এক সময়কার গুহাবাসী মানুষদের খাবার এখন আবার ট্রেন্ডে? হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন! প্যালিও ডায়েট (Paleo Diet)—যাকে “কেভম্যান ডায়েট” বলেও ডাকা হয়—এই ডায়েট একেবারে প্রাকৃতিক ও প্রাচীন খাবারের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এখনকার দিনে ফাস্ট ফুড, সংরক্ষণকারী আর প্রক্রিয়াজাত খাবারে ভরা দুনিয়ায় শরীর-মন দুটোই ক্লান্ত। কিন্তু যদি বলা হয়—ফিরে যান প্রাকৃতিক খাদ্যে, ফল-মূল, শাক-সবজিতে ভরসা রাখুন, আর সুস্থ থাকুন? সেটাই প্যালিও ডায়েটের মূলমন্ত্র।
চলুন জেনে নিই কেন এই ডায়েট এত জনপ্রিয় হচ্ছে, কী খেতে হবে, কী এড়িয়ে চলতে হবে, এবং আপনাদের জন্য থাকছে ৭ দিনের একটি সহজ ও মজাদার খাবার পরিকল্পনা।

প্যালিও ডায়েট কী?
প্যালিও ডায়েট হল এমন একটি খাদ্যাভ্যাস যেখানে আপনি প্রাকৃতিক, কম প্রক্রিয়াজাত খাবার খান—যেমন ফল, সবজি, মাংস, ডিম, বাদাম, এবং মাছ।
চিনি, দুধ, দানা (grains), ও প্রক্রিয়াজাত খাবার বাদ দিন—এটাই প্যালিওর মূল সূত্র।
পটভূমি: প্যালিওলিথিক যুগে মানুষ যেভাবে খেত, তার ওপর ভিত্তি করে এই ডায়েট তৈরি। এই ডায়েটের মূল লক্ষ্য হলো শরীরের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি রেসপন্স বাড়ানো এবং অতিরিক্ত ওজন কমানো।
১. স্ট্যান্ডার্ড প্যালিও ডায়েট – কোন গ্রেইন, ডেইরি বা প্রক্রিয়াজাত খাবার নয়।
২. ৮০/২০ প্যালিও – ৮০% সময় প্যালিও, ২০% সময় একটু ছাড়।
৩. অ্যাথলেটিক প্যালিও – শারীরিক শ্রম বা ব্যায়ামের ওপর ভিত্তি করে কার্ব বাড়ানো যায়।
৪. আটো-ইমিউন প্যালিও (AIP) – যাদের অটোইমিউন ডিজিজ আছে, তাদের জন্য উপযোগী ভার্সন।
প্যালিও ডায়েটে যা খাওয়া যায়
- মাছ (বিশেষত স্যামন, সারডিন)
- অর্গানিক মাংস
- ডিম (ফ্রি-রেঞ্জ হলে ভালো)
- শাক-সবজি
- ভালো চর্বি (অ্যাভোকাডো, নারকেল তেল)
- ফলমূল
- বাদাম ও বীজ (সীমিত পরিমাণে)
প্যালিও ডায়েটে যা এড়ানো উচিত
- প্রক্রিয়াজাত খাবার (চিপস, সসেজ, কুকিজ)
- চিনি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার
- দধ ও দুগ্ধজাত পণ্য
- শস্য (গম, চাল, কর্ন)
- লেগুমস (ডাল, চনা)
- সয়াবিন ও প্রসেসড তেল
৭ দিনের প্যালিও মিল প্ল্যান
| দিন | নাস্তা | দুপুরের খাবার | রাতের খাবার |
|---|---|---|---|
| ১ম | ডিম ও পালং শাক ভাজি | গ্রিলড চিকেন, অ্যাভোকাডো সালাদ | স্যামন, ব্রকলি স্টিমড |
| ২য় | ফলের স্মুদি (দুধ ছাড়া) | গরুর মাংস | গ্রিলড মাছ, লেটুস সালাদ |
| ৩য় | নারকেল দুধে চিয়া সিড পুডিং | টার্কি র্যাপ (লেটুসে মোড়া) | ডিম ও সবজি অমলেট |
| ৪র্থ | বাদাম-মিশ্রিত ফল | ভেজিটেবল স্যুপ ও গ্রিলড চিকেন | ফ্রাইড ক্যাবেজ ও ফিশ ফিলে |
| ৫ম | অ্যাভোকাডো ও ডিম | মাটন কারি (তেল কম | নারকেল দুধে রান্না করা সবজি |
| ৬ষ্ঠ | বেকড ডিম ও টমেটো | সালমন ও অ্যাভোকাডো | গ্রিলড ফিশ ও লেটুস সালাদ |
| ৭ম | ফলমূল ও বাদাম | ভেজি স্টার ফ্রাই ও মাংস | ডিমের তরকারি ও কুমড়ো ভাজা |
প্যালিও বনাম কেটো ডায়েট
| ফিচার | প্যালিও ডায়েট | কেটো ডায়েট |
| কার্ব গ্রহণ | মাঝারি | খুব কম |
| দুগ্ধজাত পণ্য | নিষিদ্ধ | কিছু অনুমোদিত |
| ফল খাওয়া | অনুমোদিত | সীমিত |
| প্রধান লক্ষ্য | প্রাকৃতিক খাবার | কিটোসিসে যাওয়া |
| ওজন কমানো | হ্যাঁ | হ্যাঁ |
আপনার জন্য কোনটা ভালো?
যদি আপনি প্রাকৃতিক ও কম প্রক্রিয়াজাত খাবার খেতে চান তবে প্যালিও বেছে নিন।
কিটোসিস দরকার হলে বা কার্ব কাটতে চাইলে কেটো আপনার জন্য।
প্যালিও ডায়েটের উপকারিতা
১. ওজন কমায় দ্রুত: প্রাকৃতিক খাবারে কার্ব কম থাকায় দ্রুত ক্যালোরি বার্ন হয়।
২. ইনফ্লেমেশন কমায়: শরীরের প্রদাহ বা ইনফ্লেমেশন কমায়, ফলে জয়েন্ট পেইন, মাথাব্যথা ইত্যাদিও হ্রাস পায়।
৩. হার্ট সুস্থ রাখে: ট্রান্স ফ্যাট আর প্রক্রিয়াজাত চর্বি না খেলে হার্ট ভালো থাকে।
৪. ঘুম ও মন-মেজাজ উন্নত করে: রক্তে শর্করার ওঠানামা কম থাকলে ঘুম আর মুড থাকে নিয়ন্ত্রণে।
৫. ব্রেইন ফাংশন বাড়ায়: প্যালিও খাবারে ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ ফ্যাট থাকে, যা স্মৃতি ও মনোযোগ বাড়ায়।
প্যালিও ডায়েটের ঝুঁকি
প্যালিও ডায়েট অনুসরণ করার কিছু ঝুঁকিও রয়েছে, যেগুলো জানা জরুরি। প্রথমত, এই ডায়েটে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য নিষিদ্ধ হওয়ায় শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিতে পারে, যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। দ্বিতীয়ত, কার্বোহাইড্রেট কম থাকার কারণে অনেকের শরীরে ক্লান্তিভাব, মাথা ঘোরা বা এনার্জি ড্রপের সমস্যা দেখা দেয়। তৃতীয়ত, ডাল ও শস্য জাতীয় খাবার বাদ দেওয়ার ফলে ফাইবারের অভাব হতে পারে, যা হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে। এছাড়া প্রোটিন অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে কিডনির ওপর বাড়তি চাপ পড়তে পারে, বিশেষ করে যাদের আগে থেকেই কিডনি সমস্যা রয়েছে। তাই যেকোনো নতুন ডায়েট শুরু করার আগে একজন অভিজ্ঞ পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্যালিও ডায়েট শুধু একটি ডায়েট নয়—এটি একটি জীবনধারা, একটি বার্তা:
“ফিরে যাই প্রকৃতির কোলে, সুস্থতা খুঁজি সহজতায়।”
তবে মনে রাখবেন, এই ডায়েট সবার জন্য নয়। আপনার শরীর, প্রয়োজন ও লক্ষ্য অনুযায়ী বেছে নিন সঠিক পথ।