আপনি কি কখনো খেয়াল করেছেন বেশিরভাগ কসমেটিক পণ্যগুলিতে প্রাথমিক উপাদান হিসেবে ভিটামিন ই থাকে? কারণ ভিটামিন ই আমাদের দেহের সকল অংশের জন্য খুবই উপকারী। এই ভিটামিন আমাদের শরীরের ভেতরেও সমানভাবে কার্যকর। ভিটামিন ই ত্বক, চুল এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সকল সমস্যা কার্যকরভাবে কাজ করে এবং সফলভাবে সমাধান করে। এখানে আমরা জানবো ত্বক, চুল এবং স্বাস্থ্যে ভিটামিন ই তেলের অসাধারন উপকারিতা।

স্বাস্থ্যের জন্য ভিটামিন ই তেল
ভিটামিন ই এর অনেক উপকারিতার মধ্যে একটি বড় সত্য হলো এটি একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ভিটামিন ই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, যেমন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রি র্যাডিকেল অপসারণ করে, কারণ এই র্যাডিকেলগুলো দেহের ক্ষতি করে।
১. ভিটামিন ই স্ট্রেচ মার্কস দূর করে
দেহের ওজন ঘন ঘন উঠা-নামা করলে সহজেই স্ট্রেচ মার্কস পরে। ভিটামিন ই তেল ত্বকের গভীর থেকে কাজ করে এবং স্ট্রেচ মার্কস ও যেকোনো ক্ষতচিহ্ন হালকা করে।
২. জ্বালা-পোড়া দূর করতে ভিটামিন ই
পুড়ে যাওয়ার ক্ষত নিরাময়ের জন্য ভিটামিন ই তেল ব্যবহার করার জন্য সবচেয়ে বেশি পরামর্শ দেওয়া হয়। এটি কেবলমাত্র ছোট খাটো পোড়া ক্ষত সারাতে কাজ করে, গুরুতর ক্ষত সারাতে নয়। পুড়ে যাওয়া স্থানটি ঠান্ডা হতে দিন, আক্রান্ত স্থানে সরাসরি ভিটামিন ই তেল লাগান এবং রেখে দিন, মনে রাখবেন ত্বকে খুব বেশি টানাটানি করবেন না বা চাপ দিবেন না।
৩. ত্বকের ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য ভিটামিন ই তেল
যে সকল মানুষ দিনের বেশিরভাগ সময়ই সূর্যের নিচে কাজ করে ত্বকের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি হতে পারে। আর এই ঝুঁকি এড়াতে একটি সহজ উপায় হলো ভিটামিন ই তেল সানস্ক্রিনের সাথে মিশিয়ে বাহিরে যাওয়ার আগে ত্বকে লাগিয়ে নেওয়া। এতে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি আপনার গায়ে আর কোনো ক্ষতি করতে পারবেনা।
৪. একজিমা এবং সোরিয়াসিসের চিকিৎসার জন্য ভিটামিন ই তেল
আক্রান্ত স্থানে প্রতিদিন নিয়ম করে ভিটামিন ই তেল লাগানোর ফলে বিভিন্ন রকম ত্বকের রোগ যেমন সোরিয়াসিস এবং একজিমা ইত্যাদি নিরাময়ে কার্যকর ফলাফল দেখিয়েছে।
৫. ঠান্ডা ঘা নিরাময়ে ভিটামিন ই তেল
ত্বকের মারাত্মক শুষ্কতা ও ক্ষতির ঝুঁকিতে থাকা ত্বক ভিটামিন ই তেলে ব্যবহারের মাধ্যমে সারিয়ে তুলা যায়। যখন শীতকাল প্রবেশের সময় তখন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলি থেকে সবসময় ভিটামিন ই তেলের একটি ছোট বোতল নিতে ভুলবেন না। তেলের নিয়মিত প্রয়োগে ঠান্ডা ঘা নিরাময় হয়। প্রতিদিন ময়েশ্চারাইজার হিসাবে এই তেল ব্যবহার করে ঠোঁটের ঘা হওয়া প্রতিরোধ করতে পারেন।
৬. হার্টের জন্য ভিটামিন ই তেল
ভিটামিন ই তেল রক্তকে পাতলা করতে সহায়তা করে যা হার্ট অ্যাটাক বা হার্টের কোন ব্লকেজ এড়াতে খুবই উপকারী। ভালো ফলাফল পেতে চিকিৎসকের সাথে কথা বলে সঠিক পরিমাণে ভিটামিন ই গ্রহণ করা সবচেয়ে উত্তম। এটিও সত্য যে উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন ই সানস্ট্রোক এবং ধমনী ব্যাধি বা যেকোন হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।
৭. ইমিউনি সিস্টেম তৈরি করতে ভিটামিন ই তেল
ভিটামিন ই তে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টগুলি শরীর থেকে যে কোন প্রকার ফ্রি র্যাডিকেলগুলি অপসারণ করে ফেলে। ইমিউনিটির মাত্রা আরো ভালো হয় এবং যার ফলে আপনি ভালো বোধ করবেন এবং কম অসুস্থ হবেন।
ত্বকের জন্য ভিটামিন ই তেল
৮. দাগ এবং বলিরেখার জন্য ভিটামিন ই তেল
ভিটামিন ই বয়সের ছাপ পরার দাগগুলি কার্যকরভাবে সরিয়ে দেয়। এছাড়াও এটি বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে এবং প্রতিদিন ব্যবহারে ধীরে ধীরে চলে যায়। ভিটামিন ই ফ্রি র্যাডিকেলের সাথে যুদ্ধ করে এবং যার ফলে বলিরেখা অদৃশ্য হয়ে যায়। ত্বকের ফাইন লাইনসগুলো হ্রাস হতে পারে কারণ ভিটামিন ই ত্বকে কোলাজেনের উৎপাদন বাড়িয়ে তুলে যা ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি করে। ভিটামিন ই তেল নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বক আরো স্বাস্থ্যকর ও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
৯. ভিটামিন ই তেল ত্বককে নরম করে তুলে
ভিটামিন ই তেল সপ্তাহে একবার রাতের বেলা ত্বকের যত্নে লাগানো যেতে পারে। এই তেলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের কোষগুলোকে প্রতিরক্ষা করে এবং খুব সহজেই ত্বকের ক্ষতি করতে পারে এমন নতুন ফ্রি র্যাডিকালগুলির গঠন প্রতিরোধ করে।
১০. ভিটামিন ই তেল বাদামী দাগ দূর করে
দেহে মেলানিনের উৎপাদন এবং বার্ধক্যজনিত কারণে পরা গাঢ়ো বাদামী দাগ ভিটামিন ই তেল ব্যবহার করে কার্যকরভাবে হ্রাস করা যেতে পারে। ভিটামিন ই তেলে ত্বক পুনরূদ্ধার করা এবং দাগ পড়া প্রতিরোধ করার শক্তি রয়েছে। এই দাগগুলো হালকা করার জন্য এবং ত্বককে টান টান করার জন্য আপনি ত্বকে সরাসরি ভিটামিন ই তেল প্রয়োগ করতে পারেন।
১১. আপনার কিউটিকেলের জন্য ভিটামিন ই তেল
কিউটিকেলের তেল যেহেতু খুব ব্যয়বহুল, কিউটিকেল শক্তিশালী করার জন্য আপনি ভিটামিন ই তেল ব্যবহার করতে পারেন। ভিটামিন ই তেল শুষ্ক কিউটিকেলগুলোকে কার্যকরভাবে উজ্জ্বল করতে পারে। শুকিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে আলতো করে কিউটিকেল এবং নখে কয়েক ফোঁটা তেলে ম্যাসাজ করুন। আপনি আপনার নখে উন্নতি দেখতে পাবেন।
১২. ক্লিনজিং এজেন্ট হিসাবে ভিটামিন ই তেল
ভিটামিন ই তেল সব রকম ত্বকের জন্য অসাধারণ একটি ক্লিনজার। দূষিত জিনিষ যেমন ধূলা-বালি ও দূষণ আপনার ত্বকের ক্ষতি করে। প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ভিটামিন ই তেল ব্যবহার করার মত একটি সহজ উপায় আপনার ত্বককে উজ্জ্বল করে তুলবে।
চুলের জন্য ভিটামিন ই তেল
চুলের বৃদ্ধি এবং উজ্জ্বলতার জন্য ভিটামিন ই তেল খুবই উপকারী। প্রতিদিন চুলে এই তেলের ম্যাসাজ এবং একটি সুষম খাদ্যতালিকা আপনার চুলকে ঝকঝকে এবং উজ্জ্বল করে তুলতে পারে। ভিটামিন ই তেলের ম্যসাজ আপনার মাথায় রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং এতে আপনার চুলের উজ্জলতা বৃদ্ধি পায়। চুল পড়া এবং অন্যান্য চুলের সমস্যার চিকিৎসার জন্য করা হেয়ার স্পা ট্রিটমেন্টে ভিটামিন ই তেল ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়।
১৩. ভিটামিন ই তেল চুলের বৃদ্ধিকে আরো উদ্দীপিত করে
ভিটামিন ই তেলের ম্যাসাজ আপনার শরীরের সকল অংশে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। রক্তের স্বাস্থ্যকর সঞ্চালন চুল গজানোর ও বিকাশের জন্য উত্তম উদ্দীপক। এটি চুল সাদা হয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে এবং আপনার মাথার ত্বকে পুষ্টি জোগায়।
১৪. দ্যুতিময় চুলের জন্য ভিটামিন ই তেল
নিয়মিত ভিটামিন ই তেলের ম্যাসাজ আপনার চুলকে গভীরভাবে কন্ডিশন করবে এবং একে স্বাস্থ্যকর অ দ্যুতিময় করে তুকবে। ভিতামিন ই তেল খাওয়ার মাধ্যমেও আপনি ভালো ফলাফল পেতে পারেন, কারণ এই তেল আপনার দেহে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করে, যার ফলে আপনার মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন আরো উন্নত হয়। এটি চুলের সেবামকে উদ্দীপিত করে, যা আপনার চুলকে দ্যুতিময় করে তুলে।
১৫. চুলের আগা ফাঁটা প্রতিরোধে ভিটামিন ই তেল
চুলের ট্রিটমেন্ট, দূষণ, শুষ্কতা চুলের আগা ফেঁটে যাওয়ার কারণ। ঘরে খুব সহজেই এর চিকিৎসা করা যেতে পারে। ২ টেবিল চামচ তেল আপনার মাথায় এবং চুলে আলতোভাবে ম্যাসাজ করুন এবং একটি গরম তোয়ালে দিয়ে পুরো চুল ঢেকে রাখুন। এভাবে যত্ন নিলে চুল অনেক মসৃণ এবং আদ্রতাপূর্ণ হয়ে উঠে।
১৬. অকালে পেঁকে যাওয়া চুলের জন্য ভিটামিন ই তেল
বয়সের ছাপ পড়ার প্রক্রিয়া ধীর করার জন্য ভিটামিন ই তেল একটি অন্যতম সেরা উৎস। ধূসর চুল অস্বাস্থ্যকর দেখায় এবং স্বাভাবিকভাবেই কাউকে এই চুলে ভালো লাগে না। আপনাকে যা করতে হবে তা হলো ভিটামিন ই তেল ব্যবহার করতে হবে। সর্বোত্তম উপকারিতা পেতে ভিটামিন ই তেল চুলের গোঁড়া থেকে আগা পর্যন্ত লাগাতে হবে এবং এছাড়াও, ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার যেমন সয়া বীজ, মটরশুটি, পালং শাক, ব্রকলি এবং ডিম ইত্যাদি গ্রহণ করতে হবে।
সঠিক দিকনির্দেশনায় নেওয়া হলে ভিটামিন ই তেলের সুবিধাগুলি সত্যিই খুব কার্যকর, সবসময় একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ নিয়ে সঠিক ডোজ নিতে হবে। বাহ্যিক ত্বক এবং চুলের ব্যবহারের জন্য প্রথমে আপনার ত্বকে অল্প একটু লাগিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন যে আপনার এই তেলে অ্যালার্জি আছে নাকি নেই। যদি আপনি যৌবনদীপ্ত ত্বক, উজ্জ্বল চুল এবং সুন্দর স্বাস্থ্য পেতে পছন্দ করেন, তাহলে আপনার দৈনন্দিন জীবনে ভিটামিন ই তেল অন্তর্ভুক্ত করুন। ভিটামিন ই তেল আপনাকে কখনোই নিরাশ করবে না।