মিশ্র ত্বক নিয়ে কাজ করা সামান্য জটিল হতে পারে। তৈলাক্ত এবং শুষ্ক ত্বকের মিশ্রণে মিশ্র ত্বকের সৃষ্টি, তাই এই ত্বকের জন্য আপনার বিশেষ পণ্য এবং বিশেষ যত্নের প্রয়োজন যাতে আপনার ত্বক ভালোভাবে পুষ্টি এবং যত্ন পায়।
মিশ্র ত্বক এমন এক ধরণের ত্বক যেখানে আপনার ত্বকের কিছু অংশ শুষ্ক হয় এবং অপরদিকে কিছু অংশ তৈলাক্ত হয়। যাদের মিশ্র ত্বক তাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষের কপাল, নাক, চিবুক তৈলাক্ত হয় আর অন্যদিকে মুখের চারপাশ এবং গাল শুষ্ক হয়।
আর গ্রীষ্মকাল মিশ্র ত্বকের অধিকারীদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক, কারণ একদিকে আপনি ঘাম এবং তৈলাক্ততা কমাতে চাবেন, কিন্তু অপরদিকে আপনাকে ত্বকের শূষ্কতারও যত্ন নিতে হবে।
মিশ্র ত্বকের জন্য বিশেষভাবে তৈরি পন্য খুঁজে পাওয়াটা হয়ত একটু কষ্টসাধ্য হতে পারে। এইসব পণ্য খুবই অল্প এবং সীমাবদ্ধ, এবং মাঝে মাঝে সবার উপর কাজ নাও করতে পারে। আপনার মিশ্র ত্বকের যত্ন নেওয়ার জন্য সবচেয়ে ভালো উপায়টি হলো ঘরে তৈরি কিছু মিক্স ব্যবহার করা যেগুলো আপনার ত্বকের সমস্যা দূর করার সাথে সাথে আপনার ত্বককে শীতলও রাখবে।
মিশ্র ত্বকের জন্য গ্রীষ্মকালীন ফেইস প্যাকঃ
যদি আপনার ত্বক মিশ্র হয় তাহলে নিম্নলিখিত ঘরে তৈরি সেরা ৫ টি গ্রীষ্মকালীন ফেইস প্যাকগুলো ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
১. মধু, দই এবং গোলাপজলের ফেইস প্যাক
- মধু, দই এবং গোলাপজল সবগুলো উপকরণ সমপরিমাণে নিয়ে মিশিয়ে নিন। (প্রতিটি ১ টেবিল চামচ)
- সমানভাবে মুখে লাগান।
- ১৫-২০ মিনিট মুখে রেখে দিন।
- স্বাভাবিক পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
এই প্যাক কিভাবে সাহায্য করে?
মধু এবং দই ত্বকে শীতল প্রভাব ফেলার জন্য পরিচিত। এরা শুষ্কতার সাথে যুদ্ধ করে এবং আপনার ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখে। গোলাপজল তৈলাক্ততা নিয়ন্ত্রন করবে এবং সেই সাথে আপনার ত্বকে সতেজতা প্রদান করবে, বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে। এছাড়াও গোলাপজল খুব ভালো সূর্য প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।
২. ওটস এবং বাদামের ফেইস প্যাক
ওটস মিশ্র ত্বকের জন্য খুবই উপকারী।
- ১০ টি বাদাম পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন।
- পরের দিন সকালে বাদামগুলোর পেস্ট তৈরি করে নিন।
- ১ টেবিল চামচ ওটস, ১ চা চামচ মধু এবং দই এর সাথে যোগ করুন।
- মশ্রিণ পেস্ট পেতে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
- মুখে মিশ্রণটি লাগান এবং ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করুন।
- পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
এই প্যাক কিভাবে সাহায্য করে?
ওটস আপনার ত্বকের অতিরিক্ত তেল স্ক্রাব করে ফেলতে সাহায্য করবে এবং বাদাম আপনার শুষ্ক ত্বকের পুষ্টি পুনরায় ফিরিয়ে দিতে সাহায্য করে।
৩. পেঁপে এবং কলার ফেইস প্যাক
যখন আপনার ত্বকের যত্নের কথা আসে তখন পেঁপে এবং কলা খুবই ভালো ফল।
- কিছু পেঁপে এবং কলা ভর্তা করে নিন এবং একসাথে মিশিয়ে নিন।
- এখন এতে সামান্য মধু মিশান।
- সবকিছু একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে মশ্রিণ পেস্ট তৈরি করুন।
- আপনার মুখে লাগান এবং শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত রেখে দিন।
- শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
এই প্যাক কিভাবে সাহায্য করে?
কিছুক্ষণ পর দেখুন আপনার ত্বক কত উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। উজ্জ্বলতা এবং অতিরিক্ত তেল নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং ত্বকের শুষ্ক স্থানগুলোও যথেষ্ট নরম হবে।
৪. মুলতানি মাটির ফেইস প্যাক
ঘরে তৈরি বেশিরভাগ ফেইস প্যাকগুলোতে মুলতানি মাটি একটি প্রধান উপকরণ এবং এমনকি মার্কেটে সহজলভ্য প্যাকগুলোতেও। শুধুমাত্র মুলতানি মাটি একাই শুষ্ক ত্বক ঠিক রাখতে পারে। আপনার ত্বক যাতে প্রয়োজনীয় ময়েশ্চার পায় তার জন্য এর সাথে সবসময় গোলাপজল যোগ করা সর্বোত্তম উপায়।
- মুলতানি মাটি এবং গোলাপজল মিশিয়ে নিন।
- আপনার মুখে লাগান এবং শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত রেখে দিন।
- পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
এই প্যাকটি কিভাবে সাহায্য করে?
এই প্যাকটি আপনার ত্বক শীতল এবং সতেজ করে।
৫. শসার ফেইস প্যাক
- একটি শসার অর্ধেক নিয়ে পেস্ট করে নিন এবং এর সাথে ১ চা চামচ মধু এবং আধা চা চামচ দুধের ক্রিম মিশান।
- আপনার মুখে এটি লাগান।
- ২ টি শসার টুকরো আপনার চোখে রাখুন।
- শুকিয়ে গেলে অথবা ১৫-২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
সকল ফেইস প্যাকে ব্যবহৃত প্রাকৃতিক উপাদানগুলো সম্পর্কে কিছু তথ্যঃ
- মধু এবং কলা খুবই ভালো প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার।
- দই ত্বক কোমল এবং হাইড্রেট করে।
- ওটস এবং পেঁপে নতুন ত্বক বের করে আনে এবং মরা চামড়ার কোষ দূর করে।
- বাদামে থাকা ভিটামিন ই তেল ত্বকে পুষ্টি জোগায়।
- গোলাপজল ত্বকের শুষ্ক এবং তৈলাক্ত স্থানের ভারসাম্য রক্ষা করে।
- মুলতানি মাটি এবং শসা শীতলতা এবং সতেজতা প্রদান করে।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.