বর্তমানে সবাই যখন ওজন কমানোর পিছনে ছুটছে তার মাঝে অনেকেই আছে যার ওজন বাড়াতে আগ্রহী। কিন্তু অনেক সময় অনেকের কাছে প্রাকৃতিকভাবে ওজন বাড়ানো অনেক বড় একটি চ্যালেঞ্জ।
আপনার হয়তো শারীরিক কোনো সমস্যা নেই তারপরেও ওজন বাড়াতে পারছেন না। কিংবা ওজন বৃদ্ধি করার মাধ্যমে আপনার স্বাস্থ্য ভালো রাখার এবং শরীরকে কর্মক্ষম রাখার আশা করছেন।
তাই, আমরা আপনার কাছে প্রাকৃতিকভাবে ওজন বৃদ্ধি করার সবচেয়ে উপযুক্ত ১০ টি পদ্ধতি তুলে ধরবো এবং পদ্ধতি গুলো অবশ্যই স্বাস্থ্যসম্মত হবে। আশাকরি এই পদ্ধিতি গুলো অনুসরন করার মাধ্যমে আপনি কিছু কেজি ওজন বাড়াতে পারবেন!
১. লাল মাংস (Red Meat)
গরু, মহিষ, খাসি, ভেড়া প্রভৃতি পশুর মাংসকে রেড মিট বা লাল মাংস বলে। লাল মাংসে প্রচুর পরিমান কলেস্টেরল, প্রোটিন, ভিটামিন বি, জিংক এবং অন্যান্য ভিটামিন ও খনিজ রয়েছে, যা শরীর গঠনের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।
ওজন বাড়ানোর জন্য নিয়মিত লাল মাংস খেতে পারেন। মনে রাখবেন ভালো করে রান্না করে খাবেন। প্রক্রিয়াজাত বা বাসি খাবেন না।
মাংসের সবচেয়ে ভাল অংশ গুলো, যেমন পাঁজরের টুকরো (rib), টি-বোন (t-bon), স্ট্রিপ (strip) এবং হাঁড় ছাড়া মাংস, এগুলো চর্বির সবচেয়ে ভালো উৎস।
কিন্তু মনে রাখবেন উচ্চ মাত্রার চর্বিযুক্ত মাংস আপনার খাদ্যতালিকাতে রাখবেন না কারন এটি কোনভাবেই ওজন লাভ করার স্বাস্থ্যকর উপায় নয়।
২. পিনাট বাটার (Peanut Butter)
স্বাস্থ্যকর সকালের নাস্তা খেতে চাইলে অবশ্যই পিনাট বাটারকেও আপনার সকালের খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। পিনাট বাটার তৈরী করা হয় বাদাম থেকে। বাদামে প্রোটিন এবং ফ্যাটে পরিপূর্ণ।
যারা প্রাকৃতিকভাবে ওজন বাড়াতে চান তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ খাবার। মাত্র ১ টেবিল চামচ পিনাট বাটারে প্রায় ১০০ ক্যালোরি থাকে। পিনাট বাটারে ভিটামিন যেমন ম্যাগ্নেসিয়াম, ফলিক এ্যাসিড, ভিটামিন “বি” এবং ভিটামিন “ই” রয়েছে।
পিনাট বাটার সাধারণত আমরা পাউরুটি দিয়ে খাই তাই খাওয়ার সময় পাউরুটিতে পিনাট বাটারের অনেক পুরু প্রলেপ লাগান এবং আপনার দেহে ক্যালোরি বৃদ্ধি করুন।
৩. ফ্যাটযুক্ত দুধ (Full Cream Milk)
ওজন বাড়ানোর একটি সহজ সমাধান হলো আপনি পাস্তুরিত দুধের পরিবর্তে সম্পূর্ণ ফ্যাটযুক্ত দুধ গ্রহন করুন। প্রতি গ্লাস ফ্যাটযুক্ত দুধ আপনাকে পাস্তুরিত দুধের চেয়ে ৬০ ভাগ বেশি ক্যালোরি প্রদান করবে। দুধে প্রচুর ভিটামিন এবং পুষ্টি রয়েছে।
এছাড়াও এটি একটি ভিটামিন “ডি” এবং “এ” সমৃদ্ধ উৎস। ওটমিল এবং সিরিয়ালের সাথে আপনি এই দুধ খেতে পারেন। আপনি এটি যেভাবেই গ্রহন করুন না কেন, এটি আপনার স্বাস্থ্যকে অনেক সুন্দর করবেই।
৪. ফল (Fruits)
সাধারনত, গ্রীষ্মকালীন ফল আপনার ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। আম, কলা, পেঁপে এবং আনারসে ভালো প্রাকৃতিক চিনি রয়েছে, যেটি ওজন বাড়ানোর একটি দুর্দান্ত উপায়। প্রাকৃতিক চিনিযুক্ত এই ফল গুলো আপনার পেট পরিপূর্ণ করবে এবং আপনাকে তাত্ক্ষণিক শক্তি প্রদান করবে।
আপনি এই ফল গুলো দিয়ে খুব সহজ মিষ্টি জাতীয় খাবার বানাতে পারবেন এবং যার ফলে আপনি কৃত্রিম চিনি বাদ দিতে পারবেন। যদি আপনার কাছে ফল বিরক্তিকর মনে হয়, তাহলে আপনার পছন্দের ফল বা কয়েকটি ফল একসাথে ব্লেন্ড করে সুস্বাদু স্মুদি তৈরি করুন।
৫. আভাকাডো (Avocado)
আপনার খাদ্যে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আভাকাডো চমৎকার একটি উপায়। আভাকাডোর ১০০ গ্রামে প্রায় ১৬০ ক্যালোরি থাকে।
এছাড়াও এই আভাকাডো ভিটামিন এবং মিনারেলের খুব ভালো উৎস, যেমন এতে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন “ই”, ফলিক এসিড এবং পটাশিয়াম। তাই, আভাকাডোকে সবসময় সালাদ হিসেবে খেতে ভুলবেন না। এমনকি আপনি আপনার টোস্টের উপরেও আভাকাডো ছড়িয়ে দিয়ে খেতে পারেন।
৬. গমের পাউরুটি (Wheat bread)
গমের পাউরুটিতে প্রচু পুষ্টি এবং ক্যালোরি রয়েছে তাই সকালের নাস্তাতে শুধুমাত্র এই পাউরুটি খাওয়াও যথেষ্ট। এছাড়াও এই পাউরুটিতে ফাইবার এবং মিনারেল রয়েছে যা সাধারণ সাদা পাউরুটিতে পাওয়া যায় না। তাই সকালের নাস্তায় এই গমের পাউরুটি খেলে এটি আপনার পেটকে দীর্ঘক্ষণ ভরা রাখতে সাহায্য করবে।
৭. মাখন অথবা ঘি (Butter or Ghee)
মাখনে উচ্চ মাত্রায় ক্যালোরি রয়েছে। যদি প্রতিদিন দুধ খেতে খেতে আপনি বিরক্ত হয়ে যান, তাহলে পাউরুটিতে মাখন লাগিয়ে মৃদু আঁচে ভালোভাবে ভেজে নিন। এটি সকালের নাস্তা হিসেবে খুব ভালো এবং সারাদিনে আপনার যতটুকু পুষ্টি প্রয়োজন তার সবটূকুই এর থেকে পাবেন। মনে রাখবেন, মাখনে অনেক বেশি ফ্যাট রয়েছে, তাই নিয়ন্ত্রনে রেখেই মাখন খান এবং উপভোগ করুন।
আপনি যদি মাখন পছন্দ না করেন, তাহলে আপনি বিকল্প হিসেবে ঘি খেতে পারেন। মাখনের পরিশোধিত রূপ হলো ঘি। আপনি রান্নায় তেলের পরিবর্তে ঘি ব্যবহার করতে পারেন কারন এর একটি ভালো স্বাদ আছে যা খাবারকে আরো সুস্বাদু করে তুলে। মাখন অথবা ঘি তে ডিম হালকা ভাবে ভেজে নিয়ে ডিমকে আরো সুস্বাদু করতে পারেন, এটি আপনাকে স্বাস্থ্যকর নাস্তা গ্রহণের পাশাপাশি আপনার ক্যালোরিও বৃদ্ধি করবে।
৮. বাদাম (Nuts)
যখন ওজন বৃদ্ধির কথা আসে তখন বাদাম একটি দুর্দান্ত খাবার। এরা ফ্যাট এবং পুষ্টির জন্য খুব ভালো উৎস। এছাড়াও বাদামে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। বিভিন্ন ধরণের বাদামের মিশ্রণ একসাথে খেলে এটা আপনার পেট দীর্ঘক্ষণ পূর্ণ রাখবে।
বর্তমানে নানা ধরনের বাদামের মিক্সড পাওয়া যাই আপনি চাইলে এই মিক্সড বাদাম ও খেতে পারেন। এগুলোকে আপনি ব্যাগে করে আপনার কর্মস্থলে অথবা কলেজে খুব সহজেই নিয়ে যেতে পারেন।
৯. পনির (Cheese)
পনির আমার খুব পছন্দ এবং আমি নিশ্চিত আপনিও পনির খুব ভালোবাসেন। এর সবচেয়ে সেরা বিষয়টি হলো আপনি আপনার প্রায় সকল পছন্দের রান্নায় এটি ব্যবহার করতে পারেন।
আবার, আপনি যদি দুধ পান করা থেকে দূরে সরে যেতে থাকেন, তাহলে পনির খুব ভালো একটি বিকল্প কারণ এতে দুধের সকল পুষ্টিগুণ আছে। সাধারণত, বেশিরভাগ পনিরে প্রচুর ফ্যাট থাকে, তাই একজন ব্যক্তি পনির খেলে এটা প্রাকৃতিকভাবে তার ওজন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।
১০. আলু (Potatoes)
সবাই আলু খেতে ভালোবাসে। দ্রুত ওজন বাড়ানোর জন্য আপনি আপনার খাদ্যে এই উচ্চ কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ সবজিটি যোগ করতে পারেন। আলুতে উচ্চ মাত্রায় প্রোটিন, প্রচুর ফাইবার এবং ভিটামিন “সি” রয়েছে। আমরা প্রায়ই আলু ছিলকা ছাড়াই খাই, কিন্তু মনে রাখবেন আলুর ছিলকাতেই সবচেয়ে বেশি পুষ্টি থাকে। তাই আপনি আলুর ছিলকা তুলে ফেলার মানে হলো আপনি আলুর প্রধান ভিটামিন এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ অংশ তুলে ফেলছেন।
এগুলো হলো ওজন কমানোর জন্য কিছু প্রাকৃতিক খাবার। আপনি ওজন বাড়াতে বা কমাতে যেটাই করতে চান না কেন, এর জন্য আপনি অস্বাস্থ্যকর খাবার খেতে পারেন না। যদি কোন খাবারে উচ্চ মাত্রার ক্যালোরি থাকেও তার মানে এই না যে আপনি ওজন বাড়ানোর জন্য এটি খেতে পারবেন।
আমাদের শরীরের বেশিরভাগ পানি তাই সারা দিনে ৬ থেকে ৮ গ্লাস পানি খান। তবে, খেতে বসার ঠিক আগে পানি খাবেন না বা খাওয়ার মাঝখানেও পানি খাবেন না। এতে ক্ষিদা নষ্ট হয়ে যায়।
পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি শরীরচর্চার কোনো বিকল্প নেই। আপনি যত হালকা-পাতলাই হন না কেন ব্যায়ামে আপনিও দারুণ উপকৃত হবেন। নিয়মিত ব্যায়াম করলে আপনার ক্ষুধা বাড়বে। ফলে আপনার যদি ক্ষুধা মন্দা থাকে তা কাটিয়ে উঠে আপনি খেতে পারবেন।
ট্রান্স ফ্যাট, যেটি প্রধানত প্রক্রিয়াজাতকরণ খাবারে পাওয়া যায়, এই ধরণের খাবার সবসময় এড়িয়ে চলতে হবে। এগুলো আসলে ভুল খাবার যেগুলো আপনাকে হৃদরোগের দিকে পরিচালিত করবে।
এটা সত্য যে চিনি জাতীয় পানীয় যেমন সোডা এবং ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এগুলো আপনার ওজন বৃদ্ধি করবে, কিন্তু এগুলো কোন স্বাস্থ্যকর উপায়ে আপনার ওজন বৃদ্ধি করবে না। সবসময় স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করাই হলো ওজন বাড়ানোর সবচেয়ে উত্তম উপায়।
সবশেষ একটা কথা আপনার যদি কোনো বদ অভ্যাস থাকে তা পরিহার করুন এবং রাতে ঠিকঠাক ঘুমিয়ে পড়া আর সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার মতো অভ্যাসের গড়ে তুলুন।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.