গ্রীষ্মকাল আনন্দ, হাসি এবং সুখের প্রতীক হিসেবে পরিচিত। আমরা নারীরা এই সময় বেশি খুশি হই কারণ দীর্ঘ শীতের পর আমরা আবার গ্রীষ্মকালীন পোষাক পরতে পারি। দীর্ঘ শীতের ঠান্ডা পর অবশেষে কাঙ্ক্ষিত গ্রীষ্ম আসে, আমরা গ্রীষ্মকাল ভালোবাসি কারণ এই ঋতু আমাদের জন্য আনন্দ এবং উদ্দীপনা বয়ে আনে।
প্রতিটি মৌসুম কারো জন্য সুখের বার্তা আবার কারো জন্য দুঃখের বার্তা বয়ে আনে। আর গ্রীষ্মকাল শুষ্ক ত্বকের মানুষদের জন্য সবচেয়ে বড় সুখকর সময়।
উচ্চ মাত্রার ময়েশ্চার এবং আদ্রতা ত্বকের শুষ্কতা কমিয়ে দেয় যার ফলে ত্বকের চামড়া উঠা বা ত্বক ফাটা বন্ধ হয়ে যায়। যদিও ধূলাবালি, ইউভি রশ্মি এবং দূষণ দূশ্চিন্তার কারণ হতে পারে, কারণ এরা আমাদের ত্বক নিস্তেজ এবং দ্যূতিহীন করে তুলে। কোন প্রকার সুরক্ষা ছাড়া সূর্যের আলোতে কিছুক্ষণ দাড়ালেও আপনার ত্বকে বলিরেখা, বয়সের ছাপ এবং ফাইন লাইনস এগুলো দেখা দিবে।
গ্রীষ্মকালে শুষ্ক ত্বকের জন্য ঘরোয়া ফেইস প্যাক
নিজেকে সতেজ এবং উজ্জ্বল রাখার বড় মন্ত্রটি হলো বাহিরে যাওয়ার আগে মুখে সযত্নে সানক্রিম দেওয়া এবং কিছু ঘরোয়া প্যাকের সাহায্য নেওয়া। নিচে কিছু ফেইস প্যাক দেওয়া হলো যেগুলো আপনি এই গ্রীষ্মে মুখে লাগাতে পারেন।
১. পেঁপের ফেইস প্যাক
পেঁপে একটি প্রাকৃতিক স্ক্রাব হিসেবে কাজ করে যা ত্বকের মৃত চামড়া পরিষ্কার করে এবং এর এ্যান্টি-এজিং বৈশিষ্ট্য আছে। পেঁপে শুষ্ক ত্বকে আদ্রতা রক্ষা করতে সাহায্য করে। এর সবচেয়ে সেরা অংশটি হলো এই মাস্কটিতে পেঁপে ছাড়া অন্য কোন উপাদান লাগে না, ফলে এটি খুবই কার্যকরী।
কিভাবে পেঁপের ফেইস প্যাক বানবেন?
- কয়েক টুকরো পেঁপে নিয়ে ভালোভাবে একটি মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন।
- আপনার মুখে পেস্টটি সমানভাবে লাগান। তুলার একটি বড় টুকরো নিন এবং মুখে লাগানো প্যাকের উপর তুলাটি লাগান যাতে পেস্টটি মুখ থেকে গড়িয়ে না পরে।
- ১৫ মিনিটের জন্য রেখে দিন। পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
বিকল্প
- মুখের গর্ত ছোট করার জন্য ১/৪ কাপ ভর্তা করা কাঁচা পেঁপের সাথে আনারসের রস মিশিয়ে নিন।
- স্ক্রাব করার জন্য পেঁপে, গরম মধু এবং ওটমিলের সাথে মিশিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। ১০-১৫ মিনিট মুখে রেখে দিন।
- ত্বক উজ্জ্বল করার জন্য পেঁপে ভর্তা করে মধু, দই এবং লেবুর রসের সাথে মিশান।
২. দইয়ের ফেইস প্যাক
দই ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখে এবং ত্বকের অনুজ্জ্বলতা কমায়। এটি প্রাকৃতিক ব্লিচ হিসেবেও কাজ করে। মধু প্রাকৃতিকভাবে ত্বক কোমল এবং আদ্রতাপূর্ণ করে।
উপকরণ
- দই
- মধু
প্রক্রিয়া
- ২ চা চামচ দইয়ের সাথে ১ চা চামচ মধু মিশান।
- মুখে প্যাকটি লাগান এবং এটিকে পুরোপুরি শুকাতে দিন।
- স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
বিকল্প
- উজ্জ্বল ত্বকের মাস্কের জন্য খুব পাকা ২ টি স্ট্রবেরি, ১ চা চামচ কাঁচা মধু এবং ১ চা চামচ দই দিয়ে পেস্ট তৈরি করুন।
- ময়েশ্চারাইজিং এবং হাইড্রেটিং মাস্কের জন্য ১ চা চামচ দই, ১ চা চামচ অলিভ অয়েল এবং ১/৪ আভাকাডো দিয়ে পেস্ট তৈরি করুন।
৩. চন্দন কাঠের ফেইস প্যাক
গোলাপ জল যখন ত্বককে টোন করে তখন চন্দন কাঠ ত্বককে শীতল করে। এটি অনেক পুরানো একটি পদ্ধতি এবং প্রতিটি উপকরণ খুব সহজে পাওয়া যায়। এটি গ্রীষ্মকালে শুষ্ক ত্বকের জন্য সবচেয়ে উত্তম একটি ফেইস প্যাক।
উপকরণ
- চন্দন কাঠের গুঁড়ো
- গোলাপ জল
প্রক্রিয়া
- সামান্য গোলাপ জলের সাথে ৩ চা চামচ চন্দন কাঠ মিশান।
- আপনার মুখে সমানভাবে পেস্টটি লাগান।
- ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
বিকল্প
ব্রণ এবং ব্ল্যাক হেডস কমানোর জন্য – ২ চা চামচ হলুদ গুড়া এবং চন্দন কাঠের গুড়া গরম পানিতে মিশান। একটি পেস্ট তৈরি করুন এবং ব্ল্যাক হেডসে আক্রান্ত স্থানে লাগান এবং শুকাতে দিন। এরপর ধুয়ে ফেলুন।
৪. ওটস এবং শসার ফেইস মাস্ক
ওটস শুষ্ক ত্বক নিরাময় করে এবং ত্বক কোমল করে। শসা একটি প্রাকৃতিক শীতল বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন প্রাকৃতিক টোনার।
উপকরণ
- ওটস
- শসা
- দই
প্রক্রিয়া
- ৩ চা চামচ ওটস, ১ চা চামচ শসার রস এবং ১ চা চামচ দই একসাথে মিশান।
- আপনার মুখে পেস্টটি লাগান এবং পুরোপুরি শুকাতে দিন।
- শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
বিকল্প
দই এবং শসা একসাথে মিশান। ঘন পেস্ট বানানোর জন্য মধু এবং ওটস যোগ করুন। মুখে লাগান এবং ২০ মিনিট পর গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। কালো স্পট এবং ক্ষত দূর করার জন্য এটা খুব ভালো।
৫. বাদাম এবং গোলাপ জলের ফেইস মাস্ক
এই রাজকীয় ফেইস প্যাকটি শুষ্ক ত্বকে বিস্ময়করভাবে কাজ করে। বাদামে প্রাকৃতিক ভিটামিন-ই তেল আছে যা শুষ্কতা দূর করে।
উপকরণ
- বাদাম
- গোলাপ জল
প্রক্রিয়া
- ১০ টি বাদাম পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন এবং সকালে এদের মসৃণ পেস্ট তৈরি করে নিন।
- কিছু গোলাপ জল এতে যোগ করুন।
- আপনার মুখে এটা লাগান।
বিকল্প
সতেজ এবং উজ্জ্বল ত্বকের জন্য এই মাস্কটি ব্যবহার করুন। ২ চা চামচ গোলাপ জল, ২ টেবিল চামচ মধু, ২ টেবিল চামচ বাদাম তেল, ৩ ফোঁটা ভিটামিন-ই এর তেল একসাথে মিশান। মুখে লাগান এবং ২০ মিনিট রেখে দিন। গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
আশা করি গ্রীষ্মকালে শুষ্ক ত্বকের জন্য কয়েকটি ঘরে তৈরি সেরা ফেইস প্যাক সম্পর্কে এই আর্টিকেলটি আপনাদের অনেক ভালো লেগেছে। এগুলো ঘরে তৈরি করুন এবং লাগিয়ে দেখুন কোনটা আপনার ত্বকের সাথে মানানসই। সবসময় সুস্থ থাকুন।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.