স্বাস্থ্যকর, লম্বা এবং ঘন চুল বেশিরভাগ সময়ই অসাধ্য স্বপ্ন বলে মনে হয়। বিশেষ করে তখনই, যখন আপনার চুল ঝরে পড়া এবং ভেঙে যাওয়ার সমস্যা আছে। কিন্তু, আপনি কি জানেন একটি সহজলভ্য উপকরণ ডিম আপনার সকল সমস্যার সমাধান হতে পারে? ডিম শুধু চুলের ক্ষতি এবং ঝরে পরাই প্রতিরোধ করে না, তারা চুলের বৃদ্ধির জন্যও উত্তম। কেন? তা নিচে দেওয়া হলঃ
ডিম কি আপনার চুলের জন্য ভালো?
ডিম প্রোটিন, মিনারেল এবং ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স দ্বারা পরিপূর্ণ যা চুলের পুষ্টির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই পুষ্টিগুণগুলো, বিশেষ করে বায়োটিন এবং অন্যান্য বি-কমপ্লেক্স ভিটামিন চুলের গোড়া মজবুত করে ঝরে পরা রোধ করতে সাহায্য করে। এই পুষ্টিগুলো নতুন চুল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, চুলের ঘনত্ব বাড়ায় এবং চুলকে পুরু করে তুলে। ডিমের প্রোটিন চুল মজবুত করতে সাহায্য করে এবং এর ফ্যাট চুলকে কন্ডিশন করে চুলের গঠন উন্নতি করে।
চুলের জন্য ডিমের উপকারিতা
যখন আপনি চুলে ডিম লাগাবেন তখন এর উপকারিতা কতটা মূল্যবান তা বুঝতে পারবেন। কিভাবে ডিম আপনার চুলের উপকার করে তা দেওয়া হলঃ
১. চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে
ডিম প্রচুর প্রোটিন এবং পুষ্টির উৎস যা “চুলের খাদ্য” হিসেবে পরিবেশিত হয়। এই পুষ্টিগুলো আপনার চুলের বৃদ্ধির হার বাড়াতে সাহায্য করে যা আপনার চুল বৃদ্ধির সাথে সাথে নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে।
২. চুলের ঝরে পড়া প্রতিরোধ করে
ডিম আপনার স্ক্যাল্পে পুষ্টি জুগিয়ে চুলের ঝরে পড়া প্রতিরোধ করে এবং চুলের গোড়া মজবুত করে।
৩. চুলের স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি করে
ডিমের কুসুমে প্রচুর লুটিন আছে, যা আপনার চুলকে হাইড্রেট করতে সাহায্য করে এবং চুলের স্থিতিস্থাপকতা উন্নত করে।
৪. চুলের ভাঙন প্রতিরোধ করে
ডিমের কুসুমে থাকা লুটিন ভঙ্গুর চুলের চিকিৎসা করে, আপনার চুলের গঠন উন্নতি করে ভেঙে যাওয়া এবং চুলের আগা ফেঁটে যাওয়া প্রতিরোধ করে।
৫. উজ্জ্বলতা প্রদান করে
ডিমের সাদা অংশে থাকা প্রোটিন আপনার চুলে পুষ্টি জোগায় এবং একটি স্বাস্থ্যকর উজ্জ্বলতা প্রদান করে।
৬. ক্ষতি নিরাময় করে
চুলের ৭০% প্রোটিন হওয়ার কারণে, ডিমের ভেতর থাকা প্রোটিন আপনার চুলের গঠনের ক্ষতিগ্রস্থ কেরাটিন পুনর্গঠনে সাহায্য করে।
ডিমের কোন অংশটি আপনার চুলের জন্য ভালো?
যখন আপনি ডিমের কোন অনশ আপনার চুলের জন্য বেশি উপকারী তা নিয়ে কথা বলেন, তখন আপনাকে আপনার চুলের ধরণ কেমন তা জানতে হবে। তৈলাক্ত চুলের নারীরা ডিমের সাদা অংশ ব্যবহার করতে পছন্দ করে অপরদিকে শুষ্ক চুলের নারীরা ডিমের কুসুম ব্যবহার করেন। নিচে কারণ দেওয়া হলো;
ডিমের সাদা অংশ – একটি ডিমের সাদা অংশে সবচেয়ে বেশি প্রোটিন থাকে। এছাড়াও এতে মিনারেল আছে যেমন নিয়াসিন, রিবোফ্লেবিন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম এবং সোডিয়াম, এদের সবগুলোই চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তৈলাক্ত চুলের মানুষেরা শুধুমাত্র সাদা অংশটি ব্যবহার করতে পছন্দ করে কারন তারা তেলের উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং চুলে পুষ্টি জোগায়। সাদা অংশটি হলুদ অংশের মত চুল কন্ডিশন করে না।
কুসুম – কুসুমও প্রোটিন সমৃদ্ধ (সাদা অংশ থেকে কম) এবং প্রচুর ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এবং ফলিক এসিডে পরিপূর্ণ, যা প্রায়ই “চুলের খাদ্য” হিসেবে উল্লেখ করা হয়। কুসুমের চর্বিজাতীয় বস্তু একে খুবই ভালো একটি কন্ডিশনিং উপকরণ বানিয়েছে, যার কারণে এটি প্রায়ই শুষ্ক চুলের মানুষেরা ব্যবহার করে।
পুরো অংশ – সাদা অংশ এবং কুসুম দুইটিই প্রোটিনের খুব ভালো উৎস; কিন্তু সাদা অংশ বেশি পুষ্টিকর। পুরো ডিম ব্যবহারে আপনি আপনার চুলে সাদা অংশ এবং কুসুম দুইটির মিশ্রিত উপকারিতা পাবেন। এটি স্বাভাবিক এবং মিশ্রিত চুলের জন্য আদর্শ।
কিভাবে চুলের বৃদ্ধি এবং চুল পড়া প্রতিরোধ করতে ডিমের ব্যবহার করবেন?
১. স্বাভাবিক এবং মিশ্রিত চুলের বৃদ্ধির জন্য ডিমের মাস্ক

উপকরণ
- ১ টি সম্পূর্ণ ডিম (আপনার লম্বা চুল হলে ২ টি নিবেন)
- ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল (ঐচ্ছিক)
প্রক্রিয়া
- এটি পাত্রে ডিম এবং অলিভ অয়েল ফাটিয়ে নিন। সাদা অংশ এবং কুসুম একসাথে ভালোভাবে মিশাবেন।
- আপনার চুলে ফ্যাটানো ডিম লাগান। আপনার চুল মিশ্রন দিয়ে পুরোপুরি ঢেকে দিন।
- ২০ মিনিটের জন্য এটি চুলে রাখুন।
- ঠান্ডা পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। গরম পানি চুলের ভিতরেই ডিম পোচ করে দিবে। তখন চুলে গন্ধ হবে যা থেকে মুক্তি পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে।
- চুল কন্ডিশনার দিয়ে ধুয়ে নিন এবং বাতাসে চুল শুকিয়ে নিন।
কতবার?
সপ্তাহে ১-২ বার।
কিভাবে কাজ করে?
এই চুলের মাস্কটি আপনার স্ক্যাল্পের তেলের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে আপনার চুলকে কন্ডিশন করতে সাহায্য করে। এটি আপনার চুলের গোড়া এবং আগা পুষ্টিকর করে তুলবে, চুলের গঠন উন্নত করবে এবং চুলের স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধি ঘটাবে। আপনি চাইলে অলিভ অয়েল বাদ দিতে পারেন, কিন্তু তেল আপনার চুলকে আরো নরম করতে সাহায্য করে এবং অতিরিক্ত কন্ডিশনিং এ সাহায্য করে।
২. শুষ্ক চুলের জন্য ডিমের কুসুমের চুলের মাস্ক

উপকরণ
- ২ টি ডিমের কুসুম
- ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল
প্রক্রিয়া
- মশ্রিণ মিশ্রণ না পাওয়া পর্যন্ত কুসুম ও অলিভ অয়েল একটি পাত্রে ফাটাতে থাকুন।
- ফ্যাটানো ডিম আপনার চুলে লাগান। আপনার চুল মিশ্রন দিয়ে পুরোপুরি ঢেকে দিন।
- ২০ মিনিটের জন্য এটি চুলে রাখুন।
- ঠান্ডা পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। গরম পানি চুলের ভিতরেই ডিম পোচ করে দিবে। তখন চুলে গন্ধ হবে যা থেকে মুক্তি পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে।
- চুল কন্ডিশনার দিয়ে ধুয়ে নিন এবং বাতাসে চুল শুকিয়ে নিন।
কতবার?
সপ্তাহে ১-২ বার।
কিভাবে কাজ করে?
অলিভ অয়েল এবং ডিমের কুসুমের মিশ্রণ সবচেয়ে সহজ এবং সবচেয়ে কার্যকরী উপায়গুলোর মধ্যে একটি। শুধু আপনার চুলকে নরম এবং মশ্রিণই করে না, চুল পুনরায় বৃদ্ধির জন্য স্ক্যাল্পে পুষ্টিও জোগায়।
৩. তৈলাক্ত চুলের জন্য ডিমের সাদা অংশের মাস্ক

উপকরণ
- ২ টি ডিমের সাদা অংশ
- ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল (ঐচ্ছিক)
প্রক্রিয়া
- মশ্রিণ মিশ্রণ না পাওয়া পর্যন্ত কুসুম ও অলিভ অয়েল একটি পাত্রে ফাটাতে থাকুন।
- ফ্যাটানো ডিম আপনার চুলে লাগান। আপনার চুল মিশ্রন দিয়ে পুরোপুরি ঢেকে দিন।
- ২০ মিনিটের জন্য এটি চুলে রাখুন।
- ঠান্ডা পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। গরম পানি চুলের ভিতরেই ডিম পোচ করে দিবে। তখন চুলে গন্ধ হবে যা থেকে মুক্তি পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে।
- চুল কন্ডিশনার দিয়ে ধুয়ে নিন এবং বাতাসে চুল শুকিয়ে নিন।
কতবার?
সপ্তাহে ১-২ বার।
কিভাবে কাজ করে?
এই চুলের প্যাকটি চুলের গঠন এবং আয়তনের উন্নতি করে তেল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। মিশ্রণে থাকা অলিভ অয়েল আপনার চুলকে তৈলাক্ত না করে কন্ডিশন করতে সাহায্য করে।
চুলের বৃদ্ধির জন্য ডিমের মাস্ক
১. চুলের বৃদ্ধির জন্য অ্যালোভেরা এবং ডিম

উপকরণ
- ২ টি ডিমের সাদা অংশ
- ২ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল
প্রক্রিয়া
- মশ্রিণ মিশ্রণ না পাওয়া পর্যন্ত কুসুম ও অলিভ অয়েল একটি পাত্রে ফাটাতে থাকুন।
- ফ্যাটানো ডিম আপনার চুলে লাগান। আপনার চুল মিশ্রন দিয়ে পুরোপুরি ঢেকে দিন।
- ৩০-৬০ মিনিটের জন্য এটি চুলে রাখুন।
- ঠান্ডা পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। গরম পানি চুলের ভিতরেই ডিম পোচ করে দিবে। তখন চুলে গন্ধ হবে যা থেকে মুক্তি পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে।
- চুল কন্ডিশনার দিয়ে ধুয়ে নিন এবং বাতাসে চুল শুকিয়ে নিন।
কতবার?
সপ্তাহে ১-২ বার।
কিভাবে কাজ করে?
অ্যালোভেরা জেলে প্রচুর পরিমানে এ্যামিনো এসিড, গ্লুকোমাননান্স, স্টেরোলস, লিপিডস এবং ভিটামিন আছে। এই পুষ্টিগুণ গুলো স্ক্যাল্প এবং চুলে পুষ্টি জোগায় এবং অ্যালোভেরার এ্যান্টি-ইনফ্লেমেটোরি, এন্টিসেপ্টিক এবং ময়েশ্চারাইজিং বৈশিষ্ট্য স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্য উন্নতি করে। যার ফলে স্বাস্থ্যকরভাবে চুলের বৃদ্ধি ঘটে।
২. চুলের বৃদ্ধির জন্য মেহেদি এবং ডিম

উপকরণ
- ২ টেবিল চামচ মেথি বীজ
- ১ কাপ বিশুদ্ধ মেহেদি গুড়ো
- ১ টি ডিমের কুসুম
প্রক্রিয়া
- মেথির বীজ পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন।
- সকালবেল, মশ্রিণ পেস্ট পাওয়ার জন্য মেহেদির গুড়োতে সামান্য পানি মিশান। (আপনি যদি এর রঙ উন্নত করতে চান তাহলে ২ ঘন্টার জন্য রেখে দিন।)
- মেথির বীজ পেস্ট করে নিন এবং ডিমের কুসুমের সাথে মেহেদির পেস্টে যোগ করুন। ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
- এই মিশ্রণটি আপনার চুল ও স্ক্যাল্পে লাগান এবং এক ঘন্টার জন্য রেখে দিন।
- একটি হালকা শ্যাম্পু এবং ঠান্ডা পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। গরম পানি চুলের ভিতরেই ডিম পোচ করে দিবে। তখন চুলে গন্ধ হবে যা থেকে মুক্তি পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে।
- চুল কন্ডিশনার দিয়ে ধুয়ে নিন এবং বাতাসে চুল শুকিয়ে নিন।
কতবার?
সপ্তাহে ১ বার।
কিভাবে কাজ করে?
মেহেদিতে শীতলকরণ বৈশিষ্ট্য আছে যা উত্তেজিত স্ক্যাল্পকে শীতল করে। এতে এ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য আছে যা স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। প্যাকটি তেলের উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং আপনার চুলে উজ্জ্বলতা প্রদান করে। এটি খুশকি এবং চুল ঝরে পরা প্রতিরোধ করে চুলের বৃদ্ধি বাড়িয়ে তোলে।
৩. চুলের বৃদ্ধির জন্য নারিকেল তেল এবং ডিম

উপকরণ
- ১ টি পুরো ডিম
- ১ টেবিল চামচ নারিকেল তেল
প্রক্রিয়া
- ডিম এবং নারিকেল তেল একটি পাত্রে ফাটিয়ে নিন। সাদা অংশ এবং কুসুম যাতে ভালোভাবে মিশে যায়।
- ফ্যাটানো ডিম আপনার চুলে লাগান। আপনার চুল মিশ্রন দিয়ে পুরোপুরি ঢেকে দিন।
- ২০ মিনিটের জন্য এটি চুলে রাখুন।
- ঠান্ডা পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। গরম পানি চুলের ভিতরেই ডিম পোচ করে দিবে। তখন চুলে গন্ধ হবে যা থেকে মুক্তি পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে।
- চুল কন্ডিশনার দিয়ে ধুয়ে নিন এবং বাতাসে চুল শুকিয়ে নিন।
কতবার?
সপ্তাহে ১-২ বার।
কিভাবে কাজ করে?
নারিকেল তেলে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাটি এসিড আছে যা চুল কন্ডিশন করতে সাহায্য করে, শুষ্কতা এবং ভাঙন থেকে রক্ষা করে। এতে শক্তিশালী এন্টিব্যাক্টেরিয়াল বৈশিষ্ট্য আছে যা আপনার স্ক্যাল্পকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে, আর এর ভিটামিন চুলের গোড়াতে পুষ্টি জোগাতে এবং মজবুত করতে সাহায্য করে। এই চুলের প্যাকটি চুল ঝরে পরা প্রতিরোধ করে এবং স্বাস্থ্যকর চুলের বৃদ্ধি ঘটায়।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.