইলাইনার (Eyeliner )
২. প্রিমার (Primer)
৩. কনসিলার (Concealer)
৪. আইলাইনার ব্রাশ
কিভাবে আইলাইনার ব্যবহার করতে হবে তা জানার আগে আপনাকে অবশ্যই আইলাইনারের কত রকম ধরন আছে তা জানতে হবে
আইলাইনারের ধরন
জেল আইলাইনার (Gel Eyeliner) :
যারা প্রথম দিকে ব্যবহার করবেন, তাদের কাছে এটা দিতে একটু কষ্ট হতে পারে কিন্তু পরে এই আইলাইনারটিই আপনার কাছে খুব প্রিয় হয়ে উঠবে। যারা চোখে ক্যাটস আই (Cats Eye) করতে ভালবাসেন তাদের জন্য এই আইলাইনারটি একদম উপযুক্ত। এই আইলাইনার সধারনত কৌটাতে থাকে, তাই এটি চোখে লাগাতে আপনার একটি ব্রাশ লাগবে। ব্রাশ ব্যবহার করার ফলে এই লাইনার দিয়ে আপনি খুব সহজেই যেকোন শেইপে চোখ আঁকতে পারেন।
লিকুইড আইলাইনার Liquid Eyeliner :
লিকুইড আইলাইনার চোখে বিভিন্ন শেইপ তৈরির জন্য সেরা। লিকুইড আইলাইনার দুই ধরনের হয়ে থাকে।
- একটি হচ্ছে ছোট বোতলে লিকুইড লাইনারের সাথে একটি ছোট ব্রাশ ডুবানো অবস্থায় আটকান থাকে এবং
- অপরটি হচ্ছে মার্কার টাইপ পেন। (যদি আপনি প্রথম আইলাইনের ব্যবহার শুরু করেন তাহলে এই লাইনারটি আপনার জন্য উপযুক্ত)
পেনসিল আইলাইনার :
সাধারণত আমরা সকলেই পেনসিল আইলাইনার প্রথমে ব্যবহার করে থাকি। এটি চোখের ওয়াটার লাইন (water line) রিশেইপ করতে সাহায্য করে এবং এই আইলাইনার চোখে স্মোকি লুক তৈরি করার জন্য উপযুক্ত।
কিভাবে আইলাইনার চোখে প্রয়োগ করবেনঃ
চলুন এবার আমরা কয়েকটি ধাপে তা দেখে নিই।
ধাপ ১: আপনার চোখ প্রস্তুত করুন
আইলাইনা দেয়ার এটি প্রথম পদক্ষেপ এবং এতি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদখেপ। আপনার মুখ পরিষ্কার করার পর, মুখে একটি ময়েশ্চারাইজার (moisturizer) লাগান এবং চোখের চারপাশে একটি আই ক্রিম লাগান। এই ক্রিমটি আপনার চোখের বলিরেখা এবং চোখের চারপাশের বিবর্ণতা ঢাকতে সাহায্য করবে।
ধাপ ২: পরিষ্কার বেস (Base) দিয়ে শুরু করুন
একটি মসৃণ এবং পরিষ্কার বেস তৈরির জন্য প্রথমে অল্প পরিমান প্রাইমার (primer) নিয়ে চোখের পাতা, চোখের নিচে এবং চোখের চারপাশে যতটুকুতে আই মেকাআপ করা হয় তত টুকুতে লাগাতে হবে। কারণ এই প্রাইমারের প্রধান কাজ হল ত্বককে আরো মসৃণ করে তুলা যাতে মেকআপ করতে সহজ হয়। এটি মেকআপকে খুব নিখুত করতে সাহায্য করে এবং মেকআপ দীর্ঘসময় স্থায়ী করতে সাহায্য করে।
চোখের পাতার উপরে এবং নিচে একটি কনসিলার লাগান। এটি ভালভাবে মিশিয়ে নিন এবং এর উপর সেটিং পাউডার দিয়ে কনসিলারটি সেট করে নিন।
ধাপ ৩: লাইন টানুন চোখের পাতায় নিখুঁতভাবে
এখন আমরা যে কাজটি করবো সেটি হচ্ছে চোখের পাতায় আইলাইনার দিব। আপনার আইলাইনারের সাথে যে ব্রাশটি আছে সেটি ব্যবহার করতে পারেন কিংবা নতুন কোন ব্রাশ কিনতে পারেন।
আপনার চোখের পাতার উপর থেকে একটি লাইন টানা শুরু করুন। আপনি অবশ্যই ছোট ছোট লাইন এবং স্ট্রোক দিয়ে শুরু করবেন। ছোট ছোট স্ট্রোক আপনার চোখে খুব সুন্দর ফিনিশিং দিবে। যদি আপনি একবারেই পুরো লাইন আঁকতে যান তাহলে চোখে খুব মোটা লাইনার তৈরি হবে এবং দেখতে খুবই অদ্ভুত দেখাবে। তাই ছোট ছোট স্ট্রোকের মাধ্যমে লাইন আঁকা ভালো। এখন প্রথম চোখে আইলাইনার দেয়া হয়ে গেলে এবং আপনি এটি নিয়ে সন্তুষ্ট হলে ওপর চোখেও ঠিক একই ভাবে লাগান। চেষ্টা করবেন যাতে দুই চোখের আইলাইনার একই রকম হয়।
এভাবে আপনি আপনার চোখে খুব সহজ ধাপে আইলাইনার দিতে পারেন।
কিন্তু যদি আপনি আরো এক ধাপ আগাতে চান তাহলে নিচের ধাপটি পড়ুন।
ধাপ ৪: উয়িং ইট আউট (Wing It Out!)
আমি শুধু চোখের পাপড়িতেই আইলাইনার দিবনা, বরং চোখের পাতায় ও দিব, যাতে করে আমার চোখকে আরো বড়, টানা টানা আর পাখির ডানার মত দেখায়। তার জন্য আমাকে যেটি করতে হবে সেটি হচ্ছে, প্রথমে সঠিক শেইপ পাওয়ার জন্য চোখের নিচের পাপড়ির লাইন অনুসরণ করতে হবে। এবার লাইনার দিয়ে চোখের নিচের পাপড়ির লাইন প্রসারিত করে এমনভাবে টেনে দিতে হবে যাতে নৌকার ধারের মত দেখায় এবং চোখ টান টান হয়। অর্থাৎ কৌণিক ভাবে একটু উপরের দিকে তুলে দিতে হবে। এবার চিকন একটি লাইন টেনে উপরের লাইনের সাথে মিলিয়ে দিতে হবে। এবার আস্তে আস্তে ভিতরে ভরাট করে দিতে হবে। শুরু থেকেই যথেষ্ট সময় নিয়ে আস্তে আস্তে এটি করতে হবে কারন একবার যদি ভুল হয়ে যায় তাহলে আবার প্রথম থেকে শুরু করতে হবে।
ধাপ ৫: লুক সম্পূর্ণ করা
সফলভাবে আপনি আপনার লাইনার উইং আউট করার পর আপনি আপনার নিচের লাইনার কাজল দিয়ে এঁকে নিতে পারেন। এবার চোখের পাপড়িতে মাসকারা লাগিয়ে আপনার মেকআপ সম্পূর্ণ করে নিন।
আইলাইনার লাগানর আরো কিছু টিপস দেয়া হলঃ নিচের টিপসগুলো অনুসরণ করুন।
- যখন আপনি আইলাইনার লাগাতে যাবেন তখন আপনার কনুইটি অবশ্যই কোন কিছুর উপর ভর দিয়ে নিবেন। এতে করে লাইনার লাগানোর সময় আপনার হাত কাঁপবে না,যার ফলে আপনি আপনার আইলাইনারের খুব মসৃণ ফিনিশিং পাবেন। আপনার যদি একটি ড্রেসিং টেবিল থাকে তাহলে তার উপর আপনি আপনার কনুই রেখে আইলাইনার লাগাতে পারবেন।
- আপনি একটি মেকাপ আয়না ব্যবহার করুন। এই আয়না আপনাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করবে। এই আয়নার দুই পাশে দুই রকম কাঁচ থাকে। একপাশে সাধারন আয়না এবং অপর পাশে আঁতশ আয়না থাকে। আমি আতশ আয়নাটাই সবচেয়ে ভাল ব্যবহারযোগ্য মনে করি কারন এই আয়নাতে সাধারন আয়নার তলনায় সবকিছু অনেক বড় এবং কাছ থেকে দেখায় যার ফলে আপনি নিখুঁত এবং মসৃণ ফিনিশিং পাবেন।
- আইলাইনার দেওয়ার সময় সবসময় নিচের দিকে তাকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন, কারন উপরের দিকে তাকিয়ে আইলাইনার দিতে গেলে আপনার লাইনারের শেইপ নষ্ট হয়ে যাবে।
- উইং তৈরির সময় চোখের পাতা কখনো টেনে ধরবেন না। এটা আপনার উইং নষ্ট করে দিবে। ত্বক টেনে না ধরে ছোট ছোট স্ট্রোকের মাধ্যমে আইলাইনার লাগাবেন।
- এরপরেও যদি আপনার আইলাইনার দিয়ে উইং তৈরি করতে কষ্ট হয় তাহলে আপনি একটি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে পারেন এবং এটি চোখের নিচের পাপড়ির লাইনে কৌণিকভাবে ধরে উইং আঁকতে পারেন।
- এছাড়াও আপনি উইং তৈরি করতে টেপ (tape) ব্যবহার করতে পারেন।
প্রথমে যখন আপনি উপরের নিয়মে আইলাইনার ব্যবহার করবেন, তখন কিছুটা সমস্যা হতে পারে। কিন্তু পরে যখন আপনি বার বার প্র্যাকটিস করবেন তখন একদম সহজ হয়ে যাবে এবং আপনি আপনার কাঙ্খিত চোখের ডিজাইন পেয়ে যাবেন।
Rima says
nice