অ্যালোভেরা একটি যাদুকরী উদ্ভিদ যা আমাদের সকলের বাড়িতেই চাষ করা উচিত। এর অনেক উপকারিতা রয়েছে এবং পুড়ে যাওয়া নিরাময়ে এই অ্যালোভেরা খুবই দক্ষ।
অ্যালোভেরাতে যে রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে তা ব্যাথা এবং জ্বালা-পোড়া কমাতে সাহায্য করে। এমনকি এরা ত্বক পুনর্গঠন করে এবং ত্বকের কোষগুলিকে উদ্দীপিত করে এবং এর স্বাভাবিক বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করে।
এতে কোন সন্দেহ নেই যে অ্যালোভেরা সবচেয়ে ভালো ঘরোয়া প্রতিকারের উপাদানগুলোর মধ্যে একটি। এবং যখন আপনি একে অন্য নিরাময়কারী উপাদানগুলোর সাথে সমন্বয় করবেন তখন ফলাফল আরো দ্বিগুণ ভালো হবে। আমরা আপনার পুড়ে যাওয়ার চিকিৎসা করার জন্য নিচে চমৎকার কিছু প্রতিকার তুলে ধরলাম। এক নজরে দেখে নিন।
প্রাকৃতিকভাবে জ্বালা-পোড়ার চিকিৎসায় অ্যালোভেরা ব্যবহারের কয়েকটি উপায়
২. টি ট্রি অয়েল এবং অ্যালোভেরা।
৪. ল্যাভেন্ডার তেল এবং অ্যালোভেরা।
৭. গমের বীজের তেল এবং অ্যালোভেরা।
৮. বরফের টুকরো এবং অ্যালোভেরা।
৯. নারিকেল তেল এবং অ্যালোভেরা।
১. খাঁটি অ্যালোভেরা
উপকরণ
- অ্যালোভেরার নির্যাস
প্রক্রিয়া
- অ্যালোভেরা গাছ থেকে একটি মাংসল পাতা ছিঁড়ে নিন। পাতাটি কেঁটে খুলে নিন এবং দেখবেন ভিতর থেকে জেলের মত নির্যাস বের হচ্ছে।
- অ্যালোভেরা জেল সংগ্রহ করুন এবং আপনার শরীরের পুড়ে যাওয়া স্থানে আস্তে আস্তে ম্যাসাজ করুন যতক্ষণ না পর্যন্ত ত্বক এই জেল শুষে নেয়।
কতবার লাগাবেন ?
আপনি প্রতিদিন একবার বা দুইবার এটি করতে পারেন।
এটি কিভাবে কাজ করে?
অ্যালোভেরা ত্বককে ঠান্ডা এবং কোমল করে। এটি খুব দ্রুততার সাথে নিরাময় কাজ করে।
২. টি ট্রি অয়েল এবং অ্যালোভেরা
উপকরণ
- অ্যালোভেরা নির্যাস/জেল
- কয়েক ফোঁটা খাঁটি টি ট্রি অয়েল
প্রক্রিয়া
- অ্যালোভেরা জেলের একটি দলা নিন এবং এতে ২-৩ ফোঁটা টি ট্রি অয়েল যোগ করুন।
- আপনার আঙ্গুল দিয়ে এগুলো ভালোভাবে মিশিয়ে নিন এবং আক্রান্ত স্থানে লাগান। জেলটি শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত ত্বকে ম্যাসাজ করতে থাকুন।
কতবার লাগাবেন?
প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এটি করবেন।
এটি কিভাবে কাজ করে?
চা গাছ এ্যান্টি-ফাংগাল, এ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল এবং এ্যান্টিসেপ্টিক। যার কারণে ইহা আক্রান্ত স্থানকে সংক্রমিত হওয়া থেকে রক্ষা করে।
৩. মধু এবং অ্যালোভেরা
উপকরণ
- ১ চা চামচ মধু
- অ্যালোভেরা জেল
প্রক্রিয়া
- মধু এবং অ্যালোভেরা মিশিয়ে একটি পুরু পেস্ট তৈরি করুন।
- আক্রান্ত স্থানে আস্তে আস্তে লাগান এবং কিছুক্ষণের জন্য রেখে দিন। তারপর ধুয়ে ফেলুন।
কতবার লাগাবেন?
আপনি দুই দিন পর পর একবার এটা ব্যবহার করতে পারেন।
এটি কিভাবে কাজ করে?
মধু একটি এ্যান্টিসেপ্টিক এবং পুড়ে যাওয়া স্থানকে শীতল করতে সাহায্য করে।
৪. ল্যাভেন্ডার তেল এবং অ্যালোভেরা
উপকরণ
- অ্যালোভেরা জেল
- কয়েক ফোঁটা খাঁটি ল্যাভেন্ডার তেল
প্রক্রিয়া
- অ্যালোভেরা জেলে কয়েক ফোঁটা ল্যাভেন্ডার তেল ঢালুন এবং হাতের তালুতে রেখে একসাথে ঘষে নিন।
- পুড়ে যাওয়া ত্বকে আস্তে আস্তে লাগিয়ে নিন।
কতবার লাগাবেন?
২-৩ দিন পর পর একবার লাগাতে পারেন।
এটি কিভাবে কাজ করে?
ল্যাভেন্ডার তেল পুড়ে যাওয়া স্থানের জ্বালা-পোড়া করা বন্ধ করে এবং ত্বকে ফোসকা পড়া প্রতিরোধ করে।
৫. ভিটামিন-ই এবং অ্যালোভেরা
উপকরণ
- ভিটামিন-ই ক্যাপসুল
- অ্যালোভেরা জেল
প্রক্রিয়া
- ক্যাপসুল থেকে ভিটামিন-ই নির্যাস বের কর নিন এবং অ্যালোভেরা জেলের সাথে যোগ করুন।
- এগুলো ভালোভাবে মিশিয়ে নিন এবং আক্রান্ত স্থানে লাগান।
কতবার লাগাবেন?
আপনি এটা প্রতিদিন করতে পারেন – সকালে একবার এবং রাতে একবার।
এটা কিভাবে কাজ করে?
ভিটামিন-ই তে এ্যান্টিঅক্সিডেন্টের বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা র্যাডিকেলের সাথে যুদ্ধ করে এবং র্যাশ ও জ্বালা-পোড়া কমাতে সাহায্য করে।
৬. হলুদ এবং অ্যালোভেরা
উপকরণ
- ১ চিমটি হলুদ
- ১ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল
প্রক্রিয়া
- পেস্ট তৈরি হওয়া পর্যন্ত হলুদ এবং অ্যালোভেরা জেল মিশাতে থাকুন।
- পুড়ে যাওয়া স্থানে পেস্টটি আস্তে আস্তে লাগান। শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত এটি রেখে দিন এবং শুকিয়ে গেলে এটি নিজে নিজে ঝরে যাবে।
কতবার লাগাবেন?
পুড়ে যাওয়া স্থান ঠিক না হওয়া পর্যন্ত আপনি দিনে যতবার ইচ্ছা এটা লাগাতে পারবেন।
এটা কিভাবে কাজ করে?
পেস্টটি চামড়া পু্নরায় জন্মাতে সাহায্য করে এবং ক্ষতস্থানকে ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও ইহা পুড়ে যাওয়া স্থান শীতল রাখে এবং ত্বককে ময়েশ্চারাইজ রাখে।
৭. গমের বীজের তেল এবং অ্যালোভেরা
উপকরণ
- ৪-৫ ফোঁটা গমের বীজের তেল
- ১ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল
প্রক্রিয়া
- একটি পাত্রে অ্যালোভেরা জেলের সাথে কয়েক ফোঁটা গমের বীজের তেল যোগ করুন এবং ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
- পুড়ে যাওয়া স্থানে আস্তে আস্তে পেস্টটি লাগান এবং মলমের মত এটি আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে রাখুন।
কতবার লাগাবেন?
আপনি এই পেস্টটি প্রতিদিন লাগাতে পারবেন, সকালে একবার এবং রাতে একবার।
এটা কিভাবে কাজ করে?
পেস্টটি পুড়ে যাওয়া স্থানের চারপাশ এবং এর পার্শ্ববর্তী ত্বকের চুলকানি হ্রাস করে। এটি ত্বককে জ্বালা-পোড়া থেকে রক্ষা করে এবং র্যাডিকাল থেকে মুক্ত করে ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করে।
৮. বরফের টুকরো এবং অ্যালোভেরা
উপকরণ
- এক বাটি অ্যালোভেরা জেল
- ৪ টি গাঁদা ফুলের পাঁপড়ি
- বরফের টুকরো রাখার ট্রে
প্রক্রিয়া
- অ্যালোভেরা জেলের ভিতর গাঁদা ফুলের পাঁপড়ি মিশিয়ে নিন এবং তৈরি করা সিরাপটি বরফের টুকরো রাখার ট্রে তে ঢেলে দিন। সিরাপটি ফ্রিজে বরফ হতে দিন।
- কিছু বরফের টুকরা নিন এবং একটি পরিষ্কার কাপড়ে এগুলো বাধুন।
- বরফের টুকরাগুলো গলে যাওয়া পর্যন্ত আক্রান্ত স্থানে কাপড়টা আস্তে আস্তে ঘষতে থাকুন। ত্বককে নিজে থেকে শুকাতে দিন।
কতবার লাগাবেন?
আপনি দিনে কয়েকবার এটি করতে পারবেন।
এটা কিভাবে কাজ করে?
এই প্যাকটির ত্বকের উপর শীতল প্রভাব ফেলার ক্ষমতা আছে। ফুলগুলোতে এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা পুড়ে যাওয়া নিরাময় করে এবং জ্বালা-পোড়া কমাতে সাহায্য করে।
৯. নারিকেল তেল এবং অ্যালোভেরা
উপকরণ
- ১/২ কাপ নারিকেল তেল
- ১/২ অ্যালোভেরা জেল
প্রক্রিয়া
- পাত্রে রাখা অ্যালোভেরা জেলে নারিকেল তেল ঢালুন অনবরত নাড়তে থাকুন যতক্ষণ না পর্যন্ত ফোমের মত মিশ্রণ তৈরি হয়।
- একটি বোতলে মিশ্রণটি ঢালুন এবং একটি ময়েশ্চারাইজারের মতই ত্বকের আক্রান্ত স্থানে মিশ্রণটি লাগান এবং রেখে দিন।
কতবার লাগাবেন?
আপনি ময়েশ্চারাইজার যেভাবে ব্যবহার করেন ঠিক সেভাবেই এই প্যাকটি প্রতিদিন ব্যবহার করতে পারবেন।
এটা কিভাবে কাজ করে?
এই প্যাকটি এ্যান্টি-ফাংগাল এবং এই কারণে এটি ত্বকের পুড়ে যাওয়া এবং জ্বালা-পোড়া প্রাকৃতিকভাবে নিরাময় করতে পারে। এটি ত্বককে শীতল করে এবং একে হাইড্রেট এবং পুনরুজ্জীবিত করে।
পুড়ে যাওয়া ত্বক আপনার জীবন কেড়ে নিতে পারে। এর কারণে ব্যাথা, চুলকানি, জ্বালা-পোড়া এবং আরো কত কষ্টই না সহ্য করতে হয়। আপনি রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে এটি নিরাময় করার আগে একবার অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করুন – এটি প্রাকৃতিকভাবে পুড়ে যাওয়া নিরাময় করে এবং খুব অল্প সময়ে এদের অদৃশ্য করে দেয়।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.