যদিও মাত্র এক সপ্তাহে পেটের চর্বি পুরোপুরিভাবে কমানো বৈজ্ঞানিকভাবে সম্ভব নয়। জানা যায়, পেটের মেদ বেশ জেদি। এটি ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, বিপাকীয় সিনড্রোম এবং PCOS এর সাথে যুক্ত। তাই স্বাস্থ্যকর খাদ্য, সঠিক হাইড্রেশন এবং ভাল ঘুম সেই অতিরিক্ত পেটের চর্বি ঝরিয়ে ফেলতে অনেকটাই সাহায্য করে।
পেটের চর্বি দ্রুত ঝরাতে প্রয়োজনীয় কিছু টিপস আমরা সবার সাথে শেয়ার করছি :
১. দিনের শুরুটা হোক মেথি ভেজানো পানি দিয়ে (Start The Day With Fenugreek Water):
মেথি বীজ চর্বি জমা প্রতিরোধ করতে পারে এবং এতে হাইপোগ্লাইসেমিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা টাইপ 2 ডায়াবেটিস রোগীদের ইনসুলিন সংবেদনশীলতা সচল করতে পারে। সকালের নাস্তার ৩০ মিনিট আগে প্রথমে মেথি ভেজানো পানি পান করুন (এক কাপ পানিতে দুই চা চামচ মেথির বীজ যোগ করুন (৩৭৫ মিলি) এবং সারারাত ভিজিয়ে রাখুন) । আপনার হাইপোগ্লাইসেমিয়া থাকলে ডিটক্স ওয়াটারে মেথির বীজ যোগ করা এড়িয়ে চলুন।
২. সকালের নাস্তা হোক উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ (Have A High-Protein Breakfast):
উচ্চ-প্রোটিনযুক্ত সকালের নাস্তা, যেমন প্রোটিন পাউডার স্মুদি এবং ডিম বা দই এবং ওটমিল, আপনাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য ক্ষুধামুক্ত রাখতে সাহায্য করে। প্রোটিনগুলি হজম হতে বেশি সময় নেয় এবং তাই তৃপ্তি বাড়ায়।প্রোটিন জাতীয় খাদ্য উৎসগুলো শরীরে থার্মোজেনেসিস বাড়ায়, যার ফলে প্রোটিন হজম করতে ক্যালোরি পোড়াতে হবে । প্রোটিন চর্বিহীন পেশী তৈরিতেও সাহায্য করে। চর্বিহীন পেশীতে পাওয়া মাইটোকন্ড্রিয়ার সংখ্যা বেশি। যদি চর্বিহীন পেশী বৃদ্ধি পায়, তবে মাইটোকন্ড্রিয়ার সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়, যা ফলস্বরূপ, বিপাক বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
৩. অল্প অল্প করে বার বার খান (Eat Smaller Portions More Often):
খাবার নিয়ন্ত্রণের অনুশীলন করা, ক্যালোরি কমানোর একটি দুর্দান্ত উপায়। প্রতিবেলার খাবারে আপনার কতটা প্রোটিন, শাকসবজি, গোটা শস্য এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে ধারণা রাখা উত্তম। একটি নিয়ম হিসাবে, প্লেটের অর্ধেক চর্বিহীন প্রোটিন হওয়া উচিত, এর এক-চতুর্থাংশ শাকসবজি হওয়া উচিত, এবং বাকিগুলি পুরো শস্য এবং স্বাস্থ্যকর চর্বিযুক্ত হওয়া উচিত। এছাড়াও, আপনার খাবারের জন্য ছোট প্লেট ব্যবহার করুন। পেট ভরে ২ বেলা খাবার পরিবর্তে অল্প অল্প করে ৩ বার খাওয়া উত্তম।
৪. শর্করা এবং চিনি হ্রাস করুন (Reduce Refined Carbs And Sugar):
গবেষণা প্রমাণ করে যে, পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট এবং চিনির বর্ধিত ব্যবহার ওজন বাড়াতে পারে । পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট হজম করা সহজ। এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ায়। পরিশোধিত চিনি বেশি খেলে চর্বি বাড়ায় এবং ওজন বৃদ্ধি করে। তাই বার্গার, পিৎজা, কেক, পেস্ট্রি, চুরো, সোডা ইত্যাদি খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো।
৫. পেটের চর্বি কমাতে পর্যাপ্ত পানি পান করুন (Drink Enough Water To Reduce Belly Fat):
বিভিন্ন গবেষণা প্রমাণ করে যে, প্রতিদিন আনুমানিক আট গ্লাস পানি পান করা উত্তম। এতে থার্মোজেনেসিস, তৃপ্তি এবং চর্বি সচলতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। পেটের মেদ কমাতে সারাদিন পানিতে চুমুক দিতে থাকুন।
৬. উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবারের পরিমাণ বাড়ান (Increase Intake Of High-Fiber Foods):
ফাইবার জাতীয় খাবারে কম গ্লাইসেমিক সূচক রয়েছে তাই এটি পেটে জেলের মতো স্তর তৈরি করে ক্ষুধা নিবারণে সাহায্য করে। ফাইবার ভাল অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার জন্য খাদ্য হিসাবেও কাজ করে, যা চর্বিকে শর্ট-চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড এ ভেঙ্গে দেয়। শর্ট-চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড পেটের চর্বি কমাতে সাহায্য করতে পারে। ফাইবার কোলনে খাদ্য স্থানান্তরকে সহজ করে । এটি হজম শক্তিকে উন্নত করে।
৭. ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ ফ্যাটি মাছ খান(Consume Omega-3 Rich Fatty Fish):
স্যামন, টুনা এবং ম্যাকেরেলের মতো ফ্যাটি মাছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড (PUFAs) প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে, যার ফলে প্রদাহ-প্ররোচিত ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি হ্রাস পায়।PUFAs এছাড়াও চর্বি জমা প্রতিরোধ, শরীরের গঠন উন্নত করতে এবং তৃপ্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করতে পারে।
৮. প্রচুর পরিমানে গাঢ় শাক-সবজি খান (Consume Veggies And Dark Leafy Greens):
গাঢ় শাকসবজি ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজগুলির ভাল উৎস । বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন যে নিয়মিত সবজি খাওয়া কোমরের পরিধি কমাতে সাহায্য করে এবং স্থূলতার ঝুঁকি কমায়। এটা লক্ষ করা গুরুত্বপূর্ণ যে, যদিও শাকসবজি এবং ফল পেটের চর্বি ঝরাতে সাহায্য করতে পারে, তবে আপনাকে অবশ্যই খাবার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ করা যাবে না।
৯. লবণের ব্যবহার কমিয়ে দিন (Reduce Salt Consumption):
উচ্চ লবণের ব্যবহারের ফলে স্থূলতা, ইনসুলিন প্রতিরোধ, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস হতে পারে। লবণ শরীরে পানি ধরে রাখে, যার ফলে আপনার সামগ্রিক শরীরের ওজন বৃদ্ধি পায়।
১0. গ্রিন টি/ব্ল্যাক কফি খান (Consume Green Tea/Black Coffee):
গ্রিন টি ওজন কমাতে দারুণ উপকারী। এটিতে EGCG রয়েছে, যা একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা টক্সিন বের করে দেয় এবং শরীর ফুলে যাওয়া কমাতে সাহায্য করে। গ্রিন টি-তে থাকা ক্যাফেইন ওজন কমাতেও সাহায্য করে। কফিতে থাকা ক্যাফেইন এবং ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড তৃপ্তি বাড়ায় এবং থার্মোজেনেসিসকে প্ররোচিত করে। পেটের চর্বি জমানো যতটা সহজ,কমানো ততটাই কঠিন। লাইসেন্সপ্রাপ্ত ডাক্তারের অস্ত্রোপচার ছাড়া এক সপ্তাহের মধ্যে পেটের চর্বি কমানো সম্ভব নয়। এই টিপসগুলি অনুসরণ করলে এবং চর্বি ঝরানোর পণ করলে তবেই আপনি পেটের চর্বি ঝরাতে শুরু করবেন। চিনি, লবণ এবং উচ্চ পরিমাণে কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন এবং প্রচুর পানি পান করুন। নিয়মিত ব্যায়ামের সাথে এই খাদ্যাভ্যাস গুলো গড়ে তুলুন এবং আপনি অবশেষে ফলাফল দেখতে পাবেন। যাইহোক, আপনার পেটে চর্বি জমার অন্য কোনো অন্তর্নিহিত কারণ আছে কিনা তা খুঁজে বের করতে প্রয়োজনে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।