
হায়ালুরোনিক এসিড হালের সৌন্দর্য শিল্পের প্রতিষ্ঠানগুলোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সিরাম থেকে শুরু করে নাইট ক্রিম, এই জাদুকরী উপাদানটি বর্তমানে প্রায় সকল ত্বকের যত্নের পণ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে। এবং এটি এমন একটি উপাদান যা বিউটি ব্লগার এবং ত্বকের যত্নকারী প্রতিটি মানুষ অতি উৎসাহের সাথে ব্যবহার করে।
এতক্ষনে আপনার নিশ্চয়ই জানতে চাচ্ছেন যে এটি আসলে কি? এবং এটি আপনার ত্বকের উপর আসলেই কি করে?
ত্বকের যত্নে “এসিড” কি আসলে খারাপ না? এতদিন যা জানতেন তা কি ভুল?
– আমি জানি এরকম অনেক প্রশ্ন আপনার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। আমি জানি যে এই বিষয়ে আপনাদের মাঝে আরও স্পষ্টতা প্রয়োজন, আর এই দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দূর করতে আমাদের আজকের এই নিবন্ধটি লিখা। এখানে আপনি আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর এক নিমিষেই পেয়ে যাবেন।
হায়ালুরোনিক এসিড কি?
হায়ালুরোনিক এসিড এমন একটি পদার্থ যা আপনার দেহ প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদন করতে সক্ষম। এই এসিড হায়ালুরনান নামেও পরিচিত এবং এটির বেশিরভাগ মানুষের হাড়ের জয়েন্টগুলিতে এবং আপনার চোখের তরল পদার্থে পাওয়া যায়। এটি আপনার দেহে লুব্রিকেটিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া, এই এসিড আপনার ত্বকে পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে।
বর্তমানে এই এসিড অসংখ্য অ্যান্টি-এজিং ক্রিম এবং ত্বকের যত্নের পণ্যের প্রধান উপাদান। এটি আপনার ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে, এবং আপনি সিরাম, ক্রিম এবং লোশনে প্রধান উপাদান হিসেবে হায়ালুরোনিক এসিড খুঁজে পাবেন।
সুতরাং, বুঝতেই পারছেন যে ত্বকের যত্নে এর উপকারীতা অনেক বেশি। আর এই উপকারীতাগুলো আসলে কি কি চলুন তা জেনে নেই।
হায়ালুরোনিক এসিড এবং ত্বকে এর উপকারীতা

১. এটি ত্বককে হাইড্রেটেড রাখে
হায়ালুরোনিক এসিড আপনার ত্বককে হাইড্রেটেড এবং ময়েশ্চারাইজড রাখে। এর কারণ হলো এটি আপনার ত্বকে পানির অণুগুলোকে ধরে রাখে। ত্বকের আদ্রতার হ্রাস এজিং এর একটি মূল কারণ। ত্বকের কোষ এবং টিস্যুগুলো যখন আদ্রতা হারায়, তখন ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় এবং চামড়া ঝুলে পরে। হায়ালুরোনিক এসিড ত্বকে পানির হ্রাস হওয়া প্রতিরোধ করে এবং এজিং এর লক্ষণগুলি হ্রাস করে।
২. বলিরেখার উপস্থিতি হ্রাস করে
জার্নাল অফ কসমেটিক ডার্মাটোলজিতে ২০১৪ সালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, যে সকল কসমেটিক পণ্যে হায়ালুরোনিক এসিড রয়েছে সেগুলো ত্বকে বলিরেখার উপস্থিতি হ্রাস করে এবং চামড়ার ঝুলে পরা কমিয়ে আনে।
৩. হায়ালুরোনিক এসিড ত্বকের নমনীয়তা উন্নত করে
জার্নাল অফ ক্লিনিকাল অ্যান্ড এ্যাসথেটিক ডার্মাটোলজিতে প্রকাশিত একটি গবেষণাতে ত্বকের নমনীয়তা এবং ত্বকের হাইড্রেশন স্তর বজায় রাখতে ন্যানো-হায়ালুরোনিক অ্যাসিডের কার্যকারিতা নিয়ে অনুসন্ধান করা হয়। এই অনুসন্ধানে পাওয়া যায় ন্যানো-হায়ালুরোনিক এসিড ত্বকের হাইড্রেশন স্তরকে ৯৬% বাড়িয়েছে এবং ত্বকের দৃঢ়তা ও নমনীয়তা ৫৫% বাড়িয়েছে।
সাধারণত বিউটি পণ্যগুলি ব্যবহার বা লাগানোর সময়, এর লাগানোর প্রক্রিয়াটি গুরুত্বপূর্ণ। এটি অন্যান্য পণ্যগুলির সাথে স্তরে বা মিশিয়ে লাগাবেন নাকি শুধু ঐ পণ্যটি একা লাগাবেন তা আপনাকে বিবেচনা করে দেখতে হবে। এছাড়াও, দিনের কোন সময়ে আপনি এটি ব্যবহার করছেন তাও গুরুত্বপূর্ণ। যদিও এই এসিডটি ব্যবহারের সঠিক কোনো নিয়ম নেই, তারপরও কিছু উপায় রয়েছে যেভাবে ব্যবহার করলে এই এসিড খুব ভালো কাজ করে।
কিভাবে আপনি আপনার রূপচর্চার রুটিনে এই এসিডটি ব্যবহার করতে পারেন তার একটি বিস্তারিত আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।
আপনার ত্বকের যত্নের রুটিনে হায়ালুরোনিক এসিড অন্তর্ভুক্ত করার কিছু উপায়
আপনার প্রতিদিনের ময়েশ্চারাইজারের সাথে মিশিয়ে নিনঃ আপনার ময়েশ্চারাইজারে হায়ালুরোনিক এসিড মিশিয়ে নিন, এতে আপনি ময়েশ্চারাইজার এবং এসিড এই দুইটিরই উপকারীতা একসাথে পাবেন।
গোসল করার পর পরেই এটি ব্যবহার করুনঃ গোসল করার পর বা আপনার মুখ ধোয়ার পর সাথে সাথেই হায়ালুরোনিক এসিড আপনার মুখে লাগান। আপনার ভিজা ত্বকে সরাসরি এটি ব্যবহার করুন। এই এসিড আপনি আপনার মেকাপের বেইস হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। আর যদি আপনি আপনি আপনার ত্বকে আর এক স্তর সুরক্ষা চান, তাহলে মেকাপ করার আগে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন।
আপনার প্রতিদিনের সিরাম হিসেবেঃ আপনি চাইলে হায়ালুরোনিক এসিডকে প্রতিদিনের নাইট সিরাম হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। প্রতিদিন রাতে এটি মুখে লাগান, সারারাত মুখে রেখে ঘুমিয়ে পড়ুন এবং সকালে জেগে উঠুন শিশুর ত্বকের মত নরম ও কোমল ত্বক নিয়ে।
সুতরাং, ত্বক তৈলাক্ত অথবা শুষ্ক যেমনই হোক না কেনো, প্রাণোচ্ছল এবং উজ্জ্বল দেখার জন্য এর সঠিক হাইড্রেশন দরকার। আর ত্বকের যত্নের এই শিল্পে সবসময়ই অভিনব নামের সাথে নতুন নতুন পণ্য যোগ হচ্ছে। ফলে দেখা যায়, একটি পণ্যের স্থান আরেকটি পণ্য খুব দ্রুতই দখল করে নিচ্ছে। অনেক সফল সৌন্দর্য বৃদ্ধির পন্যই বর্তমান যুগে হারিয়ে গেছে। কিন্তু হায়ালুরোনিক এসিড এই ধরণের কোনো পণ্য নয় যা খুব তাড়াতাড়ি কালের গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। এই যাদুকরী উপাদানটি বিজ্ঞানের দ্বারা সমর্থিত এবং আপনার ত্বককে বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। তাই ত্বক নরম, কোমল, প্রাণোচ্ছল, উজ্জ্বল এবং ত্বকের প্রাকৃতিক আদ্রতার স্তর ধরে রাখার জন্য হায়ালুরোনিক এসিড ব্যবহার করুন।