সানস্পট কি আপনাকে রোদে বের হতে বাঁধা দিচ্ছে?

এগুলো (চেহারার কালো কালো দাগ ) ঢেকে রাখা অনেক কঠিন, এবং যদি আপনি মেকাপ করতে পছন্দ না করেন তাহলে এই স্পটগুলো খুব সহজে আপনার ফেইস নষ্ট করতে পারে। চিন্তার কোনো কারণ নেই, আমরা অনেকগুলো ঘরে তৈরি প্যাক নিয়ে এসেছি যা সানস্পট দূর করতে সাহায্য করবে।
সানস্পট কি? এর হওয়ার কারণ কি?
সানস্পট তখনই হয় যখন আপনার ত্বক দীর্ঘক্ষন ধরে সূর্যের ক্ষতিকারক রঞ্জকরশ্মি দ্বারা আক্রান্ত হয়। এগুলোকে সোলার লেন্টিনও বলা হয়। এই স্পটের কোনো নির্দিষ্ট আকার বা রঙ নেই এবং যা আপনার শরীরের যে অংশে সূর্যের তাপ লেগেছে সেই অংশেই দেখা দিতে পারে। আর তা হতে পারে আপনার গাল, নাক, ঠোঁটের উপরের অংশ, কান, কনুই, হাত ইত্যাদি। মাঝে মাঝে, এগুলো অনেক খসখসে থাকে, আবার মাঝে মাঝে এগুলো মসৃণ।
ত্বকের সমস্যা যেমন সানস্পটের সাথে যুদ্ধ করতে ঘরে তৈরি প্যাকগুলো সবচেয়ে স্মার্ট এবং সস্তা পদ্ধতি। এগুলোর মাধ্যমে আপনি সানস্পট থেকে মুক্তি পেতে পারবেন।
কিভাবে সানস্পট থেকে মুক্তি পাবেন
১. লেবু
সানস্পট দূর করতে ঘরোয়া পদ্ধতি
১. লেবু

উপকরণ
- ১ টি লেবু
- তুলা
প্রক্রিয়া
- লেবুর রস চিপে বের করে নিন এবং তুলার সাহায্য আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে নিন।
- ২০-৩০ মিনিট রেখে দিন।
- ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- শুকিয়ে নিন এবং একটি ভালো ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন।
বিকল্প প্রক্রিয়া
১ টেবিল চামচ লেবুর রসের সাথে ১ টেবিল চামচ চিনি মিশিয়ে নিন। সানস্পটে স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করুন.১ বা ২ মিনিট স্ক্রাব করার পর, মিশ্রনটি ১০ মিনিট রেখে দিন। পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
কতবার করবেন
শুধুমাত্র লেবুর রস প্রতিদিন লাগাতে পারেন। লেবু এবং চিনির স্ক্রাব সপ্তাহে ২-৩ বার লাগাতে পারেন।
কিভাবে কাজ করে
লেবুতে ব্লিচিং এর বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা সানস্পট দূর করতে সাহায্য করে। এটি আপনাকে দাগ্মুক্ত উজ্জ্বল ত্বক পেতে সাহায্য করে।
২. ক্যাস্টর অয়েল

উপকরণ
- কয়েক ফোঁটা ক্যাস্টর অয়েল
প্রক্রিয়া
- তেলটি আক্রান্ত স্থানে লাগান এবং কয়েক মিনিট ম্যাসাজ করুন।
- কমপক্ষে ১ ঘন্টা লাগিয়ে রাখুন এবং এরপর ধুয়ে ফেলুন।
কতবার করবেন
প্রতিদিন এক বা দুইবার লাগাবেন।
কিভাবে কাজ করে
ক্যাস্টর অয়েল আপনার ত্বকে পুষ্টি জোগায় কারণ এতে ফ্যাটি এসিড রয়েছে। এটি দাগ হালকা করতে সাহায্য করে এবং প্রতিদিন ব্যবহারে এটি ত্বকের রঙ সমান করে।
৩. অ্যালোভেরা

উপকরণ
- অ্যালোভেরা জেল অথবা অ্যালো জুস।
প্রক্রিয়া
- অ্যালোভেরা পাতা থেকে জেল বের করে নিন এবং আক্রান্ত স্থানে লাগান
- আধা ঘন্টা রেখে দিন এবং এরপর ধুয়ে ফেলুন।
কতবার করবেন
প্রতিদিন করবেন।
কিভাবে কাজ করে
অ্যালভেরাতে প্রাকৃতিকভাবে নিরাময় করার বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা কালো দাগ এবং রোদে আক্রান্ত স্থান হালকা করে। এটা ত্বকের পুনরূদ্ধার করতে সাহায্য করে এবং ত্বকের গুনমান ঠিক করে।
৪. আপেল সিডার ভিনেগার

উপকরণ
- ১ টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার
- ১ টেবিল চামচ পানি
- ১ চা চচমচ মধু
প্রক্রিয়া
- উপকরণগুলো মিশান এবং আপনার ত্বকে মিশ্রন্টি লাগান।
- ১০ মিনিট রেখে দিন এবং ধুয়ে ফেলুন।
- কমলার রস মিশিয়ে আরো দ্রুত এবং ভালো ফল পেতে পারেন।
কতবার করবেন
প্রতিদিন একবার করবেন।
কিভাবে কাজ করে
বিভিন্ন রকম ত্বকের সমস্যার জন্য আপেল সিডার ভিনেগার খুবই উপকারী, আর এটি সানস্পট ও দূর করে। এতে এসিড রয়েছে যা ক্ষতিগ্রস্থ এবং কালো ত্বকের কোষ দূর করে দেয় এবং সব রকম দাগ, স্কার এবং সানস্পট দূর করে দেয়।
৫. গ্রিন টি

উপকরন
- একটি গ্রিন টি ব্যাগ
- এক কাপ গরম পানি
প্রক্রিয়া
- ১০ মিনিট টি ব্যাগটি এক কাপ গরম পানিতে রেখে দিন।
- টি ব্যাগটি সরিয়ে ফেলুন, ঠান্ডা করে নিন এবং আক্রান্ত স্থানে লাগান।
কতবার করবেন
প্রতিদিন একবার অথবা দুইবার লাগাবেন।
কিভাবে কাজ করে
যদি আপনি ভেবে থাকেন যে গ্রিন টি শুধু মেটাবোলিজম এবং মেদ হ্রাস করতে সাহায্য করে, তাহলে আবার ভাবুন। আপনি জেনে অবাক হবেন গ্রিন টি ত্বকে ব্যবহারের কত অসাধারন উপকারিতা রয়েছে। এটা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পাওয়ার হাউজ হিসেবে পরিচিত যা ত্বকের সমস্যা যেমন ট্যান এবং দাগ দূর করে।
৬. বাটার মিল্ক

উপকরণ
- ১-২ টেবিল চামচ বাটার মিল্ক
- তুলা
প্রক্রিয়া
- পাত্রে রাখা বাটার মিল্কে তুলা ডুবিয়ে নিন এবং আক্রান্ত স্থানে ম্যাসাজ করুন।
- ১০ মিনিট রেখে দিন এবং এরপর ধুয়ে ফেলুন।
কতবার করবেন
ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য প্রতিদিন দুই বার করুন।
কিভাবে কাজ করে
এটা ত্বকে প্রশান্তি আনে এবং কালো সানস্পট ব্লিচ করে।
৭. মুলতানি মাটি

উপকরণ
- ২ টেবিল চামচ মুলতানি মাটি
- ১ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল
- গোলাপ জল
প্রক্রিয়া
- মুলতানি মাটির সাথে পরিমানমত গোলাপজল এবং অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে একটি ঘন পেস্ট তৈরি করে নিন।
- আক্রান্ত স্থানে এটি লাগান এবং ১৫-২০ মিনিট রেখে দিন।
- ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
কতবার করবেন
সপ্তাহে ২-৩ বার লাগাবেন।
কিভাবে কাজ করে
মুলতানি মাটি প্রতিটি মেয়েরই সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য খুব পছন্দের একটি উপাদান। এটি ত্বকে জাদুর মত কাজ করে। যদিও এটি ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে, এটি আপনার ত্বকের সানস্পট দূর করতেও সাহায্য করে। এটি ত্বকের ভেতরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে, লোমকূপের ময়লা দূর করে, এবং আপনার ত্বকের নিস্তেজ কোষ দূর করে, আপনার ত্বকের রঙ কালো হওয়া থেকে রক্ষা করে। এটি আপনার সানস্পট গুলোকে হালকা করে দূর করে ফেলে।
৮. বেসন

উপকরণ
- ২ টেবিল চামচ বেসন
- ১ চিমটি হলুদের গুঁড়ো
- ১ চা চামচ লেবুর রস
- ১ চা চামচ দুধ
প্রক্রিয়া
- সব উপকরণগুলো মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন।
- প্যাকটি মুখে লাগান এবং ১৫ মিনিট রেখে দিন।
- ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
দুধ ব্যবহারে যদি আপনার এ্যালার্জি হয় তাহলে দুধের পরিবর্তে গোলাপ জল ব্যবহার করতে পারেন।
কতবার করবেন
সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করুন।
কিভাবে কাজ করে
ইংরেজিতে ছোলার আটা হিসেবে পরিচিত এই বেসন আপনার রান্না ঘরের অন্যান্য উপকরণের মত সাধারন কোন উপদান নয়। এটা বেশিরভাগ সময় ত্বকের রঙ উজ্জ্বল করতে ব্যবহৃত হয় এবং ত্বকের সঠিক রঙ ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। এটি ত্বককে এক্সফোলিয়েট করে এবং কালো স্পট এবং সানস্পট কমিয়ে ফেলে।
৯. শসার প্যাক

উপকরণ
- ১/২ শসা
- ১ টেবিল চামচ টক দই
প্রক্রিয়া
- শসাগুলো পেস্ট করে নিন এবং দইয়ের সাথে মিশিয়ে নিন।
- আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে নিন এবং কয়েক মিনিট অপেক্ষা করুন।
- ভালোভাবে স্ক্রাব করুন। ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
কতবার করবেন
প্রতিদিন একবার করুন এবং সপ্তাহ শেষে দেখবেন আপনার সানস্পটগুলো আস্তে আস্তে হালকা হওয়া শুরু করবে।
কিভাবে কাজ করে
যদি আপনার ত্বক শুষ্ক হয় তাহলে শসার প্যাক আপনার জন্য সেরা প্যাক। এটা আপনার খাদ্যের একটি অংশ হতে পারে কারণ ত্বককে শীতল রাখার চমৎকার বৈশিষ্ট্য শসার রয়েছে। শসা আপনাকে নিশ্চিন্ত এবং সতেজ অনুভব করতে সাহায্য করে। এতে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে যা সানস্পট দূর করতে সাহায্য করে।
১০. নারিকেলের পানি

উপকরণ
- সতেজ নারিকেলের পানি
প্রক্রিয়া
- সানস্পটে সরাসরি লাগান এবং শুকাতে দিন।
- ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
কতবার করবেন
প্রতিদিন ১-২ বার এটি করবেন।
কিভাবে কাজ করে
গ্রীষ্মকালের তপ্ত গরমে ঠান্ডা নারিকেলের পানি পান করার ব্যাপারটা অনেক সতেজতাপূর্ণ। এটি আপনার ত্বকে প্রয়োজনীয় পুষ্টির ঘাটতি পূরন করে এবং আপনার দেহ থেকে বিষাক্ত টক্সিন বের করে দেয়। যখন সানস্পট দূর করার কথা আসে তখন নারিকেলের পানি সমানভাবে কাজ করে কারণ এর মধ্যে ব্লিচিং এর বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
১১. পেঁপের পেস্ট

উপকরণ
- ২-৩ টুকরো পাঁকা পেঁপে
প্রক্রিয়া
- পেঁপেটি পেস্ট করে নিন এবনফ আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে নিন।
- ১০-১২ মিনিট রেখে দিন
- ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
কতবার করবেন
সপ্তাহে ২ বার পেঁপের রস লাগাতে পারেন।
কিভাবে কাজ করে
যদি আপনার ঘরে পেঁপে থাকে তাহলে সানস্পট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আপনি পেঁপের পেস্ট ব্যবহার করতে পারেন। এতে এনজাইম এবং পেপেইন রয়েছে যা ত্বককে এক্সফলিয়েট করতে সাহায্য করে এবং ত্বককে ফর্সা ও উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। বয়সের ছাপ, সানস্পট, কালো হয়ে যাওয়া, স্কার ইত্যাদি কমাতে সাহায্য করে।
১২. চন্দন কাঠ

উপকরণ
- ২ টেবিল চামচ চন্দন পাউডার
- ১ টেবিল চামচ লেবুর রস
- গোলাপ জল
প্রক্রিয়া
- চন্দন কাঠের পাউডারের সাথে গোলাপ জল এবং লেবুর রস মিশিয়ে ফেইস প্যাক তৈরি করুন।
- সানস্পটে প্যাকটি লাগান এবং ১০-১৫ মিনিট শুকাতে দিন।
- পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
সানস্পট দূর করতে চন্দন কাঠ ব্যবহার করার আরেকটি উপায় হলো ১ঃ২ অনুপাতে চন্দন কাঠের তেল এবং জলপাই তেল মিশিয়ে নিন এবং প্রতিদিন রাতে সানস্পটে লাগান।
কতবার করবেন
প্যাকটি সপ্তাহে দুইবার লাগাবেন।
কিভাবে কাজ করে?
অ্যান্টি-এজিং বৈশিষ্ট্যের জন্য চন্দন কাঠ বিশেষভাবে পরিচিত। এটি ত্বকের নিস্তেজভাব দূর করে এবং হাইপারপিগমেন্টেশন দূর করে।
সানস্পট দূর করতে আরো কিছু টিপস
১. কেমিক্যাল পিল অথবা অ্যান্টি-ট্যান ফেসিয়াল
একটি ভালো অ্যান্টি-ট্যান ফেসিয়াল আপনাকে সানস্পট এবং পিগমেন্টেশন থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। কেমিক্যাল পিল ফেসিয়ালও উপকারী। আর এগুলো পেশাদার বা অভিজ্ঞ ডার্মাটোলোজিস্ট দ্বারা করা সম্ভব। আর এটির একমাত্র পার্শ্বপতিক্রিয়া হলো এই প্রক্রিয়াটি আপনার ত্বককে কয়েকদিনের জন্য লাল করে রাখে। যদি আপনি এটি সহ্য করতে পারেন তাহলে করতে পারেন।
২. সূর্য থেকে দূরে থাকুন
যতটা সম্ভব রোদ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন। তাই বাহিরে বের হতে হলে সবসময় ছাতা সাথে রাখুন। ঢিলা-ঢালা জামা পরিধান করুন। খুব গাঢ়ো অথবা খুব হালকা রঙের কাপড় পরা থেকে দূরে থাকুন। আপনার কাপড় যত সাদামাটা ও হালকা হবে তত আপনার ত্বকের জন্য ভালো। চোখকে সূর্যের তাপ থেকে বাঁচাতে রোদচশমা ব্যবহার করুন।
৩. সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন
পুরো গ্রীষ্মকালে সানস্ক্রিন ব্যবহার করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনার কাছে না থাকে তাহলে এখনি সময় এটি কিনে ফেলার। সানস্ক্রিন আপনার ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রঞ্জকরশ্মি থেকে রক্ষা করে। এমন সানস্ক্রিন কিনবেন যার এসপিএফ ৩০ বা তার উপরে। এবং আমাদের দেশের আবহাওয়া অনুযায়ী আপনার সানস্ক্রিনের এসপিএফ ৪০ অথবা ৫০ হওয়া ভালো।
এখন আপনি জানেন কিভাবে রোদের তাপ থেকে এবং সানস্পট থেকে নিজেকে রক্ষা করা যায়। তাহলে আর দেরি কেনো? এই রিমেডিগুলো আপনার ত্বককে দাগ্মুক্ত এবং উজ্জ্বল করে তুলবে। এই ঘরে তৈরি ফেইস প্যাকগুলো থেকে চন্দন কাঠের ফেইস প্যাক এবং মুলতানি মাটির ফেইস প্যাক আপনি আপনার সাপ্তাহিক ত্বকের যত্নের রুটিনে যোগ করতে পারেন, যা সানস্পট দূর করে আপনার ত্বককে আরো নিখুঁত করে তুলবে।