ফলমূল অত্যন্ত ভিটামিন এবং পুষ্টিতে ভরপুর যা শুধুমাত্র আপনাকে ফিট এবং সুস্থ থাকতে সাহায্য করে না বরং আপনার ত্বককে উজ্জ্বল করে তোলে। ফেসিয়াল করার জন্য আপনার স্পা বা পার্লার যাওয়ার করার দরকার নেই। এর পরিবর্তে, আপনি বাড়িতে একটি ফ্রুট ফেসিয়াল করতে পারেন এবং অল্প সময়ের মধ্যেই স্পা-এর মতো উজ্জ্বলতা অর্জন করতে পারেন।

এই লিখাটি পড়ে ফেসিয়ালের জন্য উপযোগী ফলের তালিকার সাথে সাথে ঘরে বসেই কিভাবে ফলমূল দিয়ে ফেসিয়াল করতে হয় , সেই সম্পর্কে বিশদভাবে ধারণা পাবেন।
এই লিখাটি পড়ে আপনারা জানতে পারবেন-
- ফেসিয়ালের জন্য ব্যবহার উপযোগী ফল
- বাড়তি কি কি উপাদান যোগ করতে হবে
- বাড়িতে কীভাবে ফ্রুট ফেসিয়াল করবেন: ধাপে ধাপে নির্দেশিকা
- ফ্রুট ফেসিয়াল করার আগে এবং পরে যা করবেন
ফেসিয়ালের জন্য ব্যবহার উপযোগী ফল (Fruits To Use For Facials):
১. জাম্বুরা (Grapefruit):
কসমেটিক পণ্যগুলিতে ব্যবহৃত জাম্বুরার নির্যাস ত্বকের হাইড্রেশন উন্নত করতে এবং ত্বককে হালকা করতে ব্যবহার করা হয়। জাম্বুরা ত্বকের উজ্জ্বলতা এবং টেক্সচার বাড়াতে সাহায্য করে বলেও বলা হয়।
২. আঙ্গুর (Grapes):
আঙ্গুরে একটি উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে যা ত্বককে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে অতিবেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করে। তারা ত্বকের সংক্রমণ এবং ব্যাধিগুলির চিকিৎসা করতেও সহায়তা করে থাকে।
৩. ডুমুর (Fig):
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ডুমুরের নির্যাস দিয়ে তৈরী একটি ক্রিম এপিডার্মাল ক্ষয় কমাতে এবং স্কিন হাইড্রেশন এবং সিবাম এর ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে। ডুমুর হাইপারপিগমেন্টেশন, ব্রণ, ফ্রেকলস এবং বলিরেখা কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
৪. পেঁপে (Papaya):
পেঁপেতে ভিটামিন এ, সি এবং ই রয়েছে যা তাদের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের ব্যারিয়ার ফাংশন রক্ষা করে এবং বার্ধক্যজনিত দাগ ছোপ কমাতে সাহায্য করে ।
৫. রাস্পবেরি (Raspberry):
রাস্পবেরি নির্যাস ভাল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর কাজ করে থাকে এবং মুক্ত র্যাডিকেল কমাতে সাহায্য করতে পারে যা বলিরেখা এবং বার্ধক্যজনিত অন্যান্য দাগ বা ছোপ সৃষ্টি করে।
৬.আপেল (Apple):
আপেলগুলিতে আলফা-হাইড্রক্সি অ্যাসিড এবং পলিফেনলিক যৌগ থাকে যা রুক্ষ ও শুষ্ক ত্বককে মসৃণ করতে এবং কোষের পুনর্গঠন করতে করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি বয়সের দাগ হালকা করে এবং বলি এবং দাগ কমায়।

৭. কলা (Banana):
কলা ত্বকে ফোলাভাব এবং জ্বালা বা চুলকানি প্রশমিত করতে সাহায্য করে । মুলতানি মাটির সাথে ব্যবহার করা হলে, এটি পোরস পরিষ্কার করতে এবং কোনও ময়লা বা প্রসাধনী পণ্যের অবশিষ্টাংশ অপসারণ করতেও সহায়তা করে থাকে।
৮. স্ট্রবেরি (Strawberry):
স্ট্রবেরিতে রয়েছে পলিফেনল, ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি UV ক্ষতি থেকে ত্বককে রক্ষা করে। UV রশ্মি অকাল বার্ধক্য এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
৯.টমেটো(Tomato):
টমেটোতে লাইকোপিন রয়েছে, একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট । এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট UV ক্ষতির বিরুদ্ধে ত্বককে রক্ষা করতে পারে।
১০. লেবু (Lemon):
লেবুতে ব্রণ ধ্বংসকারী এবং জীবাণুরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি তৈলাক্ত বা সংমিশ্রণ ত্বকে ব্রণের চিকিৎসার জন্য সবচেয়ে ভাল ব্যবহারযোগ্য । এটি কোলাজেন উৎপাদনও বাড়ায়, যা ত্বকের মসৃণতা এবং গঠন উন্নত করে। এটিতে অ্যান্টি-এজিং বৈশিষ্ট্যও রয়েছে এবং বলিরেখা কমাতে পারে।
১১. শসা (Cucumber):
শসার বৈশিষ্ট্যগুলি হলো শীতল, প্রশান্তিদায়ক এবং নিরাময়কারী । তাদের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য বলিরেখা এবং রোদে পোড়া প্রভাব কমাতে সাহায্য করে।

বাড়তি কি কি উপাদান যোগ করতে হবে(Added Ingredients):
মধু (Honey):
মধুতে অ্যামিনো অ্যাসিড, প্রোটিন এবং ভিটামিন রয়েছে যা ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে। এটি একটি হিউমেক্ট্যান্ট যা এর অ্যান্টি-এজিং বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত। এটি বলিরেখা এবং দাগের দৃশ্যমানতা হ্রাস করে। এটি ত্বকের pH মাত্রাও নিয়ন্ত্রণ করে।
দুধ (Milk):
গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে, দুধ ত্বক পরিষ্কার করতে পারে । কন্ডিশনিং এজেন্ট হিসাবে প্রসাধনী পণ্যগুলোতে প্রায়ই দুধ যোগ করা হয়। এছাড়া দুধ ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে পারে।
দই (Yogurt):
দইয়ের মতো প্রোবায়োটিকগুলি ব্রণ এবং রোসেসিয়ার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। এগুলি ত্বককে বার্ধক্য এবং ফটোড্যামেজ থেকে রক্ষা করতেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
ওটমিল(Oatmeal):
ওটমিলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যগুলি অকাল বার্ধক্যের ছাপকে হ্রাস করতে পারে।
বাড়িতে কীভাবে ফ্রুট ফেসিয়াল করবেন: ধাপে ধাপে নির্দেশিকা
ধাপ 1: পরিষ্কার করা

- প্রথম ধাপ হল আপনার মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করা।
- আপনি হয়তো একটি হালকা সাবান দিয়ে মুখ ধুতে পারেন,কিন্তু আমরা পরামর্শ দিই যে সমস্ত বর্জ মুছে ফেলার জন্য একটি তুলোর বলে ঠান্ডা কাঁচা দুধ ব্যবহার করুন। দুধ ক্লিনজার হিসাবে দুর্দান্ত এবং সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক, তাই এতে কোনও কঠোর রাসায়নিক পদাথ নেই।
- ত্বক পরিষ্কার করতে একটি বৃত্তাকার গতিতে তুলার বল ব্যবহার করুন।
- পরিষ্কার করার পর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। দুধ পোরস থেকে ময়লা এবং জঞ্জাল অপসারণ করতে সাহায্য করে এবং মুখে তাৎক্ষণিক চকচকে ভাব এনে দেয়।
ধাপ 2: এক্সফোলিয়েটিং
- একটি ভাল ফ্রুট ফেসিয়ালের পরবর্তী ধাপ হল এক্সফোলিয়েট করা।
- এর জন্য আপনার প্রয়োজন হবে ১ টেবিল চামচ ওটমিল এবং ১ টেবিল চামচ লেবুর খোসার গুঁড়া বা শুকনো লেবুর খোসা।
- দুটি একসাথে মেশান এবং সামান্য গোলাপ জল/স্বাভাবিক পানি যোগ করে একটি পেস্ট তৈরি করুন।
- এছাড়াও, আপনি পেস্ট তৈরি করতে একটি মিক্সার ব্যবহার করতে পারেন।
- লেবুর খোসা নিন, তাতে কিছুটা পানি দিন এবং মিক্সার ব্যবহার করে এটিকে একটি পাল্প তৈরি করুন।
- তারপর পেস্ট তৈরি করতে এতে ওটমিল যোগ করুন।
- পেস্ট প্রস্তুত হওয়ার পরে, একটি বৃত্তাকার গতিতে আপনার আঙ্গুলগুলি ব্যবহার করে এটি আপনার সারা মুখে লাগান।
- আপনার ঘাড়েও পেস্টটি ব্যবহার করুন।
ধাপ 3: উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করা

- আপনার ত্বকে কিছুটা মধু ঘষুন যাতে ত্বক কিছুটা উজ্জ্বল হয়।
- মধু ব্লিচ হিসেবে কাজ করে এবং ত্বকের রঙ উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।
- ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
ধাপ 4: ত্বকের পোরস উন্মুক্ত করা
- একটি প্যান নিয়ে তাতে গরম পানি ফুটিয়ে নিন এবং এটির বাষ্প আপনার মুখে ব্যবহার করুন।
- ৫ মিনিট পর্যন্ত এটি করুন এবং বাষ্প ধরে রাখতে মুখের উপর একটি তোয়ালে দিয়ে ঝুঁকে বাষ্প নিন।
- এতে আপনার ত্বকের লোমকূপের ছিদ্র খুলে যাবে।
ধাপ 5: ফ্রুট ফেসিয়াল
- একটি পাকা টমেটো নিন এবং এটি ম্যাশ করে একটি পেস্ট তৈরী করুন এবং এতে কয়েক ফোঁটা লেবু যোগ করুন।
- মিশ্রণটি ২০-৩০ মিনিটের জন্য রেফ্রিজারেটরে রাখুন এবং তারপর বের করে নিন।
- এতে এক চা চামচ মধু যোগ করুন।
- এই মিশ্রণটি আপনার মুখে এবং ঘাড়ে লাগান।
- ১৫ মিনিটের জন্য রেখে দিন এবং পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- এছাড়াও টমেটো না থাকলে একটি পাকা কলা ম্যাশ করুন এবং কিছু লেবুর রস এবং এক চা চামচ মধু যোগ করুন। ভালো করে মিশিয়ে ত্বকে লাগান। ১৫ মিনিটের জন্য এটি রেখে দিন।
ধাপ 6: ময়শ্চারাইজ করুন
- একটি শসা নিন এবং এর একটি পেস্ট তৈরি করুন।
- এই পেস্টটি মুখ এবং ঘাড়ের অংশে লাগান।
- ১০ মিনিটের জন্য রেখে দিন এবং ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- মুখ ধুয়ে শুকিয়ে নিন এবং আপনার ঘরে বসে ফেসিয়াল করা শেষ ।
- সবশেষে আপনাকে একটি ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার অবশ্যই করতে হবে।

আপনার ত্বক যদি শুষ্ক হয়ে থাকে তবে আপনি ফলের সাথে গ্লিসারিন, নারকেল তেল বা অ্যালোভেরার মতো ময়েশ্চারাইজিং উপাদানগুলি ব্যবহার করতে পারেন। আপনার ত্বক যদি তৈলাক্ত বা সংমিশ্রিত থাকে তবে ফলের সাথে রোজমেরি বা পিপারমিন্টের মতো তেলের ব্যবহার করতে পারেন।
আপনার ফ্রুট ফেসিয়াল শুরু করার আগে এখানে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
ফ্রুট ফেসিয়াল করার আগে এবং পরে যা করবেন:
ফেসিয়াল করার আগে(Before The Facial):
আপনার ত্বক পরিষ্কার আছে কি-না তা নিশ্চিত করুন। একটি ফেস ওয়াশ দিয়ে আপনার মুখ ধুয়ে নিন এবং আপনার ত্বককে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে একটি ক্লিনজার ব্যবহার করুন। আপনার ত্বক থেকে সমস্ত মেকআপ অপসারণ হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করুন।হালকা ময়েশ্চারাইজারও লাগাতে পারেন। আপনার যদি ব্রণ-প্রবণ ত্বক থাকে তবে নিশ্চিত করুন যে ময়েশ্চারাইজারটি ক্রিম বা তেল জাতীয় যাতে না হয়।
ফেসিয়ালের পর(After The Facial):
আপনার মুখ ধুয়ে শুকিয়ে নিন। আপনার মুখ ঘষবেন না কারণ এটি লালভাব সৃষ্টি করতে পারে। শুয়ে থাকুন এবং আপনার ত্বককে ফেসিয়াল করার পরে স্বাভাবিক তাপমাত্রা নিতে দিন। কেননা ফেসিয়ালের উপাদাগুলোর ত্বকে কাজ করতে কিছুটা সময় লাগে। তাজা ফলের পাল্প দিয়ে তৈরি ফেসপ্যাক ত্বককে অত্যন্ত সতেজ করে তোলে । এগুলি আপনার ত্বককে পুনরুজ্জীবিত, নরম, উজ্জ্বল এবং সতেজ করার সর্বোত্তম উপায়। এই ফেস প্যাকগুলি আপনার ত্বক পরিষ্কার করতে পারে, সমস্ত বর্জ দূর করতে পারে এবং এটিকে হাইড্রেটেড রাখতে পারে। বাসায় ফ্রুট ফেসিয়াল করতে আমাদের শেয়ার করা প্রক্রিয়াগুলো অনুসরণ করুন।
এমনকি প্রক্রিয়াগুলোকে আপনি আপনার ত্বকের সাথে মানানসই করে বিভিন্ন উপাদান যোগ করে পরিবর্তন করেও ব্যবহার করতে পারেন । যাইহোক, কোন প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করার আগে সবসময় একটি প্যাচ পরীক্ষা করুন। এটি আপনাকে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া এড়াতে সহায়তা করবে।